![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নমস্কার শুভংকর বাবু,
আমি শ্রীকমলাকান্ত চক্রবর্তী। বঙ্গের বরেণ্য লেখক বঙ্কিম বাবু আমাকে পাগল বলিয়া যত্ন করিতেন। জানেন বোধ হয় ? আমাকে লইয়া উনি একখানি পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন। নাম- কমলাকান্তের দপ্তর। আমি সেই কমলাকান্ত।
মনুষ্যের যেমন ধন, সম্পদ, বিড়ি, সিগারেট, পান, গাঁজা, পুনম পান্ডে তথা সানি লিয়নাদিতে নেশা রহিয়াছে; আমার নেশা হইলো আফিমে। আপনার নিকটে আজি একটু আফিম ভিক্ষা করিতে আসিয়াছি। তবে এমনি এমনি লইবো না, আমার দপ্তর হইতে কিছু মূল্যবান বাক্য আপনাকে উপহার করিয়া যাইতেছি।
কমলাকান্তের জীবনে আফিম জুটিলেও কখনও প্রেম জোটে নাই। কিন্তু প্রেম সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করিয়া কমলাকান্ত বুঝিয়াছে যে, প্রেম অনেকটা সর্দির মতন। প্রথম অবস্থায় রস অতি বেশি থাকে। খাইতে বসিলে রস পড়ে, পড়িতে বসিলে পড়ায় মন বসে না- রস পড়ে, রাত্রিতে বিছানায় শয়ন করিতে গেলে নিদ্রা আসে না- রস পড়ে- নাসিকা হইতে। তবে কিছুকাল পর এই রস ঘনিভূত হয়। মনুষ্য কহে, পিরিতি কঁঠালের আঠা- লাগিলে পরে ছাড়ে না। কমলাকান্ত কহে, প্রেমরূপ সর্দির রস যদি একবার ঘনিভুত হইল আঠা কিছু কম হয় না। তবে কিছুকাল পর বড় বিরক্তি বোধ হয়। ইচ্ছা করে সমস্ত বাহির করিয়া টানিয়া ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিই। কিন্তু সহজে ছোটে না। অঙ্গুলিতে আটকাইয়া যায়। আঠা অতি কঠিন বস্তু! কিন্তু আপনি যদি ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়া অঙ্গুলিদ্বয় মুছিয়া লইতে পারেন তো ভালই। আপনি যদি...অন্তরে টানিয়া লইতে পারিলেন তো ভালই হয়। কিন্তু ইহাদের মাঝামাঝি যদি কফ হইয়া আটকাইয়া গেল তাহা হইলে বেদনার শেষ নাই। আপনি দেবদাস হইয়া গেলেন।
তবে বিবাহ জিনিসটা ভিন্নরকম। আমার মনে হয় বেশিরভাগ মনুষ্যের নিকট বরমাল্য অনেকটা গরুর দড়ির মতই। একবার গলায় পড়িল তো সারাজীবন খুঁটিতে আবদ্ধ হইয়া জীবনযাপন করিল। এই হেতু কমলাকান্ত বিবাহ করে নাই। কিন্তু নানা গৃহ ঘুরিয়া আমি বুঝিয়াছি স্বামীর নিকট বধূ অনেকটা মৌমাছির চাকের মত। ইহাতে মধু রহিয়াছে সত্য, ইহাতে গুনগুন করিয়া গান হয় সত্য, কিন্তু পতিগণ জানেন যে- কোনো ঢিল যদি ভুলবশত: উহাদের গায়ে লাগিয়া যায় তাহা হইলে সারা পাড়া জাগাইবার পক্ষে ইহারা একাই যথেষ্ট।
মনুষ্যের অঙ্গাদি লইয়া ভাবিতে বসিয়া মানবদেহের পশ্চাৎ অর্থাৎ পেছনের পর্বতদ্বয়কে আমার মাকাল ফল বলিয়া মনে হয়। আলোচনার সুবিধার্তে এবং শালীনতা রক্ষার্থে মনুষ্যের পশ্চাৎকে আমি কাঁঠাল বলিয়া সম্বোধন করিতাম। কেহ কহে- অমুক কার্য করিতে গিয়া আমার কাঁঠালের ছাল উঠিয়া গেল। কেহ কহে-তমুক লোকে আসিয়া আমার কাঁঠালে বাঁশ দিয়া গেল। কেহ কহে- এই হেতু ঐ হেতু সেই হেতু আমার কাঁঠাল ফাটিয়া গেল, এই হেতু ঐ হেতু সেই হেতু আমার কাঁঠাল মারা গেল। তবে এই সমস্ত বাক্যদিগের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমি নিউটন এবং আইনস্টাইনের বহি পড়িয়াও উদ্ধার করিতে পারি নাই। তবে ইহার পরিপক্কতা আয়তনের উপর নির্ভর করে না। এমন কাঁঠালের অধিকারী হওয়া সত্তেও আমি বলিতে শুনিয়াছি অমুকের পুত্রের তমুকের নাতীর কাঁঠাল কম বয়সে পাকিয়া গিয়াছে। কিন্তু কী দেখিয়া উহারা ইহার কাঁচা পাকা বুঝিল ইহা আমার মস্তিস্কে ঢুকিলো না। নিজের কাঁঠাল পর্যবেক্ষন করিয়া আমি বুঝিলাম না তাহা পাকিয়াছে না অপক্কই রহিল। তবে মাঝে মাঝে ডায়রিয়া হইলে উহার রস দেখিয়া মনে হয় এইবার বুঝি পাকিবার সময় আসিয়াছে। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য ফিরিয়া আসিলে মনে হয় ইহা চিরকাল ইচড়ই রহিয়া গেল, কোনোদিন পাকিতে পাইলো না।
মনুষ্যের স্বভাব সম্পর্কে কথা বলিতে গেলে কথা শেষ হয় না। তবু দু চারিটা বলিব। তাহাদের স্বভাব ক্রিমির মতন। যাহার অন্তর হইতে খাদ্য গ্রহণ করে তাহারই পশ্চাতে গিয়া লাগিয়া থাকে। কেহ আবার ভীতু; কেহ তর্জ্জনী তুলিলে ইহাদের কনিষ্ঠা উঠিয়া যায়। কেহ ইহাদিগকে ধমক দিলে ইহাদের কনিষ্ঠা উঠিয়া যায়। ছোট ছোট পোশাক পরিহিত সুন্দরী মহিলা দেখিলে ইহাদের কনিষ্ঠা উঠিয়া... যায়। সৌভাগ্য এই যে, ইহারা ভদ্র এবং ভীতু। তা যদি না হইতো তাহা হইলে ভারতবর্ষে দিল্লী কিংবা পার্ক স্ট্রিট দু একখানা বেশি থাকিত। তবে কিছু মনুষ্য রহিয়াছে যাহারা টোপড়ের মতন। সবাই ইহাদের মাথায় করিয়া রাখে। মনে করুন, আপনার বাড়ির গৃহের দরজার সামনে সালমান খান অপেক্ষা সুন্দর একখানি যুবক সুসু করিয়া গেল ! আপনি কী করিবেন ?
তাহাকে নিকটে পাইলে তাহার কাঁঠালে পদাঘাত করিবেন! কিন্তু সালমান খান স্বয়ং আসিয়া যদি উক্ত কার্য করিতে আসে, মনুষ্য কী করিবে? কেহ হয়ত কাব্যি করিয়া কহিবে- ‘সুস্বাগতম হে বরুণ, দরজায় কেন-ঘরের মেঝেতে আসিয়া পড়ুন’।
বিশ্ব সংসারে আর এক বিষম বস্তু হইলো ‘গুজিয়া’। যাহার দ্বারা কার্য হয় না এমন বস্তু পৃথিবীতে দুর্লভ। ইহার অপর নাম- অর্থ, ধন বা টাকা। আপনি বেআইনী মদের ঘাটি খুলিবেন? লাইসেন্স মিলিতেছে না? কী হইয়াছে তাতে! কর্তৃপক্ষের হাতে কিছু গুজিয়া দিন। আপনি কাহারো উপর ভীষণ রাগ করিয়াছেন? তাহার উপর প্রতিশোধ তুলিতে পারিতেছেন না? রাস্তায় একা পাইয়াছেন? আস্তে করিয়া ঢুকিয়া দিন। পুলিশ ধরিয়া নিয়াছে? কী হইয়াছে তাতে! উহাদের পকেট কিছু গুজিয়া দিন। এইবার আমার যাইবার সময় হইল, দয়া করিয়া কিছু গুজিয়া দিন। আফিম কিনিয়া খাইব। বড় নেশা পাইয়াছে। তবে যাইবার পূর্বে আপনাকে একখান কথা গোপনে কইয়া যাই। না না, আমার দপ্তর হইতে নহে, আমার অন্তর হইতে। ছোটবেলায় সমার্থক শব্দ লিখিয়াছিলাম- ঈশ্বর সমান সমান গড আল্লাহ ভগবান। গুরুমশাই টিক দিয়াছিলেন। তবে এখন কেন জানি সন্দেহ হয়- গুরুমশাই ভুল করেন নাই তো? শুনিয়াছিলাম সকল মনুষ্য ঈশ্বরের সন্তান। সকল ধর্মের মনুষ্য একে অপরের ভাই ভাই। কিন্তু উনি অধিক বিবাহ করেন নাই তো? আমার কেন জানি সন্দেহ হয়। ইহারা ভাই বটে তবে আপন নহে। তবে কমলাকান্ত পাগল, নেশাখোর। কী বলিতে কী বলিয়া ফেলে তাহার ঠিক নাই। ভুল কিছু বলিয়া থাকিলে পাগল বলিয়া ক্ষমা করিয়া দিয়েন। আজি তবে আসিলাম। আফিম ফুরাইয়া গেলে আবার আসিব। (মীরাক্কেল পর্ব ৯ থেকে সংগৃহিত)
©somewhere in net ltd.