![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আটপৌরে বাংলাদেশি।
নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসি।
চিন্তা-ভাবনায় থাকে বাংলাদেশ
পছন্দ করি রিকশায় চড়তে, আড্ডা দিতে, ঢাকার জীবনে অভ্যস্ত
অস্বস্তিতে থাকি সবসময়, অপছন্দ ভিনদেশী কালচার।
মাঝে মাঝে নিজেকে মনে হয় জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক
অর্থহীন এই ক্ষুদ্র জীবনে তাই হারিয়ে খুঁজি নিজেকে........
প্রথম বিদেশে এসেছি। গুছিয়ে উঠতে পারি নি। কিন্তু মাথায় একটা টেনশন কাজ করে সারাক্ষন। একটা কাজ ম্যানেজ করতে হবে। তা নাহলে বিপদ। এই বিদেশ বিভঁূইয়ে খাওয়াবে-পরাবে কে? আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে নতুন আসলাম, তখন ছোট-খাট কাজকে বলতাম "অড জব"। এখানে আসার কিছুদিন পর সহানীয় নামের সাথে পরিচিতি ঘটে। সহানীয় বাংলাদেশিরা ছোট-খাট কাজকে বলেন "কামলা"।
এই "কামলা" খুঁজতে বের হতাম প্রতিদিন সকাল বেলা। প্রথমে লোকাল পত্রিকা, তারপর এক সময় জুটছে না দেখে ডোর টু ডোর নক করা শুরু করলাম। সে এক ইতিহাস। দোকানে দোকানে গিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করি , "ভাই আপনাদের কি কামলা লাগবে?" কিন্তু কামলা আর জুটে না। এর মধ্যে এক বড় ভাই জানালেন একটা এলাকার কথা। শুনলাম ঐ এলাকায় অনেক ফ্যাক্টরি আছে। ওখানে ডোর টু ডোর নক করলে ফায়দা হতে পারে। তাছাড়া ফ্যাক্টরি জবে পয়সাও মন্দ নয়।
আমি আর আমার ফ্ল্যাটমেট একদিন সকালে রওয়ানা দিলাম। কয়েকটা ফ্যাক্টরি ঘুরে লাভ হলো না। যেই শুনে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, সেই বলে কাজ নেই। আরে ঝামেলা!! আমি দেশে কোন ফ্যাক্টরিতে কামলা দিব? না দেশে থাকতে সে সুযোগ আমার ছিল? শেষে বিরক্ত হয়ে আমি ও আমার বন্ধু ঠিক করলাম সোজা রাস্তায় হবে না, বাঁকা রাস্তায় কাজ হাসিল করতে হবে। ঢুকলাম এক ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে। রিসেপশনিস্টকে জানাতেই সে বলল, তার জানামতে কোন কাজ নেই, তবে আমরা চাইলে ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে পারি। আমরা তো রাজি। বুড়ি গেল ম্যানেজারকে ডাকতে আর এই ফাঁকে আমি আমরা ঠিক করলাম যে আমাদের রয়েছে অনেক বছর ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা.........ব্যাটারি তৈরি করা জানি,এই জাতীয় চাপা মারতে হবে। তা নাহলে গতি নাই।
এরই মধ্যে ম্যানেজার আসলেন। তিনি আমাদের ব্যাপার শুনে দু'জনকে ভেতরে ডাকলেন। ভিতরে বসতেই শুরু হয়ে গেল চাপাবাজি। কিন্তু ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে কি হয় তাই তো জানি না। তাই যা মুখে আসে বলে গেলাম যখন জিজ্ঞাসা করা হলো কি কি করেছি আগে। শুরু করলাম ব্যাটারিতে এসিড ঢালা - জাতীয় অসম্ভব সব চাপা। আর কোন থামাথামি নেই। আমি আটকে গেলে আমার বন্ধু শুরু করে আবার আমার বন্ধু আটকে গেলে আমি। হঠাৎ ভদ্্রলোক বলে বসলেন বাংলাদেশে যে কোম্পানিতে কাজ করেছি তার নাম কি? ওয়েব এ্যাড্রেস কি? দেখি সে কম্পিউটারে গুগল খুলে বসেছে। আরে যন্ত্রনা!!! বলে বসলাম হক ব্যাটারি। ভদ্্রলোক বলেন বানান কি? মহা মুসিবত। আমি সবে তোতলানো শুরু করেছি, তখন আমার বন্ধু বলল "খুব বড় কোম্পানি না তো, এজন্য ওয়েব সাইট নাই"। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম।
বলাইবাহুল্য ঐ কামলা আমরা পেয়েছিলাম। আর ভদ্্রলোকের নাম ছিল ফিলিপ ডান। খুবই অমায়িক ও ভদ্্রগোছের মানুষ। তার কাছে আমার অনেক ঋণ। ঐ কামলাটা ছাড়া আমার প্রবাসজীবনে টিকে থাকা খুবই কঠিন হত। টানা 2 বছর কামলা দিয়েছিলাম ওখানে। একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম, "ফিলিপ তুমি ভালো মতই জানতে আমরা চাপা মেরেছিলাম। তাহলে কেন তুমি আমাদের রিক্রুট করেছিলে?" সে উত্তরে বলেছিল "আমার ঐ মুহুর্তে চিন্তায় ছিল কতখানি ডেসপারেট হলে দু'জন ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট এতদূর মিথ্যাচার করে। আমি তোমাদের সাহায্য করার জন্য ঐ দিন কাজ অফার করেছিলাম। কিন্তু আজ মনে হয় আমার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না। কারন ইউ গায়েজ আর সিম্পলি দ্য বেস্ট।"
ধন্য ফিলিপ ডান। আপনি সত্যিই মহৎ। আপনার মত মানুষদের কারনেই আমার মত অভাগারা এদেশে টিকে আছে। আজও আমার সিভির প্রথম রেফারির নামটা থাকে "ফিলিপ ডান"।
(লেখাটি ফিলিপকে উৎসর্গ করলাম। একজন মানুষ যাকে নিয়ে তার বাবা-মা গর্ব করতে পারেন। এমন একজন বস যার সাথে কাজ করে কর্মচারীরা নিজেদের ধন্য মনে করে ও যিনি অকপটে মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন। পৃথিবীতে এমন মানুষ আজও আছে দেখেই মাঝে মাঝে এতো মধুর লাগে বেঁচে থাকা।)
২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৪৫
অতিথি বলেছেন: দেশের বাইরে এরকম অভিজ্ঞতা প্রায় সবারই এক রকম ।
চাপা না মেরে উপায় থাকে?
তবে এটা ঠিক আমরা বাঙ্গালীরা বেশীর ভাগই কিন্তু কাজে টিকে যাই এবং ভালো করি ।
আমাকে কাজের জায়গায় একজন একবার বলেছিলো তোমরা পাকিস্তানীদের চেয়ে অনেক সৎ তবে ওদের চেয়ে কম পরিশ্রমী , ভারতীয়দের চেয়ে অনেক আন্তরিক তবে ওদের থেকে একটু কম স্মার্ট... আর সবার থেকে বেশী ইমোশনাল
৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৪৬
অতিথি বলেছেন: হাসান ভাই, দারুন ইভালুয়েশন!
৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৪৯
অতিথি বলেছেন: আমার কাছে ও এটা পারফেক্ট মনে হয়েছে মাহবুব ।
আমাদের জন্য স্টার্টিং টা টাফ হয়ে যায়, কিন্তু একবার সুযোগ পেলে দেখেছি সমস্যা হয়না ।
৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৫৮
অতিথি বলেছেন: চলুক।
৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৫৯
অতিথি বলেছেন: একথা অস্বিকার করার উপায় নাই আমরা সুযোগ পেলে ভাল করি-অধিকাংশ-ই।
আমার মনে হয় কি জানেন- আমরা নামে মুসলমান। কিন্তু মুসলমান হিসাবে যে কাজ গুলো আমাদের করা উচিৎ তা আমরা করি না, সেগুলো করে ঐ ফিলিপ ড্যানেরাই।
অবাক লাগে যখন একজন ছাত্র ই-মেইল করে জানতে চায় আমার একটা ডাটা ল্যাবে মনে হয় ঠিক মত নেওয়া হয়নি, তাই গ্রাফ হচ্ছে না।
আমি সারাজীবনই চুরি করে বসিয়েছি এরকম হলে। পেনসিল দিয়ে লেখা ডাটা চেনজ করা এইটা জিগানোর কি আছে-এই রকম মনের মানুষ আমরা।
৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ২:০৬
অতিথি বলেছেন: সহমত@আলী ।
আমরা বড় হয়ে উঠি একটা ফাঁকিবাজি সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে । আমি নিজেই s.s.c র পর আর সিরিয়াস পড়াশুনো করিনি । ফাইনালের আগে ক'দিন চোখ কান বন্ধ করে পড়াশুনো । রেজালট ও দেখা যায় খুব খারাপ হচ্ছেনা ।
তবে ঠ্যালা টা বোঝেছি দেশের বাইরে এসে, যে সাবজেক্টে অনার্সমাষ্টার্স করে এসেছি-- এখানে এসে দেখি আসলে তার তেমন কিছুই ভালো করে পড়ে দেখিনি আগে ।
৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ২:১৩
অতিথি বলেছেন: সেদিন এক ইন্টারন্যাশাল স্টুডেন্ট ভাইয়া বলছিলেন, কিছুই তো বুঝিস না, আছস তো বাপ মায়ের হোটেল। খাস আর ঘুমাস। বাস্তবতার অনেক কিছু সত্যি দেখতে হয় নি, আলহামদুলিল্লাহ। আমার কামলা বলতে টিউশনি, যেটা আসলে খুবই উপভোগ করি।
ফিলিপ ডানের মত মানুষগুলো আরও দরকার। 5 বছর আগে এসেছিলাম, আসার প্রাথমিক ধাক্কাটা পুরোপুরি বাবা মায়ের উপর দিয়ে গিয়েছে। এখন বুঝতে পারি অনেকটাই, দিনগুলো খুব কঠিন ছিল।
৯| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ২:৫২
অতিথি বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে মতামতের জন্য। সহমত @ আলী । আমরা আসলেও মুসলমানদের মত কাজ করি না। বন্ধুকে কাজে ঢুকানোর পর দেখা যায় কৃতজ্ঞতাবশত উপকারী বন্ধুর চাকরিটা খেয়ে ফেলে মাস দু'য়েক পর। কারন চাকরিটা খেলে সে বেশি শিফট পাবে ও বেশি টাকা কামাতে পারবে। এই হলো আমাদের নেচার। সত্যিই দুঃখজনক। হয়ত অভাবী একটা পরিবেশে বেড়ে উঠাই আমাদের এই হীন মানসিকতার কারন।
আমার জীবনে যে অল্প কিছু ভালো মানুষ দেখেছি তার একজন হলো ফিলিপ ডান। শুধু ফিলিপ নয়, ওর বাবা জন ডান , চাচা রন ডান ও ভাই রডনি ডান সকলেই খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। পারিবারিক ব্যবসা হওয়ায় ওখানে কর্মরত সবাই ছিল একটি পরিবারের মত। মাস দু'য়েক আগে গিয়েছিলাম দেখা করতে। যে সম্বর্ধনা পেয়েছিলাম তা কখনই ভুলব না।
১০| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ৩:১৭
মাহবুব সুমন বলেছেন: মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।
১১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ৩:২২
অতিথি বলেছেন: একটু বড় হয়ে গেছে সুমন ভাই। দুঃখিত। )
১২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ৩:৪১
মাহবুব সুমন বলেছেন: কিছু লেখা ছোট করার উপায় নাই হে বন্ধু, জীবনের গল্প এটা।
১৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৪:০৮
অতিথি বলেছেন: আমিও লিখবো, কামলা লাইফ নিয়ে। বেদনাদায়ক সে এক অভিজ্ঞতা। শুরুটা বোধ হয় সকলেরই অমন কষ্টের হয়।
১৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৪:৫৭
অতিথি বলেছেন: আমি আরও পোষ্ট আশা করছি, সিরিজ হিসাবে, আর আপনার লিখা পড়তে আমার ভালো লাগে, খুবই বিস্তারিত লিখেন আপনি, আপনার অড জব থেকে....আই.টি জব পর্যন্ত।
ও একটা কথা, ছুটি মিলেছে আপনার?
১৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৫:১১
অতিথি বলেছেন: ক্যাঙ্গারু, ছুটি মিলে নি। মনটা খারাপ। টিকেটও নাই।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। প্রথম কামলাটার কথা লিখি নি। ঐটা 2 দিন দিয়েছিলাম। পরেরবার ঐ টার কথা লিখব। আশাকরি ভালো লাগবে।
১৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৫:১৫
অতিথি বলেছেন: অসুবিধা নেই, যেটা মন চায় সেটা লিখলেই ভালো লাগবে। সব চেয়ে ভালো লাগবে আপনার আই.টি জবের কথা জানালে।
তাহলে, আমরা যারা কামলা(অড জব) দিতে দিতে এখনও হতাশ (কবে এ জীবনের শেষ হবে), তারা একটুঅন্ধকারের মাঝে আলো খুঁেজ পাবো।
১৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৫:৩০
অতিথি বলেছেন: না হওয়ার কিছু নেই। চেষ্টায় সবই মেলে। যাই হোক, লিখব একদিন ইচ্ছা আছে।
১৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ১২:১৫
অতিথি বলেছেন: ফিলিপ সত্যিই মহৎ..
১৯| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৪
অতিথি বলেছেন: ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা। (ইন্টারেস্টিং-এর জুতসই বাংলা কি হয়?)। কিছু ভাল মানুষ আজও আছে পৃথিবীতে। আমারও মাঝে মাঝে এইটা মনে হয়, খুব অল্প কিছু মডিফিকেশন করলে এই লোকগুলারে পারফেক্ট মুসলিম বানায়া ফেলা যাবে, আমার মত লোকরে যেটা বানাইতে গেলে লাগবে আমূল পরিবর্তন।
বাংগালীদের মধ্যে অন্যের পিঠে ছুরি মারার ঘটনা একাধিকবার শুনছি। কপাল ভাল, নিজের চক্ষে দেখতে হয় নাই।
হাসান ভাইরে যে কথা বলছে, ঐটা বড়ই সত্য কথা।
২০| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৯
অতিথি বলেছেন: সবাই কত কি বলল কিন্তু আমি কি বলি?
পার্ট 2 এর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
২১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩
অতিথি বলেছেন: পার্ট 3,4,5 পর্যন্ত যেতে পারে। দেখা যাক কি হয়...
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৪৪
অতিথি বলেছেন: ভাল অভিজ্ঞতা। হ্যাটস অফ টু ফিলিপ।