![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাবমূর্তি বনাম দেবমূর্তি
চাষা হাবিব
একটি জাতি বা প্রতিষ্ঠান বা একজন মানুষকে তিল তিল করে তার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হয়। ভাবমূর্তি এমন একটি বিষয় যা একটি জাতি বা প্রতিষ্ঠান বা একজন মানুষকে মহৎ থেকে মহত্তে নিয়ে যায়। করে তোলে তাকে মহীরুহ এবং তিনি পরিণত হন কিংবদন্তিতে। আবার এ ভাবমূর্তি একদিনে কিংবা খুব সহজেই রাতারাতি গড়ে ওঠে না, এর জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয় ঘাত-প্রতিঘাতের বিস্তর অসমতল এবং দূর্গম পথ। অথচ খুব সহজেই আমরা ভাবমূর্তির স্বরুপ বিশ্লেষণের কথা বলি, আবার মুখের উপরেই কারো ভাবমূর্তিকে ধুলিসাৎ করতে তৎপর হই। ভাবমূর্তি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বা একজন মানূষের ভাবমূর্তিকে পুজি করে ফায়দা লুটি এবং কখনো কখনো ভাবমূর্তিকে আমরা দেবমূর্তিতে পরিণত করার অপচেস্টায় লিপ্ত হই, হয়তবা সে ব্যক্তি বা বিষয়কে দেবতা বানিয়ে দেবমূর্তিতে পরিণত করে ফেলি। এতে করে ভাবমূর্তির চরম সংকট সৃষ্টি করে বাহুল্য দেবমূর্তির মালায় সে বিষয় বা ব্যক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীলতায় বেধে ফেলে তার বিশালতাকে সংকীর্ণ বলয়ে আবদ্ধ করি। যেমনটা আমরা সম্প্রতিক কালে খুব বেশি দেখতে পাচ্ছি। আজ বাংলাদেশসহ গোটা ভারতবর্ষ যেন ভাবমূর্তির চরম সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে
এবার আসা যাক ভাবমূর্তি’র স্বরুপ বিশ্লেষণেঃ
ভাবমূর্তি একটি কাঠামোগত বিশেষ অর্জন যা বিশেষ সময় সাপেক্ষে একজন মানুষকে তার চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সকল ধরনের প্রতিকূলতা কে পেরিয়ে আদর্শিক ও মূল্যবোধের প্যারামিটারে কাঙ্খিত মান অর্জন করে তবেই তাকে হতে হয় শক্তি, সাহস, মর্যাদা এবং ক্ষমতার উৎস। সঙ্গে সঙ্গে হতে হয় তাকে প্রচলিত সমাজ কাঠামোর বাহিরে থেকে কিংবা মধ্যে থেকেই সংস্কারক এবং প্রচলিত সমাজ কাঠামো কিংবা ক্ষমতা কাঠামোয় আদর্শ ব্যক্তিত্বে; যিনি একাধারে হয়ে ওঠেন আবার ঐক্যর প্রবাহক এবং প্রগতির ধারক। আবার ভাবমূর্তি নিজে নিজেই সংজ্ঞায়িত হয় না, এটা অনেকটা স্বীকৃতিমুলক অলংকার, যেমন করে মাধ্যম দিয়ে অলংকার পরতে হয় বা পরাতে হয়। বলা হয় ভাবমূর্তি একটি সমষ্টিক আকর যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ব্যক্তিত্বের একটি বিশেষ অর্জনও বটে।
’ভাবমূর্তি’ শব্দটি ’ভাব’ এবং ’মূর্তি’র সমন্বয়ে সৃষ্টি। ’ভাব’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ জন্ম বা সৃষ্টি বা উৎপত্তি এবং ’মূর্তি’ হলো প্রতিমা বা আকার দেওয়া ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এমন কিছুকে বোঝায়। আবার ’ভাবমূর্তি’ শব্দের শাব্দিক অর্থ চিন্তা ও অনুভুতির পরিপূর্ণ রুপ বা কল্পনা দিয়ে তৈরি মূর্তি এরুপ। বলা যায়, যেমনটা কল্পনার মিশেলে মূর্তি বা প্রতিমা বানানো বা নির্মান করা হয়, সে রুপ কোন ব্যক্তিত্ব বা ব্যক্তির অর্জিত গুণের সমারোহকে কল্পনা করে সে ব্যক্তিত্ব বা ব্যক্তির গুণের এক কল্পনা প্রসূত রুপই হলো তার ভাবমূর্তি। এখানে প্রাসাঙ্গিকভাবেই ব্যক্তিত্ব শব্দটি এসে যায়, কোন ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত বিশেষ গুনবাচক চারিত্র্যিক বৈশিষ্ঠ্যাবলী যখন ব্যক্তির সাথে যুক্ত হয়ে ব্যক্তির মর্যাদা বা ক্ষমতা বা আভিজাত্যতা বাড়িয়ে তোলে তখনই ব্যক্তি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় এবং গড়ে ওঠে ব্যক্তির ভাবমূর্তি, ঠিক তখনিই ব্যক্তি হয় সমার্দিত আর ব্যক্তিত্বে সৃষ্টি করে সমীহ এবং মর্যাদা। তাকে নিয়ে গড়ে ওঠে কিংবদন্তি কিংবা উন্মাদনা আর ভালোবাসার অতিশায়োক্তি। ব্যক্তি হয়ে ওঠেন সমাজ, গ্রোত্র কিংবা জাতির বিবেক-কন্ঠস্বর। এ সময়েই অজান্তেই হোক কিংবা ইচ্ছাকৃতই হোক ব্যক্তিকে কতিপয় প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান দেবমূর্তিতে রুপান্তরে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এখানেই ব্যক্তিকে হতে হয় সতর্ক নচেত ব্যক্তির ভাবমূর্তি একবার দেবমূর্তিতে পরিণত হলেই সর্বনাশ। সমাজ বা গ্রোত্র বা জাতির জন্য সে দেবমূর্তি অনেক সময় ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। জন্ম দেয় বিভক্তি আর দেবতার আসনে ব্যক্তিত্ব হয়ে পড়ে পরীক্ষার সামগ্রিতে। তখন জনদেবতার আসনে ধরে ফাঁটল। ব্যক্তিত্বকে দিতে হয় দেবত্বের চরম মাশুল। ঘটে জনদেবতার ভূমিধ্বস জনবিচ্ছিন্নতা, আর এর জন্য সমাজ বা গ্রোত্র বা জাতিকে গুনতে হয় পরম মূল্য। আমরা ভারতবর্ষ এর ভুক্তভোগি। ভারত উপমহাদেশে ভাবমূর্তিকে দেবমূর্তি বানানোর প্রবণতা অনেক বেশি, আর এ কাজটি করতে গিয়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের মহান ব্যক্তিত্বদের, সঙ্গে সঙ্গে ক্ষণজন্মা এসব মহান ও আদর্শ দিকপাল ব্যক্তিদের। এর পরিনাম কি হতে পারে তা আমারা আজও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এবং এর ফলাফল এখনো ভোগ করছি।
দেবত্ব আরোপ করতে গিয়ে মানুষকে দেবতার আসনে বসালে সে ব্যক্তি বা মানুষ নিজের সত্বাকে বিকিয়ে দেয় মেকি জনপ্রিয়তায় কিংবা তোষামোদের ব্যারোমিটারে। এখানে একটি বিশেষ প্রবণতা কাজ করে যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত আদর্শকে নিয়ে যায় উচ্চতম স্থানে, ফলে সেখানে আর কখনোই দেবত্ব সম্পূর্ণ জায়গাটিতে আমরা চাই না কাঙ্খিত ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক বা দৃষ্টিকটু কোন আচঁড়, তাই তো দেখি দেবত্ব পাওয়া ব্যক্তিত্বের মহা উলম্ফের আষ্ফালন। যেনো তিনি মানূষ থেকে দেবতার কাতারে গিয়ে ভুলেছেন সকল নেকিবাচকতার পঙ্কিল পথ। কোন নেতিবাচকতাতেই তাকে আমরা আর ফেলতে চাই না। তিনি শুধুই মহা নায়ক দেবতুল্য দেবত্বের দেবমূর্তি। আবার সুযোগ বুঝে একদল প্রতিক্রিয়াশীল, ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ ব্যক্তির আমিত্বে প্রবেশ করে ব্যক্তিকে মেকি আমিত্বের দেবত্বে নিয়ে গিয়ে ভাবমূর্তির ব্যক্তিকে ধোঁকায় ফেলে, এক্ষেত্রে ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ ব্যক্তি নিমজ্জিত হয় দেবত্ব লাভের মহা স্রোতে। ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে পরিণত হয় দেবতায় আর ভাবে সে তো আর দশজনের মত সাধারণ ব্যক্তি নয়। তার আছে বিশাল ভাবমূর্তি, আছে জনপ্রিয়তা এবং আছে ব্যক্তিত্বের বড়াই, যা তাকে ভিতরে ভিতরে নিজেকে দেবতা ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। সে মনের অজান্তেই তার দেবমূর্তি কল্পনা করে। আর প্রতিক্রয়াশীল মনোভাব এ অনুভুতির গোড়ায় জল ঢেলে তাকে আরও ফেলে-ফুপে উঠতে সহায়তা করে। ফলে সে দেবমূর্তির ধোকায় নিপোতিত হয়। এ মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিটি আখেরে এতদিনের তার অর্জিত ভাবমূর্তিকে করে প্রশ্নবিদ্ধ, ফলে তিনি শেষ পর্যন্ত আবদ্ধ হয়ে পড়েন গোষ্ঠি চক্রে কিংবা প্রতিক্রিয়াশীলদের খপ্পরে। আমরা ভাবমূর্তির সেই ব্যক্তিটিকে আর পাই না আদর্শ মানদন্ডে, জনদেবতা হয়ে পড়েন বিভক্তির ব্যক্তিতে, জনতুষ্টির তথাকথিত আমিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে আবদ্ধ হোন মেকি ইদমে। অনেক ঐক্যের যে ভাবমূর্তি তা হয়ে পড়ে খন্ডিত এবং ব্যক্তি বা অঞ্চল বিশেষের। আর তখন মহা ক্ষতি হয় সমাজ, গোষ্ঠি বা জাতির। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের জনদেবতা কিংবা আদর্শ ভাবমূর্তির প্রিয়তম ব্যক্তিত্বকে।
ভাবমূর্র্তি নির্মান প্রক্রিয়াঃ
এবার দেখা যাক, কিভাবে ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে বা নির্মান হয় সে প্রসঙ্গে। ভাবমূর্তি একটি প্রবাহমান বা চলমান প্রক্রিয়া যেটি শুরু হয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো এক এবং এক এর এককের মাধ্যমে। ভাবনা থেকেই মানুষের নবতর উদ্যোগের ক্ষেত্র তৈরি হয়। মানুষ একমাত্র প্রাণি যে ভাবতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভাবনাকে পরিকল্পনায় নিয়ে তাকে বাস্তবতায় রুপ দিতে পারে। কোন ভাবনা মানেই তা একটা পরিকল্পনা। এখন এ ভাবনা বা ইচ্ছাকে যদি সংগঠিত করা যায় তবে তৈরি হয় তার ভাবনার ঐক্য আর এ রকম অনেকগুলো ঐক্য আবার একটা বড় ঐক্য তৈরি করে ব্যক্তিকে করে তোলে সাহসি,ফলে সে নিতে পারে সিদ্ধান্ত এবং নেয় সেই চ্যালেঞ্জ যেমনটা আমরা দেখি একজন মানুষের সফল হবার ক্ষেত্রে। এ ঐক্য প্রক্রিয়াটির একটি গ্রাফে দেখা যাক-
অনেকগুলো এক বড় ঐক্য সৃষ্টি করে শক্তি সাহস ক্ষমতা পুঁজি সক্ষমতা মর্যাদা নেতৃত্ব প্রভাব প্রতিনিধিত্ব ভাবমূর্তি অস্তিত্ব দেবত্ব দেবমূর্তি
বি.দ্র. এই এক হলো একেকটি বৈশিষ্ট্য বা গুন কিংবা একক ব্যক্তি বা প্রান্তিক কোন বিষয় যা ক্ষুদ্রতম সত্বা বা মৌলিক একক।
চিত্রঃ ভাবমূর্তি গঠন প্রবাহ
উপরোক্ত গ্রাফের আলোকে এবার বিষয়টি একটি উদারণের মাধ্যমে দেখা যাক, কিভাবে একজন ব্যক্তিকে শক্তি এবং সাহস ক্ষমতায়িত করে মর্যাদার মহা আসনে নিয়ে যায়, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে যে ইতিহাস, সেটার পেছনে মুখ্য ভ‚মিকা রেখেছে তার অদম্য সাহস, ঝুঁকি নেবার ক্ষমতা এবং তার নেতৃত্ব, ত্যাগ আর সক্ষমতার একক সত্বা। তাইতো বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য লেখক আহমদ ছফা শেখ মুজিবুর রহমান নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ। এখানে আমি যা বলতে চাচ্ছিলাম তা হলো, কিভাবে ভাবমূর্তি তৈরি হয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ বঙ্গবন্ধু। এছাড়াও মাহাত্মা গান্ধি, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা ভাসানী, কিংবা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সহ অসংখ্য নেতা কিংবা ব্যক্তিত্বকে এবং তাদের অর্জিত ভাবমূর্তিকে আমরা দেবত্ব দিয়ে দেবমূর্তিতে রূপ দিয়েছি। এর ফল আখেরে আমাদেরকেই এখনো ভোগ করতে হচ্ছে।
এবার দেবমূর্তি প্রসঙ্গে কিছু কথা না বললেই নয়; দেবমূর্তি এমনিতেই সৃষ্টি হয় যদি ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা যায়। ভাবমূর্তি তৈরি করা জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, কেননা ভাবমূর্তি তৈরি এ জীবনের সাফল্যও বটে। প্রতিটি সাফল্য, জীবনে ভাবমূর্তি তৈরি করে। আমরা সারা জীবন ধরেই এই ভাবমূর্তি তৈরির প্রক্রিয়ায় নিবিষ্ট থাকি। কেননা আমরা অস্তিত্বে বিশ্বাস করি বলেই নিজের জোরালো অস্তিত্ব নির্মানে সতত ব্যস্ত। এ ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি, অস্তিত্ব তৈরি করে ব্যক্তিকে দেবত্ব দেয় এ বিশ্বাস থেকেই মানুষ নিজের রুপের দেবত্ব দিয়েছে এবং দেবতার আকার আকৃতি নির্নয় করেছে। পৃথিবীর সব বিশ্বাসেই দেখা যায় দেবতার আকৃতি এবং বিকাশ মানুষ রুপেই চিত্রিত। মানুষ তার মত করেই নির্মান করেছে তার ভাবনার জগত। তাই তো বলা হয় ভাবনার সমষ্টির জায়গা থেকেই ভাবমূর্তি তৈরি আর ভাবমূর্তি থেকেই তার অস্তিত্ব এবং অস্তিত্ব থেকেই দেবত্ব কিংবা দেবমূর্তি। অনেকের সঙ্গে না মিললেও আমি এটাকে বলি থিওরি অব এভরিথিংক। এখানেই রয়েছে সৃষ্টি তত্তে¡র মৌলিক প্রশ্নের উত্তর।
এখন প্রশ্ন হলো কেউ যদি অন্যের দ্বারা দেবমূর্তি হতে চায় কিংবা কাউকে দেবমূর্তি বানাতে চায় তাহলে সেটা কি হয়-সেটা নিছকেই চাটুকারিতা, যা নষ্টামি আর আমিত্বের ভ্রষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। আজ আমাদের বাংলাদেশ সহ এ ভারত উপমহাদেশে ভাবমূর্তির ব্যক্তিত্বকে দেবতা বানানোর রাজনীতি চলছে। এভাবে বানানো দেবত্ব একদিন পুড়ে ছারখার হয়ে যে যাবে না, তার কি গ্যারান্টি। আমরা এ ইতিহাস তো জানি, নিকট কালে এর ভুরি ভুরি নজির এ উপমহাদেশে রয়েছে। তবু আজ ভাবমূর্তি বনাম দেবমূর্তির এ নষ্ট রাজনৈতিক খেলা চলছে....সাধু সাবধান, না হলে দেবতা বানানোর এই খেলায় ব্যক্তিত্ব নিজেই নিকৃষ্ট কীটে পরিণত হবে।
আমি সত্বায় আমিত্ব ও ভাবমূর্তির সংকটঃ
এবার আসি আমি সত্বায় কিভাবে আমিত্ব সফল হলে তা ভাবমূর্তির সূতিকাগার হয়ে ওঠে সে প্রসঙ্গে- আমি শব্দটি একটি সর্বনাম। সাধারণত আমি ব্যক্তিক বৈশিষ্ঠ্য ধারণকারী একটি বিশেষ র্দ্ব্যথক শব্দ। এটি মূলত ব্যক্তি সত্বার পরিচায়ক। আমি দিয়ে একজন মানুষ হিসেবে আমার অন্তঃজগত এবং বহিঃজগত কে উপস্থাপিত হয়।
আমি একান্তই ব্যক্তি কেন্দ্রিক একটি ধারণা। একজন ব্যক্তি তার মনোজগত এবং ভাবনার সঙ্গে তার জ্ঞান এবং বিবেকের বহির্জগত এর বহিপ্রকাশই হলো আমি। এই আমি একটি ঈদমও বটে। সকল রিপুর সঞ্চালকও এই আমি। ব্যক্তি আমি যখন সংকীর্ণ চিন্তার জগতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে তখনই আমি ভাবমূর্তি সমাজ বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। নিজেকে অপ্রতিরোধ্য ভাবা শুরু করে। আমি তখন ভোগের পূজারী হয়ে যায়, আর সেই আমি ব্যক্তি আমি’র স্বার্থে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে আমি তখন নিজ স্বার্থ এবং নিজ উন্নয়ন ছাড়া কিছুই বোঝেনা। ফলে এই আমি তখন পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে বিভাজন সৃষ্টি করে শ্রেণিতে রুপান্তরিত হয়, এর ফলে আমি সমাজ উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আমি তখন হয়ে ওঠে অহংকারের এবং আত্ম গৌরবের চলক।
এই আমি দিয়ে আবার সামষ্টিক ভাবমূর্তিও তৈরি করা সম্ভব। এই আমিকে যদি আমাদের সত্বায় উন্নীত করা যায় তবে তা আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে অনেকগুলো আমি আমাদের হয়ে সম্মিলিত পরিবর্তন ঘটিয়ে সামষ্টিক ভাবমূর্তি তৈরি করে বিপ্লব ঘটিয়ে সমাজের গতিশীল এবং ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়। আদতে সামষ্টিক ভাবমূর্তিই মঙ্গলময়, এতে থাকেনা কোনো হীনমণ্যতা কিংবা পঙ্কিলতা এবং থাকে সাম্যতা ফলে, সমাজের, দেশের এবং রাষ্টের নেতৃত্বে তৈরি হয় সামষ্টিক নেতৃত্বতা যার বিকাশে গড়ে ওঠে জাতীয়তাবোধ। এই আমি তখন আমাদের কাঠামোয় এতই শক্তি অর্জন করবে যে, সে আমিকে যে কোন বাধা বা অপশক্তি ভয় পেয়ে আমাদের সহায়ক হয়ে উঠবে এবং শক্তি আমাদের আমি’র নিকট নতজানু হয়ে তার প্রভুত্ব মেনে বশ্যতা স্বীকার করবে। জয় হবে আমিত্বের, জয় হবে আমি’র যুগল সংঘের, যা রাষ্ট্রের বা জাতিসত্বার বিকাশে সকল আমিকে এক কাতারে এনে এক সুষম জাতীয়তাবোধের মাধ্যমে জাতীয় ভাবমূর্তির সৃষ্টি করবে, সৃষ্টি করবে যৌথ আমি’র নেতৃত্ব।
এবার আমার আমিকে যদি মানবিক উন্নয়নকামী হিসেবে চিন্তা করা যায় তা হলে দেখা যাবে যে, যে চারটি গুন উন্নয়নকামীর আবশ্যক সে বিচারে আমি কি তা স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাবে। আমি যোগ্যতা বিচারে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকলেও কারিগরি দক্ষতা বা নৈপুন্যে কমতির কারনেই আমিকে একনিষ্ট উন্নয়নকামীতে রুপান্তরের নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে আমি অর্ন্তদৃষ্টি, আমি’র অন্যতম বড় অস্ত্র।
আবার মানবিক হিসেবে আমি যদি একটি মানবিক অঙ্গীকার নিয়ে কর্মে লিপ্ত হয় তবে সে মানবিক অঙ্গীকার এর উৎসমূল হলো মহান আমি সত্বা থেকে। তাই এ কর্মের জন্য যত রকম ত্যাগ, সংকল্প এবং আত্মবিশ্বাসই হলো আমার আমি’র সম্পদ। যা আমাকে মানবিক উন্নয়নকর্মীতে রুপান্তর করছে বলেই সে আমার আমিকে প্রস্তুত করছে।
একজন সৃষ্টিশীল মানুষের আধার হিসেবে আমি প্রতিনিয়ত ভাবনার সৃজন, পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা এবং বাস্তব কর্ম ক্ষেত্র থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা থেকে আমার আমিকে শাণিত করছে এবং আমি আমাদের কাজে আমিকে নিয়োজিত করছে। তাই আমার আমি মানবিক উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমিতে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাই আমিই বলা যায় সকল মানবিক উন্নয়নের সহায়ক যদি সে আমি, আমি হয়ে ওঠে সত্যিকারের আমি হয়ে।
এবার যদি দেখা যায় দেখা যাবে যে, একজন উন্নয়ন সমাজকর্মীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার মানবিক চরিত্র ও আচরণ। এই আমি চরিত্রই পারে আমিকে আমাদের হতে সাহায্য করতে। সততা তথা সৎচিন্তা, সৎকর্ম, সর্ব মতের বা দ্বন্দের সমন্বয় করে আমিকে সংকীর্ণতা থেকে উত্তরণে প্রেষণা দিতেই আমি তখন সকল প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় আমিত্বের সাহসে এবং সামাজিক অশান্তি, অব্যবস্থা, অবিচার কিংবা ন্যায্যতা আদায়ে আমি আমাদের হয়ে অনেকগুলো আমিকে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে সহায়তা করে।
তাই বলা যায় আমিকে অবশ্যই হতে হবে সত্যের পক্ষের, ন্যায়ের পক্ষের, তবেই মানবিক উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমি হয়ে উঠি আমাদের, আর এই আমি নিজেকে করে তুলতে পারে আমাদের আমিতে। এখানেই ঐক্যের আমি’র জয় হয়, জয় হয় আমার আমি’র। এ আমিই আজ বড্ড প্রয়োজন, এ সামষ্টিক আমি’র মাধ্যমেই গড়ে ওঠে তখন ভাবমূর্তি আর সে ভাবমূর্তিই হয় দেবমূর্তির সূতিকাগার, যা খুব বেশি প্রয়োজন এ সময়ে।
এবার শেষ কথায় আাসি, মনে রাখা দরকার আপনার ভালোবাসা আমার ক্ষতির কারণ হতে পারে, ভালোবাসার স্বরুপ প্রায়শই নেতিবাচক হয়। তাই ভালোবাসায় সতর্ক হওয়ার কথা বলা হয়। এতে সাহস, শক্তি এবং ক্ষমতা লাগে, নিজের শক্তির বাক্সটা খুলে আগে নিজেকে শাণিত করে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, তবেই নিজের ভালোবাসার দাপট দেখানো সম্ভব। আর এ কাজের মাধ্যমেই ব্যক্তিত্ব অর্জন, এরপর সে ব্যক্তিত্বের পিঠে চড়ে ভাবমূর্তির পাহাড় গড়ে তুলতে হবে। এখানে সতর্ক হতে হবে, এ ভাবমূর্তি আমাকে আবার দেবত্বে নিয়ে যাচ্ছে কিনা কিংবা আমি নিজেকে দেবতা ভাবছি কি না। ভাবমূর্তিতে সন্তুষ্ট থাকাই বাঞ্জনীয়, কেননা ভাবমূর্তিই আমার শেষ অস্তিত্ব, যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। যদি ভাবমূর্তি কে কিংবদন্তিতে নিতে পারি তবে তা আমাকে দেবত্ব দিবে আর আমি জনমনে দেবতার আসনে আসীন হবো।
চাষা হাবিব
কবি ও গবেষক
ইমেইলঃ [email protected]
©somewhere in net ltd.