নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুদেব চক্র বর্তী

জন্ম ১৯৮৭ সালে সিরাজগঞ্জে। পৈতৃক নিবাস মাগুরাতে। বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছি। লেখালেখি করি। এছাড়া- যুক্ত ছিলাম সাংবাদিকতা, গান, থিয়েটার, উপস্থাপনার সাথে। ছাত্র ইউনিয়নের কর্মি ছিলাম। প্রকাশিত গ্রন্থ-‘সংশয়ী প্রার্থনা’।

সুদেব চক্র বর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও বাংলাদেশের জনগন

১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

জাতীয় সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগন কতটা সচেতন? এ দেশে দুই শ্রেনীর জনগন আছে। একটা শ্রেনী উদাসীন এবং এসব নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আরেকটা শ্রেনী যারা বিদ্যমান বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক যারা মনে করে তার দল যা করছে সেটাই ভাল এবং উন্নয়নের জন্য করছে। একবার ফরিদপুরে সমুদ্র ব্লকে গ্যাস চুক্তির প্রতিবাদে আমরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে নেমেছিলাম। যখন সবার কাছে লিফলেট বিলি করছিলাম এবং ব্যাপারটা বুঝিয়ে স্বাক্ষর নিতে চাইছিলাম তখন অনেকেই বলেছিল, 'আমরা এসব বুঝি টুঝি না। দু বেলা ভাত খাই আর কাজ করি। তেল গ্যাস নিয়ে ভাবার সময় কই। সরকার যা করে করুক গে'। আবার বিগত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন চলছে। তো মাগুরাতে একবার একটা সমাবেশ হল। সেখানে সমাবেশ শুরু হবার একটু আগে দেখলাম একটা যুবক সিপিবি নেতা মঞ্জুরুল আহসান খানের সাথে তর্ক করছে। যুবকের দাবী এসব সরকারের উন্নয়ন বিরোধী কর্মকান্ড। আমি এগিয়ে যেতেই সে আমাকে বলল, 'দাদা, আপনারা তো বিএনপি জামাতের মদদে দেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছেন'। আমি ছাত্রলীগের এই অছাত্র কর্মির সাথে কথা বলতে লাগলাম। একপর্যায়ে সে গালিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে লাগল। মনে হচ্ছিল ওকে ধরে ওখানেই পেটাই। হঠাৎ আমাদের এক সিনিয়র নেতা ওকে শান্ত করতে চাইলেন। ততক্ষনে ওর পাশে ওদের আরও কয়েকজন চলে এসেছে। আমি ওদেরকে বললাম, 'রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আপনাদের সাথে অবশ্যই কথা বলব। আগে ভালভাবে আমাদের সমাবেশটা করতে দিন। আমরা কী বলছি সেটা শুনুন। তারপর আপনাদের সাথে বিতর্ক করবো। যুক্তি বা তথ্যে যদি আমি হেরে যাই তাহলে কোনোদিন লেখালেখি কিংবা কোনো আন্দোলন করবো না।' একপর্যায়ে ওরা মেনে নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। আমরা বিভিন্ন সময়ে এসব আন্দোলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের এবং বিভিন্ন পেশার মানুষকে শরিক করতে চেয়েছি। কিন্তু সাধারণ ছাত্রদের কাছে এসব কাজ মনে হত নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত। আর সাধারণ মানুষ? বেশিরভাগই বলেছে যে কাজ কর্ম বাদ দিয়ে এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। এবার শুনুন এক আওয়ামী নেতার কথা। তিনি একদিন আমাকে ডেকে বললেন, 'রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে তুমি যে অপরাধ করেছ সেটা যুদ্ধাপরাধের শামিল'। আমি তার সাথে আলোচনা করে তাকে বোঝাতে চাইলাম। তিনি বলে বসলেন, 'দ্যাখো, জ্বালানি মন্ত্রনালয়ে যারা আছে তারা তোমার চাইতে যথেষ্ট শিক্ষিত ও জ্ঞানী। এতই যদি বেশি বোঝ তাহলে এখানে পড়ে আছ কেন? আর তোমাদের বিশেষজ্ঞরা তো বিদেশি টাকা খেয়ে অপব্যাখ্যা দিচ্ছে'। সেদিন ওনার সাথে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। এবার শুনুন এক বিএনপি কর্মির কথা। আমরা তখন লং মার্চের প্রচারণা চালাতে লিফলেট বিলি করছি। এক বিএনপি কর্মি জানতে চাইলেন এসব কেন করছি। আমি ব্যাপারটা বললাম। উনি খুশি হয়ে বললেন, 'আরে ভাই আমি বিএনপি করি। আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে যেকোন আন্দোলন আমি সাপোর্ট করি। আমাকেও একটা কাগজ দেন'। আমরা বললাম এটা কোনো দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়। উনি বললেন, 'বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে'। আমি তখন তাকে ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং সেখানে বিএনপি জামাত জোটের গুলি চালিয়ে আমাদের তিন জন কর্মিকে খুন করার কথা বললাম। উনি চমকে উঠলেন এবং রেগে যাচ্ছিলেন। তখন আমার ফোন নম্বরটা দিয়ে বললাম, 'আমার কথাটা যাচাই করে একটা ফোন করবেন। দলকানা না হয়ে মানুষের কথা ভাবুন। কারণ জনগন হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ আপনিও হচ্ছেন'। এবার আসি মিডিয়ার প্রসংগে। মিডিয়া আওয়ামীলীগ বা বিএনপির ছোট খাটো নিউজ যেভাবে কাভারেজ করে, বামপন্থিদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের এসব আন্দোলন সেভাবে পাত্তা দেয় না। আর পুলিশ? গতকাল যশোরে তারা অযৌক্তিকভাবে চলমান লং মার্চকে বাধাগ্রস্থ করেছে। এর আগে বিভিন্ন আন্দোলনে কিংবা কয়েক মাস আগেও মানিকগঞ্জে ও মাগুরাতে পুলিশ আমাদেরকে পিটিয়েছিল। অবশ্য পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ তারা রাষ্ট্রের হুকুম পালন করে মাত্র। তাছাড়া পুলিশ কোনোকালেই জনগনের বন্ধু ছিল না, বরং তারা ছিল রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের পাহারাদার। যাহোক- জনগন সচেতন থাকুক বা না থাকুক শেষ পর্যন্ত জনগনকেই ভরসা করতে হয়। কারণ মানুষ জেগে উঠবেই। যেমনটি জেগে উঠেছিল তেভাগা আন্দোলনে, ৫২ থেকে ৭১এ কিংবা ফুলবাড়িতে। রামপালেও জেগে উঠবে মানুষ। আর জনগন জেগে উঠলেই সফল হবে আন্দোলন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.