টঙ্গীর কিশোর সংশোধানাগার ও রুই মাছ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৫

আচ্ছা টঙ্গীর কিশোর সংশোধানাগারের ওই ২০ কিশোরের কী অবস্থা? ওই যে যারা কয়দিন আগে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো, টুকরো কাঁচ দিয়ে নিজেদের হাতকে কেটেকুটে রক্তাক্ত করে...কেমন আছে ওরা এখন? ওদের প্রতিবাদটা ছিলো কি নিয়ে? কেউ জানেন!!!

কর্তৃপক্ষতো দায়সারা গোছের একটা বক্তব্য দিয়েই খালাস...কফ সিরাপ খাওয়া নিয়ে ঝগড়ার সূত্র ধরে নাকি এই কাণ্ড ঘটিয়েছে কিশোরেরা...কাহিনীটা হজম করা কঠিন...কিশোর সংশোধানাগারের এইসব কিশোরেরা সবাই পোড় খাওয়া...দুনিয়ার নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ওদের পরিচয় হয়েছে অনেক আগেই...তাই কফ সিরাপ খাওয়ার মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ওরা নিজের হাতকে চিরে ফেলবে এতোটা বোকা ওরা নয়...একটা জিনিস পরিষ্কার, ওরা ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌছে গিয়েছিলো...আপনি আমি যতোটা ধৈর্য ধারণকে বলি অমানুষিক, নিশ্চিত থাকুন ওরা তা অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছিলো...কারন ওদের ধৈর্যের বাঁধটা আপনার আমার চেয়ে অনেক বেশি উঁচু...

পত্রিকায় সংবাদ দেখে আদালত এই ঘটনার তদন্তে ৭ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন...যদিও সেই সময় পেরিয়ে গেছে গতকালই। এ ব্যাপারে সমাজকল্যান মন্ত্রী বলেছেন, তদন্ত রিপোর্ট আগামী এক মাসেও দেয়া সম্ভব হবে না!!!

বড়োই কঠিন তদন্ততো তাই বোধহয় এতো সময় লাগবে। শুধু এই কথা বলেই তিনি ক্ষান্ত হননি, সংশোধন কেন্দ্র নিয়ে উত্থাপিত অনেক অভিযোগও তিনি কথার মারপ্যাঁচে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন। যেমন নিম্ন মানের খাবারের অভিযোগ তুলতেই তিনি সাংবাদিকদের জবাব দেন, কই আমি তো আজ ওদের সঙ্গে রুই মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। হাস্যকরই বটে, আপনি কারো বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কোরমা-পোলাও খেয়ে যদি ধরে নেনে প্রতিদিনই এই বাসার লোকজন কোরমা পোলাও খায় তাহলে আপনার বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

তদন্তে সময় লাগলে লাগুল তবুও সঠিক তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসুক, দায়ীদের শাস্তি হোক, অবস্থার পরিবর্তন হোক, রুই মাছে সঙ্গে রুই কাতলারাও ধরা খাক এবং কেন্দ্রে ঘনঘন রুই মাছ রান্না হোক এ সবকিছুই আমাদের আশা...তবে সবচেয়ে বড়ো আশা সংশোধনাগারের নামে কিশোর অপরাধীদের নুন্যতম সুযোগসুবিধাহীন এই জেলখানাটা সত্যি সত্যি একদিন ‘কিশোর সংশোধানাগার’ হয়ে উঠবে...যেখান থেকে বেরিয়ে আসা কিশোররা অন্ধকার থেকে আরো অন্ধকারে পা না বাড়িয়ে, আলোর দিকে ছুটে যেতে চাইবে...

২ টি +০/-০