অদ্ভুত মন খারাপের দিন

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

দু'দিন বাদল-বৃষ্টির পরে কী অদ্ভুত সুন্দর নীল আকাশ। ছুটির নীরব সকাল। গোল নেই, চিৎকার নেই, প্রকাশ্য কোন অশান্তি, নৈরাজ্য নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমারও আজ কাজে যাওয়া উচিৎ ছিল, অথবা দূরে কোথাও বেড়ানো। আমি তো শকুন, হায়না, গৃহযুদ্ধ ছাপিয়ে হাজার মাইল দূরে আছি। ভাত খাই, কাজ করি । মাস শেষে সামান্য ক'টা বেতন তুলি। আমার আর নৈরাজ্য ভাবনা ভেবে কী কাজ?



আমার পিতার ধর্ম ইসলাম জেনেও ইহুদি বাড়িওয়ালার কাছে মাসে ৫২ হাজার টাকা ভাড়া দেই। কর্মদন করি, ভাল মানুষ। আমার মনে হয়নি বেটা ইহুদি, ইজরায়েলে আমার বেতনের টাকা পাঠায়। অথবা জুম্মার নামাযে পাশে দাড়ানো পাকিস্তানি, হয়ত ঘৃণা করে আমাদের, আমি আমার মত শান্তির ধর্ম করি। হয়ত আমি অতিরিক্ত কাপুরুষ বলে, ভিন দেশে সংখ্যা লঘু হয়ে থাকি বলে, আমার জাতীয়তাবাদী অহংকার, ক্ষোভ বা মৌলবাদী আক্রোশ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারিনা। এমনও নয় যে আমার ইচ্ছা করে গোল বাধিয়ে প্রতিশোধ নিতে, অথবা পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে আমার পবিত্র ধর্মের মসজিদ দখল করে নিতে।



আমি জানি ওরা হয়ত আমাকে ঘৃণাই করে, মেরে ফেলতে চায়। সব যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় দেয়া পশ্চিমা দালাল দেশে সব অপরাধীর সহ অবস্থান জেনেও আমি হাসিমুখে কথা বলি--ইহুদি, পাকিস্তানি, বর্ণবাদী রেড নেক । ব্যক্তিগত বিষন্নতা ছাপিয়ে আমাকে অসহায়ভাবেই হাসিমুখের অভিনয় করে যেতেই হয়। হয়ত বাংলার মাটিতে ওদের কারো দেখা পেলে মিটিয়ে দিতাম জন্মানো বা বেচে থাকার স্বাদ। ভিন দেশে, বাংলার পাসপোর্ট হাতে ভিগমাগী, বাচার আকুতিতে চুপ করে থাকি, পরদেশে আমার অধিকার নেই শ্লোগান দিয়ে শাহবাগ কাঁপানোর, পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করার, সহিংসতা বা গোলাগুলি করে ইহুদি, হিন্দু, পাকিস্তানি মারার।



অথচ ক্ষমতার লোভ, উগ্র ধর্ম, উগ্র জাতীয়তা, প্রতিশোধ আমাদের যুদ্ধ বিগ্রহের অন্ত নেই। হয়ত মুসলিম বলে আমরা রক্ত পিপাসু, হয়ত বাঙালি বলে আমরা বিশ্বাসঘাতক, জাতিসত্বাকে গালি দিয়ে আরো মহা উদ্যোগে আমরা ক্ষমতা আকড়ে ধরি, মানুষ হত্যার ইন্ধন দেই, ইহুদি, হিন্দু, জামাত জাতি নিধনে যৌক্তিক প্রতিশোধের পথ পেয়ে যাই। ৪৩ বছর জাতির কাধে বষে জাতির রক্তমাংস খেয়ে বড় হয়ে ওঠা জামাতি টিউমারটাকে বিচ্ছন্ন করতে, বাংলার করোটি খুলি, মগজ খানা নেড়ে নেড়ে ছড়িয়ে থাকা বিষাক্ত টিউমারের সন্ধান করি। বেচে থাকার শেষ মুহূর্ত পযন্ত দানা বেধে লুকিয়ে থাকা জামাতের শেষ টিউমার নিধন না করে ঘরে ফেরা যাবেনা, যুদ্ধেও তাই অন্ত নেই।



আমাদের মরতে শিখতে হবে, লড়াই করে বাচতে হবে, সাহসী বাঙালি হয়ে মাথা তুলে দাড়াতে হবে। আমার ভীরুতা, কাপুরুষতার ডালপালা আমায় আকঁড়ে ধরে । শান্তির কথা বা হঠাৎ ২০১৩ তে শান্তি কমিটি গঠনের কথা বেফাস হলে আমি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। আমার ফেরার মত দেশ থাকবেনা। অথবা দেশ থাকলেও সেটা শত খন্ডে ভঙ্গুর, জনপথের জঞ্জাল্ । অথবা দেশহীন যাযাবর। ভিন দেশে সংখ্যালঘু আমি, ওদের নীল আকাশ আমাকে এক মুর্হুর্তের জন্য শান্ত করেনা, স্বস্তি দেয়না। কারণ আমার জন্মভূমি ফের হায়না, শকুনের কবলে--তারা শান্তি চায়না, যুদ্ধ করে বাচার গর্বে গর্বিত হতে চায়।



আমি ভিনদেশে সংখ্যালঘু কাপুরুষ, বেইমান হয়ে পরাধীন ঝকঝকে নীল আকাশে অভিব্যক্তিহীন, ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকি।

২ টি +০/-০