নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে , আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে।

জ্যোতির্ময় ধর

পাঠক

জ্যোতির্ময় ধর › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্রোতের বিরুদ্ধে

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১৬


বাংলা সাহিত্যে মনস্বী প্রাবন্ধিক ও তত্ত্বচিন্তক শিবনারায়ণ রায় এক নাক্ষত্রিক ব্যক্তিত্ব। মানবতন্ত্রের মূল প্রত্যয় তিনি বিশ্বনাগরিক , বিবেকী ভাবুক , দায়িত্বশীল চিন্তক , শিক্ষাবিদ , মৌলিক মানবতাবাদী ( Radical Humanist) , দার্শনিক , ইতিহাসবিদ , সাহিত্য সমালোচক তথা বিশিষ্ট সম্পাদক শিবনারায়ণ রায় । তিনি সর্বদা , সর্বত্রই নাস্তিক্য , যুক্তিবাদ ও বুদ্ধির মুক্তি ও মানবতাবাদের পক্ষে সক্রিয় থেকেছেন । সে জন্যই বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেল একদা শিবনারায়ণ রায়ের উপর মন্তব্য করে বলেছিলেন “ শিবনারায়ণ রায় দাঁড়িয়েছেন সেই মতের পক্ষে যেটাকে আমি পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি ... তাঁর লেখা আমাদের সময়ের অধিকাংশ লেখকের চেয়ে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে প্রকাশিত। “

তাঁর লেখা ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ , যেমন সাহিত্য চিন্তা ১৯৫৬ , নায়কের মৃত্যু ১৯৬০ , মৌমাছিতন্ত্র ১৯৬০ , কবির নির্বাসন ও অন্যান্য ভাবনা ১৯৭৩ , গণতন্ত্র , সংস্কৃতি ও অবক্ষয় ১৯৮১ , রবীন্দ্রনাথ শেক্সপিয়র ও নক্ষত্রসংকেত ১৯৮৩ , স্রোতের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ , রেনেসাঁস ১৯৯২ , স্বদেশ , সকাল স্বজন ১৯৯৬ , যে আলোকে অনেক আঁধার ১৯৯৮ , প্রত্যয় , অন্বেষা ও অনুচিন্তন ২০০১ , খাড়াইয়ের দিকে ২০০২ , বিবেকী বিদ্রোহের পরম্পরা ২০০৩ , জিজ্ঞাসার দশ দিগন্ত ২০০৪ , লাঠি থেকে লাটাই ২০০৫ , এবং কাব্যগ্রন্থ খোয়াব দেখি সত্তরে , মাইকেল! মাইকেল , কথারা তোমার মন ইত্যাদি গ্রন্থের বৈচিত্রসমৃদ্ধ প্রবন্ধগুলিতে তথ্য এবং গুটিকয়েক কাব্যগ্রন্থের মধ্যে তাঁর মনীষার প্রগাড় প্রদীপ্তি , নতুন ভাবনা , চিন্তনের অকুণ্ঠ জিজ্ঞাসা সুপ্ত ভঙ্গিমায় দীপিত হয়েছে ।

সেই প্রদীপনে এবং বিশ্বমনীষার মানচিত্রে সেকালের পাশ্চাত্যের হোমার – দান্তে , শেক্সপিয়র- গেটে , ব্লেক-মিল্টন প্রমুখের সৃষ্টি জগত যেমন বাদ পরে নি তেমনিই বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্যের মধুসূদন , বঙ্কিম , রবীন্দ্রনাথ , শরৎচন্দ্র , নজরুল এবং তাঁর সমকালের জীবনানন্দ – সুধীন্দ্রনাথ দত্ত – বিষ্ণু দে প্রমুখ মনীষার সৃষ্টির ঐশ্বর্য ও দর্শন , তাঁর যুক্তি ও মননের নতুন ভাষা ও ভাবনায় বাঙালি পাঠককুলকে নতুন পাঠবীক্ষায় উন্নীত ও দীক্ষিত করতেও সচেষ্ট থেকেছে সর্বদা।

মনে , প্রাণে , ধ্যানে –ধারনায় শিবনারায়ণ রায় কিন্তু রেনেসাঁসের প্রতীক পুরুষ ।
তাঁর রেনেসাঁস সম্পর্কিত গ্রন্থাদিতে পাশ্চাত্যের বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস , প্লেটো , অ্যারিস্টটল , রাসেল এবং প্রাচ্যদেশীয় রামমোহন , ডিরোজিও , অক্ষয়কুমার দত্ত , মানবেন্দ্র রায় প্রমুখের জীবন জিজ্ঞাসাকে তিনি তাঁর রেনেসাঁস সংক্রান্ত লেখার বিষয় করে সমাজ পরিবর্তনের যুক্তিসম্মত পথ ও পাথেয় এষণায় ব্যাপৃত থেকেছেন ।

শিবনারায়ণ রায়ের দর্শন ও রাজনীতি চর্চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে “মৌমাছিতন্ত্র” কেই মনে করেন অনেকে । মৌমাছিতন্ত্র মূলত কমিউনিজমকে সমালোচনা করে লেখা । শিবনারায়ণ মনে করতেন ব্যাক্তিসত্তার বিলোপ এবং রাষ্ট্রের প্রতি কঠোর আনুগত্য একদিন পৃথিবীতে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোর পতনের অন্যতম কারন হয়ে দাঁড়াবে । এই গ্রন্থ তিনি লিখেছিলেন ষাটের দশকে , যখন পৃথিবী ব্যাপী চলছে কমিউনিজমের জয় জয়কার । তাঁর অভিমত ছিল যে রাষ্ট্র থেকে প্রেম ও সৃষ্টি নির্বাসিত , সেখানে স্বাধীন চিন্তা নিষিদ্ধ । সেখানে বৈচিত্র্য অবলুপ্ত । সেখানে স্বাতন্ত্র্যের শাস্তি – দাসত্ব অথবা মৃত্যু ।

“গণতন্ত্র ও সংস্কৃতি এবং চার্চ” প্রবন্ধে শিবনারায়ণ রায় দেখিয়েছেন – গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল কোনও দল বা দলের ক্ষমতা বা পাশ্চাত্যের চার্চ বা প্রাচ্যের কোন মন্দিরের আধিপত্য বা শাস্ত্রীয় বিধি-বিধান নয় । গণতন্ত্রের ভিত্তি হল ব্যাক্তিমানুষ , তার স্বাধীনতা বা স্বাধিকার বোধ । যে বোধ গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক পথ ধরে , সংস্কৃতির মুক্ত আবহাওয়ায় , নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা ও চিন্তা –চেতনার ঘাত –প্রতিঘাত ও অভিঘাতের মধ্য দিয়ে । ব্যাক্তি তার অন্তর্নিহিত সৃজনের বিচিত্র সাংস্কৃতিক রূপান্তরের পথ ধরে নিজের যে জাগরণ ঘটায় , নিজের বিশ্বাস ও অন্তরের শক্তিকে প্রকাশ করে যে জাগরণে , যে প্রকাশে কোনও শক্তির আনুগত্য নেই , কোনও পদানতি নেই । সেখানেই রেনেসাঁসের বীজ – সেই পথই রেনেসাঁসের যাত্রা ।

“বিবেকী বিদ্রোহের পরম্পরা “ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন বাংলা ও বাঙ্গালির সাহিত্য – সংস্কৃতির যে রেনেসাঁ তা ডিরোজিও , রামমোহন , বিদ্যাসাগর , বঙ্কিম –মাইকেল , অক্ষয়কুমার প্রমুখ মনীষীর কর্মকীর্তি ও জীবনাদর্শের পথ ধরেই উৎসারিত হয়েছে ।১৯২৬ সালে শুরু হওয়া ঢাকা কেন্দ্রিক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও আবুল হোসেন সম্পাদিত শিখা পত্রিকা তাঁকে চমৎকৃত করেছিল এবং দ্বিধাহীনভাবে তিনি এই আন্দোলনকে রেনেসাঁর মর্যাদা দিয়েছেন ।

স্রোতের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ গ্রন্থে শিবনারায়নবাবু তাঁর সহজাত বুদ্ধি , যুক্তি , প্রশ্ন ও আত্মজিজ্ঞাসার প্রখর চিন্তা -চেতনায় ধর্ম- বর্ণ – জাতি নিরপেক্ষ এক জগত গড়ার দিকে নিবিষ্ট হয়েছেন – যা দেশকালের সীমানা পেরিয়ে প্রতিটি দেশের যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষিত সমাজ তথা বিশ্বমানব কল্যাণের কথাই বলে । এই গ্রন্থে “নাস্তিকের মৃত্যুচিন্তা “ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন “ অতিমানব বলে বিশ্বজগতে কিছু নেই , শব্দটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ মাত্র , কিন্তু অস্মিতাসম্পন্ন ব্যাক্তির প্রভাব অনেক বেশি , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার কৃতি তার মৃত্যুর পরেও দীর্ঘস্থায়ী ইতিহাসে তার প্রমাণ মেলে । বুদ্ধ , সক্রেটিস , কনফুসিয়াস , যিশু , মোহাম্মদ , কান্ট , মার্কস , রবীন্দ্রনাথ , পিকাসো – এঁরা প্রত্যেকেই অনন্য অস্মিতাসম্পন্ন মানুষ । তবে এঁরা কেউ অজর , অমর , ত্রুটিবিচ্যুতিহীন আত্মা বা “বিশ্বমানব” বা বিচারের উর্ধ্বে “অতিমানব” নন । "

“দেশ” পত্রিকায় যখন শিবনারায়ণের প্রবন্ধ “রবীন্দ্রনাথ ও গ্যোটে “ প্রকাশিত হয় তখন তাঁকে নিয়ে প্রবল সমালোচনায় মুখর হয়ে তৎকালীন সাহিত্য- সংস্কৃতি জগত। বাঙালি হয়ে বাংলাইর লেখা ভালো না বলে কোন এক গ্যোটে কে তিনি রবীন্দ্রনাথের থেকে বড় প্রতিভাবান মনে করছেন । এ ব্যাপারে তাঁর অভিমত ছিল “গ্যোটে বেশ্যাবাড়ি গিয়েছেন , মদ খেয়েছেন , মেয়েদের হৃদয় ভেঙ্গেছেন । সে সব তিনি লুকিয়ে রাখেন নি । সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন । রবীন্দ্রনাথ এটা পারেন নি । বাস্তব জীবন রবীন্দ্রনাথের লেখায় দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে ।

এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে শিবনারায়ণ রায় জানিয়েছেন “ আমার মতে বাংলার রেনেসাঁসের সবচেয়ে বড় কীর্তি হল বাংলা গদ্যের বিকাস । বাংলার চিন্তা , বাংলার মনন , সারা ভারতবর্ষকে একশো বছর ছাড়িয়ে গিয়েছিল”। এই বিকশিত বাংলা গদ্যের একটি বিশিষ্ট রূপকল্প নিঃসন্দেহে প্রবন্ধ সাহিত্য । কিন্তু শিবনারায়ণ মনে করতেন “বাংলা প্রবন্ধের অস্পষ্টতা এবং দারিদ্র্য প্রায় একেবারেই ঘোচেনি । বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য নিতান্তই অপরিণত । বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যের উন্নতিকল্পের সারস্বত সংকল্প নিয়ে শিবনারায়ণ ১৯৮০ সালে প্রকাশ করলেন মনন ও চিন্তন নিকষিত জিজ্ঞাসামুখর প্রবন্ধমুখ্য ত্রৈমাসিক “জিজ্ঞাসা”। বাইশ বছর নিরবচ্ছিন্ন সম্পাদনায় এ –কে শক্ত জমির ওপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সম্পাদক শিবনারায়ণ । বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে এবং প্রবন্ধসাহিত্যের সৌষ্ঠবসাধনে “জিজ্ঞাসা” পত্রিকার অবদান উপেক্ষণীয় নয় ।

শিবনারায়ণ কোন তত্ত্বদর্শনের আবেষ্টনীতে নিশ্চল হয়ে থাকেননি । মননের চলিষ্ণুতা , অভিজ্জতার প্রাচুর্য , তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ শক্তি এবং সর্বপরি স্বাধীন চিন্তা তাঁকে সজীব সচল করে রেখেছে একজন সংবেদী মানুষ হিসেবে । মননদৃষ্টির এই ক্রম পরিবর্তনের নির্যাস তাঁর রচনাসম্ভারেও পাওয়া যাবে । এ বিষয়ে অনুসন্ধানী গবেষক- পাঠক তৎপর হতে পারেন ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: একজন গুনী সম্পর্কে জানলাম।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩২

জ্যোতির্ময় ধর বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০৫

শেরজা তপন বলেছেন: শিবনারায়ণ রায় জানিয়েছেন “ আমার মতে বাংলার রেনেসাঁসের সবচেয়ে বড় কীর্তি হল বাংলা গদ্যের বিকাস ।
~ আহা কত ভাল লাগল কথাটা শুনে। :)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩২

জ্যোতির্ময় ধর বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩৪

কামাল১৮ বলেছেন: হাজার হাজার বছরের বিভিন্ন ধারনার বাইরে গিয়ে সমাজতান্ত্রীক ধারনা একটা নতুন ধারনা।এখনো অনেক মানুষ ধারনাটাকেই বোঝেনাই।মূলকথা সম্পদের সুষম বন্টন।সম্পদ কিছু লোকের হাতে থাকা ভালো নাকি সবার হতে থাকা ভালো।
সম্পদশালীরা ঐক্যবদ্ধ সম্পদহীনরা বিচ্ছিন্ন।তারা যখন ঐক্যবদ্ধ হবে তখন পাশা উল্টে যাবে।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩১

জ্যোতির্ময় ধর বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । সমাজতন্ত্রের জনক মার্কস কোনদিন বলেন নি যে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি আর ব্যাবসাকে ধ্বংস করে দিয়ে তা রাষ্ট্রের আয়ত্তে আনতে হবে । তিনি কিছু কিছু শিল্পের রাষ্ট্রীয়করনের কথা বলেছিলেন । মার্কস বলেন নি যে সকলের টাকাকড়ি সোনাদানা কেড়ে নিয়ে তা সরকারের নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে আর জনগনের মধ্যে পুনর্বন্টন করতে হবে , তিনি বলেছিলেন ধাপে-ধাপে বাড়ানো আয়করের কথা , যা এখন বহু পশ্চিমা দেশে মান্য করা হয় । মার্কস ব্যাক্তিগত পরার্থবাদিতার কথা বলেন নি যে , লোকে নির্দেশ ছাড়াই কাজ করে যাবে , তিনি বলেছিলেন যে সবাই সৃজনক্ষমতা অনু্যায়ী শ্রম করবে । সবাইকে খেতমজুর , মিলমজুর , কারিগর হতে হবে এমন কথা তিনি বলেন নি যা একসময় সোভিয়েত পত্রিকাগুলো প্রচার করতো এবং বাঙালি কম্যুনিস্টরা গোগ্রাসে গিলতো । মার্কস বরং শ্রমিকদের তাদের সৃজন ক্ষমতা অনুযায়ী মজুরি দেওয়ার কথা বলেছিলেন ।

মার্কস বলেছিলেন ডিক্টেটরশিপ অফ দ্যা প্রলেতারিয়েত এর কথা , কিন্তু তথাকথিত কমিউনিস্ট দেশ গুলোতে দেখা দিল এক -একজন শাসক একনায়ক , যেন প্রলেতারিয়েত বলতে শুধু তাকেই বোঝায় , জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তারা একনায়কতন্ত্র বজায় রেখেছেন, কুর্সিতে বসে থাকার জন্য নাগরিকদের পেছনে এমন গোয়েন্দা লাগিয়েছিল যে কেউ ভয়ে ট্যাঁফো করতো না । মার্কস এ ধরনের এক নায়কদের কথা কখনোই বলেন নি যারা জনগণকে পেদিয়ে , সাইবেরিয়ায় পাঠিয়ে , জেলে ঢুকিয়ে সমাজ আর রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রন করবে , সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেবে , মার্কস যা বলে গেছেন তার বদলে নিজেদের মতামতকে কম্যুনিজমের নামে চালিয়ে দেবে ।

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

এরকম জ্ঞানী গুনীদের কথা নিয়মিত লিখবেন, পড়তে ভালো লাগে।

৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৫৫

কামাল১৮ বলেছেন: আমি মার্ক্সবাদের উপর লেখাপড়া করেছি।কোথাও দেখিনাই মার্ক্স সম্পদ ধ্বংসের কথা বলেছে।এগুলো মিথ্যা প্রচার।আপনি দেখে খাকলে উল্যেখ করেন।বই ও পৃষ্ঠা নাম্বার।
কে কি করলো সেটা তো মার্কসবাদের দোষ না , সেটা সেই ব্যক্তির দোষ হতে পারে।
পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললে জেলে ডুকায় না।এমন একটা রাষ্ট্রের নাম বলেন।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৭

জ্যোতির্ময় ধর বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । আপনি লিখেছেন "আমি মার্ক্সবাদের উপর লেখাপড়া করেছি ।কোথাও দেখিনাই মার্ক্স সম্পদ ধ্বংসের কথা বলেছে।এগুলো মিথ্যা প্রচার।আপনি দেখে খাকলে উল্যেখ করেন।বই ও পৃষ্ঠা নাম্বার ।" - আমি আমার পূর্ববর্তী মন্তব্যে মার্কস সম্পদ ধ্বংস করার কথা বলেছেন এই জাতীয় কোন কথা লিখিনি । অনুগ্রহ করে আমার পূর্ববর্তী মন্তব্যটি আবার পড়ুন ।

আপনি লিখেছেন "কে কি করলো সেটা তো মার্কসবাদের দোষ না , সেটা সেই ব্যক্তির দোষ হতে পারে । " । এই তো লাইনে এলেন । মার্কসবাদ কে নিজেদের ইচ্ছেমত পরিবর্তন করে , এবং মার্কসের ধারনা ও মতবাদকে সংশোধন করে , শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নিজেদের তৈরি এই সব মতবাদ , মার্কসবাদ বলে চালিয়েছে অনেক সোভিয়েত প্রিমিয়ার এবং চীন , কুবার অনেক একনায়ক । তার মধ্যে নিকিতা ক্রুশেভ , ব্রেজনেভ , চীনের মাও অন্যতম । আমাদের বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্কস বাদী চিন্তাবিদ কমরেড শিবদাস ঘোষ এই সব কারন উল্লেখ করে নিকিতা ক্রুশেভ কে সাবধান করে চিঠি লিখেছিলেন । পড়ে দেখতে পারেন Click This Link

আপনি লিখেছেন "পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললে জেলে ডুকায় না ।এমন একটা রাষ্ট্রের নাম বলেন ।" দেখুন পড়াশোনা ও কাজের উদ্দেশ্যে রাশিয়ায় কাটিয়েছি সুদীর্ঘ ৮ টি বছর এবং জার্মানিতে সুদীর্ঘ ১০ টি বছর । রুশ সমাজ ও শাসন ব্যাবস্থা এবং ইউরোপীয় সমাজ দুটোকেই অনুধাবন করেছি কাছ থেকেই । আচ্ছা , আপাতত সোভিয়েত ইউনিয়ন এ ফিরে যাই । সোভিয়েত ইউনিয়নে এই সমস্ত একনায়কদের যন্ত্রনায় , যারা জোর করে নিজেদের কল্পিত মতবাদ এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের ঘাড়ে চাপাতেন , তাদের কারনে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য , অনেক লেখক শিল্পী সোভিয়েত ইউনিয়ন ছেড়ে চলে যান । যারা একটু প্রতিবাদ করতো তাদের পাঠানো হত ভয়ঙ্কর রাশিয়ান জেল গুলাগে । ভ্লাদিমির নবোকভ এর কালজয়ী উপন্যাস "লোলিতা" কে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কোন কারন ছাড়াই । সোভিয়েত মহাকাশ প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা কারী বিজ্ঞানীদের খাটিয়েছিল দশ বছরের জেল । যার অন্যতম মূল কারন কমিউনিস্ট ব্যুরোক্রেসি । এ বিষয়ে এবারের একুশে বইমেলায় আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে "সোভিয়েত মহাকাশ প্রকল্পের নেপথ্যের নায়কেরা" শিরোনামে । সময় নস্ট করে পড়ে দেখতে পারেন ।

এবার আসুন রাশিয়ার কথায় । যারা রাশিয়াতে পুতিনের বিরুদ্ধে ব্লগিং করে কিংবা সরকারের সমালোচনা করে লেখালেখি করে , তাদের করা হয় সরাসরি খুন কিনবা গুম । এ রকম অনেক উদহারন আমি দিতে পারবো । শুধু এক জনের নামই বলি Anna Politkovskaya । রাশিয়ায় রেডক্রসের সেচ্ছাসেবক হওয়ার সুবাধে অনেক মানব অধিকার কর্মীর সাথে যোগাযোগ হয়েছে । রাশিয়ার সব চেয়ে বড় মানব অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন "মেমোরিয়াল " যারা ২০২২ সালে নোবেল পেয়েছে , পুতিনের সমালোচনা করার কারনে , তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে । এখন ফেসবুক , ইন্সটাগ্রাম সব বন্ধ ওখনে । অনলাইন এ কড়া নজরদারি। আমাদের বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পথেই হাঁটছে । দেখেছেন কিছুদিন আগে আমাদের সামুর সাথে কি করা হয়েছে ?

এবার আসুন ইউরোপের কথায় । ইউরোপের সমাজ ব্যাবস্থায় ওরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা । বিস্তারিত গেলাম না । শুধু ফরাসি স্যাটায়ার পত্রিকা সারলে এবাদোর (Charlie Hebdo) কথাই ধরুন , ওটাতে ইউরোপের তথা সমগ্র বিশ্বের নেতাদের নিয়ে যে ধরনের ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা হয়ে , ওরকম কেউ রাশিয়া বা চীনে করলে হতো নিশ্চিত খুন , আর বাংলাদেশে করলে হতো গুম ।
ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.