নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুল বানানে ভরা ব্লগ

বোকামানুষ

বিশ্বাস করে বারবার ঠকি তাই নিজেকে মাঝে মাঝে খুব বোকা মনে হয় কেন বারবার একি ভুল করি.........।

বোকামানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় কিছু কবিতা পর্ব ২........ পূর্ণেন্দু পত্রী

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৮

সেই গল্পটা



আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।

শোনো।

পাহাড়টা, আগেই বলেছি

ভালোবেসেছিল মেঘকে

আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে

বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা

সে তো আগেই শুনেছো।

সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।

পাহাড় মেঘেকে বললে

আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।

মেঘ পাহাড়কে বললে

আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।

ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী

পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।

সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনেরআগুনে

পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।

হঠাৎ,

আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প

ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে ছুটে এল

এক ঝাঁক হাওয়া

মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে

ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।

এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।

বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই

কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না।

বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো

পাহাড়টার হাড় পাঁজর,

ভিতরে থৈ থৈ করছে

শত ঝর্ণার জল।





তোমারই সঙ্গে



তোমারি সঙ্গে যুদ্ধ প্রহরে প্রহরে

তোমারই সঙ্গে সন্ধি,

তোমারই মূর্তি নির্মাণে আমি নিজেকে

করেছি পাথর চূর্ণ।

সর্বনাশের পাশা নিয়ে খেলা দুজনের,

অথচ লক্ষ্য শান্তি।

আক্রমণের তীর ও ধনুকে জ্বলছে

ক্ষমার সৌরদীপ্তি।

তোমার মৃত্যু যখন আমার কান্নায়

তুমি উল্লাসে পদ্ম,

আমার মৃত্যু যখন তোমাকে ছিঁড়ছে

আমি মুখরিত শঙ্খ।

প্রহরে প্রহরে নিহত হয়েও আমরা

অগ্নিপালকে রক্তিম,

পরস্পরের নিঃস্বতা পরিপূরণে

অর্জন করি প্রজ্ঞা।





আজ্ঞে হ্যাঁ



সূর্য নামের ছোকরাটা বড় জ্বলতে শিখেছে, তাই না হে?

আজ্ঞ হ্যাঁ।

গনগণে চোখ, জ্বলজ্বলে ভূরু, উরু ভেঙে দিলে কেমন হয়?

আজ্ঞ হ্যাঁ।

আজকাল আর চাঁদে সে রকম রাবড়ির মতো জেল্লা নেই

আজ্ঞে হ্যাঁ।

টুনি বালবদের ফোলাপে ফাঁপালে প্রতিভা ছড়াবে হাজার গুণ।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

নিজের লালার সরু সুতোর দিয়ে বেনারসী বোনে মাকড়সা।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

আমারও তেমনি, থুতু ছিটোলেই হীরে-জহরত আকাশময়।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

কানেই শুনেছো, দেখনি কখনো ঈশ্বর নামে লোকটাকে।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

কাল এসেছিলো, বেচতে চাইছে ধড়া-চূড়োসহ সিংহাসন।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

ঈশ্বর হয়ে প্রথমেই আমি বুনবো কঠিন শৃঙ্খলা।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

পাহাড়গুলোকে পিঁপড়ে বানাবো, সব গাছ হবে ভেরেন্ডা।

আজ্ঞে হ্যাঁ।















গাছ অথবা সাপের গল্প



তোমাকে যেন কিসের গল্প বলবো বলেছিলাম?

গাছের, না মানুষের?

মানুষের, না সাপের?

ওঃ, হ্যাঁ মনে পড়েছে।

গাছের মতো একটা মানুষ।

আর সাপের মতো একটা নারী

কুয়াশা যেমন খামচা মেরে জড়িয়ে ধরে কখনো কখনো

দুধকুমারী আকাশকে

সাপটা তেমনি সাতপাকে জড়িয়ে ধরেছিল গাছটাকে।

আর গাছটাও বেহায়া।

লাজ-লজ্জা, লোক-লৌকিকতা ভুলে গিয়ে

নৌকা ডুবে যাচ্ছে, এখুনি ঝাঁপ দিতে হবে

নদীর নাইকুন্ডুতে,

এমনি ভাবেই সর্বস্ব ভাসিয়ে দিল সাপের হাতে।

আর তারপরেই ঘটল আজব কাণ্ডটা।

সাপের ছোবলে ছিল বিষ। নীল।

গাছের শিকড়ে ছিল তৃষ্ণা। লাল।

ছোবল খেতে খেতে ছোবল খেতে খেতে

নীলপদ্মে ভরে উঠল গাছ।

আর গাছের আলিঙ্গনে

গুড়ো হতে হতে গুড়ো হতে হতে

সেই শঙ্খচুড় সাপটা

আলতা-সিদুরে রাঙা বিয়ের কনে।

আর এই সব দৃশ্য দেখতে দেখতে

আকাশের আইবুড়ো নক্ষত্রগুলো

হেসে গলে গা ঢলাঢলি করে বলে উঠল

আজ সারা রাত জাগব ওদের বাসর।





এই ডালে



এই ডালে দুঃখ এসে বসেছিল কাল।

বসে বসে দেখে গেল পাতা ঝরা, শিশিরের ঝরা

দৃশ্যকে নিহত করে হেমন্তের বাবুগিরি চাল

ফিনফিনে আদ্দির ওড়াওড়ি।

মন্দিরে আরতি নেই, দেখে গেল ধূপে ছাই ঝরা

দেখে গেল বালিশের ফাটা মুখে তুলোর বুদবুদ।

মঞ্চে মৃত অন্ধকার, চরিত্রেরা আসেনি এখনো,

শুধু ড্রপসীনে

পাহাড়ের গায়ে নদী, পলেস্তারা-খসা নীল বন।

এই ডালে দুঃখ এসে বসেছিল কাল।







হে প্রসিদ্ধ অমরতা




হে প্রসিদ্ধ অমরতা

কী সুন্দর তোমার ভ্রুকুটি

ঘরের বাহিরে ডেকে এনে

ভাঙো ঘর, স্থিরতার খুঁটি।

ধবংসের আগুনে জলে ঝড়ে

তুমি রাখো মায়াবী দর্পণ

মহিমার স্পর্শ যারা চায়

রক্তপাতে তাদের তর্পণ

হে প্রসিদ্ধ অমরতা

কী উজ্জল তোমার পেরেক

বিদ্ধ ও নিহত হয় যারা

কেবল তাদেরই অভিষেক।









মানুষের কেউ কেউ



সবাই মানুষ থাকবে না।

মানুষের কেউ কেউ ঢেউ হবে, কেউ কেউ নদী

প্রকাশ্যে যে ভাঙে ও ভাসায়।

সমুদ্র সদৃশ কেউ, ভয়ঙ্কর তথাপি সুন্দর।

কেউ কেউ সমুদ্রের গর্ভজাত উচ্ছৃঙ্খল মাছ।

কেউ নবপল্লবের শুচ্ছ, কেউ দীর্ঘবাহু গাছ।

সকলেই গাছ নয়, কেউ কেউ লতার স্বভাবে

অবলম্বনের যোগ্য অন্য কোনো বৃক্ষ খুঁজে পাবে।

মানুষ পর্বতচুড়া হয়ে গেছে দেখেছি অনেক

আকাশের পেয়েছে প্রণাম।

মানুষ অগ্নির মতো

নিজে জলে জালিয়েছে বহু ভিজে হাড়

ঘুমের ভিতরে সংগ্রাম।

অনেক সাফল্যহীন মরুভুমি পৃথিবীতে আছে টের পেয়ে

ভীষণ বৃষ্টির মতো মানুষ ঝরেছে অবিরল

খরা থেকে জেগেছে শ্যমল।

মানুষেরই রোদে,

বহু দুর্দিনের শীত মানুষ হয়েছে পার

সার্থকতাবোধে।

সবাই মানুষ থাকবে না।

কেউ কেউ ধুলো হবে, কেউ কেউ কাঁকর ও বালি

খোলামকুচির জোড়াতালি।

কেউ ঘাস, অযত্নের অপ্রীতির অমনোযোগের

বংশানুক্রমিক দুর্বাদল।

আঁধারে প্রদীপ কেউ নিরিবিলি একাকী উজ্জল।

সন্ধ্যায় কুসুমগন্ধ,

কেউ বা সন্ধ্যার শঙ্খনাদ।

অনেকেই বর্ণমালা

অল্প কেউ প্রবল সংবাদ।











যে টেলিফোন আসার কথা



যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।

প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে

সূর্য ডোবে রক্তপাতে

সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূণ্য বিছানাতে।

একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।

যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি।

অপেক্ষমান বুকের ভিতর কাঁসন ঘন্টা শাঁখের উলু

একশ বনেরবাতাস এস একটা গাছে হুলুস্থুলু

আজ বুঝি তার ইচ্ছে আছে

ডাকবে আলিঙ্গনের কাছে

দীঘির পড়ে হারিয়ে যেতে সাঁতার জলের মত্ত নাচে।

এখনো কি ডাকার সাজে সাজেনি?

যে টেলিফোন বাজার কথা বাজেনি।

তৃষ্ণা যেন জলের ফোঁটা বাড়তে বাড়তে বৃষ্টি বাদল

তৃষ্ণা যেন ধূপের কাঠি গন্ধে আঁকে সুখের আদল

খাঁ খাঁ মনের সবটা খালি

মরা নদীর চড়ার বালি

অথচ ঘর দুয়ার জুড়ে তৃষ্ণা বাজায় করতালি।

প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন

আজীবন ও সর্বজনীন

সরোবর তো সবার বুকেই, পদ্ম কেবল পর্দানশীল।

স্বপ্নকে দেয় সর্বশরীর, সমক্ষে সে ভাসে না।

যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না।









স্বপ্নের অসুখ



স্বপ্নেরও অসুখ আজকাল।

সে-রকম নির্বিরোধী অমল ধবল পালতোলা স্বপ্ন আর বেড়াতে আসে না

রাত্রিকালে।

আধুনিক স্বপ্নগুলি একালের আঠারো বা উনিশ বছর বয়সের বিরক্তির মতো

সুখী হয় চৌচির চুরমারে।

আগে স্বপ্নে সারারাত চুড়িপরা হাত নিয়ে খেলা

নানান নারীর দেহ সারারাত একটি নারীতে

সরবতের মতো ঢালাঢালি।

স্বপ্নের দেয়ালগুলি আগে সাদা ছিল,

একন সেখানে, ধুমশো সাপের মতো ভয়ংকর ধ্বংসের অক্ষর।

স্বপ্নের নিজস্ব কিছু বাগান বা ঝাউবন দেবদারুবীথি সবাই ছিল

এই সব দৃশ্যে আগে নিরাপদে হেঁটে যাওয়া যেত

এখন সেখানে, অন্ধকার একা বসে দূরের আগুনে হাত সেঁকে।

এখন স্বপ্নেরও মধ্যে দুই মত, সংঘর্ষ দুবেলা

এখ স্বপ্নেরও মধ্যে অস্ত্রাঘাত, আহত চীৎকার

একন স্বপ্নেরও মধ্যে কারো কারো মর্মান্তিক বিসর্জন অথবা বিদায়।











কী করে ভালোবাসবো



কী করে ভালোবাসবো বল কী করে ভালোবাসবো বল সখী,

মরুভূমির মতন যদি প্রাণের দাহে অহরহই জ্বলি,

হৃদয়ে যদি গভীর ক্ষত বালুচরের মতন গ্রাস করে,

কী করে ভালোবাসবো বল কী করে ভালোবাসবো বল সখী।

দগ্ধ যদি বুকের টানে আমার সব হাসিরা ঝরে যায়,

আমার সব সকাল আর রাত্রি যদি কাঁদনে ছলোছলো,

আমার সব সূর্যমুখী পাপড়ি ছিড়ে ধুলোয় যদি মেশে,

কী করে ভালোবাসবো বল কী করে ভালোবাসবো বল সখী।

আমার সুখ সাধের ঘরে পিদিম যদি না জ্বলে কোনোদিন,

আমার দূর মাঠের শেষে দুগোছা ধান না যদি পায় রোদ

আমার আম-মউল-স্বাদ হাওয়ায় যদি বারুদ-বিষ ছড়ায়,

কী করে ভালোবাসবো বলকী করে ভালোবাসবো বল সখী।

প্রতিটি অনাহারের রাতে সাপের ফনা দারালো তলোয়ার,

প্রতিটি রোগশোকের দিনে বেদনা যেন শিকারী কোনো রাহু

প্রতিটি মরা মনের ডালে শুকনো সব কুন্দকলি কাঁদে,

মুক্তমাখা পাপিয়ারও সুখের গান শিকলে গাঁট বাঁধা।

কী করে ভালোবাসবো আজ কী করে ভালোবাসাবো বল সখী,

আঁধার -ঘোর আমার ঘরে যদি না কেউ বীরের মতো এসে

জ্বালিয়ে যায় আগুনে এই পাষাণপুরী মনের মণি-মানিক,

কী করে ভালোবাসবো তবে কী করে ভালোবাসবো বল সখী।









১ম পর্ব

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: এত গুল প্রিয় কবিতা এক সাথে পেয়ে প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম ।অনেক অনেক শুভ কামনা রিল ।ধন্যবাদ ।

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

বোকামানুষ বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য


আমার ব্লগ বাড়িতে স্বাগতম

ভাল থাকবেন সব সময়

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০২

আমিনুর রহমান বলেছেন:




প্রিয় কবির কবিতায় +++
পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ বো মা।

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:২৮

বোকামানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া

আপনাদের ভাল লাগলেই পোস্টের সার্থকতা

ভাল থাকবেন সব সময়

৩| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৩

আমার আমিত্ব বলেছেন: খুব ভালো। সিরিজ চলুক।

০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৬

বোকামানুষ বলেছেন: সিরিজ চলতেছে দেরি যতই হোক পড়তে থাকুন :) :P

ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.