নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকার কথামাল।নিজ দায়িত্বে পড়তে পারেন!

"যাহার পা-দুটা আছে, সেই ভ্রমণ করিতে পারে; কিন্তু হাত-দুটা থাকিলেই ত আর লেখা যায় না! সে যে ভারি শক্ত। তা ছাড়া মস্ত মুস্কিল হইয়াছে আমার এই যে, ভগবান আমার মধ্যে কল্পনা-কবিত্বের বাষ্পটুকুও দেন নাই। এই দুটো পোড়া চোখ দিয়া আমি যা কিছু দেখি ঠিক তাহাই দেখি। গাছকে

্বোকাছেলে

মানুষের পক্ষে সব করা সম্ভব নয় অথবা আমরা চাইলেই সব করতে পারি না।

্বোকাছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্রোতস্বিনী অথবা জীবনস্রোত।

১৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:০৩

বাড়ির সামনের ছোট্ট নদীটার পাড়ে বসে আজ কতো স্মৃতিই মনে পড়ল।বার বার মনে হতে থাকল জীবনটা একসময় এই নদীর পানির মতোই স্বচ্ছ,শান্ত আর স্নিগ্ধ ছিল।যখন থেকে হাটতে শিখলাম ঠিক তখন থেকেই এই অপ্রশস্ত,গভীর,সবুজ গাছগাছালি ঘেরা নদীটাকে অনেক আপন করে নিয়েছিলাম।কত আনন্দের না ছিল দিনগুলি!যখন তখন দলবল নিয়ে মায়াবিনী এই স্রোতস্বিনীর বুকে ঝাপিয়ে পড়া,স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া,ডুবসাতার খেলা,কলাগাছের ভেলা নিয়ে গন্তব্যহীনভাবে ভেসে চলা আরও কত কি!জীবনের সাথে মিশে ছিলো নদীটি।তখন নদীর মানেই ছিল আনন্দ,ছুটে চলা,কাউকে সাতার শেখাবার নাম করে মাঝনদীতে ফেলে আসা,অতপর তাহার(!) অসহায় হাবুডুবু খাওয়া দেখে ব্যাপক মজা পাওয়া!একদিন আমার এক ছোট চাচাতো ভাইকে ছেড়ে আসলাম মাঝ নদীতে।বেচারা পানি খেতে খেতে কোনরকমে তীরে আসল।পাড়ে উঠে সে প্রথমেই আমার একগুচ্ছ প্রশংসা(!) করল।তারপর বলল,''গাঙ্গের পানি যে মজা!তোমরা মনে করছ আমি ডুবি যাইমু।আমি তো ডুব দিয়া পানি খাওয়াত আসলাম।নিচর পানিত ময়লা কম,মিঠা বেশি!''মজার ব্যাপার হলো সেই 'মিঠা পানি'র এতই জাদুকরি ক্ষমতা যে সেদিনই সে পুরোপুরি সাতার শিখে যায়।

যেহেতু ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করছি সেহেতু বলা যায় একটু বড় হয়েছি।যদিও বড় হওয়া নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে।পরিবারের ছোট সদস্য বলে হয়ত এই অবহেলা।বড় হওয়ার কথা বললাম কারণ বেশ কয়েক বছর আগেই আমাকে পড়ালেখার জন্য বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল।সুতরাং আরো অনেক গল্পের মতো নদীর সাথে সম্পর্কের গল্পটারও সাময়িক ইতি টানতে হয়েছিল।যখন বাইরে খুব বৃষ্টি হত তখন মনে হতো আমার পার্টি(!) নদীর পাশে কত কাদাঁমাখামাখিই না করছে!কিন্তু একসময় খেয়াল করলাম যে আর অনেক অনুভুতির মত এই অনুভুতিটাও মিলিয়ে যাচ্ছে।কত আজব আমরা!

ছোটবেলায় নদীর যে মানে জানতাম পরে মনে হল "না,শুধু এগুলোই নদীর মানে নয়"।সাহিত্যিকেরা নদীকে কত না উপমায় অলঙ্কৃত করেছেন!বিশেষ করে কবিরা "উপমাতেই কবিত্ব" কথাটির সার্থকতা নদীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন তা বলা যায়।এখন মনে হয় ছোটবেলার সেই মায়াবিনী নদীকে লেখকেরা কেন কখনও মমতাময়ী মায়ের সাথে,কখনও লাজুক প্রিয়ার অভিমানি চোখের সাথে আবার কখনও জীবনের চলার পথের সাথে তুলনা করেছেন।

জীবনের কোনো একসময় যে নদীর মানে শুধুই আনন্দ ছিল,আজ এই সন্ধ্যায় তারই তীরে বসে মনে হচ্ছে আমি সেই আনন্দের ভিতরে ডুব দিয়ে কষ্টের উপাদান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।পাশেই শিমুল গাছে একটি নিশাচর পাখির করুণ সুর শুনতে পাচ্ছি।এই অবেলায় এত করুণভাবে ডাকছে কেন পাখিটা?আমি জানিনা।নিশাচর এই পাখিটির সাথে বসন্তের শুরুতে কাকচক্ষুর মত স্বচ্ছ জল ভরা এই নদীর যেন অনেক মিল।ছুটে চলাই যার ধর্ম,অনেক স্বচ্ছ জল নিয়ে স্থবির হয়ে থাকায় তার কোন আনন্দ থাকার কথা নয়।নিশাচর এই পাখিটির মত হয়ত সে তার বেদনার জানান দিতে পারছে না।মানুষের উপরও তার অনেক অভিমান থাকার কথা।আমরা তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কত কাঁকফাটা গ্রীষ্মের দুপুরে প্রশান্তিতে শরীর জুরিয়েছি।প্রতিদানে তাকে কিছুই দেইনি,বরং সময়ের স্রোতে ভুলে গেছি।তার পরও নদী নিরব।বৃক্ষের মত নিরব।তাদের কোনও অভিযোগ নেই।সৃষ্টিকর্তা আমদেরও যদি তাদের মতো সহ্য ক্ষমতা দান করতেন,তাহলে পৃথিবীটা অনেক সহজ হত।আমদের সেই ক্ষমতা নেই সেজন্যই হয়ত পৃথিবীটা বেশ কঠিন ঠেকে আমাদের কাছে।











"একদিন হয়ত আমিও নদীর মত হব



শত কষ্টের বোঝা নিয়েও ছুটে চলব গন্ত্যব্যে,



শীত ও বসন্তের স্থবিরতা



ভেসে যাবে বর্ষার জলে।



শরৎ এর কাঁশফুলের শুদ্ধতাই পথ দেখাবে



তারপরে আকাশের তারা,



আচল ভরে জল দেবে বৃষ্টি



সেই জলে হব বাধনহারা।



কাঁশফুল,তুমি আমার জল নিয়ে যেয়ো



আকাশ তুমিও নিয়ো,



বিনিময়ে একটু বৃষ্টি দিও,



কাঁশফুল,তুমি শুদ্ধতার ছোঁয়া দিও।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.