![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
There comes a point in your life when you realize who matters, who never did, who always will.
ডাঃ স্যামুয়েল স্যাম এর চেম্বার এর সামনে রোগির ভিড় লেগেই আছে। বলতে গেলে এই অল্প বয়সেই বেশ জমিয়ে ফেলেছে। আর হবেইবা না কেন, মেডিক্যাল এ ছিল অন্যতম মেধাবী, পাশ করতে না করতেই নামকরা হাসপাতালে চাকরী, বছর কয়েক এর ভিতরেই কপালে জুটে গেল পোস্টগ্রাজুয়েশন নামক সোনার হরিণ। দেখতে যতটা না সুদর্শন, ব্যাবহার তার চেয়ে বেশি মধুর। আর রোগীকে নিজের আপন করে নেবার প্রচণ্ড দক্ষতা।
রোজার সাথে স্যাম এর পরিচয়টা কাকাতালিয় ভাবেই। প্রথম যেদিন স্যাম এর সাথে দেখা হয় সেদিন রোজার তলপেটে অসহ্য ব্যথা সাথে বমি এবং বেশ জ্বর। বেশ কিছুদিন থেকেই এই ব্যথা হচ্ছে কিন্তু সামান্য ওষুধেই ভাল হয়ে যেত তাই অতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। কিন্তু এবারের টা এতটাই তীব্র যে, এই মাঝ রাতেই আসতে হয়েছে। আজাকাল তো হঠাত করে সনামধন্য ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া অনেকটা এক কথা। স্যাম, চেম্বারের শেষ রোগী দেখে বাসায় ফিরবে বলে তৈরি হচ্ছে। তখনই রিসিপশনের মেয়েটা এসে বলল, স্যার একটা ইমারজেঞ্চী রোগী ছিল, যদি দেখে দিতেন। অন্য স্যাররা কেউ নেই।
এই হচ্ছে ডাক্তারি পেশার এক বড় সমস্যা, নিজের যত সমসস্যই থাকুক না কেন, রোগীর সমস্যার কাছে তা তুচ্ছ। স্যাম এর বাসায় ফিরতে এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ তার বোনের মেয়ের জন্মদিনে যাবার কথা ছিল। ভেবেছিল চেম্বার শেষ করেই যাবে। কিন্তু এর মাঝে এই রোগী, মনে হচ্ছে আজ আর যাওয়া হবে না। পিচ্চিটা হয়ত এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রোজা চাচ্ছিল কোন মহিলা ডাক্তার দেখাতে , কিন্তু এখন সে উপায় নেই। সব সমস্যা শুনে কিছু ওষুধ আর বেসিক কিছু টেস্ট দিয়ে বলল, তিন দিন পর রিপোর্ট নিয়ে আসতে। তিন দিন পর, রোজা কে বেশ হাশিখুশি দেখাচ্ছে, চেহারায় একটা প্রশান্তির ছায়া। তার মানে তার সমসস্যার উন্নতি হয়েছে। রোগীর মুখ দেখে অনেক কিছু বোঝা যায়। স্যাম বলল, আপনার সমসস্যার বেশ পরিবর্তন হয়েছে, তবে পুরোপুরি ভাল হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। চিন্তার/ ভয়ের তেমন কিছু নেই। তবে কালচার রিপোর্ট পেলে আরও ভাল হবে। আপনি বরং কালচার রিপোর্ট নিয়ে আর একবার আসুন।
আজ চেম্বার একটু ফাকা, স্যাম রোজাকে ভাল করে লক্ষ্য করল, কপালের ছোট্ট কালো টিপ, খোলা চুল, দু হাত ভর্তি নীল চুড়ি আর নীল জামায় মনে হচ্ছে রূপকথার কেউ বসে আছে। রোজা বলেই বসল, প্রথম যেদিন আপনাকে দেখলাম ভাবলাম আপনি বোধহয় এই ব্যাথা কমাতে পারবেন না। কিন্তু এখন দেখি………। চলে আসার সময় রোজা বলল, ডাক্তার সাহেব কে যদি মাঝে মাঝে বিরক্ত করতে চলে আসি, তবে কি খুব বেশি রাগ করবেন? স্যাম হাসতে হাসতে বলল, আর যাই করুন, চাই না রোগী হয়ে আসুন। সেদিন বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। রোজা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ডাক্তাররা তো ঈশ্বর, আর ঈশ্বর কি ভয় পান?
এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। স্যাম ও সবকিছু নিয়ে বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছে। হঠাত করে একদিন বেশ সকালে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। এত সকালে সাধারনত কেউ ফোন করে না, বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠল, শুভ সকাল ডাঃ স্যাম। এত সকালে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আজ কি আপনার অ্যাপয়েন্টমেণ্ট পাওয়া যাবে? স্যাম বলল, অ্যাপয়েন্টমেণ্ট এর জন্য আপনি হাসপাতালের নাম্বারে যোগাযোগ করুন, বলেই রেখে দিল। হাসপাতালের লোকগুলো কি যে করে, ব্যাক্তিগত নাম্বার রোগীর কাছে দিয়ে রাখে। বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার। আজ আবার বলে দিতে হবে ব্যাক্তিগত নাম্বার যেন না দেয়। চেম্বারে গিয়েই তো স্যাম এর চোখ কপালে , রোজা বসে আছে। চোখের কোণে হাসি দিয়ে বলল, ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া যে এত কষ্টকর তা আগে জানলে নিজেই ডাক্তারি পড়তাম। বলেই হাসতে থাকল। হাসিতে কেমন জানি এক মায়া আছে। আর বড় বিষয় হল, এই মেয়ে যখন হাসে সাথে তার চোখ ও হাসে। স্যাম ভাবল, রোগ ছাড়া কেউ শখ করে ডাক্তারের কাছে আসে না। কিন্তু এই মেয়ে আবার কি সমস্যা নিয়ে আসলো? চেহারা দেখে তো কোন সমস্যা মনে হচ্ছে না। রোজা বলল, অনেকদিন আপনার সাথে দেখা হয় না, তাই ভাবলাম আপনার খোঁজ নিয়ে যায়। সকালে আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনি এমন ভাবেই রেখে দিলেন যে কি বলব। আচ্ছা আপনারা ডাক্তাররা এত রাগী রাগী ভাবে থাকেন কেন বলেন তো? একটু অন্য রকম ভাবে থাকলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যায়? স্যাম এবার সত্যি লজ্জা পেল। বলল আসলে আপনাকে চিনতে পারিনি, আর এতসকালে আমি সাধারনত ঘুম থকে উঠি না। রোজা বলল, আপনাকে বাইরে দেখা করতে বললে তো করতেন না, তাই নিজেই চলে এলাম। এখন বলুন কোথায় ঘুরতে যাবেন? আপনি ঘুরতে বেশ পছদ করেন। স্যাম বলল কিভাবে জানেন? ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু জানা যায়। অবশ্য আপনার ব্যাপারে আরও কিছু জানি, যা আপনাকে এই মুহুর্তে বলা যাবে না। বলেই সেই চোখের কোনে রহস্যময় হাসি দিল। রোজা বলল, আজ চেম্বার শেষ করে চলুন বাইরে ডিনার করি, তারপর আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসব। আপনি তো একাই থাকেন। মাঝে মাঝে নাকি আপনাকে নিজে নিজে রান্না করে খেতে হয়। স্যাম তো পুরাই আকাশ থেকে পড়ল, এই মেয়ে এত কিছু কিভাবে জানল?
চেম্বার শেষে দুজনে একটা রুফটপ রেস্টুরেন্ট এ বসল। কিন্তু খাবার খেতে গিয়ে দেখল, সব খাবার বক্স এ আনা হয়েছে এবং সেটা বাসায় রান্না করা। আরও অবাক করা বিষয় হল, স্যাম এর প্রিয় অনেক খাবার এই তালিকায় আছে। কিন্তু রোজা কিভাবে জানল এইগুলো তার প্রিয় খাবার? রোজা বলল, আপনি তো মাঝে মাঝে রান্না করে খান, আজ না হয় আপনার জন্য আমিই রান্না করলাম। যদিও ভাল রান্না করতে পারি না, তবুও চেষ্টা করেছি। খাবার খেতে যেমনই হোক, খারাপ হয়েছে এই কথা বলা যাবে না। বলেই আবার হাসতে থাকল। এই মেয়েকে যতই দেখছি, ততই যেন অবাক হচ্ছি, ততই যেন গভীরে হারাচ্ছি। মেয়েটি যখন হাসে, তখন তার হাল্কা নীল চোখ যেন আরও গভীরতা ধারন করে। সে এক ঘোর লাগা অনুভূতি। এক দূর্নিবার আকর্ষন কাজ করে।
সেদিনের পর থেকে স্যাম এর সাথে রোজার প্রায় দেখা হয়। চেম্বার শেষ করে প্রায় দিন ঘুরতে বের হয়। বুজতে পারে মায়ার জালে হয়ত জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাল ছিঁড়ে বের হতে ইচ্ছা করছে না। এই কি তবে ভালবাসা ?
সেদিন রাতে চেম্বার শেষে স্যাম বাসায় যাবে বলে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। হঠাত কোথা থেকে বৈশাখী ঝড়ের মত রোজা এসে হাজির। এসেই বলল, চল হাঁটতে হাঁটতে যাই। স্যাম বলল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, এই রাতের বেলা বৃষ্টির মাঝে হাঁটতে হাঁটতে যাবা? রোজা অনেকটা নাছড়বান্দা, বলল চলই না……।
দুজন হাত ধরে পায়ে পায়ে হেটে যাচ্ছে এই বৃষ্টির রাতে নিয়ন আলো জ্বলা ফুটপথ ধরে। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে আর রোজার ভেজা শাড়ির আচল লুটিয়ে পড়ছে পথের মাঝে। হাল্কা দমকা হাওয়ায়, শীতল অনুভূতি, কিছুটা কাপন জাগায়। এলো চুল, বৃষ্টির জলে ভিজে অবাধ্য হয়ে লুটিয়ে পড়ছে রোজার মুখের উপর। নিয়ন আলোয় যা ওকে করে তুলছে আরও মায়াবতী।
হাঁটতে হাঁটতে রোজা স্যাম এর হাত নিজের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বলল, ডাক্তারের হাত নাকি ঈশ্বরের হাত, আর সেই হাতের স্পর্শ নাকি আশির্বাদ হয়ে আসে? হঠাত মেঘের আলোর ঝলকানিতে স্যাম দেখতে পেল রোজার সেই রহস্যময় হাসি, সেই চোখের কোনে হাসি। ইচ্ছে করছে হাসিটাকে হাতের মুঠোয় ধরে রাখি। স্যাম বলে উঠল, তবে তাই হোক, ঈশ্বরের হাতের স্পর্শেই দূর হোক সকল কুটিলতা। শুভ হোক আগামীর এই পথ চলা।
ছবিঃ গুগল।
উৎসর্গঃ কিছু মানুষ থাকে অনেকের মাঝে ভীষণ একা, সেই ভীষণ একা মানুষের জন্য।
২০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৭
দীপ্তিহীন সূর্য. বলেছেন: আপনার ধারনা সঠিক। আমি ডাক্তার। অজ্ঞাত কারনে সামু আমাকে এখনও প্রথম পাতায় লেখার অনুমতি দেয় নাই। আর সময়ের অভাবে ব্লগে অনিয়মিত। সময় পেলে অব্যশই নিয়মত হব।
২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪৬
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: লেখালেখি চালিয়ে যান
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৭
দীপ্তিহীন সূর্য. বলেছেন: ব্যস্ততার ভীড়ে ইচ্ছা থাকলেও করতে পারছি না।
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৪৯
নীল আকাশ বলেছেন: ভাই সূর্য, আপনার ব্লগে এসে এই লেখা টা পড়লাম। আমি একটু কাটখোট্টা টাইপের ব্লগার। কিছু মনে না করলে আপনার লেখা নিয়ে কয়েক টা কথা বলে যেতে চাই,
১। আপনি ডাক্তার, তাতে কি? লেখকদের নিজেদের কোন প্রফেশন থাকে না! আশা করি আপনিও এই গোলচক্কর থেকে বের হয়ে যেতে পারবেন।
২। নায়ক নায়িকা পছন্দ করার সময় যেই পরিবেশ বা পরিস্থিতি নিয়ে লিখবেন শেষ পর্যন্ত সেটা মাথায় রেখে পছন্দ করবেন। আপনার নায়ক নায়িকার নাম শুনে প্রথমে যে কেউ দেশের বাইরের কোথাও মনে করে নিবে, কিন্তু পরে রোজা কে টিপ, নীল চোখ আবার পরে রিকশা এসব নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাবে। বৃষ্টি বাদলের যে দৃশ্য বলেছেন সেটাও এদেশের।
৩। আপনার লেখার হাত ভালো, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, যেটা মন চাবে শুধু সেটাই লিখবেন। লিখতে লিখতেই হাত খুলে যাবে বেশ!
আমি যা যা বলেছি শুধু মাত্র আপনার ভালোর জন্য বলেছি। আপনার মতো আমিও একদিন এভাবেই লেখালেখি শুরু করেছিলাম। পারলে ব্লগে কিছ ভাল ভাল লেখক আছে তাদের লেখা পড়ুন। শেখার কোন বয়স নেই! আমরা জীবনে প্রতি নিয়ত শিখি!
হ্যাপি ব্লগিং
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
ব্লগে চলার পথে নিশ্চয়ই আপনার সাথে দেখা হবে......
৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: গল্পটি ভাল লাগল ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১৮
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: মনে হচ্ছে, আপনি ডাক্তার।
ব্লগে অনিয়মিত কেন?
আপনার লেখা প্রথম পাতায় আসে?