নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুখ ফেরানো মুখ

দীপঙ্কর বেরা

আমি ভাষা বাংলা ভালোবাসি

দীপঙ্কর বেরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাসন

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪১

স্কুলে বেত থাকবে না তা কখনও হয়। স্কুল হচ্ছে মানুষ তৈরির কারিগর। শাসন ছাড়া কেউ কখনও মানুষ হয়? বেত হাতে টহল দিতেন আমাদের প্রধান শিক্ষক মহাশয়। আমরা সবাই ভয়ে কাঁপতাম।
ভয়ে কাঁপতাম তিনি মারবেন বলে নয়, ভয়ে কাঁপতাম পড়া জিজ্ঞেস করলে পারব না তাই। ক্লাস চলাকালীন দুষ্টুমি করলে ঠিক চোখে পড়বে তাই। নিয়মিত স্কুলে আসি না তাই। মিথ্যে বাহানা ঠিক ধরে ফেলতেন তাই। পড়া বলা শুরু করলেই ঠিক বুঝতে পারতেন দায়সারা পড়া পড়ে এসেছি তাই।
যারা সত্যিকারের ছাত্রছাত্রী। পড়া করত। পড়া বুঝত। নিয়মিত পড়ত। তাদের কাছে বেতের কোন ভয় ছিল না। কিংবা বেতের জন্য আমরা অনেকেই ছাত্রছাত্রী হয়ে গিয়েছিলাম।
সুশীলবাবু গৌরবাবু অনিলবাবু সতীশবাবু মন্মথবাবু বিষ্ণুবাবু যার হাতে বেত থাক না কেন সবাই চিনতেন কে ছাত্রছাত্রী আর কে ছাত্রছাত্রী নয়। তৃতীয় নয়ন দিয়ে ঠিক চিনতেন কে কে 'ছাত্রানাং অধ্যয়ন তপ' হিসেবে স্কুলে আসছে আর কে আসছে না।
তুমি স্কুলে আসবে আর ওই তো একটু আধটু পড়লেই হল কিংবা না পড়লেই হল অথবা ছাড় তো পড়ে আর কি হবে এবং কত আর পড়ব পাশ করলেই হল বা ঠিক স্টেজে মেকাপ দিয়ে দেব কিংবা পড়ার জ্বালায় জীবনে আর থাকল কি এ রকম ভাবলে কিংবা মানলে চলবে না। জীবনের এই সময়টা শেখার সময় তাই স্কুলে এসে পড়তেই হবে। 'ছাত্রানাং অধ্যয়ন তপ' হতেই হবে। এই ব্যাপারটা আমাদের শিক্ষক মহাশয় বেত হাতেই বুঝিয়ে দিতেন।
শিক্ষক হিসেবে স্কুলের বেতের সাথে সাথে সেই ভাবনাটিও পোষণ করতেন। তাই আমাদের কাছে বেত বা শাসন ছিল মানুষ হওয়ার অবস্থান। আমরা বেতের দু চার ঘা খেলে বাড়িতে বলতেই পারতাম না। কিংবা বললে আরো দু চার ঘা খেতে হত।
একদিন দুদিন পড়া না করে গেলেই যে তুমি বেতের মার খাবে তা কিন্তু নয়, পড়া করে গেলে কিন্তু তোমার বুদ্ধিতে অত ভাল পড়া বলতে পারলে না তার জন্য যে শাস্তি পাবে তা কিন্তু নয়, পড়াশুনার সাথে সাথে যদি তুমি দুষ্টুমি কর তাহলে দুষ্টুমির জন্য তুমি শাস্তি পাবে তা কিন্তু নয়।
কোন শিক্ষা সে পারিবারিক হোক বা সামাজিক হোক কিংবা বোধ বুদ্ধির অথবা খেলাধূলার সেখানে শাসন থাকা খুব জরুরী। মনে আছে 'দঙ্গল' ছবির কথা। বাবা যখন মেয়েদের চুল কেটে দিচ্ছে, মেয়েদের ভোর পাঁচটার সময় ঘুম থেকে তুলছে, ছেলেদের সাথে কুস্তি করাচ্ছে তখন কিন্তু সেই বাবা জানত না তার মেয়ে দেশের হয়ে সোনার মেডেল আনবে। যদি মেয়েরা মেডেল আনতে না পারত তা হলে ঐ বাবা নিষ্ঠুর প্রমানিত হত। শুরুতে সবাই তাই বলেছিল। বাঘা যতীন যখন একবার পুকুরের ঝাঁঝিতে পায়ে আটকে গিয়েছিল তখন পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে তার বাবা বলেছিল - তোমাকে নিজেকেই বিপদ কাটিয়ে উঠে আসতে হবে। বাঘা যতীন উঠে এসেছিল।
তবেই না তাঁরা বরেণ্য।
আমাদের ক্লাসে অলক ফার্স্ট হত। কিন্তু স্যাররা তিন চার সাত আট রোল নম্বরের পার্থ নিমাই কিংবা সুরেশকে পছন্দ করত। কেন না স্যাররা জানতেন কার মধ্যে কি আছে। এবং সত্যি সত্যি পরবর্তীতে অলক কেবল ক্লার্ক। কিন্তু পার্থ নিমাই অরূপ সাধন এরা কেউ বিজ্ঞানী কেউ ডাক্তার কেউ আধিকারিক। এই উপলব্ধি স্যারেদের মধ্যে ছিল বলেই না বেত নিয়ে ক্লাসে এলেও স্যারেদের খুব মানাত।
সেইসব দিন পেরিয়ে এসে, সেই সব বেত দেখে ভয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠা একজন শিক্ষার্থীও বলবে না যে সেদিনের সেই বেত, স্কুলের বেত, বেত হাতে ক্লাসে প্রবেশ করা স্যার ভুল ছিল।
শাস্তি নয় শাসন। শাসন থাকা খুব জরুরী। শাসন না থাকলে শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না।
আমাদের ক্লাসে বিনয় একেবারেই পড়া পারত না। অঙ্ক টুকটাক পারত কিন্তু ইংরেজীতে একেব্বারে কাঁচা। স্যার বলতেন - তোর বাড়িতে ইংরেজীর চাষ হয় যে নিজের মত ইংরেজী বলছিস?
তো সেই বিনয়কে কোন স্যার মারত না। বরং স্কুলের সব কাজে স্যারেরা বিনয়কে ডাকত। স্কুলের কোন অনুষ্ঠান চেয়ার বেঞ্চি বয়ে দেওয়া খাওয়ার এনে দেওয়া তদারকি করা সব কাজে বিনয়। এমন কি বেত এনে দেওয়াটাও বিনয় করে দিত। সেই বিনয় এখন বড় হোলসেল বিজনেস করে। আমাদের গ্রামের বেশ বর্ধিষ্ণু নাগরিক। বকাটে উচ্ছন্নের দলে নাম লেখায় নি। স্কুল থেকে বেত উঠে গেল। বেতের সেই চোখ চলে গেল। কত ভাল স্কুলে দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করেও ফটাফট ইংরেজী বলা বিনয়ের ছেলে মেয়ে বকাটের দলে উচ্ছন্নের দলে ভিড়ে গেল। বিনয় দুঃখ করে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫০

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: দারুন একটা লেখা। আসলে জীবন যুদ্ধে কে আগায় আর কে পিছায় সেই এক রহস্য।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৯

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৫

সাগর শরীফ বলেছেন: আমাদের স্যারদের হাতে বেত চোখে আগুন থাকলেও মন ছিল নরম। নরমে গরমে ছেলেদের দিয়েছেন প্রকৃত শিক্ষা। পড়াশুনায় ঝড়ে পড়লেও মানুষ হয়েছে ঠিক। আজকাল বেত উঠে গেছে। ছাত্রদের প্রপার কোন গাইডেন্স নেই। ফলাফলে বখাটে তৈরী হচ্ছে ছেলেরা।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২০

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: একদম সঠিক
ভাল থাকবেন

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

বেত কখনো শিক্ষার কোন উপকরণ হতে পারে না।
অযোগ্য শিক্ষকরাই শাস্তির ভয় দেখিয়ে শেখাতে চায়।

শিক্ষা হতে হবে আনন্দ মূলক।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২১

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: বেত নয় বেতের মত শাসন। শাসন ছাড়া কোন শিক্ষাই সম্পূর্ণ হয় না। ধন্যবাদ সুচিন্তিত মতামতের জন্য। ভাল থাকবেন।

৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: বেত কখনো শিক্ষার কোন উপকরণ হতে পারে না। অযোগ্য শিক্ষকরাই শাস্তির ভয় দেখিয়ে শেখাতে চায়।
শিক্ষা হতে হবে আনন্দ মূলক।

আমার মন্তব্য বড় ভাই করে দিয়েছেন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২২

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ জানাই। ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৩

মা.হাসান বলেছেন: শাসন থাকা দরকার। কিন্তু এর জন্য বেতের কোনো দরকার নেই। ইউরোপের বেশিরর ভাগ (সম্ভবত সব) দেশে বেত নিষিদ্ধ। ওখানে অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্সের মান -পরিমান অনেক বেশি। দেশে যখন বেত ছিলো তখনো কিছু ছেলে উচ্ছন্নে গেছে। শিক্ষকদের ট্রেনিঙ দরকার। কোথাও চান্স না পেয়ে ঘুষ দিয়ে শিক্ষকের চাকরি পাওয়া লোকদের হাতেই এখন জাতির মেরুদন্ড বিনির্মান হয়। বড়ই চমৎকার।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৩

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৩

অনল চৌধুরী বলেছেন: বাংলাদেশে সবচেয়ে অযোগ্য অপদার্থ লোকজন কোনো চাকরীতে যোগ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষকের চাকরী নেয়।
এদের না আছে শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতা না প্রশিক্ষণ। এদের অনেকেই দূর্বল চরিত্রে সন্ত্রাসী মানসিকতার , যারা দূর্বল মেরেশুদের মেরে নিজেদের বিরাট মহাবীর মনে করে।
আমি দেশের শ্রেষ্ঠ ২ টা বিদ্যালয়ে পড়ে দেখেছি, এসব শিক্ষকদের নিকৃষ্ট আচরণের নমুনা, যা শিশু মনে গভীরভাবে স্থায়ী ক্ষতির সৃষ্টি করে, যেটা নিয়ে পরে একটা লেখা দেবো।
বেত মেরে কোনো ছাত্রকে কেউ সন্ত্রাস বা মাদক থেকে দূরে রাখতে পেরেছে, এমন কোনো দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না।
উন্নত দেশে বেত মারা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৪

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: সঠিক বলেছেন। বেত নয়। তবে শাসন দরকার। ভাল থাকবেন।

৭| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: শিক্ষকরা এত নিষ্ঠুর কেন হয় এটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৫

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: আমাদের তো শিক্ষকদের কখনও নিষ্ঠুর মনে হয় নি।
ভাল থাকবেন
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.