নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

র্ভাবনা আমার ,ভাবনা আপনার। কিছু শব্দের প্রয়াস ।

ঁ নবায়ন পারভেজ

এই যে আমি ০০৭

শৌখিন কবি ও গল্পকার

এই যে আমি ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু পুতুল কিছু ছায়া

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫



০১.

রাত হয় হয়। সরু একটা গলি ইচ্ছামত কোথাও চলে গেছে । দু 'ধারেই চায়ের দোকান । রাজা-উজীর মারা সন্ধ্যাকালীন অশ্বারোহীরা জমিয়ে বসেছে । রিকশাচালকেরা ময়দাগলানো ঘনচিনির সিরাপ মিশ্রিত পাউরুটি খাচ্ছে । ওধারে দু'টা ফার্মেসি ...কার কি হয়েছে কে জানে একটি রুগ্ন মহিলা কাঁদছে । ফার্মেসি-কাম ডাক্তারখানার বারান্দায় বিরক্ত কিছু রুগী অপেক্ষারত ।



পরিপূর্ণ জীবন কোলাহলে আরেকটি রাত নগরীতে আসবে । সৌরভ একটি চায়ের দোকানে বসে নির্বিকার চা খাচ্ছে । সে সিগারেট খায়না । তার বন্ধু জালাল কড়া স্মোকার । স্মোকার নন-স্মোকার দের বন্ধুত্ব কোথায় যেন একটু আটকে থাকে । সৌরভ -জালালের বন্ধুত্ব আটকে নেই। নগরীর দিন রজনীর মতই প্রবাহমান।



সৌরভ বিরক্তমুখে আরেক'কাপ চায়ের কথা বলল ।

পাশে বসা লোকটি বলল



"আপনার বাড়ি নোয়াখালী ?"

-"কেন? "

"চায়ের কথা বললে তখন মনে হল।বলে ফেললাম।"



দ্রুত আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছে । আজব তো ! সেদিন ফার্মগেটে এমন অপরিচিত একজন হঠাত আলাপ জুড়ে দিয়েছিল । সৌরভ হোটেল "স্বর্গভূমি" খুঁজছিল ; আগুন্তকও নাকি ওইদিকে যাবে । বেশ ভাল লেগেছিল লোকটাকে । হোটেলের সামনে এসে তাকে চা খাওয়ালো । লোকটা একটি নতুন "নেট" কোম্পানীর মার্কেটিং এ কাজ করে । কোম্পানীর নাম মনে আসছে না । সৌরভ তাকে বলল যথাসাধ্য সহায়তা করবে ,লোকটিও কিছু কমিশনের কথা বলেছিলো । ফিরে আসার সময় সৌরভ মানিব্যাগ খুঁজে পেলনা । বাংলামোটর থেকে হেঁটে হেঁটে হলে ফিরল। হলে ফিরে লোকটিকে ফোন করল ...

"আমার মানিব্যাগ পাচ্ছিনা । "

-"আমি নিয়েছি। টাকাও তো বেশী নাই।লাভ নাই । ফোন রাখেন। "

"ওখানে আমার কিছু দরকারী কাগজ আছে ।

-"কয়? খালিতো কয়টা প্রেমপত্র । মেয়েদের থেকে দূরে থাকেন ভাই,আখেরে লাভ হবে । গুড লাক।"



পাশে বসা লোকটি কেমন ?একটু আগে করা প্রশ্নের জবাব সৌরভ দেয়নি । লোকটার আচরণ দেখে মনেও হচ্ছেনা সে কোন জবাব প্রত্যাশা করেছিলো; কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে ...

-"ও কি গেছে ?"..."ও কি গেছে?"

এই লোক ফোনে অনেক জোরে জোরে কথা বলে । মানুষজন তাকিয়ে দেখছে ।

কে কোথায় যাবে কে জানে !যে যাবে সে এই লোকের কে ?কার সাথে কথা বলছে এই মানুষটি ?

তার স্ত্রী ?

অপরিচিত কোন মানুষ কার সাথে ফোনালাপ করছে তা বোঝার ভালো ক্ষমতা আছে সৌরভের ;অন্তত জালালের তাই ধারনা। এই নিয়ে জালাল একদিন বলেছিল তাকে ,"কিভাবে বুঝিস ?" সৌরভের খুবই হাসি এসেছিল ,বলেছিল "চিন্তা করলেই বোঝা যায়।"

জালালটা পাগল একটা । তুচ্ছ বিষয় বড় করে দেখে ।

চা শেষ করে সৌরভ বলল "আপনার বউ এর সাথে কথা বলছিলেন ?"

-"জ্বি ।"

ওর দিকে তাকিয়ে লোকটি বলতে থাকে

"এক ছোট ভাইকে চাকরী দিলাম কিছুদিন আগে । মানে ছেলেটা আমার শ্বশুরবাড়ির গ্রামের ছেলে । পৌছেছে নাকী জিজ্ঞেস করছিলাম। "

-"কি চাকরী দিলেন ?"

-"কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হল। বেক্সিমকোতে । "

সৌরভ হাসল । -"তা আপনি কি করেন ?"

-"ভাই করলে ,৮/১০ টা বাড়ি থাকত এই ঢাকা শহরে । নিজের জন্য কিছু করি নাই । এমনিই ছোট একটা চাকরি করি । গার্মেন্টসের ম্যানেজার । কিন্তু সম্পূর্ণ গার্মেন্টস ধরেন আমি একাই চালাই। "

-"তাই নাকি? "

-"আরে বলেন কী !মালিক তো নতুন ,সে কিছু বোঝে !এত কাজের চাপ । মাঝে মাঝে মনে হয় ফোন অফ করে বসে থাকি । ভাল্লাগেনা !"

-"করবেন । মাঝে মাঝে ফোন অফ করে দিবেন। আমিও করি । নাকি প্রব্লেম?"

-"না প্রব্লেম কীসের ?আমার চাকরি খাইলে এর কোম্পানী চলবে? দু'দিন আগে ফোন অফ করে দিছিলাম । অফিসের লোক পাঠাইসে বাসায়।"

-"তারপর? "

-"ডেকে নিয়ে বলে ,বাবু সাহেব আপনি এমন করলে কই যাব বলেন । আপনি বন্ধু মানুষ।"

-"মালিক আপনার বন্ধু নাকি ?"

-"হ্যাঁ একসাথে চা -সিগারেট খাই । হাই লেভেলে অনেক বন্ধু বান্ধব আমার আছে । অনেকের দুটা দশটা উপকার করতে পারি । কিন্তু ভাই মানুষ ভালো না । "

-"তা ঠিক ,মানুষ খারাপ।"

-"খারাপ না ,অকৃতজ্ঞ । এই ধরেন যে ছেলেটার কথা বলছিলাম ,চাকরী পাবার পর তো আর ফোন দিলোনা । আমিই ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছি ...পৌছেছে কিনা। এখনই এই অবস্থা আর কিছুদিন পর দেখলেও চিনবে না । "

-"এরকম হয় । যত উপকারই করেন না কেন সব মানুষ মনে রাখবে না। "

-"ঠিক বলেছেন । এই ধরেন এই এলাকার যত বড়লোকের ছেলে সবাই আমাকে বস ডাকে । সেদিন জালালের গাড়ির ব্যাটারী নস্ট হয়ে গেল ,আমি ডাক্তারের গাড়ি নিয়ে গিয়ে,মেকানিক দিয়ে স্টার্ট করায়ে আসলাম। এখন জালালকে ফোন দেই ,বলবে ভাই পরীক্ষা আছে ,পড়ছি । আসবে না।"



জালাল ফোন দিয়েছে । সৌরভ বলল সে কোথায় আছে । জালালের আসতে ২/৩মিনিট লাগবে ।

সৌরভ লোকটির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল ,

"আমি জালালের সাথে পড়ি। আমার নাম সৌরভ ।"

লোকটি নির্বিকার চিত্তে হাত মিলিয়ে বলল "আমি বাবু।"

সৌরভ হাসল । বলল "ভাই আমার বাড়ি নোয়াখালী নয়। লক্ষীপুর । "

বাবু বলল "একই কথা।"



জালাল দোকানে ঢুকেই প্রাণবন্ত গলায় বলল "আরে বাবু ভাই এখানে দেখছি । কি অবস্থা ভাই ?"

-"ভালো অবস্থা । আমি অলটাইম ভালো । হাসিমুখে জানালেন বাবু ।

-"তোমার অসুখের খবর কী ?"

জালালের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তার সামান্য মানসিক সমস্যা আছে । কথায় কথা একদিন এই লোকটিকে বলে ফেলেছিল। নির্বোধের মত বাবু মিয়া সৌরভের সামনে কথাটা বলে দিল। এইজন্যই চাণক্য বলেছেন নিম্নশ্রেনীর মানুষ যতই আপন হোক না কেন এদের মনের কথা বলতে নাই। জালাল একটু আগেই একটি বই এ এটা পড়েছে । তত্ত্ব এবং বাস্তবের অপ্রত্যাশিত সম্মীলন ।

-"আছে মোটামূটি।"

-"ঔষধগুলো লাত্থি দিয়ে ফেলে দাও জালাল। তোমার আসলে কিছুই হয় নাই ,বুঝলা? তোমার অসুখ বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে। তবে সব মেয়ে পারবেনা। মেয়ে আমাকেই খুঁজতে হবে । আমি খুঁজতেছি।"

জালাল বিড়বিড় করে বলল "খুঁজতে থাক শালা।"

সৌরভ বলল-" তোর কি হয়েছে রে?"

জালাল কথা না বলে একরাশ ধোয়াঁ ছেড়ে দিলো । বাবুকে বলল "আপনার বন্ধুর চেম্বারে রুগী তো আর আঁটে না । যারে পান বন্ধুর চেম্বারে চালান করে দেন।"

-"তোমরা তো গেলানা একদিনও ।"

-"না ,আপনিই তো বলেন নি এখন আমার দোষ দেন । কমসমে দেখে দিবে ...আপনার বন্ধু... । "

সৌরভ শুনছে ওদের কথা চুপচাপ। জালাল হঠাত তার দিকে ফিরে বলল "কি ডিরেক্টর কই কাপ চা মারলি এতক্ষণে?

বাবু কথা বলেই যাচ্ছেন । ...।।"তোমরা তো আর এইসব ডাক্তার দেখাবা না ,এরাই বড় হাসপাতালে গেলে বেশি টাকা দিয়ে দেখাবা...। "

জালালের একটু বিরক্তি লাগে । একা একা বাবুভাইয়ের কথা শুনে সে মন দিয়ে ,পরামর্শ করে কিন্তু এখন সৌরভের সামনে উনি চাপাটা স্বাভাবিক গতিতে না চালালেও পারেন ।

সৌরভ বলল "ক্লাসে যাস না কেন?"

বাবু কথা শেষ করতে দিলেন না । "জালাল ক্লাস কামাই দিও না । পরীক্ষার সময় তো প্রায়ই দেখি বাইরে ঘোরাঘুরি কর । যাও 'তোমারা পড়। তোমাদের তো পরীক্ষা চলছে।"

আসলে কোন পরীক্ষা চলছে না । জালালের এমনিতেই বলতে ভাল লাগে পরীক্ষা চলছে ,পড়ার ভীষন চাপ। সে খুবই ব্যস্ত। এরকম মিথ্যা সে প্রায়ই বলে।

সৌরভের ঠোঁটে একটু হাসি এসে মিলিয়ে গেল ,বলল "চল ,উঠি । "

বাবুভাই কিছুতেই বিল দিতে দিলেন না। আরো দুটা সিগ্রেট জালালের পকেটে গুঁজে দেন," আরে চাকরি বাকরি করবা তখন খাওয়াবা । দেখব মনে থাকে কি না।"



সৌরভ আর জালাল পাশাপাশি হাঁটছে । সৌরভ বলল

"এই কুতুব কই পাইলি?"

-"কোথাও না । এই এলাকায় আসার পর পরিচয় হয়েছে।"

-"জানিস এই লোকটা একটি কথা শুনেই বুঝে ফেলেছে আমার বাড়ি লক্ষীপুর। "

-"তোর কথা শুনলেই বোঝা যায়। "

-"মোটেও যায় না । আমার কথায় আঞ্চলিক টান নাই। "

-"তুই মুখ হা করলেই বোঝা যায় ,তোর বাড়ি লক্ষীপুর। "



দু'জনে হল্লা করতে করতে গলি ছেড়ে মেইন রোডে উঠল । এখন তাদের তুচ্ছ কথায় হল্লা করার বয়স।

চলবে ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.