![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“তুমি হায় বুঝবে কি ছাই, গান গেয়ে দিন কেটে যায়,
আমি হায় বুঝবো কি ছাই, শান্তিতে দিন কেটে যায়
স্বাধীন থাকা আমার রোজের রুটিন, স্বাধীন থাকা তোমার রোজের রুটিন”।
আহ স্বাধীনতা, বড় আকাঙ্খিত, বড়ই আরাধ্য একটা শব্দ। আমরা ভীষণ ভাগ্যবান একটা জাতি, ভয়ানক ভাগ্যবান একটা প্রজন্ম, জন্মেই স্বাধীনতা দেখেছি। আর তাই হয়তো আমরা আজো এই শব্দটির মাহাত্ম্য আবিষ্কার করতে পারিনি। আমরা আজো জানিনা স্বাধীনতা কাকে বলে, স্বাধীনতা কি, স্বাধীনতা কিভাবে আসে। বছরে একটা দিন আমরা কেউ কেউ কখনো সখনো স্বাধীনতার গল্প বলি, রক্তনদীর কথা বলি, বীরত্বের স্মৃতিচারণ করি, বিরঙ্গনার হাহাকার কাগজে ছাপাই। তারপর হয়তো পেছনে স্মৃতিসৌধ অথবা জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ফেসবুক প্রোফাইল ফটোর জন্য পোজ দেই। চেতনা ফেরি করে ফিরি কেজি দরে, চেতনা বানাই, চেতনা উড়াই, চেতনা বিলাই। আর সারাবছর ভূলুণ্ঠিত স্বাধীনতা পড়ে থাকে টক শোর টেবিলে, বুদ্ধিজীবীর কলামে।
আবার দেশের একটা বিরাট অংশ জানেই না ২৬মার্চ কি, কি হয়েছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর কাকে বলে। আমরা স্বাধীনতা শিখি জি বাংলায়, স্টার প্লাস নয়তো সনি টিভিতে, স্বাধীনতা লিখি হিন্দি ভাষায়। মুন্নি, শিলা, মাসাক কালি, সানি লিওনিরা ঘরে ঘরে রাস্তায় বাজারে স্বাধীনতা গায়ে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আফ্রিদির ছক্কায় স্বাধীনতার বিয়ে হয়, সাদা সবুজ চাঁদ তারা আঁকা গালে, কপালে স্বাধীনতার তীব্র সূর্য খেলা করে।
বড় সহজ, বড় সস্তা, বড় সাধারণ হয়ে গেছে স্বাধীনতা শব্দটা এই বঙ্গীয় ব দ্বীপে। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধ, মাত্র ৩০ লক্ষ প্রাণ, মাত্র ২ লক্ষ মা- বোনের ইজ্জত, মাত্র দেড় কোটি গৃহহীন মানুষ খুব কম হয়ে গেছে স্বাধীনতার দাম। লাল সবুজ পতাকার সেই জন্মজুদ্ধে সূর্যসন্তানেরা অহেতুক একটা অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। নাহ আমরা এই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, আমরা এই স্বাধীনতার জন্য এখনো প্রস্তুত নেই। আমাদের যুদ্ধটা ৯ বছর বা ১৯ বছর হবার দরকার ছিল, প্রতিটা পরিবারে এক জন শহীদ থাকার দরকার ছিল, প্রতিটা মানুষের খোলা আকাশের নিচে দাউদাউ বসতভিটা দেখার দরকার ছিল, আমাদের আরো একটা ভিয়েতনাম হবার দরকার ছিল। বড় সহজ হয়ে গেছে এই স্বাধীনতা। আজ ৪৪ বছর পরেও আমাদের দেশটাই কেবল স্বাধীন (কাগজে কলমে), আমরা হতে পারিনি, আমাদের মন হতে চায়নি। “ওরা ১১জন” সিনেমার কথাটাই সত্যি, “এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো অনেক রাত”।
বড় কষ্ট নিয়ে লিখছি। দিনশেষে যখন দেখি পরিচিত মানুষ মনে করতে পারে না আজ ২৬মার্চ অথবা কোনটা স্বাধীনতা আর কোনটা বিজয় দিবস সেটা নিয়ে সন্দিহান, অথবা যখন কেউ আমাকে জিগ্যেস করে, “২৬ মার্চ যেন কি?” তখন ভাষা হারিয়ে ফেলি, ভুলে যেতে অথবা ভুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে মানব পরিচয়। সারাদিন আনন্দের গান গেয়ে, বিজয়ের গান শুনে, স্বাধীনতার সুরে মজে এখন নিজেকে বড় ফাঁকা মনে হচ্ছে। শিলাজিতের গাওয়া বহু পুরনো কিন্তু ভীষণভাবে আধুনিক এই গানে তাই নিজেকে খুঁজে বেড়াই।
"তুমি হায় বুঝবে কি ভাই, ফুরফুরে দিন কেটে যায়
বোঝাচ্ছো স্বাধীনতার মানে।
যে অধীন দিনে রাতে, বুলেটে যে বুক পাতে
সে বুঝেছে স্বাধীনতার মানে।
সে বুঝেছে খাঁচায় থেকে গরাদ ভাঙ্গায় কি দম লাগে
লাগে কত রক্ত কত ঘাম।
স্লিম জিমে ফেলে আসি ঘাম, ফরেন জিনস কিনতে দিই দাম
স্বাধীনতার কেন বদনাম?”
এই গানটির শেষ দুই লাইন দিয়ে শুরু করেছিলাম। এত চমৎকারভাবে সে হয়তো আমাদের স্বাধীনতা নিয়েই লিখেছিল, হয়তো আমাকে দেখে, আমাদেরকে দেখে। বারবার করে শুনছি, মাথার ভেতর একই প্রশ্নেরা ঘুরপাক খাচ্ছে, “স্বাধীনতার কেন বদনাম?”।
“মন তার যতই না চায়, যে পাখির বাঁচাই খাঁচায়,
সে জানে ভাঙ্গা কত কঠিন।
তুমি হায় বুঝবে কি ছাই, গান গেয়ে দিন কেটে যায়,
আমি হায় বুঝবো কি ছাই, শান্তিতে দিন কেটে যায়,
স্বাধীন থাকা আমার রোজের রুটিন, স্বাধীন থাকা তোমার রোজের রুটিন”।।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আমাদের যুদ্ধটা ৯ বছর বা ১৯ বছর হবার দরকার ছিল, প্রতিটা পরিবারে এক জন শহীদ থাকার দরকার ছিল, প্রতিটা মানুষের খোলা আকাশের নিচে দাউদাউ বসতভিটা দেখার দরকার ছিল, আমাদের আরো একটা ভিয়েতনাম হবার দরকার ছিল। বড় সহজ হয়ে গেছে এই স্বাধীনতা। আজ ৪৪ বছর পরেও আমাদের দেশটাই কেবল স্বাধীন (কাগজে কলমে), আমরা হতে পারিনি, আমাদের মন হতে চায়নি। “ওরা ১১জন” সিনেমার কথাটাই সত্যি, “এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো অনেক রাত”।
পোষ্টে +++