![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছুক্ষন আগে মেলা থেকে আসলাম। দশ দিন ব্যাপী এই বিজয় মেলার আজ চতুর্থ দিনে ভালোই লোক সমাগম দেখা গেলো। আর সাথে অতিথি শিল্পীদের গান পরিবেশনায় কিছুটা সময় মেলায় ভালোই কাটালাম।অতিথি শিল্পীদের গান আর লোকজনের ভিড়ে কোন একসময় ছোটবেলায় গ্রামের মেলার কথা মনে পড়ছিলো। আমার আবার স্কুল ফাঁকি দেয়ার স্বভাব ছিলো। গ্রামের স্কুলে পড়তাম।আর সবারই জানা গ্রামের স্কুলে শহরের স্কুলগুলোর মতো তেমন কড়াকড়ি নিয়ম নাই।তাই টিফিন পিরিয়ডে স্কুল পালাতে তেমন কষ্ট হতো না।ছোটবেলা থেকে আমি আবার ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে বড় হই নি।স্কুল পালালে বাবা মাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে নেয়া যেতো। প্রতি বছরে জুলাই মাসের প্রথম দিকে মেলা হতো। রথের মেলা।আর সেই সময়ে অর্থাৎ জুলাই মাসের প্রথম দিকেই বৃত্তির টাকা পেতাম।আমি আবার খুব একটা খারাপ ছাত্র ছিলাম না।ক্লাস ফাইভ আর ক্লাস এইট, দুই ক্লাসেই সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছি।আর টাকা পাওয়ার সাথে সাথে স্কুল পালিয়ে বা স্কুল ছুটি হলে বন্ধুরা মিলে একসাথে মেলাই চলে যেতাম।টাকা দেয়ার সময় স্যার সবাইকে সাবধান করে দিতেন "খবরদার, এতো টাকা নিয়ে কেউ মেলাই যাবে না।"
কে শোনে কার কথা। বন্ধুরা মিলে মেলাই ঘুরতাম, যা খুশি খেতাম আর পছন্দ মতো খেলনা কিনতাম।তখনকার সময়ে ছোট ছোট চার কোণার আয়তাকার ভিডিও গেমস আর পুলিশের কাছে ছোট যে ধরনের পিস্তল থাকে ঐ ধরনের পিস্তল পাওয়া যেতো। আর এক ধরনের ছোট্ট গাড়ি পাওয়া যেতো যেগুলো পেছনের দিকে টেনে,তারপর ছেড়ে দিলে সামনের দিকে চলতে শুরু করে।এই খেলনা গুলোর প্রতি খুব আকর্ষন ছিলো।অনেক অজুহাত, বাহানা করে একটা একটা করে সব আদায় করতাম।মনের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করতো, কোন জিনিস নিজে কিনতাম না, নিজে কিনলে যদি বাবা বকা দেয়, মা যদি মারধর করে,তাই বাবা মাকে বলে কিনতাম।যদিও আমাকে কখনো তেমন শাসন করেনি,কোনদিন কোন কিছুতে 'না' বলে নি।বলতে গেলে এক প্রকার স্বাধীনতার মধ্যেই বড় হয়েছি।
এখন মাঝে মাঝে কথা গুলো মনে পড়ে।কতো ছোট ছিলাম তখন!
ঘুরে ঘুরে মেলার স্টলগুলো দেখছিলাম।আগের অর্থাৎ আমার ছোটবেলার সেই পিস্তল,ভিডিও গেমসগুলো তেমন চোখে পড়লো না।বুঝতে পাড়লাম এগুলো এখন অনেকটা বিবর্তনে রুপ নিয়েছে।মাঝে মাঝে দুই একটা স্টলে ছোট ছোট সেই গাড়িগুলো দেখতে পেলাম,তাও খুব কম।আধুনিক প্রযুক্তির আশির্বাদে এটাও কোন একদিন বিবর্তনের ধারায় নাম লিখাবে।
ঘুরতে ঘুরতে খাবারের দোকানের দিকে গেলাম,দেখি ফুসকা,চটপটির বাহার বসেছে।
"মামা এদিকে আসেন,মামা এখানে বসেন।"
প্রত্যেক দোকানি ডাকছে।ইচ্ছে হলো না এগুলো খেতে।সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে একটা গাছের নিচে দেখি একজন লোক উনুনে তা দিচ্ছে আর উপর থেকে ধোঁয়া উঠছে।সামনে যেয়ে দেখি পিঠার দোকান। ভাপা পিঠা।আমার খুব পছন্দের।আমরা তিনজন ছিলাম।আমি বললাম "দোস্ত খাবি?"
"হুম, নে খাই।"ওরা বলল
দোকানিকে বললাম "মামা গরম গরম দেন তো।"
খাওয়ার সময় মা'র হাতের ভাপা পিঠার কথা মনে পড়ছিলো।মা'র হাতের মতো না।মা'র হাতের তৈরি পিঠার স্বাদই আলাদা।পেট ভরবে তাবুও মন ভরবে না।
খুব ইচ্ছে করছে মা'র হাতের পিঠা খেতে।ইস এই শীতে যদি কোথাও মা'র হাতের তৈরী পিঠা পাওয়া যেতো!
বাইরে থাকার কারণে মা'র তৈরি শীতের পিঠা মিস করছি।আমি জানি,আমি না যাওয়া পর্যন্ত মা একটি পিঠাও তৈরি করবে না।আমার অপেক্ষায় আছে মা,'আমি কবে আসবো? কবে মা আমার পছন্দের পিঠা মুখে তুলে দেবে?'
আমি আসবো মা, খুব তাড়াতাড়িই আসবো।
©somewhere in net ltd.