![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের মানব শরীর, রোগ, জীবাণু, ওষুধ এমন অনেক কিছু সম্পর্কে জ্ঞান দেয়। কিভাবে রুগীর সঙ্গে কথা বলতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে, কি কি লক্ষ্য রাখতে হবে, এসব সম্পর্কে বিস্তর নিয়ম নীতি বেধে দেয়া আছে। তবে কিছু ব্যাপার আছে, যা ঠিক বই পত্র ঘেঁটে পাওয়া সম্ভব না। এগুলো নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে ধীরে ধীরে আমরা শিখে যাই।
আমরা যেমন রুগী পরীক্ষা করি, রুগীরাও আমাদেরকে করে। প্রথমেই যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করে তা হচ্ছে, বাইরে ভিড় কেমন। খুব ভিড় নেই, বয়সে তরুণ এমন ডাক্তার দেখানোর জন্য বেশ ভীতিকর। অভিজ্ঞতা নাই, রোগ ধরতে পারবে কি না? এমন ডাক্তারের একমাত্র ভরসা তাঁর ডিগ্রী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তো এখন আবার অনেক শাখা প্রশাখা। তাই রুগী খুজতে শুরু করে নিজের সমস্যার জন্য কোন শাখায় গেলে ভালো হয়। এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল করেন।
প্রথম ভুল টা সেরে এবার তিনি এগিয়ে যান দ্বিতীয় ভুলের দিকে। এবার তিনি খানিকটা নাক কুঁচকে শুরু করেন চেম্বার পরিদর্শন। প্রথমেই ঢুকে যেটা লক্ষ্য করে, চেম্বারটা কেমন? সাজানো গোছানো না অগোছালো? যে টেবিলের পেছনে ডাক্তার সাহেব বসে আছেন তা কেমন সাইজের। ছোট খাট টেবিল মানেই ‘এর কাছে আর আসা যাবে না’। ঢাউস একটা সেক্রেটারিয়েট টেবিল খুব আকর্ষণীয়। টেবিলের ওপরে কি কি আছে? নিজের বিষয়ের কিছু বই, বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানির উপঢৌকন, কলম স্ট্যান্ড, স্লিপ প্যাড, টেবিল ক্যালেন্ডার (দেখতে দামী মনে হলে ভালো হয়)।
এবার শুরু হবে ‘ডাক্তার অ্যানালাইসিস’। এক্ষেত্রে প্রথম যোগ্যতা হচ্ছে কাঁচা পাকা চুল। দশে ছয় এমনিতেই পেয়ে যাবেন। কলপ দিয়ে কাঁচা করা কিন্তু জুলফির কাছে কিছু বাদ দেয়া, নেহাত মন্দ না। সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া, চুল আসলে পেকেছে। বেশী বয়স্ক দের কিছু সুবিধা আছে, তাঁর একটি হচ্ছে অভিজ্ঞতা। আর দুর্জনেরা উনাদের সম্পর্কে রটনা দেন, ‘আপ টু ডেট ইনফরমেশান রাখে না। পুরনো ধাঁচের চিকিৎসা দেন’। তাই অনেকে এখন আবার ল্যাপটপ ধরেছেন। পারুন আর নাই পারুন একটা ল্যাপটপ পাশে খুলে রাখা হয়। ই-মেইল একটা না থাকলে আজকাল জাত নষ্ট হয় দেখে, এখন অনেকেরই আছে।
‘ডাক্তার অ্যানালাইসিস’ এ আরও অনেক ব্যাপার দেখা হয়। বয়স তাঁর মধ্য একটা। জিজ্ঞেস যেহেতু করা যাচ্ছে না, তাই চেহারা দেখে আন্দাজ করা হয়। চেহারায় ‘কচি’ ভাব থাকলে, নেগেটিভ মার্ক। সুন্দর চেহারা অবশ্যই কাজে দেয়। একটা চশমা থাকলে বেশ কাজে দেয়, কেমন একটা ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ ফিলিং দেয়। ‘ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র তো ছিলই এখনও প্রচুর জানার আগ্রহ’। বেশভূষায় কমপ্লিট বেশ কাজে দেয়। অন্ততঃ সোয়েটার এর চেয়ে অনেক উপকারী। গরমের দিনে একটা টাই।
আমার প্রথম চেম্বার পেতে একটু কষ্ট হয়েছিল। কেবল উচ্চতর ডিগ্রী পাশ করেছি, চেহারায় ও এখন জ্ঞানী ভাব আসে নি, চশমা নেই, চুল কালো। প্রচুর দোষ। হাসপাতাল মালিক আমার এক শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বসতে চায় আমার এখানে, কি করব?’ আমার সেই শিক্ষক বদান্যতা দেখালেন। বসবার সুযোগ পেলাম। ভুল হল, বলা উচিত একটা চেম্বারে বসে মাছি মারবার সুযোগ পেলাম।
এ ব্যাপারে আমি আগে থেকেই তৈরি ছিলাম। প্রথম দুই এক বছর লাগবে পরিচিতি তৈরি হতে। তাই কখনও পড়ার বই, কখনও গল্পের বই নিয়ে যেতাম। গল্পের বই লুকিয়ে পড়লে ভালো হয়। কেননা রুগী ঢুকে ডাক্তারকে সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে দেখলে মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারেন। আমাদের মত নতুনরা সাধারণতঃ চেম্বার অ্যাটেন্ডেন্ট পায় না। পাশাপাশি কয়েকটা রুমে তরুণ ডাক্তার থাকলে, সবার জন্য একজন অনেক সময় দেয়া হয়। আমার তেমন একজন ছিল। চেয়ার টেবিল সহযোগে বসে থাকত, কেউ যদি হঠাৎ জিজ্ঞেস করে ‘বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ এখানে কেউ বসে?’ তখন আমার শিকে ছিঁড়তে পারে।
একদিন আমার সাহিত্য প্রেম চলছিল। এবং দুর্ভাগ্যক্রমে বইটা রেখেছিলাম টেবিলের ওপরে। এমন সময় আমার চেম্বারের স্লাইডিং ডোর কেউ টানলেন। গল্পের বইটা লুকানোর সুযোগ আর এখন নাই। একজন ভদ্রমহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে। ‘ডাক্তার সাহেব নাই?’
মিনমিন করে বললাম, আমিই ডাক্তার।
ভদ্র মহিলার শেষ আশার প্রদীপটাও নিভিয়ে দিলাম। উনার করুণ চেহারাটা দেখে যে কারো মায়া লাগবে। এখন তিনি ভয়ানক সমস্যায় পড়েছেন। ‘আপনাকে দেখাবো না’ বলে চলে যেতেও পারছেন না আবার আমাকে দেখিয়ে ৩০০ টাকা পানিতে ফেলার শোক ও সামলাতে পারছেন না। মধ্য বয়সী একজন রাশভারী চেহারার লোক ছাড়া যে কেউ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে পারে, এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তিনি রীতিমত বিভ্রান্ত। উনার নিরাশ চেহারার দিকে তাকিয়ে বললাম, বসুন।
আমাদের দেশে নতুন চিকিৎসকদের, এমনই সব ভয়ানক অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবন শুরু করতে হয়। কখনও সারাদিন বসে অপেক্ষা, কখনও দরজার সামনে কিছু খস খস শব্দ, মনে একরাশ প্রত্যাশা, এই বুঝি দরজা ঠেলে একজন রুগী আসবে। কখনও নামের নিচে ছোট করে লেখা ডিগ্রী কিংবা কি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাঁর বিবরণ দেখে দুই একজন রুগী আসা। কখনওবা হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সুনাম শুনে।
এরপরে আমাদের দাঁড়াতে হয় অদৃশ্য এক ভর্তি পরীক্ষার সামনে ‘ডাক্তার অ্যানালাইসিস’। আমার বেশভূষা, মুখশ্রী (রাশভারী কি না) এবং সর্বোপরি আমার চেম্বারের সৌন্দর্য যদি তাঁকে মুগ্ধ করে তবেই আমি পাশ। আমি রুগীর মনে স্থান পাব। তিনি আমাকে মেনে নিবেন একজন ডাক্তার হিসেবে। এরপর শুরু হবে আমার শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতার পরীক্ষা। ‘ডাক্তার হিসেবে আমি কেমন’।
২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯
মদন বলেছেন: আমি তো আপনার লেখার ভক্তই হয়ে গেলাম
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০২
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জেনে খুশী হলাম।
৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০০
না পারভীন বলেছেন:
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮
তানভীর এফ আখতার বলেছেন: চিন্তার বিষয়! আমার যে চেহারা রোগীরা তো হাসাহাসি করে পালিয়ে যাবে!
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দেখা যাক, কি হয়। মতামতের জন্য ধন্যবাদ
৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬
নতুন বলেছেন: ভাল অভিঙ্গতা...
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
জনাব মাহাবুব বলেছেন: এভাবে তো কখনও ভেবে দেখিনি।
আপনার লেখার সাথে আমার স্বভাবের সাথে খাপে খাপে মিলে গেল।
আমিও ডাক্তার কেমন যাচাই বাছাই করি এবং বয়স্করাই প্রথম পছন্দ। কারন আমার ধারনা, তারা অনেক অভিজ্ঞ এবং কখনও ভুল ইনফরমেশন দিবেন না।
অপরদিকে কম বয়স্ক ডাক্তার দেখাতে স্বস্তিবোধ করিনা।
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ
৭| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১০
জোগ্যান বলেছেন: আমি তখন নতুন পোস্টিং পেয়ে নতুন এক হাসপাতালে জয়েন করেছি। নামডাকও কিছু হয়েছে । কিন্তু চেহারা সবাই চেনেনা। চেম্বারে বসে আছি। এমন সময় এক মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভ ঢুকে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন স্যার এখনও আসেন নি?
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ফ্যান্টাস্টিক। ধন্যবাদ। এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯
মদন বলেছেন: মজা পেলাম
+