নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ The Golden Rule

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

রাত দশটার বেশী বাজে। পরের দিনের ফাইনাল পরীক্ষার পড়া পড়ছিলাম। বাইরে প্রচন্ডতম শীত, শৈত্য প্রবাহ চলছে কয়েকদিন যাবত । সূর্যই উঠে নি গত দুইদিন । এরউপর দুপুর পর্যন্ত থাকে ঘন কুয়াশা ।



সারাদিন বাসাতেই ছিলাম। বিকেলের দিকে ইচ্ছা ছিলো একটু বেরোবো । সোয়েটার লাগিয়ে রেডি হওয়ার পর হাত মোজা আর পায়ের মোজা খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমি আবার বরাবরই একটু শীতকাতুরে মানুষ । অন্যদের কাছে এতো মোজা, সোয়েটার লাগানোরটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে । কিন্তু এমন ভয়াবহ শীতের মধ্যে আমার কাছে ওসব ছাড়া বাইরে বের হওয়ার প্রশ্নই আসে না । তবে বাসায় থেকে সারাদিন পরীক্ষার পড়াটা বেশ ভালোই হয়েছে বলা যায়। একটা চ্যাপ্টার ছাড়া আর বাদ বাকি সবগুলো একবার করে দেখা হয়ে গেছে ।



পড়ার ফাঁকে একটু বিরতি নিলাম । আবার পড়তে বসার আগে বন্ধু – বান্ধবদের কে কি পড়লো একটু খোঁজ নেওয়া যেতে পারে । মোট তিনজনকে ফোন দিলাম । তিনজনই গলায় একধরনের হাহাকার ফুটিয়ে তুলে বলল তার এখনও কিচ্ছু পড়া হয় নি । শুনে আমি মিটিমিটি হাসি , কারণ এমন কথা আমি এবারই যে এদের মুখে প্রথম শুনছি এমন নয় , প্রতিটা পরীক্ষার আগেই শুনি এবং এদের প্রতিজনের রেজাল্ট আমার থেকে বহু ভালো , প্রায় ঈর্ষণীয় পর্যায়ের ।



মোবাইলটা কান থেকে নামিয়ে বই খুলে ঐ না দেখা চ্যাপ্টারটা বের করে পড়তে বসে যাওয়ার পরেও মুখে হাসিটা লেগেই রইলো । চ্যাপ্টারটা Ethical Behavior এর উপর । মূল্যবোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে একটা থিওরিটিকাল চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানে Ethical Behavior এর মোট ছয়টা Rules বা উপায় জানানো হয়েছে। আপাতত পড়ছি প্রথমটা The Golden Rule; যেটার মূল কথা হলো " Do unto others as you would have them do unto you." মানে অন্য মানুষের সাথে সেই আচরনটাই করা উচিত যা তুমি তোমার সাথে করা হলে খুশি মনে মেনে নেবে । সহজ জিনিস ।



হঠাৎ বাইরে চেঁচামেচির শব্দ । বাড়ির সবাই তো শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভেবেছিলাম, হলোটা কি আবার এতো রাতে?



বাইরে উঁকি দিয়ে আমার চোখ কপালে। কোথা থেকে এক পাগলী এসে আমাদের থাকার একতলার সামনের বারান্দায় গুঁটিসুটি মেরে বসে আছে। জামাকাপড়ের ঠিক নেই। সাথে করে নিয়ে এসেছে কয়লা, একটা মাটির হাঁড়ি, কিছু পত্রিকার কাগজ সহ নানা জিনিস । রাতে ওসব জ্বেলে আগুন পোহাবে। বাড়ির একটা পুরানো ময়লা চাঁদর দিয়ে বাইরে রাখা কিছু আসবাব ঢেকে রাখা হয়েছিলো। সে সেটার কিছৃটা গায়ে প্যাঁচিয়ে আর বাকিটা ঠান্ডা মেঝেতে বিছিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । সন্ধ্যায় গেইট লাগানো হয় নি নাকি আজ! এই পাগলী বাসায় ঢুকলো কিভাবে?

সেই প্রশ্নের জবাব পরে খুঁজে বের করা যাবে, এখন আগে একে বাসা থেকে বের করা দরকার । দরজার বাইরে পাগল রেখে রাতে ঘুমাবো কিভাবে? আগুন - ফাগুন লাগিয়েই আবার কোন কীর্তি করে বসে তার ঠিক আছে। আমরা বাড়ির সবাই একসাথে তাকে ভালো মতো চলে যেতে বলি। পাগলী কথা শোনে না। করুন চোখে তাকায়। আরে কি বিপদ! এই শীতের রাতে সারা রাত এর জন্যে বাইরে দাড়িয়ে থাকবো নাকি? ঠান্ডায় এর মধ্যেই আমার হাত পা জমে আসছে প্রায়।



বোঝা গেলো সোজা আঙ্গুলে কাজ হবে না। এবার আমরা চোখ রাঙ্গাই। পাগলী একটু ভয় পায়। বিছানার পুরানো চাঁদরটা নিয়েই সে উঠে দাড়ায় । সুন্দর করে আমাদের সামনে দাড়িয়েই চারকোনা করে ভাজ করলো। চাঁদরটা সে সাথে করে নিয়ে যেতে চায়! আমাদের মধ্যে থেকে হালকা আপত্তি আসে। হোক পুরোনো, কিন্তু ওটা ছাড়া বাসায় বাইরের আসবাবপত্রগুলো ঢাকার মতো আর কোন বড় কাপড় নেই। আর ঢেকে না রাখলে ধুলো বালি আর কুয়াশা পরে সব নষ্ট হয়ে যাবে..... পাগলী তবুও কিছুতেই চাঁদরটা ছাড়তে চায় না। দু'হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকে। এবার আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার পালা। মুখ দিয়ে খিস্তি চলে এসেছিলো প্রায়। বাবা-মা সামনে বলে চেপে যাই। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে দুটো দশ টাকার নোট জোর করে হাতে গুঁজে দিয়ে চোখ গরম করে এক্ষন বিদায় হতে বলি । পাগলীও বুঝতে পারে আর থাকা ঠিক হবে না। থাকলে মার খাওয়ার সম্ভবনা আছে। সে চাদরটা হাত থেকে মাটিতে নামিয়ে রেখে গেটের দিক আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে । আমি পেছন থেকে তাকে প্রায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গেটের বাইরে বের করে দিয়ে হাঁফ ছাড়ি। তারপর গেট ভালোমতো লাগিয়ে নিজের ঘরে দিকে তাড়াতাড়ি হাঁটা ধরি । এতোক্ষন বাইরে থাকায় শীতে বরফ হয়ে গেছি মনে হচ্ছে ।



ঘরে ঢুকে দরজা লাগানোর সময় চোখে পড়লো পাগলী রাতে আগুন পোহানোর জন্যে কয়লা, কাগজ সহ যা যা এনেছিলো সবই ফেলে গেছে। এগুলো আবার কাল সকালে একসাথে করে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে । ধুর! পড়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। অথচ এখনো বিরাট একটা চ্যাপ্টারের প্রায় পুরোটা বাকি! কালই পরীক্ষা।



আমি পড়ায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে করতে বইটা টেনে নিয়ে আবার Golden Rules এর পাতাটা খুলে বসি । কিছু বাস্তব ভিত্তিক উদাহরন চিন্তা করে বের করা দরকার । পরীক্ষার খাতায় ওসব না লিখলে আবার টিচাররা নম্বার দিতে চান না ।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: হিপোক্রেসি পরীক্ষার খাতায় বেশ ভালো মানায়।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আসলেই । নম্বারটাই তো মূখ্য ওখানে ।

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠক ।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৯

মামুন রশিদ বলেছেন: Do unto others as you would have them do unto you.

হুম, এটাই আমাদের হিপোক্রেসি ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: চলছে, চলবে।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৫৫

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: ভালো হয়েছে গল্প

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ মিসির আলী ভাই..... মেলায় আপনাকে আর নতুন বই আসবে না ; ভাবলেই খারাপ লাগে।

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৫৮

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আমি পড়শু দিন ক্লাসে গোল্ডেন রুল শিখলাম।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: বাহ্ ! মিলে গেলো....... আশা করি ভালো আছেন।

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:২৬

শান্তির দেবদূত বলেছেন: ভাল লেগেছে, মন খারাপ করার আর বিবেককে একটা নাড়া দেওয়ার লেখা। হাসান মাহবুব ঠিকই বলেছে, পরীক্ষার খাতায় হিপোক্রেসি বেশ মানায়। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এসবের জন্য দায়ী :( !

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১১

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: হয়তো..... সাথে নিশ্চয়ই আমরাও।

৭| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪৪

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: এই হল আমাদের অবস্থা। X(
লেখা একটু ছোট তবে ভালো লাগলো।

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২২

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ রায়ান ভাই ।

৮| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ছোট্ট করে বললেন, তবু কোথাও ছুঁয়ে গেল। দারুণ।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.