নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Give up complaining if you Want to Be Happy >\"You can complain because roses have thorns, or you can rejoice because thorns have roses.

বোরহান উদ্দিন সামিম

একটি ব্যাক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।

বোরহান উদ্দিন সামিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখের জল কি কথা বলতে চায়?

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৫

হটাত করেই একটা পত্রিকার রিপোর্টে চোখ পড়ে। সব মনে নেই, এইটুকু মনে আছে জেসিকা গুলসান তোড়া নামক একটি ফেসবুক আইডি যেখানে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের আজানা সব কাহিনী ইউনিকোড এ রুপান্তর এর কাজ করতে পারব। চোখের সামনে তোড়ার ছবিটা আকা হতে শুরু করছে। অস্মভব মানসিক শক্তির অধিকারী যার বুকজুড়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রিয়জন হারানো সকল মানুষের সব যন্ত্রনা নিয়ে অনবরত কিবোর্ড এ ঝড় তুলে চলেছেন। মা তার ডেকে বলছে তোড়া অনেক রাত হল এবার খেতে আয়, এই যে মা আসছি আর একটু শহরটা দখলে এল বলে।
সাথে সাথে মেসেজ দিলাম আমি নামব এই যুদ্ধে কি করতে হবে? আশ্চর্য সাথে সাথে চলে এল সমস্ত তথ্য, কি করব কিভাবে করব সব কিছু। একেবারে প্লান মাফিক, মনে হচ্ছে যে রুমি আযাদ দের গেরিলা দল ঢাকায় প্রস্তুতি নিয়ে আছে প্রবল দেশপ্রেম নিয়ে। যুদ্ধে শরিক হয়ে গেলাম, নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলামিন সরকার, সুদুর আফ্রিকাতে থেকে, হাতের এন্ড্রয়েড মোবাইলটা যার প্রধান অস্ত্র, দুই হাতের দশ আংগুল সমান তালে চলছে। সৌম্য শান্ত এক যোদ্ধা, মেসেজিং, ফোন দিয়ে প্রতিটা সেক্টর এর খবর নিচ্ছেন। ভরসা দিচ্ছেন সবাইকে অথচ বিদেশে সব সময় প্রান সংশয়ী বিপদের আশংকাকে দুরে ঠেলে রেখে কাজ করে চলেছেন। নেমে পরলাম তার হাত ধরে। বুক ভরা এক খুশির জোয়ার নিয়ে একপ্রকার উড়ে বাসায় এলাম। আবেগটা এই রকম যে দেশের প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে এই মহান দায়িত্ব কিনে এনেছি। সমস্ত খুসির খবর চলে গেল গাজীপুর থেকে কাউখালী, পিরোজপুর। সবাই এত খুসি কেন? আমার দুই রাজকন্যা এসে শিশু সুলভ মনে প্রশ্ন তোলে দাদাভাইর কথা লিখবে? হ্যা জবাব দেই তাকে। বউটাও বলল আমিত অবসর চাইলে আমি কিছু টাইপ করে দিতে পারি। আহারে কিছু চাইবার যে কি অদ্ভুত রুপ সেটা বুঝানোর ভাষা বিধাতা আমাকে দেয়নি। বললাম তুমি অসুস্থ, বাচ্চাদেরকে স্কুল থেকে আনা কত কাজ, তোমার অনেক কষ্ট হবে তার চেয়ে আমি লিখি তোমার নামে পোস্ট দিয়ে দেব বলেই বুঝতে পারলাম ভুল হয়ে গেছে বড় ভুল। আস্তে উঠে চলে গেল জানি কান্না লুকাতে গেছে, নাপারলে বাথরুমে ঢুকবে। বাবার মতই অনেক অভিমানী। নৌভিয়ান নওফেল এসে কোমরে হাত দিয়ে বলল পাপা অনেক খারাপ করছ তোমার কি টাকা লাগত? তুমি জাননা আমরা বড় হইছি? আমাদের এখন ৮ + এখন আমরা নিজেরাই স্কুল থেকে আসতে পারব। পরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে একটি ভাল মানের এন্ড্রয়েড সেট আর আলামিন সরকার থেকে পাওয়া কাজের প্রিন্ট কপি নিয়ে তার হাতে দিলাম। খুশির যে কি চোখ ধাধান রুপ আহ। এই ভাবেই শুরু নতুন এক গল্পের। আমরা কাজটা হয়ত খুব ভাল করতে পারিনি তবে নিজেদের কে অনেক ভাগ্যবান মনে হতে লাগল।
নীলা একদিন শুয়ে শুয়ে বলছিল আব্বা আমাকে কিছু গল্প বলেছিল একটু একটু মনে আছে তোমাকে বলি। তুমি তোমার ফেসবুক ওয়ালে লিখ। আব্বার সাথের অনেকে এখনও বেচে আছে, তাদের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে, তুমি চেষ্টা করলে পারবে। আব্বার যদি কিছু কথা থেকে যায় প্রজন্মের কাছে তাহলে ক্ষতিতো নেই, তুমি যদি এই কাজটা কর তাহলে সারা জীবন একমুঠো ভাত আর একটা মোটা কাপড় পরে কাটিয়ে দেব, কিছু চাইবনা।আমার প্রতি তার আস্থা দেখে ভয় এত বেশী যে তার আস্থার জায়গাটা না নষ্ট হয়ে যায়? এই কাজটা যে খুব সহজ নয় তা আমি জানি। শশুর মৃত্যুর পুর্বে আমাকে একদিন বলেছিলেন অ সামিম আমার একটা কাম কইরে দেত পারবা? আমি বললাম কি কাজ? বললেন মইরা গেলে আমার লাশটা বড় একটা পতাকা দিয়া ঢাইকা দিও। অন্য কোন মর্যাদা লাগব না।
২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হাবিবুর রহমান, মুজিব বাহিনীর ক্রমিক নং ২৮৫৪ মৃত্যু বরন করেন। পৃথিবী তে আশার সময় সংগে করে নিয়ে আসা দুখান পা এর মধ্যে একটি আহসানিয়া মিশন হাসপাতালে রেখে গিয়েছেন। তার শেষ চাওয়া ছিল জাতীয় পতাকায় মোড়ানা একটি গর্বিত লাশ হওয়ার। তার ইচ্ছে পুরনের জন্য থানায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসে কতবার যে দৌড়াতে হয়েছে সে লাঞ্ছনা যারা পেয়েছে তারা আর কখনো মুক্তিযুদ্ধের অংশ হিসেবে নিজেক ভাবতে চাইবেন না। থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ হাই পনা লিক লিকে হাড্ডিসার এক মানুষ। জীবনি শক্তির সবটুকু শেষ তবুও ভেঙ্গে পড়া দেহটাকে নিয়ে আমাদের সাথে দৌড়াচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন লিস্টে নাম নেই তাই রাস্ট্রিয় মর্যাদা দিয়ে দাফন করা যাবে না। জোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিয়েছে কিন্তু তাদের সাজানো সব প্রশসনিক কাঠামো বলবত আছে। এক সময় বিক্ষুব্দ হয়ে উঠলাম, অসীম সাহসে হাড্ডিসার পনা ভাই গর্জে উঠলেন; একসাথে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি লিস্ট দেখে যুদ্ধ করিনি। ওস্তাদ এর যদি রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না হয় তাহলে আর কোন মুক্তিযোদ্ধার দাফন রাস্ট্রীয় মর্যাদায় হবে না। লজ্জায় অপমানে ঘৃনায় আমাদের মাথা মাটির সাথে মিশে আছে। অনেক যোগাযোগ করে বলা হল গার্ড অব অনার দেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত একটি সাদা মাটা গার্ড অব অনার দেয়া হল লাশ দাফনের পূর্বে কবরের সামনে। এ নিয়ে কোন দুঃখ নেই, জাতীয় পাতাকা তো লাশের উপর দেয়া গেছে এই আমাদের সেরা পাওয়া। একটি পা হারিয়ে পাথরের মত নিশ্চল মানুষটা যখন চেয়ারে বসে থাকতেন তার দৃস্টি সামনের সব বাধা পেরিয়ে দূরে অনেক দূরে কোথায় যেন হারিয়ে যেত। দু চোখের ভিতর থেকে জলের ধারা ঠোটের প্রান্তে এসে শুকিয়ে গেলেও নোনা একটা দাগ শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তার সঙ্গী ছিল। মাঝে মাঝে যদি জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে কোন উত্তর দিত না ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত গভীর কোনা ব্যাথা লুকানোর ব্যার্থ প্রচেস্টা মুখটাকে বেকে যেতে দেখতাম। সহ্য হত না তাই আর কখনো কিছু জিজ্ঞেস করতাম না। এই মানুষটার চোখের জল কি যেন বলতে চাইত পারত না। আমাকে অনেক ভাল জানতেন, হেলায় ফেলায় মাঝে মাঝে দু একটি কথা আমাকে বলতেন আমি কিছু তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করেছি যদি লিস্টে নাম উঠে হয়ত কিছু ভাতা পাওয়া যাবে সংসারের বোঝা বহন করা তার বিধবা স্ত্রীর পক্ষে সহজ হবে। না এই নিয়ে কোন প্রকার কথা বলতে রাজি হননি। সামান্য কিছু তথ্য সংগ্রহ করে এক অসাপ্ত বেদনার কথা রেখে যেতে চাই সহমতের বন্ধুদের জন্য। কেউ যদি পড়ে মনের ভিতর একটিবার দোলা দেয় এরা আমাদের এই পতাকা এনেছিল এরচেয়ে বেশি নয়। এখানে অনেক লজ্জা অপমানের কথা সামনে আসবে সেটা প্রকাশিত হোক তা আমার শাশুড়ী চান না তাই আমার স্ত্রীর অনুরোধে নিজের মত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখা শুরু করি। যতটা সহজ ভেবে ছিলাম আসলে তত সহজ নয়, এখানে সকল লজ্জা অপমান ক্ষোভের সঙ্গে নিজেও জড়িয়ে যাই তাই কষ্ট বেশী। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.