![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাদ্রাসা শব্দটি বিদ্যালয় বা স্কুলেরই আরবি প্রতিশব্দ। সুতরাং মাদ্রাসা শব্দটি শুনলেই বাকা চোখে তাকাচ্ছি না। কিন্তু দর্শনগত জায়গা থেকে মাদ্রাসা আর বিদ্যালয় কি এক? এখানেই কবি নিরব। কেউ কেউ বলবেন- ওখানে তো সাহিত্য, ইতিহাস এমনকি বিজ্ঞাণও পড়ানো হয়। কিন্তু এটাতো সত্য সেখানে একপেশে এবং ধর্মীয় শিক্ষার প্রাধান্য রয়েছে। ফলে শিক্ষা কতটুকু যৌক্তিক ও বিজ্ঞাণভিত্তিক তা নিয়ে সংশয় আছে। যার কারণে মাদ্রাসা ছাত্ররা সহজেই যেকোন ঘটনায় প্রতিপক্ষ বানাতে পারে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আবারও এটা প্রমাণিত হল ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। কেবল একারণেই হেফাজতের মত ধর্মান্ধ পশ্চাৎপদ গোষ্ঠির সমাবেশে শুধু মাদ্রাসা ছাত্রদেরই দেখা যায়। পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান সুপারিশমালায় কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িকতা জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় মদদ দেয়া হয়। যার ফলে গত ৬০ বছরে দেশে যে পরিমাণ মাদ্রাসা বেড়েছে সে পরিমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাড়ে নি। পশ্চাৎপদ ও মৌলবাদী চিন্তা লালনের ক্ষেত্র এই মাদ্রাসাগুলো মূলত সাম্প্রদায়িকতার সেই সুদূরপ্রসারী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। শেষ করব একটি সত্যি ঘটনা দিয়ে- আমাদের ব্যান্ড দলটি তখন সবে যাত্রা শুরু করেছে। পাশের ইউনিয়নে বন্ধুদের নিয়ে খোলা মাঠে একটা ছোট খাটো কনসার্টের উদ্যোগ নিলাম। লক্ষ্য ছিল নিজেদের নতুন ব্যান্ড দলটির পরিচিতি বাড়ানো। কিন্তু সন্ধ্যার পরই অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কিছু মৌলবী গোছের ব্যক্তি আমাদের বাধা দিলেন। আমার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে এক হুজুর ওয়াজের সুরে বলতে লাগলেন, 'হে আল্লাহ এই যে আমাদের সন্তানেরা ঈমানের পথ ভুলে বিধর্মীদের ন্যায় গান বাজনা করে বিপথগামী হচ্ছে তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও'। তারপর তারা আমাদের এসব বন্ধ করতে বললেন। আমরা তর্ক করতেই স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে ফাঁড়ি থেকে পুলিশ চলে এল ব্যান্ড দল ঠেঙাতে। সব পন্ড হয়ে গেল। এদিকে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা কিছু তরুনের মন খারাপ হয়ে গেল। ওরা আবার উদ্যোগ নিল। তার পরদিনই স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলে একটা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিল। স্কুল মাঠে তো অনুষ্ঠান করা যেতেই পারে! কিন্তু এবারও বিধি বাম। কারণ এ খবর ছড়াতেই ঐ এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে যতগুলো মাদ্রাসা ছিল সবগুলোর ছাত্ররা লাঠি সোটা নিয়ে তৈরি হচ্ছে অনুষ্ঠানের বারোটা বাজানোর জন্য। আয়োজক তরুনরা সেদিন চুপসে গিয়েছিল। আমরাও সেদিন ব্যর্থ হয়েছিলাম। কি জানি ঐ তরুনরা যদি সেদিন আমাদের পাশে থেকে মাটি আঁকড়ে ধরতো তাহলে হয়তো ঐ এলাকাটাও আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে পারতো। কারণ ঘটনা যাই ঘটুক ওদের টার্গেট কেবল প্রগতিশীলতা আর শিক্ষা-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। আবারও বলে রাখি- আমার বিতর্কের জায়গাটা মাদ্রাসা ও বিদ্যালয় নিয়ে নয়, বিতর্কটা শিক্ষাদর্শন নিয়ে।
©somewhere in net ltd.