নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন অন্যরকম সহযাত্রী

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৬

পার্কে বা রেস্টুরেন্টে হলে সমস্যা নেই, কিন্তু বাসে পাশে সমবয়সী এবং সুন্দরী গোত্রীয় কোন মেয়ে বসা অত্যন্ত বিরক্তিকর ব্যাপার । এরা পাশে বসলে মেরুদণ্ড সোজা করে টানটান হয়ে নিজের সিটে বসে থাকতে হয়, খেয়াল রাখতে হয় যেন পা নিজের সীমানার বাইরে না চলে যায় । যারা একটু লম্বা বলে বাসের সিটে কমফোর্টেবলি পা ছড়িয়ে বসতে পারেন না, তারা সবাই-ই জানেন কাজটা কতখানি অস্বস্তিকর । যারা সহযাত্রীর সাথে বাস প্রতিটা খানাখন্দের সাথে ধাক্কা খাওয়ার ব্যাপারটা উপভোগ করেন বা সহজেই আড্ডা জমিয়ে ফেলেে নামার আগে ফোন নম্বারও কালেক্ট করে ফেলার দক্ষতা রাখেন, ওমন সহযাত্রী বোধকরি তাদের জন্যেই পারফেক্ট ।



পাশে এসে যিনি বসলেন, বিশাল সানগ্লাসের জন্য বোঝা না গেলেও, তিনি সম্ভবত সুন্দরী-ই। বাসে ঝাঁকুনির তালে তালে পাশের সিটের মানুষটার উপর পড়ে যাওয়ার অভ্যাসটা কখনোই রপ্ত হয় নি বলে স্যান্ডউইচ হয়ে বসলাম নিজের সিটের ভেতর । সারাদিন ঢাকায় ছিলাম বলে, ঘামে শরীর থেকে সম্ভবত চমৎকার খুশবাই বেরোচ্ছে । আমার স্বজাতি ছেলে হলে সমস্যা ছিলো না, কিন্তু কোন মেয়ে নাক কুঁচকে পাশে বসে থাকবে এটা মানা কঠিন । আরেকটু গুটিয়ে গেলাম । শুরু হলো অস্বস্তি এবং তা থেকে চরম বিরক্তি । মনে হচ্ছে পাশে বসেছে কোন কুষ্ঠ রোগী, যার সারা গায়ে দগদগে ঘা । কিছুতেই স্পর্শ লাগানো যাবে না । ........ খুব সম্ভবত বিরক্তিতে বরাবরের মতোই কপাল প্রচণ্ড রকম কুঁচকে গিয়েছিলো বলে পাশ থেকে কিছুটা ভাঙ্গা বাচ্চা বাচ্চা গলার স্বরে শুনলাম, " আপনি ভালো মতো বসুন । কোন সমস্যা নেই । " বলে আবার নিজের সিট থেকে একটু সরেও বসলেন ।



বাহ্ এই মেয়ে তো দেখি বেশ ভালোই ভদ্র । বেশীরভাগ সুন্দরীদের মতো দুনিয়ার সব ছেলেদেরই তার প্রতি সীমাহীন আকর্ষণ বা সুযোগ পেলেই তার গায়ের উপর পরে যেতে আগ্রহী এমনটা মনে হয় ভাবে না । কিছুটা মুগ্ধ হতেই হয় । ....... মুগ্ধতার একটা বিরাট বড় সমস্যা আছে । একবার হয়ে গেলে সেটা ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত বাড়তেই থাকে । কিন্তু মেয়েদের মাত্রাতিরিক্ত ফুলিয়ে নির্দোষ মুগ্ধতাকেও আমরা ছেলেরা যেহেতু ছ্যাবলামির পর্যায়ভুক্ত করে ফেলেছি, কাজেই ফেস এক্সপ্রেশন বেশী চেঞ্জ করে ফেলে নিজের কাছেই নিজে বেকুব হওয়া যাবে না, বড়জোর বিরক্তির ভাবটা তুলে নেয়া যেতে পারে । সেটুকু করে সৌজন্যতার খাতিরেই বললাম,



- ধন্যবাদ ।

- ওয়েলকাম । ......... আপনার হাতে ওটা কি বই?

- ফাউন্ডেশন । আইজাক অসিমভের ।

- বইয়ের জামা কাপড় কী করেছেন? (হাসতে হাসতে) ....... আর এই বই বেশী ভালো লাগবে না ।



বইটা ইউনিভার্সিটির এক স্যারের থেকে ধার করে নিয়ে পড়ছি । মলাট বাসায় রাখা। বই সাধারণত মলাট খুলেই পড়ি, কারণ ওটা সহজেই নষ্ট হয়ে যায় । বই যেহেতু স্যারের, সতর্কতা আরেকটু বেশী । কিন্তু তাই বলে অপরিচিত কোন মেয়ে ঠুশ করে জিজ্ঞেস করে ফেলবে " বইয়ের জামা কাপড় কই " এটা একটু বেশীই বেশী হয় যায় । বক্তার চেহারার দিকে চোখ কপালে তুলে তাকনো ফরয হয়ে যাওয়ার পরও তাকালাম না । গম্ভীর হয়ে বললাম,

- জামা কাপড় ছাড়াই তো ভালো ( এমনভাবে বলা ঠিক হয় নাই  :P ) ..... আর ভালো লাগবে না কেন?



- প্রথম দিক দিয়ে হ্যারি শেলডনের অংশ আর মাঝ দিয়ে ভালোই । কিন্তু ট্রেডারদের পার্টটা আসার পর থেকে বোরিং হয়ে যায় ।

- ও আচ্ছা ।



অসিমভের বই মুখস্থ করে বসে আছে, এমন পড়ুয়া মানুষের সাথে স্বাভাবিক কারণেই আলাপ চালানোর ইচ্ছা মনে জাগলেও; মনের সব ইচ্ছার দাম দিতে নেই বলে প্রবোধ দিয়ে বইয়ে মুখ ডুবালাম ।



বইয়ে মনোযোগ দিতে পারছি না । আমি সিটে শক্ত হয়ে বসে থাকলেও রাজধানী সুপার মার্কেট, দয়াগঞ্জে আর যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গা-চুড়া রাস্তার কারণে পাশের জন পেন্ডুলামের মতো ডানে বায়ে দুলছেন । এই কাজ আমি করলে খুব সম্ভবত অধিকাংশ মেয়ে বাসের মধ্যে দাড়িয়ে গিয়ে বাংলা সিনেমার সেই চিরাচরিত হুংকারটা দিয়ে ফেলতো, “শয়তান, তোর ঘরে কি মা বোন নাই?”



.......... বই পড়ার আশা বাদ দিয়ে ভাবলাম গান শুনি । হেড ফোন বের করা হলো । কিন্তু এই বস্তুটা বরাবরের মতো এবারও আমাকে গোলক ধাঁধায় ফেলে দিলো বের হয়ে । এমন প্যাঁচ ক্যামনে লাগে? পকেটে রাখার সময়তো ভালো মতোই রাখি, কিন্তু বাসে উঠে বের করার পরে সেটা যে অবস্থায় বের হয় তা ঠিকঠাক করতে অর্ধেক রাস্তা এবং গান শোনার ইচ্ছা দুটোই শেষ । এই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারটার রহস্য আজো ভেদ করা সম্ভব হয় নি । ........ পাশের সহযাত্রী ইতোমধ্যেই আমাকে যথেষ্ট অবাক করেছেন । কিন্তু হেড ফোনের সাথে আমার যুদ্ধ দেখার পর তিনি যা করলেন সেটার তুলনায় আগেরগুলো কিছুই না ।

-আমাকে দেন দেখি ।



বলে নিজ থেকেই আমার হাত থেকে নিয়ে নিয়ে ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে ঠিক করে ফেললো । আমি ততক্ষণে অবাক হওয়ার ঊর্ধ্বে চলে গেছি । এমন মানুষের দিকে তাকিয়ে চেহারা না দেখলে মহা অন্যায় হয়ে যায় । সেজন্য তাকাতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আমি ইতোমধ্যেই হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি এবং সেও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । শুধু সুন্দরী-ই নন; রীতিমত তাকিয়ে থাকার মতো সুন্দরী । বাহ্যিক সৌন্দর্য বাদ দিলাম, নিজ গুনে অপরিচিত কাউকে মুগ্ধ , তব্দা, টাসকি সব একসাথে গুলে খাইয়ে দেওয়ার মতো যোগ্যতা রাখা মানুষের সাথে কথা বলাই যেতে পারে, তা সে ছেলেই হোক বা মেয়েই হোক । মনে মনে কী বলা যায় বা আদৌ কিছু বলা যায় কিনা ভাবছি । এর আগেই গাড়ি চলে আসলো সহযাত্রীর গন্তব্যে । তিনি চমৎকার একটা হাসি দিয়ে , “ ভালো থাকবেন “ বলে নেমে গেলেন । এবং আমার মনে হল নামটা অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো ।



আর কখনও দেখা হবে কিনা কে জানে । হলে জিজ্ঞেস করবো, “ তুমি কি ক্ষণিকের পরিচিত সবার সাথেই এমনভাবে মেশো?"



জবাবটা যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আমার আর কোন কথা নেই ।



কিন্তু জবাবটা যদি না হয় তাহলে আমার কিছু কথা আছে ।



.......... শুনতেই হবে ।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০৭

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: হে ক্ষণিকের অতিথি
এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া
ঝরা শেফালির পথ বাহিয়া ....

লেখা পড়তে পড়তে এই গান টার কথা মনে পড়ে গেল :)

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১৭

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: শুনি নি :( ... কার গান ?

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৯

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: :( :(
ভাইয়া এটা একটা রবিন্দ্র সঙ্গীত । এখান থেকে শুনতে পারেন ।

ফাউন্ডেশন আমার খুব প্রিয় ।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: শুনে দেখতে হয় । ..... ফাউন্ডেশন আমারও ভালোই লেগেছে ।

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৫২

শাহরিয়ার রিয়াদ বলেছেন:
হে ক্ষণিকের অতিথি
এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া
ঝরা শেফালির পথ বাহিয়া


আপনার জন্য এটা না। আপনার জন্য হবে

এনেছিলে সাথে করে মৃত্যহীন প্রাণ
মরনে তাহাই তুমি করে গেলে দান।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:০৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: হা হা হা ...... একটু বিপ্লবী ধাঁচের হয়ে গেলো না ?

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:১৫

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: খাইছে ! আপনার লিখা পড়ে আমারই ত মন খারাপ হয়ে গেল !
সুন্দরি দেখলেন আপনি , মন খারাপ হইল আমার :( :(

এখানেই লিখার সার্থকতা । ভালই ত !
ভাল থাকুন খালিদ ভাই :)
সুন্দরীতমারা খালিদ ভাইকে আরো ঘিরে রাখুক ।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:২৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: খাইছে আমারে .... একজন থাকেলেই চলবে ভাই :#> :!>

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:৪২

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
ভাল লাগল।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:৫৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ভালো আছেন ?

৬| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩১

আমিনুর রহমান বলেছেন:




দূর মিয়া আপনে কি? মেয়ের ফোন নাম্বার চাইতে পারলেন না B:-/
ফাউন্ডেশন তো ভালোই লেগেছে।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৩৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: এই কাজ জীবনে একবারই করছিলাম ভাই । নম্বার পাওয়া গিয়েছিলো , কিন্তু কাজের কাজ হয় নাই :-&

৭| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫

শীলা শিপা বলেছেন: শেষটা খুব সুন্দর... নামটাও জানতে পারলেন না??? আমার এখন কষ্ট লাগতেছে আপনার জন্য :(

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: কষ্টে কষ্টান্নিতহওয়ার জন্য ধন্যবাদ !!

৮| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রথম লাইনের সাথে একমত না 8-| #:-S

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৪২

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: পার্কে বা রেস্টুরেন্টে হলে সমস্যা নেই তো :!> :#>

৯| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১১

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: কিছু কিছু মানুষ আছে যারা যেখানেই যায় সেখানেই সবকিছু অন্যরকম হয়ে যায়।

সুন্দর গল্প।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: গল্প মনে হল কেন ? বাস্তবও তো হতে পারে !

১০| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩০

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: আমিনুর রহমান বলেছেন:




দূর মিয়া আপনে কি? মেয়ের ফোন নাম্বার চাইতে পারলেন না B:-/

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: বড় ভাইয়েরা নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ কাজের বুদ্ধিই দেয় =p~ :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.