![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
আজকে পত্রিকায় পড়লাম খবর টা। তুবা গার্মেন্টসে অনশনরত নারী শ্রমিক দের বিতাড়িত করতে গিয়ে বাড্ডা থানার ওসি নাকি ‘ভবন থেকে বের না হলে নারী শ্রমিক দের ধর্ষন করা হবে’ বলে হুমকি দিয়েছেন। ওসি যে সেকথা নিশ্চিত বলেছেন সেটা পত্রিকায় ও স্পষ্ট করে দাবী করা হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশের থানার একজন ওসি যদি এরকম পরিস্থিতি তে ওরকম একটা কথা বলে থাকেন তাহলে অবাক হবার কিছু নেই।
আমার নিজের দিন কয়েক আগের একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি। কথা হচ্ছিল পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত এক ব্যক্তির সাথে। আড্ডাচ্ছলে, গল্পের ভঙ্গিতে কথাবার্তা। ভদ্রলোক কথায় কথায় তার এক অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতার কথা শুনালেন। তাদের এলাকার ই এক ছেলে। ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। প্রেম করে বিয়ে করেছে এক ডাক্তার মেয়ে কে। মেয়ে সরকারী চাকরি করে। কিন্তু ছেলের বাপ মা ভাই বোন আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব (এবং বর্ননাকারী পুলিশ ভদ্রলোক নিজে!) কেউ এই মেয়ে কে ঐ ছেলের বৌ হিসেবে মেনে নেবে না! তাদের একটাই কথা- ‘বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ছেলের জন্য কি দেশে লম্বা ফর্শা সেক্সি উচ্চ শিক্ষিত বড় লোকের মেয়ের অভাব পড়েছে যে এরকম বেঁটে কাল একটা মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে আনতে হবে? মেয়ে ডাক্তার হইছে তাতে কি?’
ডাক্তারি পাশ করার পর ও একজন মানুষ কে যে দেশে শুধু মাত্র মেয়ে হবার কারনে বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে তথাকথিত রূপের পরীক্ষা দিতে হয় সে দেশের একজন ওসি সাহেব ‘তুচ্ছ’ গার্মেন্টসের ‘মেয়ে মানুষ’ কে ধর্ষন করার হুমকি দিয়ে লিঙ্গে শিহরন অনুভব করতে করতে বেরিয়ে আসবেন এটাই স্বাভাবিক!
এই মানসিকতার ধারক শুধু পুলিশের লোক এটা ভাবার কোন কারন নেই। এদেশের তথাকথিত উচ্চ শ্রেণীর মানুষ তার চেয়ে নিম্ন শ্রেণীর( টাকা পয়সা, পদ মর্যাদা এসব দিয়ে সাধারণত শ্রেণী নির্ধারিত হয়) মানুষ কে মানুষ ই মনে করে না এবং তারা যেহেতু যেকোন উপায়ে একবার উপরে উঠে গিয়েছে সেহেতু নিচের শ্রেণী সমূহ কে শোষণ করাটা তাদের অধিকার বলে মনে করে। এদেশের অধিকাংশ পুরুষ মেয়েদের কে মানুষ ভাবে না, ভাবে মেয়ে মানুষ এবং সেরকম মেয়ের সংখ্যাও কম নয় যারা নিজেদের মানুষ ভাবে না, ভাবে মেয়ে মানুষ! এই মানুষ গুলোর আচরণে তাদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটবেই।
দেশে গার্মেন্টস শিল্প আসার ফলে অনেক দরিদ্র এবং হত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। যে দরিদ্র মেয়েগুলো আগে নিজের বাড়িতে বা শ্বশুর বাড়িতে বা পরের বাড়িতে( কাজের বুয়া হিসেবে) বিনা পয়সায় বা প্রায় বিনা পয়সায় গাধার খাটুনি খেটেছে হঠাৎ করে গার্মেন্টসে চাকরি করতে এসে পাওয়া সামান্য বেতন তাদের কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে এবং সামান্য বেতনেই তারা দীর্ঘদিন খেটে গার্মেন্টসগুলোকে চূড়ান্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছে। কারন গার্মেন্টস শিল্পের অনেকগুলো খরচের খাতের মধ্যেকার বেশ বড় একটা খাত হল ‘শ্রমিকের মজুরি’ এবং সৌভাগ্যজনক(?) ভাবে এদেশের গার্মেন্টস শিল্প মজুর হিসেবে পেয়ে গেছে ‘দীর্ঘদিন যাবত সুবিধা বঞ্চিত থাকতে থাকতে বঞ্চনাকেই স্বাভাবিক ধরে নেয়া’ সমাজের একেবারে প্রান্তীয় শ্রেণীর নারী সমাজ কে।
আশার কথা হচ্ছে সবাই না পারলেও তুবা গার্মেন্টসের শ্রমিক দের মত অনেকেই এখন তাদের বঞ্চনার জায়গাটা বুঝতে পারছেন এবং এর প্রতিবাদ করছেন। তাদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমি নিজেও তাদের প্রতি করা অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আশা করছি আমরা এই অসম অসংস্কৃত সমাজ টাকে একদিন পাল্টে দিতে পারব। এরকম কোন ওসি সাহেব আমাদের বাড্ডা বা অন্যকোন থানায় থাকবেন না, যিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী দের প্রতি অশ্লীল কথা উচ্চারণ করবার পর সেই অশ্লীল কথার পুলক গায়ে মেখে ঘরে ফিরবেন।
আমরা মানুষ কে মানবিক গুন দিয়ে বিচার করব। তার লিঙ্গ, টাকা পয়সা, পদ মর্যাদা এসব দিয়ে নয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৯
ঢাকাবাসী বলেছেন: দুনিয়াতে সবচাইতে দুর্ণীতিবাজ পু.. হল বাং.. পু..।