![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
অনন্ত নক্ষত্রের দেশে গিয়েও হুমায়ুন আহমেদ জমিয়ে দিয়েছেন। উনি যাবার পর নক্ষত্র নাগরিক’ দের কেউ কেউ শত বছর পর প্রান খুলে হেসেছেন। হুমায়ুন আহমেদ ভুলেই গিয়েছেন উনি কোন কালে অন্য কোথাও ছিলেন!
আজ কোন এক নক্ষত্র মুহুর্ত থেকে তাঁর ভেতরে কি যেন হচ্ছে। নক্ষত্র নাগরিক দের কেউ একজন কি একটা বলতেই গম্ভীর হয়ে গেলেন! একা একা চলে গেলেন যেখানে কোথাও কেউ নেই!
হুমায়ুন আহমেদ বুঝতে পেরেছেন আজকে অন্য ভুবনের কোথাও কিছু একটা হচ্ছে এবং সেই কিছু একটার সাথে তাঁর সম্পর্ক আছে। হঠাৎ তাঁর মাথায় সূক্ষ্ম যন্ত্রনা হতে লাগল! প্রথমে শুধু একটা হলুদ রঙ তারপর একটা হলুদ অবয়ব ভেসে উঠল তাঁর চেতনায়!
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন হুমায়ুন আহমেদ-
- তুমি কে?
- হলুদ পাঞ্জাবি দেখেও চিনলেন না!
- প্লিজ তোমার পরিচয় দাও। আমার স্মৃতি তে তোমার কোন অস্তিত্ব নাই!
- সেটা অবশ্য বুঝতে পারছিলাম! সকাল থেকেই আমি, মবিন স্যার আর মিসির আলি চাচা মিলে আপনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। পারছিলাম না!
- কেন পারছিলা না কেন? সকাল বিষয় টা কি? মবিন স্যার, মিসির আলি চাচা, এরাই বা কারা?
- খাইছে আমারে! আপনি ত দেখি পুরা আউলে গেছেন! নিজের খামারের ছাগল চিনতে পারছেন না! আচ্ছা যান, আমার নাম হিমু!
- হিমু আমার মাথায় একটা অদ্ভুদ যন্ত্রনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথার ভেতর যেন লক্ষ লক্ষ মানুষের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি! এরকম কেন হচ্ছে তুমি বলতে পার?
- আমার হলুদ পাঞ্জাবি ধরেন! আমার সাথে সাথে আসেন!
হুমায়ুন আহমেদ হিমুর হলুদ পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরে হিমুর পেছন পেছন এগুতে লাগলেন।
- আচ্ছা হিমু আমার মাথার ভেতর যাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি তারা কোন জগতের মানুষ, তুমি,মবিন স্যার,মিসির আলি চাচা এরাই বা কোন জগতের মানুষ?
- আপনার মাথায় যাদের কান্নার আওয়াজ শুনছেন তারা মর্ত্য নামের একটা জগতের মানুষ!
- তারা কাঁদছে কেন হিমু?
- তারা আপনার জন্য কাঁদছে। আপনি কিছুদিন আগেও তাদের জগতে ছিলেন। তাদের জগতে থেকে আমাদের নিয়ে সম্পুর্ন ভিন্ন একটা জগত তৈরি করে আপনি তাদের সেই জগতের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন!
- বল কি!
- তারা আপনাকে ছাড়া ভাবতেই পারেনা! অনেক পোলা এমন কি মাইয়া পর্যন্ত হলুদ পাঞ্জাবী পরে আমার ভেক ধরে! দেখে এমন হাসি পায়!
- বল কি!!
- আপনি ত মনে হচ্ছে এক বাক্যের মধ্যে ‘লক’ খায়া গেছেন! খালি ‘বল কি, বল কি’ করতেছেন!
- আমার মাথার ভেতর কান্নার আওয়াজ তীব্র হয়ে উঠছে হিমু! তুমি তাদের সম্পর্কে আরো বল! আমি শুনতে চাই!
- লক তাইলে খুলছে! বলব আর কি! ভাবছিলাম আপনার মৃত্যুর পর একটু শান্তিতে ঘুমাব। কিন্তু তার কি উপায় আছে?
এখনো আমাকে খালি পায়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত হেঁটে বেড়াতে হয়। মিসির আলি চাচাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে কখনো প্পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়িতে, কখনো শ্মশানে, কখনো ভুতুড়ে বাড়ি তে দৌড়াতে হয়। মবিন স্যার কে সারারাত মাঝনদী তে বজরায় বসে বসে টেলিস্কোপে আকাশের তারা গুনতে হয়!
- শু শু...শুভ্র!!!
- খাইছে আমারে!! লক ত দেখি পুরাই খুইলা গেছে!!!
মবিন স্যার আর মিসির আলি অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন! হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তাঁর ভক্তদের ভালোবাসার অশ্রুজল তাঁর কাছে কিভাবে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে সকাল থেকেই লেগে আছেন। হুমায়ুন আহমেদ অন্য ভুবনে চলে গেছেন। ভক্তদের সাথে একমাত্র যোগসুত্র বলতে উনারা। মবিন স্যার আর মিসির আলি অনেক কসরত করে হিমুর মস্তিষ্কের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করলেন! কিন্তু অনেক্ষন হয়ে গেল হিমুর থেকে কোন বার্তা পাচ্ছেন না!
মবিন স্যারের দিকে হঠাৎ চোখ পড়ায় মিসির আলির হাত পা শক্ত হয়ে গেল! মবিন স্যার পাথরের চোখ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন আর বিড় বিড় করে কি যেন বলছেন! মিসির আলির নিজের মস্তিষ্ক ও ভারী হতে শুরু করল হঠাৎ করে! কি হচ্ছে এসব? তিনি হুমায়ূন আহমেদ এবং হিমু’র কথোপকথন শুনতে পাচ্ছেন!
- আপনার কি নন্দিত নরকের খোকার কথা মনে পড়ছে? বাকের ভাই? বেচারার ফাঁসি নিয়ে কি কান্ডটাই না হল!
- সব সব মনে পড়ছে আমার হিমু! আসাদুজ্জামান নূর!!
‘মিসির আলি সাহেব!!’ মবিন স্যারের তীক্ষ্ণ চিৎকারে মিসির আলি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন! কোনমতে সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন-
- কি কি হয়েছে মবিন সাহেব?
- খেলা বন্ধ করুন! হিমু কে স্টপ করেন!! প্রকৃতির বেঁধে দেয়া সীমারেখা আমরা প্রায় লঙ্ঘন করে ফেলেছি! প্রকৃতি সহ্য করবে না! স্টপ স্টপ!
অনন্ত নক্ষত্রলোকে হঠাৎ করেই ঘোর ভেঙ্গে চারদিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন হুমায়ূন আহমেদ। নক্ষত্র নাগরিক দের সবার মুখ গম্ভীর! বিস্মিত হুমায়ূন আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন,
কি ব্যাপার আপনারা সবাই গম্ভীর কেন?
হুমায়ূন আহমেদ কথা বলে উঠতেই নক্ষত্র নাগরিকেরা সবাই হা হা হা করে হেসে উঠলেন, প্রাণখোলা হাসি!!
( A tribute To the Legend Humayun Ahmed on his birth day)
©somewhere in net ltd.