![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদম মনের কথা.কিন্তু কারও কিছু আসে যায় না..তবুও..ফেবু থেকে কালেক্টেড।
ইন্টার্ন জীবন সমাপ্ত করে ঢাকাতে যখন পা রাখি , শেষ সম্বল হিসাবে পকেটে তখন পঞ্চাশ টাকার দুটো ময়লা নোট। নামের আগে যেদিন থেকে ডাক্তার পদবী জুড়েছিল তার পর হতে পারতপক্ষে আর মা বাবা হতে টাকা চাওয়া হোতো না। ইন্টার্ন থাকাকালীন দৈনিক ১২ ঘন্টা খাটুনির পর মাস শেষে সাড়ে ছয় হাজার টাকার নিশ্চয়তা ছিলো। কিন্তু হায়!! এক সময়কার অতি নগন্যপারিশ্রমিক বলে টিটকারি করা সেই সাড়ে ছয় হাজার টাকাকে এখন অমুল্য রতন বলে মনে হচ্ছে। অন্য প্রফেসনে থাকা বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যখন তারা নিয়মিত খাবারের বিল দিয়ে দিতো লজ্জিত মুখে “ পরেরবার কিন্তু টাকাটা আমি দিমু” বলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতো না । জানি না আমার সেই বন্ধুদের জীবনে সেই পরেরবার কখনো আর এসেছিলো কিনা। তবে তাদের দাবি একটাই অসুস্থ হলে যেনো সময়মত তারা আমার চিকিৎসা পায় ।
আমার চিকিৎসক বন্ধুরা যখন অর্থের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খ্যাপ দিচ্ছে আমি তখন BSMMU এর পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে চায়ের কাপে আরাম করে চুমুক দিচ্ছি কিংবা টি এস সি ঘুরে বাদাম চিবুচ্ছি। না ভাই আমি কোনো সুখি রাজার ঘরের রাজপুত্র নই। আমিও খ্যাপে গিয়েছিলাম একবার । আপাতো দৃষ্টিতে সেই ১০ দিনের খ্যাপ ছোটো হোলেও আমার কাছে তা ছিলো জীবনের এক দীর্ঘতর কলঙ্কিত সময় ।ইন্টার্ন শেষ করার পর মনটা ছিলো মানবতায় পরিপূর্ণ । সেখানে অসহায়, অসুস্থ মানুষের সেবা ব্যাতিত অন্য কিছুর স্থান ছিলো না। ঠিক সেই মুহূর্তে পিশাচ রুপি ক্লিনিক মালিকেরা ডাক্তারের কাধে বন্দুক রেখে গরিব অসহায় মানুষগুলোর রক্ত চুষে খায় । হীনমন্যতায় ভোগা সেই তরুন ডাক্তাররের ওই সময়গুলি যে অপরাধবোধের মধ্যে দিয়ে যায় তা কেউ না বুঝলেও, কষ্টটা সৃষ্টিকর্তা ঠিকই বুঝে নেন।
সিম্পল এম বি বি এস থেকে কমপ্লেক্স হওয়ার লক্ষ্যে সহপাঠীরা তখন পার্ট – ১ নামক পরীক্ষাতে অংশগ্রহনের প্রস্তুতি নিতে ব্যাস্ত। লোকমুখে শুনলাম এই পরীক্ষার ফীস নাকি ৫ হাজার টাকা। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলাম পরীক্ষা দেয়ার খায়েশ। বিধিবাম!! আমার শ্রদ্বেয়ো নন মেডিকেল পিতা মাতা কোথা হতে শুনে এলেন , এফ,সি,পি,এস ডিগ্রি না থাকলে নাকি ওষুধের দোকানদার আর এম,বি,বি,এস ডাক্তারের মাঝে কোন তফাৎ থাকে না।এক বন্ধুর নিকট হতে ধার করে প্রথমবারের মত পার্ট-১ পরীক্ষা দিতে বসলাম। ৩ দিন ব্যাপি, ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট ধরে দেয়া পরিক্ষার ফী ৫ হাজার!!!মনে পড়ে গেলো সেকেন্ড প্রফের কথা , ২ মাস ব্যাপি ৫ টা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে ৪ হাজার টাকায় ফরম ফিল আপ করেছিলাম।বি,সি,পি,এস ভবনের সু উচ্চ শক্তিশালী ভবন আর এয়ার কুলারের সাইজ দেখে বুঝতে দেরি হোলো না পোলাপানের টাকাগুলো কোথায় সন্নিবেশিতো হয়।হলে বসে বৃত্ত ভরাট করি আর দেখি প্রফেসরদের ভোজন বিলাস। তবে হ্যাঁ , উনারা এতোটা নির্দয় নন , পরীক্ষা শেষে আপনাকে খালি হাতে ফিরতে হবে না।ধরিয়ে দিবে একটা আধা লিটারের “মাম” পানির বোতল। যথারিতি পরীক্ষাতে ফেল মেরে এক বন্ধুকে হাসতে হাসতে বললাম “ দোস্ত ৫ হাজার টাকা খরচ করে ৩ টা “মাম” পানির বোতল গিললাম । অশ্লীল একটা গালি দিয়ে দোস্তো আমার বলে “ বোকা...দা কয় কি???!!!।প্রথম বারের ধারের টাকা ফেরত দিতে দিতে আবার জুলাই মাস চলে এলো। পুনরায় ৫ হাজার টাকা ঢাললাম লক্ষ্য সিম্পল হতে কমপ্লেক্সে উত্তরন। তবে এই বার ৩ টা “মাম” এর বোতলই শুধু আনি নাই ,সাথে একটা এফ,সি,পি,এস পার্ট _১ পাশের কংগ্রেচুলেশন কার্ডও নিয়া আসছি।
বি,সি,পি,এস যদি পরীক্ষার ফী ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকাও করে ফেলে তারপরেও জানুয়ারি কিংবা জুলাই মাসে মহাখালিতে ভীড় বাড়বে বৈ কমবে না।আজিজ মার্কেটের উপরে টয়লেট সাইজ খুপড়ি ঘরে অবিশ্বাষ্য বেশি ভাড়াতে থেকে , bsmmu এর লাইব্রেরিতে অক্লান্ত পড়াশুনা করে , কোনো এক ক্লিনিকে ৭ দিন খ্যাপ দিয়ে ঠিকই পরীক্ষার টাকা যোগাড় করে ফেলবেন চিকিৎসকেরা। তবে তারা এই প্রশ্নটা সংশ্লিষ্ট কত্রিপক্ষের কাছে কখনোই তুলবেন না যে... কেন খুপড়ি সাইজ রুমের ভাড়া ১৫ হাজার?কেন পরীক্ষার ফী বাড়ানো হবে?কেন ডাক্তারের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্লিনিক মালিক রুগিকে অতিরিক্ত পরীক্ষা করাবেন?কেন?কেন?............
জীববিজ্ঞান বইতে পড়েছিলাম, মেরুদণ্ডযুক্ত প্রানিরা Cordata পর্বের অধিভুক্ত। এই Cordata পর্বের একটা প্রানি আছে homo sapiens নামে । homo sapiens এর মাঝে একটা প্রজাতি আছে যাদের doctor বলা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হোলো মেরুদণ্ড যুক্ত Cordata পর্বে অন্তরভুক্তি থাকার পরেও doctor প্রজাতির আচরন অনেকটা মেরুদণ্ডহীন এমিবার মতন।
fb.com/tanvir.shuvo.965
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৫৭
ধুসর কুয়াশা বলেছেন: ভাল লাগলো। একেবারে মনের কথা বলেছেন। তবে আমি আপনার মত এত ভাগ্যবান না, এখন পর্যন্ত যা আয় করেছি তার বেশি ভাগ এই পথে ব্যায় করেছি তারপরও সফল হইনি, যাহোক আল্লাহ্ আমাকে অতোটা নিরাশ করেননি। ভাল থাকবেন।