নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুদেব চক্র বর্তী

জন্ম ১৯৮৭ সালে সিরাজগঞ্জে। পৈতৃক নিবাস মাগুরাতে। বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছি। লেখালেখি করি। এছাড়া- যুক্ত ছিলাম সাংবাদিকতা, গান, থিয়েটার, উপস্থাপনার সাথে। ছাত্র ইউনিয়নের কর্মি ছিলাম। প্রকাশিত গ্রন্থ-‘সংশয়ী প্রার্থনা’।

সুদেব চক্র বর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বনভোজন

২৩ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮

বনভোজন। পিকনিক এর বাংলা অর্থ। ছেলেবেলায় আমাদের কাছে বনভোজন শব্দটির অর্থ ছিল একদম ভিন্ন এবং এ সম্পর্কিত বিশ্বাসও ছিল চমকপ্রদ।
আমরা মনে করতাম বনভোজন মানে হল বনের মধ্যে রান্না করে ভোজন করা। করতামও তাই। মাঝে মধ্যেই পাড়ার ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে জঙ্গলের ভেতরে খিচুরি, ডিম, মাছ বা মাংস রান্না করে খাওয়ার আয়োজন করতাম।

প্রথমেই একটা সভা করতাম। সভায় চাঁদা ধরার প্রচলন শুরু হয় একটু বড় হবার পর। তার আগ পর্যন্ত কে চাল দেবে, কার পুকুর থেকে মাছ নেয়া হবে, কাদের হাসের ডিম নেয়া হবে এসব ঠিক করা হত। এরপর বন নির্বাচন করা হত।

বনভোজনের দিন বনের ভেতর রান্না করার ব্যবস্থা করা হত। বনের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় আমরা কলাপাতায় খেতাম। অবশ্য তখনকার দিনে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও কলাপাতায় খেতে দেয়া হত। এখানে একটা কথা না বললেই নয়। কলাপাতায় খাবার সময় যারা হিন্দু তারা পাতার অপেক্ষাকৃত সবুজ অংশে খাবার খেত, আর মুসলিমরা পাতাটা উল্টো করে একটু সাদা অংশে তাও আবার লম্বা করে ধরতো। মানে কলাপাতায় খাওয়া দেখেই ধরে নেয়া যেত কে হিন্দু, কে মুসলমান।
যাহোক- বনের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ছোট্ট করে পরিস্কার করে গোবর দিয়ে লেপে কলাপাতায় রান্নাকৃত খাবার রেখে আসা হত। এটা বনের রাজাকে সন্তুষ্ট করার জন্য।
বনের রাজা আবার কি ! চমকে গেলেন ?

হ্যা আমাদের বিশ্বাস ছিল বনের একজন রাজা আছে। তাকে বনভোজনের খাবারের অংশ না দিলে ক্ষতি হতে পারে। সেই রাজা আবার বাঘ কিংবা সিংহ নয়। কারণ অবোধ হলেও আমাদের ন্যুনতম ধারণা ছিল যে গ্রামের এসব বনে বাঘ-সিংহ নেই। তাই বনের সাথে সম্পর্ক রেখে বনবেড়ালকে বনের রাজা হিসেবে বিশ্বাস করতাম। তবে বনবেড়াল নামে ডাকা নিষিদ্ধ ছিল। কারণ তাতে যদি রাজা মাইন্ড করে ! তাহলে দেখা যাবে কারো বাড়িতে হাঁস-মুরগি ধরতে হানা দেবে। ব্যাপারটা অনেকটা শেয়ালকে পন্ডিত বলার মত। যাহোক- আমরা বনের রাজাকে ‘বন ভাই’ বলে সম্মোধন করতাম। তাইতো বনভোজনের খাবারটা রেখে আসার সময় তিনবার বলতাম, ‘বন ভাই, তোমার প্রসাদ গ্রহন করো’।

পরদিন সকালে ঐ জায়গাটা দেখতাম খাবারটা ‘বন ভাই’ খেয়েছে কিনা। দেখতাম উনি খাবারটা চেটে পুটে খেয়েছেন। আমরা তখন ধরে নিতাম আমাদের বনভোজন সফল হয়েছে এবং এটা বনের রাজা গ্রহণ করেছে।

এখনও বনভোজনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পার্ক, বিভিন্ন স্থাপনাসহ বিভিন্ন কৃত্রিম সৌন্দর্যের কারণে বনে আর বনভোজন করা হয় না তেমন। এখন আবার অনেকে বনভোজন শব্দটাও বলে না, তারা পিকনিক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

খুব মিস করি ছেলেবেলার সেই বনভোজন। সেই অদ্ভুদ বিশ্বাস। কলাপাতার সাম্প্রদায়িকতা। আরও কত কী !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.