নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুরন্তপনা

শহীদুল ইসলাম

পেশা সাংবাদিকতা, শখের বশে লেখালেখি, এক বিশ্ব পর্যটক।

শহীদুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসে বেঁচে থাকুক বাংলা ভাষা

২০ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৬:১১

শহীদুল ইসলাম
বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি সমিতির মহাসম্মেলনে দাবি করা হয়, ভাষার ক্রমতালিকায় বিশ্বে বাংলা ভাষা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রবাসী বাংলাভাষীরা কত দিন প্রবাসে বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন? এই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।
যেসব বাঙালি মা-বাবা বিদেশে সন্তান জন্ম দিয়েছেন বা দেশ থেকে শিশু অবস্থায় তাদের নিয়ে গেছেন, সেসব বাবা-মায়ের অনেকেই সন্তানদের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সম্পর্ক ধরে রাখতে বেশ সচেষ্ট। তাঁরা সন্তানদের বাংলা গান, উপমহাদেশীয় নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদির ওপর প্রশিক্ষণের জন্য অনেক পরিশ্রম করেন। এসব ছেলেমেয়ের অনেকে পয়লা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি, বসন্ত উৎসব, জন্মদিন, ঈদ-বিয়ে-পূজা-পার্বণে তাঁদের অর্জিত কলা প্রদর্শন করে থাকেন। প্রশংসাও পান। অনেক মা-বাবা, বয়োজ্যেষ্ঠরা সকালে উঠে বা কাজ থেকে ফিরে রবীন্দ্রসংগীতের সিডি ছেড়ে দেন, যাতে তাঁদের নতুন প্রজন্ম ঘরে বাঙালিয়ানার আবহে নিজেদের শিকড়কে ভুলে না যান।
এ রকম বাঙালির সংখ্যা অনেক হলেও এসব করেন না এমন পরিবারও আছে, যাঁরা বাঙালিপনা দেখানো পশ্চাৎপদতা ভাবেন। ইংরেজি বলা বা ও দেশীয় কেতায় চলাফেরা করার জন্যই তো তাঁরা এ গরিব মাটি ছেড়েছেন। ওখানে গিয়েও বাংলা বাংলা করলে কবে তাঁরা সাহেব-সুবো হতে পারবেন? আমাদের দেশে যাঁরা ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানদের পড়ান, তাঁরাও মূলত ভবিষ্যতে সন্তানদের ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ তথা স্থায়ী করার উচ্চাকাক্সক্ষা লালন করেন। যাঁরা দেশেই বাড়িতে বাংলা বলা নিরুৎসাহিত করেন, ছুরি-কাঁটায় খাওয়া শেখান, মাম্মি, ড্যাডি না ডাকলে লজ্জিত হন, তাঁদের শিশুরা বড় হয়ে বিদেশ গিয়ে ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা’ বলে জনান্তিকে মাথা কুটবেন—এ কি বেশি চাওয়া হয়ে যায় না?
বিদেশের, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার বাঙালি অভিবাসীদের অনেকে প্রায়ই ‘না রে ভাই, এ দেশে আর ভাল্লাগে না, যদি দেশে ফিরে যেতে পারতাম’ বলে আক্ষেপ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশে বেশির ভাগই ফেরেন না। অনেকে বলেন, ‘নাড়ির টান, কিন্তু যখনই মনে হয় সেই যানজট, সেই বিদ্যুৎহীনতা, সেই সড়ক দুর্ঘটনা, তখন আর ফিরতে মন চায় না।’ ইদানীং দেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলার যে বেহাল অবস্থা, তাতে দেশের মানুষই বিদেশ পাড়ি দিতে চাইছে, প্রবাসীরা নিশ্চয় এখন নাড়ির টানের চেয়ে প্রাণ নিয়ে টানাটানিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেসব দেশপ্রেমিক তরুণ-তরুণী দেশেই তাঁদের মেধা কাজে লাগাবেন বলে বিদেশে স্থায়ী হতে চাওয়াকে রীতিমতো দেশদ্রোহী মনে করতেন, তাঁদেরও অনেকের সুর পাল্টে গেছে।
বিদেশে জন্ম নেওয়া বা বেড়ে ওঠা প্রথম বাঙালি প্রজন্ম অভিবাসী বাবা-মা বা পরিবারের বড়দের চর্চার কারণে হয়তো বেশ কয়েক বছর বাঙালিয়ানা ষোলো আনা না হলেও চার-পাঁচ আনা ধরে রাখতে পারেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ধূসরপ্রায় আধুলি নিয়ে দ্বিতীয় প্রজন্মকে কতটা সমৃদ্ধ করতে পারবেন? তাদের স্কুল, বন্ধু, প্রতিবেশী, পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়াকেই তারা সহজ ও স্বাভাবিক বলে ধরে নেবে। অভিবাসী কিন্তু দেশকানা মা-বাবার কারণে প্রথম প্রজন্ম হয়তো স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্য হয়ে বাংলা রাখবে, কিন্তু দ্বিতীয় প্রজন্মের কাছ থেকে সে উৎসাহ আশা করা দুরাশাই হবে। কারণ, দ্বিতীয় প্রজন্মের বাবা-মা তত দিনে আর রবীন্দ্র-নজরুল-দেশাত্মবোধক গান আর শাড়ি-লুঙ্গিতে প্যাঁচানো থাকবেন না। দেশ থেকে কোনো সাংস্কৃতিক দল অনুষ্ঠানের জন্য গেলে দ্বিতীয় প্রজন্মের দাদা-দাদি, নানা-নানিরা স্মৃতিকাতর হয়ে ছুটে যাবেন, কিন্তু পরের প্রজন্মকে কি তাঁরা তখন হাতের নাগালে পাবেন? পড়াশোনা, প্রেম-বিয়ে বা কাজের সুবাদে তাঁরা তখন কে কোথায়? তা ছাড়া, জীবন-জীবিকার প্রধান হাতিয়ার যদি হয় ইংরেজি, তাহলে মাতৃভাষা হয় ‘কাব্যে উপেক্ষিত’।
প্রবাসে বাংলা ভাষা যুগের পর যুগ টিকে থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তবে বারবার অধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তিকামী অসীম সাহসী এ জাতি অর্থনৈতিক রাজনীতিকেও নিজেদের করায়ত্ত করার শক্তি রাখে বলেই আমরা বিশ্বাস করি, ভাষার প্রাধান্যের সঙ্গে যা একেবারেই পরিপূরক। তাই আমরা স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক শিক্ষিত-সচেতন মানুষ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এ ভাষাটিকে একদিন ফুলেফলে পত্রপল্লবে সমৃদ্ধ করবেন। তখন প্রবাসীরা এর সুরক্ষায় যেমন লাভবান হবেন, বিদেশিরাও এ মধুর ভাষার আস্বাদ নিতে মধুকর হয়ে ছুটে আসবেন।
প্রবাসে বাংলা ভাষার প্রসারে প্রত্যেকটি বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে এখনই সুনির্দ্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের বাস্তবমুখী কোন গাইডলাইন বা নির্দেশনা কখনোই চোখে পড়ছে না, নেই সংগঠনগুলোর তেমন কোন সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক প্রয়াস। প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসারে সরকার ও আমাদের ব্যর্থতাগুলোকে চিহ্নিত করে এখনি নানাবিদ উদ্যোগ নেয়া উচিত। সমন্বিত প্রয়াসই আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রবাসে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। জাতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক অগ্রগতির মধ্যে একটি সুরেলা ভারসাম্য স্থাপন করা, সে হিসেবে যথাসম্ভব একযোগে সংস্কৃতির দিকে বিভিন্ন শাখা এবং এগুলো বিকাশের উদ্যোগ নিতে হবে।
আমাদের প্রবাসীরা বিভিন্ন দিবস বা উৎসব পালন করার মতো শোক ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ২১ ফেব্রুয়ারিকেও বেশ ঘটা করে পালন করেন। বেশ কয়েকটি দেশে শহিদ মিনার গড়ে তোলার গৌরবও অর্জন করেছেন। যেসব দেশ পিছিয়ে ছিল, তারাও এখন আর কম এগিয়ে নেই। এখন একুশ পালিত হয় জমজমাটভাবে। ভাষা দিবস সামনে রেখে প্রবাসীরা যা করছেন, তা সবই সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় কার্যক্রম। কিন্তু ওই একটি বিশেষ দিনে কেবল র‌্যালি, সভা-সমাবেশের ভেতরেই যেন একুশের চেতনা আটকে না থাকে, সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। বাঙালিয়ানা কণ্ঠ বজায় রেখেও যে শুদ্ধ ইংরেজি বলা সম্ভব, সেটাও দরদ দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। মেকি ইংরেজিতে বলীয়ান হয়ে মাতৃভাষার মর্মমূলে যেন আমরা নিজের অজান্তেই আঘাত না হানি।
যারা প্রবাসে কর্মরত, তারা ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন উপায়ে বাংলাভাষার পরিচিতি তুলে ধরতে পারেন। একজন প্রবাসী যে কোনো দেশেই বসবাস করুন না কেন, সেখানে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আগত বিভিন্ন সহকর্মীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। দিনে দিনে ভাব বা সখ্য গড়ে ওঠে। তার সুবাদে একজন প্রবাসী ব্যক্তি যদি দশ জন ভিনদেশির কাছে আমাদের ভাষার ঐতিহ্য, একুশের অহংকার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার গৌরব বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হন-সে ক্ষেত্রে প্রচার ও প্রসারের মাত্রা এক বিরাট পরিসংখ্যানে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, এমন ইতিহাস কি পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটি আছে?
অনেক প্রবাসী মা-বাবা সন্তান-সন্ততির সঙ্গে বাসাবাড়িতেও কথা বলার ক্ষেত্রে ইংরেজিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। একুশের চেতনা সমুন্নত রেখে বাংলা ভাষার গৌরবোজ্জ্বল অবদান ধরে রাখতে হলে এ ধ্যান-ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু তাই নয়, বিদেশে জন্ম নেয়া এমন অনেক শিশু-কিশোর আছে, যারা ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারলেও লেখা বা পড়ার ক্ষেত্রে একেবারেই অক্ষম। সে অক্ষমতা তাদের নিজের দোষে নয়। অনেক মা-বাবার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কর্মব্যস্ততা বা সীমাবদ্ধতার দরুন বাংলায় হাতেখড়ি দিয়ে উঠতে পারেন না।
পৃথিবীর কোনো ভাষাই সম্ভবত আঞ্চলিক ভাষার প্রভাবমুক্ত নয়। এমনকি ইংরেজি ভাষাতেও রয়েছে আঞ্চলিকতার ব্যাপক প্রভাব। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী আমাদের মাতৃভাষা বাংলাও এর প্রভাবমুক্ত নয়। সন্দেহ নেই, আঞ্চলিক ভাষা যোগ হয়ে কখনো কখনো মূল ভাষাকে অলংকারের সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ করে তোলে। কিন্তু সে আঞ্চলিক ভাষা যদি মূল ভাষার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে চায়, সেখানেই যত আশঙ্কা।
সব সীমাবদ্ধতা বা প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের মা-মাটি ও প্রকৃতির ভাষা বাংলাকে এক মহানক্ষত্রে রূপান্তরিত করার চেষ্টায় ব্রত হওয়া সবারই উচিত। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষার যে আবেগঘন জোয়ার, একে কাজে লাগানোর প্রকৃষ্ট সময় এখনই। আর এভাবেই বেঁচে থাকবে বাংলা ভাষা।

[এই লেখার কিছু তথ্য অনলাইন থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: বেঁচে থাকুক বাংলা ভাষা।

২| ২০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২৫

রিফাত হোসেন বলেছেন: পুরোপুরি সঠিক নয়। বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়ে গেলেই বাংলা ভাষা টিকে থাকে না। এদের(প্রবাসীদের) মধ্যে মিশ্র ও বিকৃত ভাষার চর্চা বেশি। যেটা অন্য ভাষার মানুষদের মাঝে সাধারণত দেখা যায় না। তবে এটা খারাপ বলার সুযোগ নেই। কারণ এখন যদি বিকৃত বা মিশ্রিত চর্চাই যদি আধুনিক বাংলা হয় তাহলে সেটাই ভবিষ্যৎ! বাংলা ভাষা নিয়ে ১৯৫২ যে গর্ব আমরা করতে পারি, সেটা ইতালিয়ান; ফরাসি; জার্মান; ইংরেজিদের ও অন্যান্যদের করা উচিত। তারা যতটুকু নিজ ভাষাকে মর্যাদা দেয় ততটুকু আমরা দেই শুধু কাগজে কলমে! এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশে বিদেশীদের ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। যেটা ঐসব দেশে উল্টো। ঐদেশের সঠিক উচ্চারণরীতি ও ব্যবহার না হলে যতটুকু বঞ্চনায় পরতে হয় সেখানে বাংলাদেশ কিছুই না৷ সুতরাং গুরুত্ব কে বেশি দিচ্ছে?
আঞ্চলিক প্রভাবমুক্ত নয় সঠিক কিন্তু এরা দুইভাবেই অভ্যস্ত।

তথাপি অনেক ভাল কিছু উপস্থাপন করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.