![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুসা ইব্রাহীম এবং বিতর্ক একটা আরেকটার সমার্থক শব্দ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিতর্ক এবং নানাবিধ অভিযোগ ছাড়া তিনি খুব কম এডভেঞ্চারই শেষ করতে পেরেছেন। সর্বশেষ বিতর্কের জবাবে তিনি যে কথাটি বলেছেন তা হল তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। অনলাইনজুড়ে তার লেঠেল বাহিনী, বিশেষত প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার গ্রুপ এতোদিন কাউকে তার কোন ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করারও সুযোগ দেয়নি, নিজেরাও যাচাই করেনি। ইদানীং যে কথাটা তারা বারবার বলছে তা হল অন্যান্যরা হিংসার বশবর্তী হয়ে তার নামে এইসব অপবাদ ছড়াচ্ছে।
এবার আসুন দেখি কেন মুসা ইব্রাহীম ষড়যন্ত্রের শিকার আর কেনই বা লোকজন তাকে হিংসা করে। এই লোকজন বলতে আমরা বুঝি বাংলাদেশের গুটিকয় পর্বতারোহী সমাজ, তার মাঝে কেউ তার সিনিয়র কেউ জুনিয়র। মজার ব্যাপার হল মুসার নিজের গ্রুপের বলা যায় তার হাতেই বানানো গুটিকয় জুনিয়র পর্বতারোহি ছাড়া দেশের আর সবাই তাকে হিংসা করে এবং তার বিরুদ্ধে সকাল সন্ধ্যা খেয়ে না খেয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
কারণ? কারণ একটাই, মুসা ইব্রাহীম তাদের সবার আগেই এভারেস্ট জয় করে ফেলেছেন, আর কে না জানে বাঙ্গালি জাতি শুধু আরকজনকে টেনেই নামাতে পারে।
হা হা হা হা।
ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর। এই দাবী যদি সত্যি হয় তাহলে বলতে হবে যে এরা সবাই আজ থেকে ৭-৮ বছর আগেই জানতো যে মুসা একদিন এভারেস্ট বিজয় করবে তাদের সকলকে টেক্কা দিয়ে তাই তখন থেকেই তার প্রায় প্রতিটা অভিযানের পর পর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসাকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করেছিল। এই তালিকায় আছে বাংলাদেশের মাউন্টেইনিয়ারিং যাত্রার অন্যতম পাইওনিয়ার মুনতাসির মামুন ইমরান, দেশের প্রথম পর্বতারোহণ প্রশিক্ষক Mir Shamsul Alam Baboo, Sajal Khaled, বাংলাদেশের এযাবৎ কালের সবচেয়ে সফল পর্বতারোহী, দুইবার এভারেস্ট এবং মাত্র ১৪ টি ৮ হাজার মিটার উঁচু পিকের তিনটির বিজয়ী এম এ মুহিত, শাহজাহান মৃধা বেণু সহ পর্বতারোহণ এবং এডভেঞ্চার জগতে জড়িত তার প্রায় সব সিনিয়র এবং সহ অভিযাত্রীরা।
প্রথম বিজয় ফ্রে পিক ছাড়া আজ পর্যন্ত মুসা ইব্রাহীম প্রায় কোন অর্জন বিতর্ক এবং জালিয়াতির অভিযোগ ছাড়া শেষ করতে পারেননি। সেই ২০০৯ সালে তার সাথে একসাথে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য সাঁতার প্র্যাকটিস করেছিলাম মনে আছে, অবশেষে বছরখানেক আগে সেলিব্রেটি ইমেজ নিয়ে প্রথমবারের মত সেই বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পত্রিকার হেডলাইন হয়েছেন। প্রথম আলো সেটা ফলাও করে কয়েকদিন প্রচার করেছে যদিও এর আগে কয়েক ডজন সেটা পাড়ি দিয়েছিল এমনকি তার মাঝে ১৩ বছরের এক কিশোরীও ছিল। মুসা নিজেও খুব গর্ব করে বলেছেন যে তিনি পাড়ি দিয়ে এসেছেন। পরবর্তিতে দেখা গেলো এক শ্রেণীর ষড়যন্ত্রকারীরা মুসা যে প্রায় অর্ধেকপথ নোবাহিনীর ডুবুরির সহায়তা, ট্রলার আর টিউবে ভেসে পাড়ি দিয়ে বীরত্ব ফলিয়েছেন তার সচিত্র প্রমাণ ব্লগ এবং ফেসবুকে প্রকাশ করে দিয়েছে। (এ সম্পর্কিত লিঙ্ক পরবর্তি পর্বে)
হায় মুসা ইব্রাহীম।
যদিও বিষয় সম্পূর্ন ভিন্ন তবুও মুসা ইব্রাহীম অনেকদিন পর আবার লাইম লাইটে এসেছিলেন গণজাগরণ আন্দোলনের সময় ডক্টর জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে নোংরা কলাম লিখে যখন তিনি প্রথম আলোতে আর কলাম লিখবেন না বলে ঘোষণা দেন, যা দেশজুড়েই ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।
আর সর্বশেষ বিতর্কের জন্ম দেন সাভার রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর তার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ফটোসেশন করে, ঠিক প্রথম আলো যখন কনসার্ট করছিল!!!
অনেকেই দেখলাম প্রশ্ন করে মুসা যদি এভারেস্টে নাই চড়ে তাহলে প্রথম আলো আর তার বন্ধরা এতো নিশ্চিন্তে কিভাবে তাকে সমর্থন করে? আর এত বছর পর এই কথা আবার কেন?
খুবই সময়োপযোগী প্রশ্ন।
আপনাদের হয়তো মনে আছে মুসা যখন এভারেস্ট বিজয় করেছে বলে প্রথম আলো হেডলাইন করলো তার কিছুদিনের মাঝে বাঙ্গালি জাতি আরেকজন এভারেস্ট বিজয়ী আবিষ্কার করলো, যিনি আরেকটু হলে নিজেই এভারেস্টে উঠে যেতেন অথবা মুসাকে চাঁদেই উঠিয়ে দিতেন। তিনি হলেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক।
আনিসুল হক মুসার ক্লাব নর্থ আলপাইন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট (বিএমটিসি থেকে নিয়মিত ক্যাচাল করার করার জন্য ক্লাব ছেড়ে চলে যাবার অনুরোধ করার পর মুসা এই ক্লাবে যোগ দেন)।
আরেকটু সহজ করে বলি, মুসা ডেইলি স্টারে চাকরি করেন সেই প্রথম থেকেই (এখন করে কিনা জানিনা)।
আরও মজার তথ্য হল মুসার প্রায় সব অভিযানের অর্থায়ন করেছে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার গ্রুপ।
তো প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার যে টাকা ইনভেস্ট করেছে, মুসা পর্বত শিখর না জয় করলে তা এককথায় জলেই যেত, কিন্তু তা কি করে হয়?
আর মুসা এভারেস্ট জয় করেছে দাবী করার পর প্রথম আলো যেভাবে কলার নাচিয়েছে তারপর যারা এর বিরোধিতা করেছে তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য প্রথম আলো তথা তার বেতনজীবীরা কি করেছে তা সহজেই অনুমিত।
আজ যখন সেই পুরোন বিতির্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রথম আলো ডেইলি স্টার যে আদাজল খেয়ে নামবে সেটাই স্বাভাবিক। এটা প্রথম আলোর ইজ্জতের প্রশ্ন। একের পর এক বিতর্কে জর্জরিত প্রথম আলোর জন্য এটা মান বাঁচানোর অনেকটা শেষ সুযোগ।
আরেকটা কথা হল, এই বিতর্ক মোটেই এতো বছর পর শুরু হয়নি। সেই প্রথম থেকেই চলছে। কিন্তু মিডা মোঘলদের সামনে তা বারবারই হোঁচট খেয়েছে। ব্লগ, ফেসবুকে তখন থেকে আজ অব্দি অসংখ্য লেখা হয়েছে কিন্তু কয়জন আর ব্লগ পড়ে? মিডিয়া মাফিয়াদের ভয়ে অন্যান্য মিডিয়াও খুব একটা সাহস করেনি। কিন্তু যারা যারা প্রতিবাদ করেছিলেন, কথা বলেছিলেন তারা সবাই আক্রমণে জর্জরিত হতে হতে একসময় প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন। আর মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সজল খালেদ তো তাদের শত অপমান আর নোংরামির বোঝা মাথায় নিয়েই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। অল্প কিছু মানুষের মাঝে একমাত্র Onu Tareq এখনো হাল ছেড়ে দেন নি। আজো স্রোতের বিপরীতে কলম চালিয়ে যাচ্ছেন।
( আরও অনেকেই লিখেছেন এবং এখনো লিখছেন তবে আমি শুধু এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তথা পর্বতারোহীদের নাম বললাম, চাইলেই সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া যায় না, যদিও আজ সবাই এই বিষয়ে বড়মাপের বিশেষজ্ঞ এবং তার চাইতেও বড় মাপের কথা বলে অনলাইন দুনিয়া উল্টে ফেলতেছে)
মুসা ইব্রাহীম এমনকি যার হাত ধরে পর্বতারোহণ শুরু করেছিলেন, বাংলাদেশের এডভেঞ্চার জগতের অসংবাদিত গুরু (মুসার নিজেরও গুরু), বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং এবং ট্র্যাকিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের নামে মামলাই করে দিয়েছেন হাই কোর্টে। সজল খালেদ হয়তো মরে গিয়েই বেঁচেছেন।
অবশেষে মূলধারার মিডিয়া ৭১ টিভি এই বিষয়ে নিউজ করায় তা আবার সকলের সামনে এসেছে। আবারো বলছি, মোটেও এই বিতর্ক ৪ বছর পর শুরু হয়নি। শত শত ব্লগ আর ফেসবুক পোস্ট সেই কথাই বলবে।
যেই লোক এভারেস্টের আগের প্রায় কোন শিখরই জয় করতে পারেননি এবং প্রতিবারই মিথ্যা বলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তার এভারেস্ট জয়ে সন্দেহ প্রকাশ করাটা কি খুব বেশি অন্যায় বা হাস্যকর কিছু হবে???
এতোদিন হয়তো অনেকেই ব্যাপারগুলো জানতেন না। তাই পরবর্তি পর্বেই আপনাদের জন্য থাকবে মুসার প্রতিটি শিখর জয়ের বিতর্কের সচিত্র তহ্যাবলী। সাথে বাংলা চ্যানেল জয় ফ্রি।
আদিওস।
©somewhere in net ltd.