![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।
আমাদের পাশের গ্রামের ১টি কিশোরী খুবই কম কথা বলতো; কেহ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিতো না; কিন্তু আমি কথা বললে, সে আমার সাথে হেসে কথা বলতো; এটি সেই মেয়েটির কথা।
আমাদের বাড়ীর পুর্ব পাশে ধানের মাঠ; মাঠের দক্ষিণ পুর্ব পাশে আমাদের একটি ছাড়া-বাড়ি ছিল; বাড়ীটাকে আমরা খামার বাড়ীর মতো ব্যবহার করতাম, মোটামুটি নির্জন, আশপাশের বাড়ীগুলো বেশ দুরে ছিল; বাড়ীতে প্রচুর জংগল ছিল, বর্ষায় মাঠের সব সাপ এখানে এসে আশ্রয় নিতো। আমাদের কাজের বুড়োমিয়া সাপের ভয়ে থাকতেন, এবং জংগল পরিস্কারের কথা বলতেন; আমি পরিস্কার করতে দিতাম না; কারণ, বাড়ীর পুর্বাংশের জংগলে বড় কয়েকটা গর্ত করে, এক শিয়াল দম্পতি থাকতো কয়েক বছর ধরে। গ্রামের মানুষের একটা বেদরকারী কর্তব্য ছিল: শিয়াল, বনবিড়াল ও সাপ মেরে ফেলা; আমি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমাদের এই বাড়ীতে ঢুকে কেহ যেন কোন প্রাণী মারার চেস্টা না করে।
বাড়ীতে মাত্র ৩টি আম গাছ ছিল, যেটি ছোট সেটিতে বেশী আম ধরতো ও খুবই সুস্বাদু ছিল; আমি আর বুড়ো মিয়াই এগুলো খেতাম; দশম শ্রেণীর বছর, ছোট গাছটায় আম পাকা শুরু করেছে; সকালে পাকা আম দেখি, বিকেলে নেই, কে নিয়ে যাচ্ছে! বাড়ীতে একটি ছোট, সুন্দর কুঁড়েঘর ও গরুঘর ছিলো, বর্ষা ও গরমে আমি ওখানেই থাকতাম। বুড়োমিয়া কাজে ব্যস্ত, আম কে নিচ্ছে কে জানে! পরদিন আমি দুপুর বেলা ঘরের মাঝে চুপচাপ বসে পড়ছিলাম; দেখি, পাশের গ্রামের একটি ১২/১৩ বছরের পরিচিত মেয়ে একটি বাঁশের সাহায্যে আম পাড়ছে; আমি গেলাম, সে ভয় পেয়ে গেলো! মেয়েটার সামান্য সমস্যা ছিল, সে কারো সাথে কথা বলতো না; ওদের পুকুর পাড় দিয়ে রাস্তা গেছে, স্কুলে যাবার সময় দেখতাম, সে পুকুর-ঘাটে থালি-বাসন মাজছে; আমি কিছু বললে সে উত্তর দিতো, অন্যদের সাথে সে তেমন কথা বলতো না।
তাকে ভীত দেখে আমি কিছুই বললাম না; সে চলে যাচ্ছিল, আমি বললাম
-ফাতেমা, আম নিয়ে যা!
সে রেগে গেলো,
-তোামাদের এত আম, আমি ২টা আম পাড়ছি, তাতে তুমি ঘর থেকে বের হয়ে এসেছ! আম তুমি খাওগে।
আমি থামাতে চেস্টা করলাম, সে কেঁদে ফেললো; চলে গেলো।
দুইদিন পর, ওর চাচাতো বোনকে দেখলাম মাঠ থেকে ছাগল নিতে এসেছে; আমি একটি থলেতে কিছু আম দিলাম, বললাম,
-তুই কিছু নিস, বাকীগুলো ফাতেমাকে দিস।
মেয়ে রহস্যময় হাসি হেসে বললো,
-এই তোমার অবস্হা?
যুদ্ধের সময় ওদের বাড়ী পোড়ায়ে দিয়েছিল; ওরা ২ গ্রামের পরের গ্রামে মামার বাড়ীতে ছিল; দারিদ্রতার কারণে এখানে আর বাড়ী তুলতে পারেনি, আর ফিরে আসেনি গ্রামে।
তারপর এত বছর কেটে গেছে, আমাকে চলে যেতে হয়েছে দুরে, ফাতেমার কোন খবর আমি জানি না। সেদিন খামার বাড়ীতে বসে সন্ধ্যায় চা খাচ্ছিলাম; এখন এটি বাড়ীতে পরিণত হয়েছে, আমার বড় ভাই পরিবার নিয়ে এই বাড়ীতে থাকেন। ভাবী বললেন,
-একজন মহিলা এসেছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য, পাক ঘরে বসেছে।
পাক ঘরে ঢুকে দেখলাম মহিলাটি ফাতেমা; গায়ের জীর্ণ শীর্ণ কাপড় দেখে অবস্হা বুঝতে পারলাম; সে আমাকে জড়ায়ে ধরলো; কুশলাদি জামলাম; একত্রে চা খেলাম। সে চলে যাবে, হাতে কিছু টাকা দিলাম, বললাম রাতে খেয়ে যেতে; সে থাকলো না; শুধু বললো,
-ঈদে আমাকে একখানা কাপড় কিনে দিও।
-ঠিক আছে, তুই আমার মনে আছিস আজীবন; আমি তোর খবর নেবো।
ভাবী ও ভাইয়ের বড় মেয়ে হতবাক, এই মহিলা কিভাবে আমাকে জড়ায়ে ধরলো; বড়ভাইয়ের মেয়ে বললো,
-মহিলা তো একটু পাগল ধরণের, কথা বলে না।
-না, সে পাগল ছিলো না, একটু অন্য রকম ছিলো।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২১
চাঁদগাজী বলেছেন:
কিশোর বয়সটা রহস্যে ভরা।
২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৮
শফিউল আলম চৌধূরী বলেছেন: ইহা আপনার কততম প্রেম ছিলো?
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৩৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
বেশীরভাগ বাংগালী মানুষের সম্পর্কেকে ঠিকভাবে ডিফাইন করতে পারেন বলে মনে হয় না।
৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩
আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: আপনি দেখি নারী ও কিশোরী সমাজে তুমুল জনপ্রিয় ও আকাংখিত ছিলেন. কেন যে এই ৩য় বিশ্বের অভাগা দেশ ছেড়ে আমেরিকা চলে গেলেন! আপনার চলে যাওয়ার দুঃখে বাংলাদেশের মেয়েরা দর্জি হয়েছে।
আপনি থাকলে এই দুষ্ট সরকারকে আচ্ছা শিক্ষা দিতে পারতেন। আপনার মতো বুদ্ধিমান মানুষের এই দেশে ভীষন দরকার। ফিরে আসুন। শুভ কামনা।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনাকে কোন নারী পছন্দ কেনি হয়তো কোন সময়।
৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪১
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আহা! অভিমানী কিশোরী!
কারো কাছে কিছু চাওয়া কঠিন। অতি অভাবে থাকলেই হয়ত এই সংকোচ ভাঙ্গা যায়।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা সবচেয়ে অবহেলিত মানুষ এই বাংলায়।
৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২১
কামাল১৮ বলেছেন: মানবিকতার একটা সুন্দর অভিমান ফুটে উঠেছে তার এই বাক্যে।-‘তোমাদের এত আম,আমি ২টা আম পাড়ছি,তাতে তুমি ঘর থেকে বের হয়ে আসেছ।আম তুমি খাওগে।’
আগে একবার পড়েছিলেন মনে হয়।তার পরও ভালো লাগলো।
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
এসব ছোটখাট ঘটনাই আমার জীবনের অংশ।
৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৩
*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: গল্পটা পড়ে ভালো লাগল।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি কি গ্রামে বড় হয়েছেন?
৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৫
নিমো বলেছেন: এটা কি আগেও পোষ্ট করেছিলেন ? আপনার এ ধরণের গ্রামীন জীবনের কথকতাগুলোকে আমার এই ব্লগের সম্পদ বলে মনে হয়। চমৎকার লিখেছেন। সেই সাথে সন্ধ্যা প্রদীপ খুবই মানবিক একটা মন্তব্য করেছেন।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
সন্ধ্যাপ্রদ্বীপ মনে হয়, নারীদের বুঝেন।
৮| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৯
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার এলাকার সব কিশোরী মেয়েরাই তো আপনার বিরাট ভক্ত ছিল দেখি!!!!
মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমি চেষ্টা করতাম সবার সাথে চলতে; আমি স্বাভাবিকভাবে সবার সাথে মিশার চেষ্টা করতাম।
৯| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৯
কুশন বলেছেন: আহারে....
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
দরিদ্র মেয়েদের সুখ-শান্তি বা জীবন বলতে কিছু থাকে না
১০| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৩
নীল-দর্পণ বলেছেন: ঈদে কি আর কাপড় কিনে দিয়েছিলেন তাকে?
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২১
চাঁদগাজী বলেছেন:
অনেক ঈদে আমি বাড়ী ছিলাম না; ব্যবস্হা করে দিয়েছিলাম
১১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৫
অক্পটে বলেছেন: কিছু মানুষের হাতে এত্ব এত্ব টাকা আবার কিছু মানুষের কিছুই থাকেনা। নাই হতে হতে একবারে নাই হয়ে যায়। আমার পরিচিতদের মধ্যেও এমনই নাই হয়ে যাওয়া সহায় সম্বলহীন কিছু মানুষ আছে। এদেরই মাঝে গতকাল একজন হঠাৎ করেই আমার স্মৃতিতে এসে হাজির হল। তার বর্তমান অবস্থা আমি জানি এবার দেশে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে আসব।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
জাতি দয়ামায়াহীন হয়ে গেছে; দরিদ্র পরিবারগুলোকে সাহায্য করার দরকার।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১৮
হাবিব বলেছেন: মেয়েটি আপনাকে ভালোবাসতো?