![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
চিঠিটা ফেরত এসেছিল পাঠানোর মাসখানেক পরে। চিঠি তো এখন আর কেউ লেখে না, তাই ফেরত আসারও কথা না। তবু কি মনে করে দরজার পাশের চিঠি রাখার বক্সটা খুলেছিলাম সেদিন। তখনই চোখে পড়লো। পিওন কখন যে এসে মেইল বক্সে রেখে গেছে খেয়ালই করি নি। যে লিখেছিল ফেরতও তারই নেবার কথা। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না বলে আমাকেই রাখতে হলো। আমি এখন যে রুমটাতে থাকি সেখানে আমি আসার আগে যে ছেলেটা থাকতো তারই লেখা একটা চিঠি। সে আর এখন এখানে থাকে না, রুমটা দখল করে নিয়েছি আমি। আমি ছাড়া নিজের কাছে রেখে দেওয়ার মত আর কেউ ছিলোনা বলে বের করে নিয়ে ঘরে চলে এলাম। টেবিলের একপাশে পড়ে ছিল বেশ কয়েকদিন। খোলার কথা মনেও হয় নি। আজ কি মনে করে হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম; হালকা সবুজ রঙের বেশ মোটা কাগজের একটা খাম, উপরে ঠিকানাটা খুব যত্ন করে লেখা। দেখলেই বোঝা যায় প্রতিটা অক্ষরের সাথে শুধু কলমের কালি না, অনেকখানি মমতাও মিশে আছে। একমাস আগে পাঠানো খামের গায়ে সুবাস লেগে থাকার কথা না, কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেন এখনও কিছুটা রয়ে যাওয়া কাগজের মিষ্টি ঘ্রাণটা নাকে লাগলো। অন্যর চিঠি পড়া ঠিক না জানি, তবুও কেন যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। খামের রঙ আর ঘ্রাণটার মধ্যে কি এক অজানা দুর্নিবার আকর্ষণ....... দেখি নিজের অজান্তেই খুলে পড়া শুরু করে দিয়েছি। সম্বোধন, ঠিকানা ছাড়া হঠাৎ শুরু হয়ে যাওয়া একটা চিঠি....
“ চিঠির শুরুতে তোমাকে কি বলে শুরু করবো অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারলাম না। প্রিয়তমা, প্রিয়জনেষু নাকি সেই হারিয়ে যাওয়া দিনের ডাক - ভিনদেশী তারা? শেষে মনে হল থাকুক, কিছুই বলা দরকার নেই। চিঠি লেখার ব্যাপারটাই যেন কেমন বেখাপ্পা শোনায় এখন। তবু লিখতে বসলাম তোমাকে আজ। মাঝেমাঝে বড় মন কেমন যেন করে। বিশেষ করে এমন নিশুতি রাতগুলোতে কিংবা যখন অঝোর-ধারায় আকাশ কাঁদে। যখন ঘুম আসে না, বিছানায় এপাশ ওপাশ করি আর রাতের অন্ধকারে বড় বেশী তীব্র হয়ে উঠা ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ শুনি। একেকটা শব্দ মনে হয় মাথার একেবারে ভিতরে ঢুঁকে গেঁথে বসে যায় । আজ আমার মত আরও কেউ একজন জেগে আছে কোথাও। বেহালার শব্দ পাচ্ছি। ধীর লয়ের অজানা করুন একটা সুর। বহুদূর থেকে রাতের বাতাসে ভেসে চলে আসছে আমার কানে। কান্নার মতো শোনাচ্ছে সুরটা। বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠলো হঠাৎ। তোমার কথা খুব বেশী মনে পড়ে গেল। স্মৃতি গুলো এমন কেন বলো তো? ভুলে যেতে চাইলেও মনের ভেতর বারবার জানান দিয়ে যায় আমি আছি .....আমি আছি। চিঠি লেখার সময় অনেকটা মনে মনে মানুষটার সাথে কথাও বলা যায়। মনে হয় সে যেন পাশে এসে বসেছে। হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবো। তাই এই মধ্য রাতে অনেক দূরে থেকে তোমাকে লিখতে বসা । যদি সত্যিই তুমি পাশে এসে বসো? আরেকবার ছুঁয়ে যেতে পারি তোমাকে? আর মাত্র একটা বার .......
জানালা খুলেতে গিয়েছিলাম একটু আগে। অল্প একটু খোলার পরই মনে হল ঠাণ্ডা বাতাসে জমে যাবো। অথচ অনেক ভারি একটা পুলওভার গায়ে দিয়ে আছি, না দিয়ে থেকে উপায় নেই। সন্ধ্যা থেকে তুষার পড়ছে আজ। এ যে কি এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য না দেখলে বোঝা যাবে না। আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো সাদা অস্বচ্ছ একটা পর্দা নেমে আসছে। মাটিতে নেমে আসার পর যে বরফ গলে পানি হয়ে যাচ্ছে তা না, বরং চারপাশ শুভ্র একটা চাঁদরে ঢেকে যায় আস্তে আস্তে। এই বরফ গলতে শুরু করেবে সকাল হওয়ার অনেক পরে। সূর্যের আলো আমার ঘরের সামনের লনে ঠায় দাঁড়ানো মেপল গাছটার ছায়া যখন বিছানার উপর থেকে সরিয়ে পড়ার টেবিলের উপর নিয়ে ফেলবে তখন। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে তোমাকে দেশ থেকে একদিনের জন্য হলেও নিয়ে আসি। দুজনে মিলে সারারাত বাইরে তুষারের মধ্যে হাত ধরাধরি করে হাঁটি। যতদূর যেতে পারি। মধ্যবিত্ত ভাবালুতায় খুব ইচ্ছা ছিল তোমাকে নিয়ে এক জোছনার রাতে হিমু আর রূপা সেজে ঘুরবো। হয়নি। মানুষ হয়ে জন্মানোর এই এক সমস্যা। জীবনের পরম চাওয়াগুলোর বেশীরভাগই কেন যেন অপূর্ণ থেকে যায়। পরজন্মে বিশ্বাস করিনা, তবে এখন মাঝেমাঝে মনে হয় পরজন্ম বলে কিছু যদি থেকে থাকে তবে ভালোই হয়। সব কিছু নতুন ভাবে করার একটা সুযোগ পাওয়া যেত। সারারাত বাইরে হেঁটে যদি ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে যাই হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে ভর্তি হব দুজন। যতটুকু সময় পাশে থাকা যায় আমি তার প্রতিটা মুহূর্ত নিজের করে নিতে চাই। কেন যেন ইদানীং কেবলই মনে হয় আমার হাতে আর খুব বেশী সময় নেই।
দেখতে দেখতে জানলার চৌকাঠে রাখা হাতের চারপাশ ভরে গেল তুষারে হিম শীতল বাতাস চোখ মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। তবু জানলার সামনে থেকে সরতে ইচ্ছা করছিলো না। সামনে রাস্তার মোড়ের ল্যাম্পটার মিটমিট করে জ্বলা আলো অন্ধকারকে কমাতে তো পারেই নি, বরং অনেক বেশী বাড়িয়েই দিয়েছে যেন। কিছু আলো বোধহয় সব সময় একাজটাই করে। অন্ধকার না সরিয়ে আলোর অনুপস্থিতি অনেক বেশী মনে করিয়ে দেয় মানুষকে । আমার জীবন তুমিও তাই। আমি যতবার তোমার উজ্জ্বল পবিত্র উপস্থিতির সামনে গেছি বারবার মনে হয়েছে আমার ভিতরটা কতই না গাঢ় অন্ধকারে তলিয়ে আছে! অস্থির লাগতো খুব। কেন ভালবাসতে গিয়েছিলে আমাকে? একা ভালোই তো ছিলাম। কেবলই মনে হতো আমার মনের তীব্র অন্ধকার একসময় তোমার জগতকেও অন্ধকারে ঢাকতে শুরু করবে। আমি জানি এমনটা হবেই। এজন্যই কি একদিন তোমার কাছ থেকে চুপিসারে পালিয়ে চলে এসেছিলাম? হবে হয়তো-বা ।
এতো কিছু লিখে ফেললাম, আর কেমন আছো সেটাই জানতে চাওয়া হয় নি। কেমন আছো তুমি? কেমন কাটছে তোমার দিন? এই প্রশ্ন দুটো যতবার তোমাকে করেছি একই জবাব দিয়ে গেছো, তাও এক শব্দে। মাথা বাঁ পাশে কাঁত করে হাসির সাথে বলতে - ভালো। প্রতিদিন এই একই কথা। শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম একসময়। তবুও দুই একদিন পরপরই জানতে চাইতাম। সেটা তোমার ঐ এক শব্দের ভালো শোনার জন্য না, তোমার হাসিটা দেখার জন্য। আমি আমার জীবনে কাউকে এতো সুন্দরভাবে হাসতে দেখি না। চোখ ঝিকমিক করে উঠতো তোমার। আজ কেমন আছো তুমি? তোমার চোখের তারায় কি এখনও সেই দ্যুতি খেলে যায়? রাতে ঘুম হয় না একদমই, সূর্য ওঠার পড়ে সারারাত জাগার ক্লান্তিতেই হয়তো চোখ বন্ধ হয়ে আসে, আর ঘুরেফিরে তোমার সাথে কাটানো সময়গুলোই স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন। গতকাল দেখলাম আমাদের একসাথে কাটানও সেই সন্ধ্যাটা । অস্থির লাগে খুব । আচ্ছা তোমারও কি আমার মত সেই দিনটার কথা খুব মনে হয়? ঐ যে দিন বিকেলটা ছিল আরেকটু বেশী সুন্দর , ফিনিক ফোটা জোছনায় ভেসে গিয়েছিল রাতের আকাশ? সারা বিকেল একসাথে ঘুরলাম দুজন। কত হাসি, কত গল্প। ভিতরে ভিতরে কষ্ট হচ্ছিল খুব। কারণ আমি জানতাম সেদিনের পর তোমার সাথে আমার আর কোন দিন দেখা হবে না। রাতে যখন তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসছিলাম মনে হচ্ছিল রিকশাটা এতো তাড়াতাড়ি যাচ্ছে কেন? কি হয় একটু ধীরে ধীরে গেলে! আমার যে আরেকটু সময় দরকার। কত কথা বলা হয় নি তোমাকে। প্রতিটা মুহূর্ত আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমার হাতে ফাঁকে তোমার হাতের উষ্ণতা, আস্তে আস্তে হাতের তালুর ঘামে ভিজে ওঠা আমি যেন এখনও টের পাই। সংসদ ভবনের পিছন দিয়ে মিরপুর যাওয়ার রাস্তাটার একটা জায়গায় খুব অল্প সময়ের জন্য কোথা থেকে যেন অজানা এক ফুলের সুবাস পাওয়া যায় । তোমার থেকেই জানা। প্রাণ ভরে নিচ্ছিলাম সে ঘ্রাণ। আকাশের চাঁদটাও যেন অনেক উজ্জ্বল ছিলো সে রাতে । ফাঁকা রাস্তাটা আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন খোলা কোন মাঠ, আদিগন্ত যার জোছনায় ভেসে যাচ্ছে। পৃথিবীতে আছি কেবল আমরা দুজন, হাত ধরে খুব কাছাকাছি। মানুষ জীবনে সুখের পিছনে অবিরাম এতো ছুটে চলে কেন বল তো? খুব বেশী কিছু কি দরকার আমাদের সুখী হওয়ার জন্য? আমার তো মনে হয় না । অন্তত আমার মত অতি সাধারণ মানুষদেরদরকার পরে না ।
যখন তোমাকে নামিয়ে দিয়ে হেঁটে ফিরে চলে আসছিলাম, কেমন অদ্ভুত শূন্য লাগছিল ভেতরটা। ফিরে তাকিয়ে দেখি তুমি রাস্তায় দাড়িয়ে পিছু ফিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো আমার দিকে। বোধহয় কিছু বুঝতে পেরেছিলে। হাসলাম একটু, জোছনার আবছা আলোয় তোমার চোখে হয়ত পড়ে নি তা। আসার সময় সংসদ ভবনের পিছনে রাস্তার ঐ জায়গাটাতে দাড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। কেন জানি না। পরের দিন বিকেলে বিদেশ চলে আসার ফ্লাইট ছিল। ঘোরের মধ্যে ছিলাম । কখন কি করেছি নিজেই জানি না , চলে এলাম । কিছুই জানাই না তোমাকে। আলাদা হয়ে যেতেই হতো, আজ অথবা কাল। আমি কখনোই চাই নি শুধু মাত্র নিজের জন্য আশেপাশের অনেকগুলো মানুষকে অসুখী করতে। আমার জন্য তুমি বেশী দিন অপেক্ষা করতে পারতে না, তোমাকে দেয়া হতো না। অথচ আমার বেশ সময় দরকার। স্বার্থপরের মত নিজের জন্য তোমাকে সবার বিপরীতে কিভাবে দাঁড় করাই? আর কেবলি মনে হত তুমিও আমার সাথে কখনোই ভালো থাকবে না। আমার উজ্জ্বল দিকগুলোই তুমি দেখে গেছ কেবল, নিজের অন্ধকার অংশটা তোমার থেকে লুকিয়ে গেছি সযত্নে। কিছু মানুষ আসলে দূর থেকেই সুন্দর, কাছে আসলে এদের আর ভাল লাগে না। হতাশ হতে হয়। আমি খুব তীব্রভাবে ঐ দলেরই একজন। তোমাকে হতাশ করতে চাই নি। একটা সময় গিয়ে নিজেকে যদি প্রতারিত ভাব, যদি তোমার চোখের মুগ্ধতা হারিয়ে যায়? দুজন অসুখী হওয়ার চেয়ে একজন সুখী হওয়াই ভালো। একেবারে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ায় আমার জন্য তোমার মনে আস্তে আস্তে ঘৃণা জন্মে যাবে। তোমার আশেপাশের সবাইও তো তাই চায়। তখন আরও বেশী ভালো থাকতে পারবে তুমি। হয়তো এখন আমাকে ঘৃণাই কর। এতো দিনে তুমি নিশ্চয়ই অন্য কারো হয়ে গেছো। কোন খবরই তো রাখি নি, কিভাবে জানবো?
আজ এত দিন পর ভুল সময়ে এসব তোমাকে কেন বলছি জানি না। হয়তো আমি একদমই ভালো নেই বলে। সবার সাথে অভিনয় করা গেলেও নিজের সাথে তো করা যায় না। গতরাতে তোমাকে স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙ্গে দেখি চোখ পানিতে ভিজে আছে। এই সাতাশ বছর বয়সে এমন কান্না কি মানায়, বলো? অনেক চেষ্টা করেছি মানিয়ে নেওয়ার, পারি নি। একটা সময় চাইতাম যেন এমন একটা জীবন হয় যেখানে কোন পিছুটান থাকবে না। পেয়েছি। এখন ইচ্ছা করে ফিরিয়ে দেই এ জীবন। নিঃসঙ্গ যাযাবরের এ জীবন বড় কষ্টের। মন খুব চায় পৃথিবীর কোথাও কেউ আমার জন্যে অপেক্ষায় থাকুক। ইচ্ছা হয় আরেকবার তোমার হাত ধরে হাঁটি। মাঝেমাঝে বিভ্রম হয়। কোনটা বাস্তব আর কোনটা কল্পনা বুঝতে পারি না। এমন গভীর রাতগুলোতে যখন খোলা জানলার ওপাশে তাকাই আমি যেন জোছনা রাতের রুপালি সমুদ্র দেখি, আমার প্রিয়তম মানুষটা যার সৈকত ধরে একা একা হেঁটে হারিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। আমি পিছুপিছু ছুটছি, কিন্তু কিছুতেই কাছে যেতে পারছি না। তাঁর অবয়ব ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। কোন দিন যদি তার কাছে পৌঁছতে পারি তার হাত দুটো ধরে বলবো, “ একা কেন? আমি কি তোমার পাশে হাঁটতে পারি?“ স্বপ্ন-তো স্বপ্নই। তবু ভাবতে ভালোই লাগে একদিন আমি তার হাতটা ঠিকই ধরতে পারবো।
অনেক আবোলতাবোল লিখলাম তোমাকে। পাগল হয়ে যাচ্ছি বোধহয়। আমার ঘরের সামনে একটু দূরে বিশাল এক বিল্ডিং। লিখতে লিখতে ওটার ছাঁদে চোখ গিয়েছিল। খুব হালকা আলোতেও দেখলাম তুমি রেলিং এর উপর দাড়িয়ে আছো, এখনি নিচে ঝাঁপ দেবে। বড় বেশী বিষাদমাখা মুখ। চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলাম, মনে পড়লো তুমি এখানে কখনোই আসতে পারবে না। জানোই না আমি কোথায় আছি। আমারই দেখার ভুল। আগে শুধু রাতেই এসব ভুল হতো।
এখন মাঝেমাঝে দিনের আলোতেও হয়। সেদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গোলাপি রঙের জামা পরা বাঙালি এক মেয়ে পাশ কাটিয়ে গেল। সামনে কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর মনে হল ওটা তুমি ছিলে। সাথে-সাথে দৌড়ে ফিরে এসে তন্নতন্ন করে খুঁজলাম আশপাশ। আর দেখা পাই নি। ইচ্ছা করছিলো চিৎকার করে কাঁদি। হেমসডেল নামে একটা জায়গা আছে এদেশে। পাহাড়ি এলাকা। শীতের সময় পাহাড়গুলো যখন বরফে ঢেকে যায়, তার উপর দিয়ে সূর্যোদয় নাকি অপূর্ব দৃশ্য। তাই দেখতে যাচ্ছিলাম। ঘুরাঘুরি করে নিজেকে আরেকটু ব্যস্ত রাখার চেষ্টা আরকি। কিন্তু আর যেতে ইচ্ছা করলো না। প্রায় সারারাত প্রচণ্ড শীতের মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় একা একা ঘুরলাম। সবাই ভেবেছে পাগল। আমি কি আস্তে আস্তে সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছি?
শেষ করি আজ। কেমন যেন অবসন্ন লাগছে। তোমার পুরানো ঠিকানায় এই চিঠি তোমার হাতে পৌছবে কিনা তাও জানি না।
না পৌঁছানোই বোধহয় ভালো। যেখানেই থাকো, ভালোই থেকো। “
হঠাৎ করে শুরু হওয়া চিঠিটা হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল। পোস্ট করার তারিখটা দেখলাম। ২৯ অক্টোবর। ছেলেটার বাড়ির সামনের ঐ বিশাল বিল্ডিঙের ছাঁদ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগে। সেদিন দুপুরে ছেলেটা ঘর থেকে বের হয়ে হঠাৎ পাগলের মতো দৌড়ে সিঁড়ি বেঁয়ে ঐ ছাঁদে গিয়েছিলো কেন কেউ-ই বুঝতে পারে নি। ছাঁদ থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার পর একটু একটু করে গাঢ় লাল রক্তে যখন ভরে উঠছিল রাস্তাটার কিছুটা জায়গা, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া শরীরটাকে ঘিরে দাঁড়ানো সবাই আত্মহত্যাই ভেবেছিল। খবরটা শুনে আমিও গিয়েছিলাম। রাস্তার পাশে আগের রাতে ঝরে পরা ধবধবে সাদা তুষারে ছিটছিট রক্তের ছাপ। আশ্চর্য! এতো টকটকে লাল হতে পারে মানুষের রক্ত? ওখানে দাড়িয়ে থাকতে পারিনি বেশিক্ষণ ।থরথর করে কাঁপছিল সারা শরীর। চিঠিটা পড়ে শেষ করার পর কেন যেন মনে হল সে আসলে সেদিন আত্মহত্যা করতে যায় নি, কাউকে বাঁচাতেই ছুটে গিয়েছিল। কেমন লেগেছিল তার তীব্র গতিতে মাটিতে পড়তে থাকার সময়? বিভ্রম ভেঙ্গে যাওয়ার পর নতুন করে বাঁচার ইচ্ছা জেগেছিল খুব, নাকি লেগেছিল সব দুঃখ কষ্টের শেকল ছেঁড়ার গভীর আনন্দ? মৃত্যুর সময়টা অজানা বলেই মানুষ নির্বিকার ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। যদি কেউ বুঝতে পারে আর কয়েক মুহূর্ত পরেই তাঁর জীবনের সমাপ্তি কেমন লাগে তাঁর? ঐ কয়েকটা মুহূর্তের অনুভূতি কেমন? জানা সম্ভব না, তবুও খুব জানতে ইচ্ছা হল আজ।
চিঠিটা যত্ন করে রেখে দিলাম একটা বইয়ের ভেতর। যান্ত্রিক যে জীবন বেছে নিয়েছি সেখানে কাউকে ভালোবাসবার মতো অবসর আমার নেই। তবু কাউকে যদি কোনদিন মন থেকে গভীরভাবে ভালোবাসার ইচ্ছা হয়, সে বিভ্রম কাঁটাতে হয়তো বের করে পড়ে নেব আরেকবার।
( ২০১১)
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: আহারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৯
স্মৃতিভুক বলেছেন: ইয়্যু মেক মে ক্রাই...........