![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পবিত্র সূরা কাওছারের ২ ও ৩ নং আয়াত শরীফ আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “অতঃপর আপনি নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয়ই আপনার বিরোধিতাকারীরা নির্বংশ।”
এই সূরায় আল্লাহ পাক ২ নং আয়াত শরীফে রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন কুরবানী করতে। এর পরই বললেন যে, আপনার বিরোধিতাকারীরা নির্বংশ। অর্থাৎ বুদ্ধিমান পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন যে, কুরবানীর বিরোধিতা করার দ্বারাই রসূলের বিরোধিতা করা হবে এবং এর শাস্তি হলো নির্বংশ হওয়া। বিশেষ করে কোন শাসকগোষ্ঠী যদি কুরবানীর বিরোধিতা করে, সেক্ষেত্রে তার উপর সপরিবারে নিহত হওয়ার গজব নাযিল হয়।
ভারতে ইন্দিরা গান্ধী সরকার একদা গরু জবাই নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় থাকাকালে তার উত্তরাধিকার বিবেচনা করা হত তার ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধীকে। এই সঞ্জয় গান্ধী সম্পর্কে কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমর লিখেছে-“ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় গান্ধী দিল্লিতে গরুর গোশত নিষিদ্ধ করে এবং জুমা মসজিদের পাশে যে বিখ্যাত কাবাবের দোকানগুলো ছিল, সেগুলো সব উঠিয়ে দেয়।” (http://goo.gl/lRnSfQ)
এই সঞ্জয় গান্ধী ১৯৮০ সালে প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যায়। ঠিক তার ৪ বছর পরেই তার মা ইন্দিরা গান্ধী মারা যায় শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে। ইন্দিরার মৃত্যুর পর তার অপর ছেলে রাজীব গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। সেই রাজীব গান্ধীও মারা যায় তামিল সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায়, ১৯৮৯ সালে।
অর্থাৎ গান্ধী পরিবারের কোন সদস্যেরই কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। গরু জবাই নিষিদ্ধ করার কারণে যে কেবল ইন্দিরার ন্যায় হিন্দু শাসকেরা নির্বংশ হয়েছে তা নয়, বরং মুসলমান নামধারী শাসকেরাও রয়েছে। ভারতবর্ষে মুঘল শাসনের তথা মুসলিম শাসনের অবসান ঘটেছিল গরু কুরবানীর বিরোধিতা করার কারণে। শেষ মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর ছিল চরমস্তরের হিন্দুপ্রেমিক। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে ব্রিটিশরা রাজধানী দিল্লীকে অবরুদ্ধ করেছিল, কারণ সমস্ত বিদ্রোহী সেনা দিল্লীতে জড়ো হয়ে বাদশাহ জাফরকে তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল।
সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে দিল্লীর হিন্দুরা গোপন তথ্য পাচার করতে শুরু করল ব্রিটিশদের নিকট। মুসলমান সৈনিকেরা তা বারবার বাদশাহ জাফরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার পরও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। উইলিয়াম ড্যালরিম্পেলের ‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস’ বইতে উল্লেখ রয়েছে যে, বাদশাহ জাফরের হিন্দুতোষণে আস্কারা পেয়ে দিল্লীতে পাঁচজন মুসলিম কসাইকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছিল হিন্দুরা, ১৮৫৭ সালের ১৯শে জুলাইতে। এই ভয়াবহ অপরাধের শাস্তিস্বরূপ হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো নেয়া হলোই না, উল্টো ফরমান জারি করে গরু জবাই করাটাই নিষিদ্ধ করে দিলো বাহাদুর শাহ জাফর! একপর্যায়ে বাহাদুর শাহ জাফর হিন্দুদের মন পেতে উদ্ভট একটি ফরমান জারি করল যে, দিল্লীতে মুসলমানদের গৃহপালিত যত গরু রয়েছে, সব এনে কোতোয়ালী তথা শহরের প্রধান থানায় এনে রাখতে হবে, যেন কেউ গরু কুরবানী করতে না পারে। এতে করে কোতোয়াল সাঈদ মুবারক শাহ আতঙ্কিত হয়ে লিখল, দিল্লীর সমস্ত গরু এনে রাখার মতো জায়গা কোতেয়ালীতে নেই। বাস্তবতা বর্জিত এই ফরমান স্বাভাবিকভাবেই কার্যকর করা সম্ভব হলো না, এর বদলে গরুর মালিক সমস্ত মুসলমানদের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হল যে, তারা কেউ তাদের গরু কুরবানী করতে দিবে না।
১৮৫৭ সালের সেই উত্তাল সময়ের ১লা আগস্ট কুরবানীর ঈদ উদযাপিত হলো দিল্লীতে, যেখানে একটি গরুও কুরবানী করা হলো না। এতে করে হার্ভে গ্রেটহেট নামক এক ইংরেজ তার স্ত্রীর কাছে লিখেছিল, “মুসলমানরা ধর্মের নামে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে, এটা একটা ‘রসিকতা’র মতো। বাদশাহ জাফর মুসলমান হওয়ার পরও ঈদে কাউকে একটা গরু কুরবানী করার অনুমতি দেয়া হলো না।”
হার্ভে গ্রেটহেট যে ‘রসিকতা’র কথা লিখেছিল, এই রসিকতা করা হয়েছিল স্বয়ং ইসলামের সাথে। কারণ তারা ইসলামের নামে যুদ্ধ করার কথা বলেও গরু কুরবানীর বিরোধিতা করেছিল। বাহাদুর শাহ জাফর আল্লাহর উপর ভরসা করেনি, সে ভরসা করেছিল হিন্দুদের উপর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিকই হিন্দুদের বিশ্বাসঘাতকতায় বাহাদুর শাহ জাফরকে হারতে হলো। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে কেবল বাংলা পরাধীন হয়েছিল, গোটা ভারতের মুসলিম শাসনের নয়। কিন্তু ১৮৫৭ সালে চূড়ান্তভাবে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটলো দিল্লীর পতনের দ্বারা।
আর বাহাদুর শাহ জাফরের উত্তরাধিকার মির্জা মুগল ও নাতি খিজির সুলতানকে গুলি করে হত্যা করলো ‘হাডসন’ নামক এক ব্রিটিশ। ছেলে ও নাতির মাথা কেটে একটি দামী পাত্রে করে বাহাদুর শাহ জাফরের সামনে উপহার হিসেবে পেশ করা হলো। অর্থাৎ কুরবানীর বিরোধিতা করার কারণে তারও উত্তরাধিকার বলে কিছু রইল না।
অর্থাৎ কোন শাসকগোষ্ঠী যদি কুরবানীর বিরোধিতা করে, সেক্ষেত্রে তার উপর সপরিবারে নিহত হওয়ার গজব নাযিল হয়। বর্তমানে এদেশেও কুরবানীর বিরোধিতা করতে গিয়ে সরকার আইন জারি করেছে, ১৮ বছরের নীচে কুরবানী করা যাবে না। বাহাদুর শাহ জাফর যেভাবে দিল্লীর সব পশু একটি জায়গায় এনে জড়ো করতে বলেছিল কুরবানীকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশ সরকার এখন ‘স্পট’ নির্দিষ্ট করে দিয়ে কুরবানীকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে।
সরকারের এই হঠকারীতার ফলাফল কী হতে পারে? বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের শত্রুরা মনেপ্রাণে ৭৫ এর পুনরাবৃত্তির কামনা করছে। তারাই সরকারকে দিয়ে কুরবানীর বিরুদ্ধে এসব কাজ করাচ্ছে না তো? বিষয়টি সরকারের ভেবে দেখা উচিত।
(কপিপেষ্ট ফ্রম ফেসবুক)
©somewhere in net ltd.