![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বোধ শক্তি হবার পর থেকেই আমার ধারনা ছিলো, আমার মা আমার থেকে আমার ভাইকে বেশী ভালোবাসে। সবাইকে বলতাম এই কথা। বাবা শুনে শুধু হাসত। দাদা কিছু বলত না। আর দাদী কখনোই এই কথা শুনতে চাইত না। শুধু বলত, "মা না থাকলি বুঝতি কিরম লাগে।"
দাদীর এই কথার মর্ম যদি তখন বুঝতাম, তাহলে হয়ত মায়ের সাথে সারা জীবনে যে সব দুঃব্যবহার করেছি, তা করতাম না। যতক্ষণ বাসায় থাকতাম, সময় যেতো শুধু মায়ের সাথে ঝগড়া করে। ব্যপারটা এমন ছিলো, মায়ের সাথে ঝগড়া করব না তো কার সাথে করব?
নিজের শৈশব থেকে বৈরী পরিবেশে বেড়ে ওঠা আমার ধৈর্য্যশীলা মা বেশিরভাগ সময়ই কিছু বলত না। জানি, এখনো কিছু বলবে না।
কিন্তু দাদী কখনোই এটা ভালো চোখে দেখত না। সাথে সাথে কিছু না বললেও যখনই সময় পেতো, রাতে ঘুমানোর সময় কিংবা খাওয়ার টেবিলে, একই কথা জিজ্ঞাসা করত, "মায়ের সাথে এইরকম ব্যবহার কেনো করিস? মা কষ্ট পায় না?"
আমি খুব সাবলীল উত্তর দিতাম, "কষ্ট পাইলে পাকগে। আমার কি? আম্মুতো আমারে ভালোবাসে না।"
দাদী আবার জিজ্ঞাসা করত, "তুই কিভাবে জানিস?"
- আমি সব বুঝি।
- কিছু বুঝিস না। যেদিন মা থাকবে না, সেইদিন বুঝবি। আমিতো থাকব না তখন। আমার কথাডা মনে রাখিস।
এরপরে আর আমি কিছু বলতাম না। চুপ করে থাকতাম।
দাদী মারা যাবার পর পর আমাদের আর্থিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটে। একেবারে আকাশ থেকে পাতালে পতন। খুব হিসাব করে চলতে হত। স্কুলে টিফিনের টাকা সব দিন দিতে পারত না বলে আমার মায়ের আফসোসের শেষ ছিলো না।
যেই কথাটা মায়ের কাছে বলতাম না, সেটা হচ্ছে সবদিন টিফিনের সেই দুই টাকাও পকেটে থেকে যেতো। দুইটাকা করে জমিয়েই একদিন বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখতাম।
বাসায় নিয়মিত নিরামিষ খেতে হতো। চোখ বন্ধ করে নাক টিপে খাওয়ার মত। একদিন ভাতের থালা উল্টে ফেলে দিলাম। দাবী একটাই, মাছ ছাড়া আর কোন ভাত খাওয়া নেই।
আমার অপরিসীম ধৈর্য্যশীলা মা, এবারো কিছু বললো না।
পরের দিন দুপুরে খাওয়ার টেবিলে ঠিকই মাছে পেলাম। কোথা থেকে আসলো, কে আনলো, সেসব ভাবার সময় আমার ছিলো না। আমি খেয়ে উঠে গেলাম।
রাতে পড়ার টেবিলে বসে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম, সেই মাছ কেনা হয়েছে আমাদের বাসার কচুশাক বিক্রির টাকায়।
ছোটবেলায় অনেক ছিঁচকাদুনে ছিলাম। কিন্তু সেদিন আর কান্না আসলো না।
২০০৭ এ বাড়ি ছেড়ে ঢাকা গেলার বিদ্যার্জনের স্বার্থে। এরপর থেকে আমার মায়ের বিষয়ে সব ভুল ধারনা ভাঙ্গলো, চোখ খুললো। আস্তে আস্তে বুঝলাম, আমার মা দিনকে দিন কত কষ্ট করে গেছে এতোদিন।
বাড়ি গেলে আম্মুর ব্যস্ততা, এটা-ওটা রান্না করার তোড়জোড় দেখে শুধু হাসি আসে এখনো।
তারপর একদিন দাদীর কথা আংশিক ফলে গেলো। আম্মুর স্ট্রোক হলো। হাসপাতালে থাকতে হলো অনেকদিন। সেখানে শুয়েই আমার মা শুধু বাসার মানুষগুলোর কথা চিন্তা করত। বারবার বলতাম সব ঠিক আছে। কিন্তু দাদীর বলা কথাগুলো ঠিকই কানে বাজত বাসায় ঢুকলে। সাজানো সব কিছু কেমন যেন ধ্বংস ধ্বংস মনে হতো। যেদিকে তাকাই, সেদিকেই শুন্যতা।
মা না থাকলে কি হয়, সেটা ঐ কয়দিনেই বুঝে গেলাম।
আর কখনো মায়ের সাথে দুঃব্যবহার করিনা। সময় -অসময় যখনই ফোন করে, কখনোই যেনো ফোন ধরতে মিস না হয় সেই চেষ্টা করি।
আম্মু যখন সুস্থ হয়ে বাসায় আসলো, আমার টার্ম ফাইনালের ৫ দিন বাকী। ঢাকা ফিরে গেলাম।
যথারীতি পরীক্ষা খারাপ হলো। জানতাম পাশ করব না প্রথম পরীক্ষায়। রেজাল্ট বের হবার পর আমার কোর্স এডভাইজার এবং প্রিয় শিক্ষক এ এস ডাব্লিউ কার্নি স্যারের কাছে গেলাম। স্যার জিজ্ঞাসা করলেন,
- কি খবর?
- স্যার, একটা সবজেক্টে ফেইল।
- থার্মোডাইনামিক্স?
- জ্বী
- আমি কি তোমাকে বলছিলাম, ঐ সাবজেক্টের যে কোন সমস্যা থাকলে আমার কাছে আসতে ?
- স্যার, আমার আম্মু অসুস্থ.......
সেদিন আর চোখের পানি আটকে থাকলো না। আবার কখন স্যার দেখে ফেলেন, তাই রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। স্যার পিছন থেকে ডাক দিলেন।
- শোন, মায়ের সেবায় যদি কোন সময় ব্যয় করে থাকো, তাহলে সেটা নিয়ে আফসোস করবা না। আর যদি আফসোস থাকে , তাহলে আমার কাছে আর আসবা না।"
স্যার তার স্বভাবসুলব ভাবগম্ভীর ভাবেই কথা বলছিলেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো, এতো সুন্দর কথা আমাকে এর আগে কেউ কখনো বলেনি।
স্যার কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বললেন, "যা খারাপ হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে ভেবে চেইন রিএকশন শুরু করো না। সামনের গুলো দেখো ঠিক করে"
এটুকু বলতে পারি, সেদিন স্যারের রুম থেকে হাসি মুখে বের হয়েছিলাম।
খুব অবাক হই এটা ভেবে, মায়ের থেকে এখন এতো দূরে থাকি, তারপরেও আমার সামান্য কোন অসুখ হলেও মা কিভাবে সব টের পেয়ে যায়? কি সেই অলৌকিক ক্ষমতা?
গতকাল প্রচন্ড মাথা যন্ত্রনা ছিলো, সেই সাথে সর্দি কাশি।
আমার মা ফোন করেই বললো, "আমার আজকে দুপুর থেকে খুব খারাপ লাগতিছে। তোর কি শরীর খারাপ? তোর জন্যি খুব খারাপ লাগতিছে। "
বললাম, "না, এইসব তোমার অহেতুক চিন্তা করার কারনে মনে হয়।"
- মিথ্যে কথা বলিস কেনো? তুই তো আগে মিথ্যা বলতি না আমার কাছে।
কি আর বলব। আমারতো মনেই থাকে না আমার মা সব টের পেয়ে যায়।
মুরুব্বিদের কাছে শুনি, তারুন্যে একই সাথে বাবা এবং মায়ের অসুস্থ অবস্থায় সেবা করার মত সৌভাগ্য সবার হয় না।
আমি সেই সামান্য কয়েকজন সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন।
দাদী আজ বেঁচে থাকলে জিজ্ঞাসা করতাম, "মা বিহীন সারাটা জীবন কিভাবে কাটালেন?"
২৩ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৫
কামরান মানছুর বলেছেন: কেনো?
২| ২৩ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:২২
কালের সময় বলেছেন: দাঁত থাকীতে দাঁতে মর্ম কেউ বুজি না ভাই
২৩ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:৫৩
কামরান মানছুর বলেছেন: এটাতো ইউনিভার্সাল সমস্যা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৪৫
নির্ঘুম লযাম্পোস্ট বলেছেন: গলার পানি শুকিয়ে গেছে...