![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসঃ ৯০ লাখ মানুষ জানেই না, তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত
দৈনিক প্রথমআলো, ২৮ জুলাই ২০২০
চাষা হাবিব
করোনার মহা ধাক্কায় দেশে আর সব সমস্যাসমূহ যেন চাপা পড়ে গেছে। একদিকে বন্যা অন্যদিকে হাজারো সমস্যায় দেশ যখন ক্ষতবিক্ষত তখন করোনায় বুদ হয়ে সরকারও যেন কিছুটা আয়েশে সময় পার করছে। করোনা বিষয়টি আজ যেন অনেকটা জনতামাশায় পরিণত হয়েছে। যেখানে বিশ্বব্যাপি করোনা পরীক্ষার গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে, সেখানে আমরা উল্টো স্রোতে সে গতিকে কমিয়ে দিযে ভাবছি এসব করে কি হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রশিটানাটানি খেলায় জাতি যেন ক্লান্ত। সবেতে লুটেরাদের রাম রাজত্ব শুরু হয়েছে। কেউ দোষ স্বীকার না করে একে অপরকে দোষারোপ করছে। একটা জাতির রাষ্ট্রযন্ত্রের কতখানি অধঃপতন হলে এরুপ আচরণ করতে পারে সেটা এখন গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব যেন মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়, তিনি ছাড়া দেশে আর কোন কাজের লোক আছে বলে অবস্থা দেখে মনে হয় না। প্রান্তিক গরিব আর অভাবী লোকের কথা তিনি ছাড়া আর যেন ভাবার কারো কোন ফুরসৃরত নেই। সবাই নিজের গদি বাঁচার চিন্তায় নিমগ্ন।
বন্যার একমাস হতে চললো অথচ কি চরম সংকটে পতিত মানুষ আর দায়িত্বশীলদের কথা শুনে মনে হয় দেশে কোন সংকট নেই।প্রশাসনের লোকজন কথা বলছেন রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর সুরে-কি সেলুকাস এ জাতির জ্ঞানী আর মেধাবি প্রজন্ম, যাদের ঘামের অর্থে এনারা আমলা বা ক্যাডার হয়েছেন তাদের নিয়ে ভাববার অবকাশ তাদের নেই। যেখানে জাতি পূর্নগঠনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে তাঁর নেতানেত্রী এবং আমলাদের আচরণ আর কান্ডকীত্তি দেখে মুখ লুকানোরও জো নেই। আর সুশীল’রা! মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। কেউ এসবের তেমন প্রতিবাদ করছেন না। কর্তাদের ভাবে মনে হয়, দেশটাকে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। দিনে দুপুরে ব্যাংকে জমানো সাধারণের টাকা অনেকটা লুট করে বিদেশে পালিয়েও যেতে পারছেন কি অবলীলায়। আবার গডফাদার এবং প্রমাণিতরাও কিভাবে অদৃ্শ্য ইশারায় পার পেয়েও যাচ্ছেন। একজন নতুন প্রজন্মের না দেখা মুক্তিযুদ্ধের নগন্য গবেষক হিসেবে মনে হয় আমাদের উত্তর প্রজন্ম কি ভুলেই না করেছেন। আমরা আমাদের সাম্যতা ,ন্যায্যতা এবং মানবিক মর্যাদার স্বাধীনতার মানে বুঝিনি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে হাজারো সমস্যায় দেশ আজ যেন অসুস্থ হয়ে দম ফেলছে দীর্ঘশ্বাসে।
এবার প্রসঙ্গ কথায় আসা যাক, বলা হচ্ছে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৯০ লাখ মানুষই জানে না, তারা আক্রান্ত। হেপাটাইটিস নির্মূলে এই অজানা রোগীদের শনাক্ত করা জরুরি।কে করবে এ কাজ? ব্যক্তি নিজেই নাকি রাষ্ট্র।এর উত্তর কে দেবে । সরকারের ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অজন(এসডিজি’স) করতে হেপাটাইটিস নির্মূল করতেই হবে। তাই দেশে বিনা মূল্যে হেপাটাইটিস শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালু করা প্রয়োজন। সরকার ও জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে দ্রুত হেপাটাইটিস প্রতিরোধ কৌশলপত্র প্রণয়ন করা জরুরি। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের যে রুগ্ন এবং অসুস্থ চেহারা, তা দেখে মনে হতেই পারে, এ কাজ কিভাবে সম্ভব।তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তা একমাত্র ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকে না! যদিও আমাদের রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের অনেক গৌরবময় অজন।যা আজ সবকিছুকে ভুলন্ডিত করে হতশ্রীতে রুপ নিয়েছে। এ খাতে বাজেটের চেহেরা সুন্দর হয়েছে, বেড়েছে কেনাকাটা করার সক্ষমতা কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা রুগ্ন থেকে রুগ্ন হয়েই চলেছে।
হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমন বিষয়টির ব্যাপকতা বোঝাতে গিয়ে গত সোমবার দৈনিক প্রথমআলো আয়োজিত ‘হেপাটাইটিস নির্মূলে আসুন খুঁজি লক্ষ অজানা রোগী’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি ডাঃ মবিন খান স্যার বলেন, বিশ্বে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানে না, তারা হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস নির্মূলে এই রোগীদের শনাক্ত করা জরুরি। কেননা দেশে বিশেষজ্ঞ লিভার চিকিৎসকের রয়েছে গভীর সংকট । এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের তেমন সচেতনতাও নেই। হেপাটাইটিসের বিরুদ্ধে সরকারি, বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।না হলে এটি জনস্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এ প্রসঙ্গে সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট ডাঃ নজরুল ইসলাম স্যার হেপাটাইটিস ভাইরাসের ইতিহাস ও রোগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে হেপাটাইটিস এ, বি, সি ও ডি রয়েছে। তিনি বলেন আরও হেপাটাইটিস ভাইরাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত লিভার সেলে হেপাটাইটিস–বি ভাইরাসের উপস্থিতি ছাড়া হেপাটাইটিস-ডি ভাইরাস জন্মাতে পারে না। তবে হেপাটাইটিস-ডি ভাইরাসের সাহায্যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।তাই এ বিষয়টির গভীর অধ্যয়ন প্রয়োজন এবং এ নিয়ে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে আমাদের এগুতে হবে। না হলে একসময় দেখা যাবে যে এ রোগের বিস্তার রোধ করা করোনা ভাইরাসের মতো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। তখন অনেক রোগি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে।তাই এখনই আমাদের কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আর দেরি করার সময় নাই।
পরিসংখ্যানে জানা য়ায়, বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি লিভার রোগীর জন্য মাত্র ১০০ জন লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। পরিসংখ্যানটি কি ভয়বহ, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণকে এক নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসেবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের মধ্যে নয়জনই জানেন না যে শরীরে এই ভাইরাস তারা বহন করছে। এছাড়া এ রোগে আক্রান্তরা অনেকক্ষেত্রেই সুচিকিৎসা পান না। আর বাংলাদেশে হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের একটা বড় অংশ ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া, ডাব পড়া নেয়ার মতো কবিরাজি চিকিৎসার দ্বারস্থ হন।
এবার হেপাটাইটিস কি এ বিষয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করেই আজকের আলোচনার ইতি টানবো। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই নামে পরিচিত সংক্রামক রোগের একটি গ্রুপ। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে। তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ।
হেপাটাইটিস এ
এ হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। হেপাটাইটিস এ হল হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের (HAV) কারণে হওয়া যকৃতের একটি তীব্রসংক্রামক রোগ। অনেক ক্ষেত্রেই খুব কম উপসর্গ থাকে, কিংবা কোনো উপসর্গই থাকে না, বিশেষত ছোটদের ক্ষেত্রে। যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়, তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ এবং উপসর্গের মধ্যে দুই থেকে ছয় সপ্তাহের ব্যবধান থাকে। যখন উপসর্গগুলো দেখা যায়, তখন সেগুলো সাধারণত আট সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে: বমিভাব, বমি হওয়া, উদরাময়, হলুদ ত্বক, জ্বর এবং তলপেটে ব্যথা। প্রায় ১০–১৫% মানুষের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সংক্রমণের পরবর্তী ছয় মাস সময়কালে উপসর্গগুলো আবার ফিরে আসে। বিরল ক্ষেত্রে যকৃতের তীব্র বিকলতা ঘটতে পারে, তবে এটা সাধারণত প্রবীণ মানুষদের মধ্যে বেশি ঘটে।
হেপাটাইটিস এ এর লক্ষণ
• বমিভাব ও বমি হওয়া ।
• উদরাময় ।
• হলুদ ত্বক, জ্বর এবং তলপেটে ব্যথা।
চিকিৎসা
হেপাটাইটিস এ টিকা প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর। কিছু দেশে শিশুদের জন্য এবং আগে টিকা দেওয়া হয় নি এমন অধিকতর ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষদের জন্য এটা নিয়মিতভাবে সুপারিশ করা হয় । এটা সারা জীবনের জন্য কার্যকর বলে মনে হয়। প্রতিরোধমূলক অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল হাত ধোওয়া এবং খাবারকে যথাযথভাবে রান্না করা। কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, প্রয়োজন অনুযায়ী বমিভাব বা উদরাময়ের জন্য বিশ্রাম ও ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়। সংক্রমণগুলো সাধারণত সম্পূর্ণরূপে সেরে যায় এবং যকৃতের রোগ অব্যাহত থাকে না। যকৃতের চরম বিকলতা ঘটলে, যকৃত প্রতিস্থাপনের সাহায্যে তার চিকিৎসা করা হয়।
হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত বা লিভার কে আক্রমণ করে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) এর আক্রমণে এ রোগ হয়। অনেক সময় সংক্রমণের প্রথম দিকে কোন লক্ষন প্রকাশ পায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি লক্ষন দেখা যায় । সাধারনত এই লক্ষনগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং কদাচিৎ লক্ষ্মণ প্রকাশ পাওয়ার পর পরিশেষে মৃত্যু হয়। সংক্রমণের পর রোগের লক্ষন প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে। জন্মের সময় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০% ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হন যেখানে ৫ বছর বয়সের পর আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ১০% এরও কম এতে আক্রান্ত হন। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগেরই কোন প্রাথমিক লক্ষন থাকে না। যদিও এক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে এটি সিরোসিস এবং যকৃতের ক্যান্সার এ রূপ নিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ১৫ থেকে ২৫% মৃত্যুবরণ করতে পারে।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ
• চোখ হলুদ হয়ে যায়, একে জন্ডিস বলে।
• প্রশ্রাবের রং হলুদ হয়।
• পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে জ্বর হয়।
• ক্ষুধা মন্দা এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।
• মাংসপেশি এবং হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয়।
• আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় অস্বস্তি অনুভব করে।
• গায়ের চামরার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।
চিকিৎসা
রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার ৷ সাধারণত এর কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই ৷ নিয়মিত চিকিৎসায় সুস্থ থাকা যায় কিন্তু আরোগ্য হওয়া যায় না ৷ এর মূল চিকিৎসা হলো রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখা ৷ গ্লুকোজের সরবত খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ৷ অড়হড় পাতা, ভুঁই আমলার পাতা ইত্যাদির রস খাওয়ায়ে উপকার পেয়েছেন বলেও অনেকে দাবি করেন ।
হেপাটাইটিস সি
হেপাটাইটিস সি এক প্রকারের সংক্রমণ যা প্রধানত যকৃৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি) এই রোগ সৃষ্টি করে। হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির সচরাচর কোন উপসর্গ (স্বাস্থ্য সমস্যা বা তার রোগ আছে এমন কোন লক্ষণ) থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ যকৃতে ক্ষত এবং বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে। কোন কোন ক্ষেত্রে সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃৎ অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার, বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে, যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। প্রধানত শিরায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত-থেকে-রক্তে সংযোগ, জীবাণু-যুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ও রক্ত সঞ্চালনের ফলে হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণ হয়। পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত।
হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ
• মাত্র ১৫% ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সি তীব্র উপসর্গ সৃষ্টি করে।
• অরুচি, ক্লান্তি, বিতৃষ্ণাবোধ, পেশি বা সংযোগস্থলে ব্যথা, ও ওজন-হ্রাসসহ উপসর্গসমূহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃদু ও অস্পষ্ট।
• কেবল অল্প কিছু ক্ষেত্রেই তীব্র সংক্রমণের সঙ্গে জন্ডিস হয়ে থাকে।
• ১০-৫০% ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংক্রমণ চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যায় এবং অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে তা অন্যদের চেয়ে বেশি ঘটে ।
চিকিৎসা
সংক্রমিত ব্যক্তিদের ৫০-৮০% এর মধ্যে এইচসিভি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে ৪০-৮০% ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের উপসম হয়। বিরল ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই সংক্রমণ সেরে যায়। যাদের দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি রয়েছে তাদের উচিত অ্যালকোহল ও যকৃতের জন্য বিষাক্ত পদার্থ পরিহার করা, এবং হেপাটাইটিস এ ও হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়া। সিরোসিস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের ক্যান্সারের জন্য রয়েছে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।
হেপাটাইটিস ডি
হেপাটাইটিস ডি হ্যাপাটাইটিস ডি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ, এটি একটি ছোট গোলাকৃতি খোদিত ভাইরাস। হেপাটাইটিস ডি সাবভাইরাল হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারন এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর উপস্থিতিতে শুধুমাত্র হতে পারে।
হেপাটাইটিস ডি এর লক্ষণ ও চিকিৎসা
হেপাটাইটিস ডি এর লক্ষণ ও চিকিৎসা হেপাটাইটিস বি এর অনুরুপ । কিন্তু উচ্চ প্রাণঘাতী কারণে, তীব্র পর্যায়ে আরো আক্রমনাত্মক থেরাপিউটিক পদ্ধতির সুপারিশ করা হয় ।
হেপাটাইটিস ই
হেপাটাইটিস ই এক প্রকারের সংক্রমণ যা প্রধানত যকৃৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেপাটাইটিস ই ভাইরাস এই রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগ মল-মুত্র’র মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত সংক্রামিত খাদ্য বা জল-এর মাধ্যমে এই রোগ এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি-তে ছড়িয়ে পড়ে।
হেপাটাইটিস ই এর লক্ষণ
• জ্বর
• অবসাদ
• ক্ষুধামান্দ্য
• বমি বমি ভাব ও বমি
• পেট ব্যথা
চিকিৎসা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ই প্রায় ৪-৬ সপ্তাহে চলে যায়। বিশ্রাম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, অনেক পানি পান করুন, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারকে এখনই এ ব্যাপারে কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। কিভাবে এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা যায় তার উপায় বের করতে হবে।গর্ভকালে, অস্ত্রোপচার, ডায়ালাইসিস ও রক্ত বা রক্তজাত দ্রব্য গ্রহণের আগে অবশ্যই হেপাটাইটিস পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাই অন্তত জন্মের পরপরই শিশুকে হেপাটাইটিস ‘বি’-এর টিকাদান নিশ্চিত করা জরুরি। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূল করতে হলে জন সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এটি নির্মূল সম্ভব না। এটি নির্মূলে সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কৌশল ঠিক করতে হবে। হেপাটাইটিসের টিকা আরও সহজলভ্য এবং জনবান্ধব ও জনকেন্দ্রিক করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
চাষা হাবিব
কবি, গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।
তথসূত্রঃ
১.দৈনিক প্রথমআলো, ২৮ জুলাই২০২০
২. বিবিসি বাংলা অনলাইন
৩. সিমেড, হেলথ ব্লগ
৪. উইকিপিডিয়া
৫. বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবেদন ২০১৯
©somewhere in net ltd.