![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই তো সেদিন বাবার হাত ধরে কপোতাক্ষের পাড় দিয়ে বৈকালি ভ্রমণ। সূর্যের তির্যক আলোয় চৈতন্যের মগডালে দোয়েলের মিষ্টি গান আজও হৃদয়ে তোলপাড় করে যায়। ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি তখন। কপোতাক্ষে অবাধ সাঁতার আর রকমারি দুষ্টামি।নদের পাশ ঘেঁষে আমার স্কুল। সেই কপোতাক্ষ আজ বলতে গেলে একেবারেই মৃত। মনে পড়ে সেই ব্রিজটির কথা। ঠিক স্কুলটার মাইলখানেক দুরে। বাবার সাথে ব্রিজে বসে কত গল্প। আর হারিয়ে যাওয়া শাপলা শালুকের ভিড়ে। কচুরীপনা আর নদের ছোট মাছগুলোর সাথে সে কি বন্ধুত্ব। চুনোপুঁটির রুপোলি গায়ে বিকেলের সোনা ঝরা আলোর ঝিকিমিকি আজো আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেই সুদুর অতীতে। বাবার চোখ ফাাকি দিয়ে মার্বেল না খেলতে পারলে যেন পেটের ভাত হজম হত না। বাবা স্কুলের শিক্ষক হওয়াতে সুবিধাটা ছিল ঢের বেশি। এখানে দাওয়াত ওখানে দাওয়াত। বন্ধুরাও চাইত এক্সট্রা খাতির। আজো মনে পড়ে সবাই মিলে স্কুলের মাঠ পরিষ্কার করার কথা। স্কুলমাঠের ভাটই আর আবর্জনা পরিষ্কার করিনি এমন কোন ছাত্র-ছাত্রী মনে হয় ছিলনা। কপোতাক্ষ পাড়ের সেই মুক্তরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মনের মণি কোঠায়। মুক্তারপুর গ্রাম ছিল কায়েমকোলা থেকে প্রায় ৫ মাইল দুরে। আমর গ্রামের নাম কায়েমকোলা। বৃহস্পতিবার হেঁটে চলে যেতাম বাড়ি। একবার ঘটল এত আজব কাহিনি। বৃহস্পতিবার বাড়ি গিয়ে আর মুক্তরপুর আসতে মন চাচ্ছিল না। শনিবার স্কুল খোলা। গেলাম না। সোমবারে মা বলল এবার চলে যা। আমার দুই বড় বোন ছিল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষক। মার বকবকানিতে অবশেষে রওনা দিলাম। তবে বাধ সাধলাম আমি একা যেতে পারব না। যথারীতি সঙ্গী হলো দু'বোন। হাটতে হাটতে পাড়ি দিচ্ছি একেক গ্রাম - বুড়িন্দিয়া, উজিরপুর,খলশী...। শুরু হয়ে গেল তুমুল বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতে পৌঁছলাম স্কুলের বারান্দায়। আমার মনটা পড়ে ছিল বাড়ি। বোনরা বলল তুই এবার একা একা আব্বার কাছে চলে যা। আমি বললাম আচ্ছা তোর একটু দাড়া আমি আসছি। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি একটু পরে এসে বললাম আব্বা আমাকে আবার তোদের সাথে আমাকে চলে যেতে বলেছে। ওরা বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না। তারপর আমি বিভিন্নভাবে ওদের বোঝাতে সক্ষম হই। অথচ আব্বার সাথে আমার দেখাই হয় নাই। ভিজতে ভিজতে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা।পরের বৃহস্পতিবার আব্বা বড়িতে এলো। উন্মোচিত হলো আমরা ভন্ডামি।আব্বা একটু হেসে বললেন পাগল ছেলে আমার এ রকম করতে নেই।আবার চলে গেলাম মুক্তারপুর। আব্বার সেই মিষ্টি শাসন ও আকাশচুম্বী আদর বড়ই মিস করি। বোনদের সেই বডিগার্ডের মতো আগলে রাখা মিস করি। বোনরা আজ শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরে আশ্রয় নিয়েছে। সংসারের ঘানি টানতে টানতেই তাদের জিবন ওষ্ঠাগত। আর বাবাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমিও বড় হয়েছি। শুধু বয়সে। বাবার মত সেই শুদ্ধ চৈতন্য আমার নেই। সময় বড়ই বেরসিক। সময় যাওয়ার পথে সঙ্গী করে আমাকে তোমকে এটাকে ওটাকে সবাইকে সববিছুকে।
©somewhere in net ltd.