নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লক্ষ কবুতর যেদিন আকাশে উড়ল!(ঈদ উপলক্ষে লেখা ছোট গল্প)

২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৮

আসিরের বুকে লোম নাই। এটা নিয়ে আসিরের সাংঘাতিক হীনমন্যতা আছে। হীনমন্যতা’র কারনে সে অক্ষয় কুমার টাইপ বুকে লোম ওয়ালা নায়ক দের সিনেমা কখনো দেখেনা। ব্রুস লি বা জ্যাকি চ্যান টাইপ মঙ্গোলয়েড নায়ক দের সিনেমা দেখে। একবার এক পরিচিত ফার্মেসির দোকান দারের কাছে মিন মিন করে জিজ্ঞেস করেছিল- বুকে লোম গজানোর ওষুধ আছে?



ফার্মেসির দোকান দার বিরক্ত চোখে আসিরের দিকে তাকিয়ে বলেছিল- চিড়িয়াখানায় গিয়ে গরিলার সাথে কোলাকুলি কর! তাইলে বুকে লোম গজাবে।



আসির দেখতে লম্বা চওড়া। গাল চাপা ভাঙ্গা হওয়ায় চেহারায় বেশ ম্যান লি ভাব আছে। কিন্তু আসিরের কোন মেয়ের সাথে প্রেম হয় নাই। আসিরের ধারনা- প্রেম না হবার কারন আসিরের বুকে লোম নাই!



আসির প্রায় সময় আল্লাহ তালার সাথে রাগ করে।

আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন সাঙ্ঘাতিক রসিক ব্রেন দিছেন।একহারা ফিগার দিছেন। সুন্দর ছাগল দাড়ি দিছেন।আর ক’গাছি লোমের জন্য দুনিয়ার বুকে তাকে এভাবে ঠেকায় দিলেন! আসিরের কান্না পায়।



আসির জানে যে আজকেও কিছুই হবে না। তুনশা’র সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে। স্কাইপিতে কথা হইছে। তুনশা ‘আসির তোমাকে ছাড়া বাঁচব না’ ও বলেছে। কিন্তু তাতে কি! আসিরের ধারনা সামনা সামনি দেখা হলে তুনশা কোন না কোন ভাবে ঠিক ই বুঝে যাবে যে আসিরের বুক আরব দেশের মরুভূমি! সেখানে ভালোবাসার কোন মরূদ্যান নাই। তারপর আর কি?বাসায় ফিরে ইনবক্সে ছোট্ট একটা মেসেজ- আসির ভাইয়া প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না! আমি আপনাকে আপন মায়ের পেটের ভাই হিসেবে দেখতাম!!



রিকশায় উঠে আসির বেশ শক্ত হয়ে বসে। ফতুয়ার সবগুলো বোতাম ভালমত আটকে দিয়ে দুহাত বগলের সাথে এমন ভাবে চেপে ধরে যেন একটু অসাবধান হলেই দুনিয়ার সবাই বুঝে যাবে যে আসিরের বুকে লোম নাই!



মিরপুর এক নম্বরের কিয়াংসি চাইনিজ রেস্টোরেন্ট। সামনে বসা যুবকের দিকে তাকিয়ে তুনশার বুকের ভেতর একটা সুখের হাহাকার তৈরি হল। রাজপুত্র যে এত সুন্দর সেটা ত স্কাইপি তে কখনো বুঝতে পারে নাই!বড় বড় চোখের চাহনিতে স্পষ্ট প্রত্যয়ের ছাপ। চোখের তারায় খেলা করছে একই সাথে সারল্য এবং বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু কথাবার্তায় নিজেকে বুদ্ধিমান বা বেকুব দেখানোর কোন চেষ্টা নাই। কথা বার্তা অতি সাধারণ। তুনশাকে প্রথমেই বলল,



রিকশা ভাড়া বাদ দিয়ে আমার কাছে দুইশ টাকা আছে। তোমার কাছে কত আছে? আগে বাজেট ঠিক করে তারপর অর্ডার দেই!



তুনশার কাছে পাঁচশ টাকার একটা নোট আর ভাংতি চল্লিশ টাকা ছিল।



তুনশা জবাব দিল, আমার কাছে চল্লিশ টাকা আছে!



আসির একটুও চিন্তিত না হয়ে সাথে সাথে জবাব দিল- মামুর টিপস দশ টাকা বাদ দিলে দুইশ তিরিশ টাকা থাকবে। এই টাকায় স্যুপ ছাড়া ত কিছুই খাওয়া যাবে না!



শুনে হাসতে হাসতে তুনশার থুতনি বুকের কাছে নেমে গেল।চুল গুলো অবাধ্য হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং ফ্যানের বাতাসে তুনশার শ্যাম্পু করা হাল্কা সিল্কি চুলের একটা আসিরের নাকের ডগার সাথে লেগে গেল। আসিরের সারা শরীর অস্থির রোমান্সে কেঁপে উঠল এবং সাথে সাথেই তীব্র হীনমন্যতা আসির কে কুঁকড়ে দিল! তুনশার মাথায় যতই চুল থাক আসিরের বুকে ত একটা লোম ও নাই! তুনশার মত মিষ্টি একটা মেয়ে এরকম নির্লোম বুকের ছেলের বুকে ভালোবাসার আশ্রয় নিতে কেন রাজী হবে?



তুনশা চোখ তুলে খানিকটা অবাক হল। আসিরের সব স্বাভাবিকতার মধ্যে কোথায় যেন একটা জড়তা বিশেষ করে ফতুয়ার কলার বারবার উঁচা করে দেবার ব্যাপার টা তুনশা খেয়াল করেছে। তুনশা ধরেই নিয়েছে এটা ওর মুদ্রা দোষ! কিন্তু এই মুহুর্তে আসিরের চেহারা এমন বিষণ্ণ কেন? এক কাপ ধবধবে সাদা দুধের মধ্যে হঠাৎ করেই যেন টিকটিকি পায়খানা করে দিয়েছে!



থাই স্যুপের বাটি চলে এসেছে। বড় বাটি থেকে ছোট বাটিতে স্যুপ ঢালা, তারপর স্যুপে সস অ্যার কাঁচা মরিচের পানি মেশানোর সময় ও তুনশা খেয়াল করল, আসির অতি সতর্ক। ঝুঁকে নিচু হবার সময় ফতুয়ার গলা টা ধরে বার বার উপরের দিকে উঠিয়ে দিচ্ছে!



তুনশা একবার চারদিকে তাকাল। আজকে মঙ্গল বার এবং এখন বেলা তিন টা বেজে সাত। এই বেলার চরিত্র অনুযায়ী রেস্তোরাঁ পুরাই ফাঁকা। ওরা বসেছেও একেবারে এক কোনার টেবিলে।



তুনশার মনে হল আসির কোন কারনে আন-ইজি ফিল করছে। আসির কে ইজি করার জন্য একটা দুঃসাহসী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তুনশা মনে মনে ভাবল সে আক্ষরিক অর্থেই একটা ‘পদক্ষেপ’ নেবে!



টেবিলের নিচ দিয়ে আসিরের পায়ের উপর হাই হীলের হাল্কা পাড়া দিল তুনশা। আসির কোঁত করে উঠল!



আরে! কি হয়েছে তোমার তুনশা?



আমার কিছু হয় নাই। তুমি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলা। আর বারবার মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কি যেন লুকাতে চাইছ!



আসিরের মুখ সাদা ছাইয়ের মত হয়ে গেল!’বুকের ভেতর কি যেন লুকাতে চাইছ’ তুনশা ঠিকই আসল পয়েন্টে চলে এসেছে! আসিরের মনে হল আর লুকিয়ে রেখে লাভ নাই। যা হবার তাত প্রায় হয়েই গেছে। থাই স্যুপের বাটি সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে চামচ দিয়ে খামাকাই কাঁচা মরিচের ঝোল খেতে খেতে বলল,



তুনশা আমি ঠিক ই জানতাম, তোমার সাথে আমার সামনা সামনি দেখা হবে, একসাথে বসে স্যুপ খাওয়াখাওয়ি হবে। কিন্তু ভালোবাসা হবে না!



কেন? তুমি আমাকে ভালোবাসো না?



আমি তোমাকে ‘মাঘ মাসের শীতের ভোরবেলার ঘুমে’র চেয়ে বেশি ভালোবাসি তুনশা! কিন্তু আসল ঘটনা যখন জানবে তখন তুমি আর আমাকে ভালবাসতে পারবে না!



সেই আসল ঘটনা টা কি?



আমার বুকে লোম নাই!



কি নাই?



লোম। অক্ষয় কুমার টাইপ ছেলেদের বুকে লোম থাকে না? আমার বুকে একটা লোম ও নাই!



তুনশা এমন ভাবে হাসছে আসিরের মনে হল যেন সারা মিরপুরে ভূমিকম্প হচ্ছে। হাসির সাথে থর থর করে কাঁপছে তুনশার সারা শরীর। সাদায় হলুদ মেশানো জামায় পুরা প্রজাপতি হয়ে এসেছে তুনশা। আসিরের মনে হচ্ছে প্রজাপতির ডানায় হাত দিলেই সাথে সাথে আগুন ধরে পুরা পৃথিবী ধবংস হয়ে যাবে!



হাসতে হাসতে তুনশার চোখে পানি এসে গেছিল। টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছে আসিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-



বুকের লোম দেখে মেয়েরা ছেলেদের ভালবাসে, এমন আজব ধারনা তুমি কোত্থেকে পেলা?



তাইলে কি দেখে ভালবাসে? আসিরের গলায় কিছুটা প্রান ফিরে এসেছে!



হুম এটা সিক্রেট! বলা যাবে না।



আসলে তুমি আমার সাথে অভিনয় করতেছ! এখান থেকে যাবার পরেই আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিবা- আসির,আসলে তুমি আমার মায়ের পেটের ভাইয়ের মত!



কি?



বাস্তবতা হচ্ছে বুকে লোম নাই, প্রেম ও নাই!



কোন মেয়ে বুকের লোম দেখে কোন ছেলের প্রেমে পড়ছে এরকম আমি জীবনে দেখিও নাই, শুনিও নাই আসির!



তাইলে বলছ না কেন কি দেখে প্রেমে পড়ে? চেহারা, গায়ের রঙ, ফিগার? চোখ?



ঠিক ওইরকম কিছু না আসির!



তাইলে কি?



তুনশা হঠাৎ করে কিছুটা জড়োসড়ো হয়ে গেল। পিরিচ ঢাকা গ্লাসের পিরিচ আলগা করে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে এক গ্লাস পানি খেল। তার চেহারা থেকে কিশোরীর চপলতা উধাও হয়ে হঠাৎ সেখানে জেগে উঠল বৃদ্ধ কনফুসিয়াসের সৌম্যতা! শূন্য পানির গ্লাস টেবিলের উপর নামিয়ে রাখতে রাখতে তুনশা বলল,



আসলে সেরকম স্পেসিফিক কিছু নয়। কোন ছেলে যখন কোন মেয়েকে ইমপ্রেস করার জন্য বুদ্ধিমান অথবা বোকা কিছুই না সেজে নিজের মত থাকে তখন সেই ছেলের দিকে তাকিয়ে মেয়েটার বুকের মধ্যে একটা সুখের হাহাকার তৈরি হয় আসির! সেটাই প্রেম!



আসিরের বুকের মধ্যে ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা লক্ষ কবুতর হঠাৎ মুক্তি পেয়ে ডানা মেলে আকাশে উড়ে যাচ্ছে। তাদের মুখরিত কাকলি অসীম আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে এক সুখের হাহাকার।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১০

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: বাজে

২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৮

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: কি বাজে ভাই? ঢোল বাজে?

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লাগলো +++++

২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০১

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অপূর্ন আপনাকে।

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৬

সাদাসিধা মানুষ বলেছেন: সুন্দর, ভালো লাগলো

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:২৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ সাদাসিধা মানুষ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.