বোয়াল মাছ আল্লােরা অথবা লিলুয়া বাতাসের দেশে

১৮ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭

আল্লোরা দিছেননি কেউ কোনকালে...বা জানেননি বিষয়ডা কী??? অবশ্য অনেকে জায়গায় এইডারে 'ডালা শিয়ার' বলে...স্থানীয়ভাবে হয়তো আরো অনেক নাম আছে তা আমি ঠিক জানি না...ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে হাওর, মাঠঘাট, খেতে জমা বর্ষার নতুন জলে হারিকেন হ্যাজাকের জলে চুপচাপ ঝোপ বুঝে টুপ করে মাছ শিকারই আল্লোরা...রাতের অন্ধকারে কী দারুণ কৌশলেই হাঁটু জলে নিশব্দে মাছকে কোঁচে খাতে শিকারীরা তা না দেখলে বোঝা বড় কঠিন...

দক্ষিণের খালে-বিলে নাকি বোয়াল মাছ ধরা পড়ছে ব্যাপকহারে...ঝালকাঠীর রাজাপুর উপজেলার বিষখালী, জাঙ্গালীয়া আর হলতা নদী নাকি এখন বোয়ালময়...শুনলাম এক দুপুরেই নাকি একাই একজন প্রায় একশ বোয়াল মেরেছেন...বর্ষার নতুন জলে বোধহয় দখিনের বােয়াল ঝাঁকের ঘোর লেগেছে এ কারণেই বোকার মতো গভীর জল ছেড়ে ওরা উঠে আসছে মাঠ ঘাটে...

বোয়াল মাছ ধরা নিয়ে কতো গল্প যে শুনেছি রাতবিরাতের শিকারীদের মুখে তার ইয়াত্তা নেই...আমারো একটা গল্প আছে...উঁহু গল্প না অভিজ্ঞতা...আগেও লিখেছি...আবারো লিখলাম...বেঁচে থাকলে আবারো লিখবো....

রাত ৯টার মতো বাজে...কিছুক্ষন আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে...বিলের এককোনে নৌকায় বসে সিগারেট ফুঁকছি...সঙ্গীরা পাড়ে হ্যাজাক জ্বালাতে ব্যস্ত...রাতভর হ্যাজাকের আলোয় চলবে মাছ শিকার...আমি শিকারী নই, দর্শক...নিতান্তই দয়াপরবশ হয়ে এরা দলে নিয়েছে আমাকে...

একটু দূরের পাটক্ষেত থেকে শিয়ালের ক্রমাগত করুণ বিলাপে কানা পাতা দায়...বিলের পানিতে অনেকগুলো আধফোঁটা শাপলা...আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সেদিকেই...হঠাৎ কি জানি হয়ে গেলো...ভোজবাজির মতো পুরোটা বিল ভরে গেলো দুধ সাদা শাপলা ফুলে...এক সেকেণ্ডের কারবার, আধফোঁটা ফুলগুলো ফুটেছে...ঘোর লাগে আমার চোখে...

সঙ্গীদের কাউকে কিছু বলি না...আমার আদ্যিখেতা মাখা কথা শুনে কেউ হেসে উঠে কী না এই ভয়ে...বিলের পানি কেটে নিশব্দে এগিয়ে চলে নৌকা...নৌকার গলুইয়ে কোঁচ হাতে দাঁড়ানো অভিজ্ঞ শিকারী...হ্যাজাকের আলো আর বিলের গাঢ় অন্ধকারেও জলের নীচে মাছের নড়াচড়া চোখ এড়ায় না তার...দ্রুত হাতে কোঁচের ঘাই মারে পানিতে...আর নৌকার পাটাতনে বাড়ে মাছের সংখ্যা...

মাঝরাতে মাছ ধরায় বিরতি...অতিথি আমি তাই আমার সম্মানে বাড়ি থেকে ফ্লাস্কে করে বয়ে আনা হয়েছে চা আর দিশি বেকারী বিস্কুট...বিরতির পর আবারো সেই মাছ শিকার...বিশ্বাস করুন এই মাঝরাত্তিরেও দূর থেকে ভেসে আসে পালাগানের সুর...ধীরে বৈঠা নাড়তে নাড়তে সুলতান মিয়া ঘড়ঘড় কণ্ঠে বলে, আইজকা আসর জমছে রে...

ঘোর বর্ষায় হাওর দেখছেন কখনো??? হ্যাজাকের আলো-অাঁধারিতে হাওরের পানিতে মাছ ধরেছেন রাতভর??? সন্ধ্যারাতে বিলের জলে শাপলা ফুটতে দেখেছেন??? না দেখলে দেখে নিন??? এই বর্ষায় চলে যান সুনামগঞ্জ বা নেত্রকোনার কোন হাওরে...দুচোখ ভরে দেখে নিন বুনো প্রকৃতিকে...তবে ফিরে এসে দয়া করে লিখবেন না, এখানে বিকশিত হতে পারে পর্যটন শিল্প...

আর বৃষ্টি তোমাকে বলি...
প্যাঁচপ্যাচে কাদার স্যাঁতস্যাতে এই শহরে তোমার কদর কেউ বোঝে না...
তুমি ফিরে যাও লিলুয়া বাতাসের নিরাগ পানির দেশে...

২ টি +২/-০