নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুদেব চক্র বর্তী

জন্ম ১৯৮৭ সালে সিরাজগঞ্জে। পৈতৃক নিবাস মাগুরাতে। বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছি। লেখালেখি করি। এছাড়া- যুক্ত ছিলাম সাংবাদিকতা, গান, থিয়েটার, উপস্থাপনার সাথে। ছাত্র ইউনিয়নের কর্মি ছিলাম। প্রকাশিত গ্রন্থ-‘সংশয়ী প্রার্থনা’।

সুদেব চক্র বর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রসফায়ার নয়, বরং গুলি করে হত্যা

২৩ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩০

ক্রসফায়ার না বলে বরং বলা ‍উচিত ‍আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যা। কিন্তু ‍আমরা তো বটেই, মিডিয়াও তা বলতে পারছে না। কারণ ‍এই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। ফলে প্রশাসনের প্রেস রিলিজ- ‍এ বর্ণিত সেই ‍একই গল্প তৈরি হয়। সেই গল্প ‍আওড়ানোর সময় মনে প্রশ্ন জাগে- বোকা কারা? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নাকি জনগন?

১৯৭৩ সালে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে নকশালবাদী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রণজিৎ গুপ্ত এই কৌশলটি প্রয়োগ শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এর নাম দিয়েছিল "পুলিশ এনকাউন্টারে মৃত্যু"।

বাংলাদেশে ক্রসফায়ারে নিহত অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হলেন পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ শিকদার। ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি তাঁকে আটক অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তার লাশ সাভারের তালবাগ এলাকায় ফেলে রাখা হয়।
২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশে এই পদ্ধতির পুনঃপ্রয়োগ শুরু হয়। সে সেময় সন্ত্রাস দমনের জন্য স্বল্পমেয়াদী অপারেশন ক্লিনহার্ট চালু করা হয়। আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অন্তর্গত হওয়ায় এটি ব্যাপক বিতর্কের কারণ। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে 'অপারেশন ক্লিনহার্ট' পরিচালনার সময় পুনরায় 'ক্রসফায়ার' ব্যবহার শুরু হয়। ‍এটা নিয়ে বাণিজ্যও হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থও হাসিল হয়েছে।

ক্রসফায়ারে হত্যার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ছাড়পত্র (clearance) নেয়া হয়। সেখান থেকে সবুজ সংকেত আসার পরই হত্যার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিকে কোথায় ক্রসফায়ার করা হবে সেজন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। বিশেষত নির্জন স্থানকে ক্রসফায়ারের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ‘ক্রসফায়ারে হত্যা’ করা হয় করা হয়। সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর ক্রসফায়ারের আসামিকে গাড়িতে ওঠানো হয়। তাঁর চোখ বেঁধে ফেলা হয়, এরপর তাঁকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। গুলির পরেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শুটাররা বেশকিছু ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এই গুলির শব্দে আশপাশের বাসিন্দারা মনে করেন দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। পরে যেসব অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হয় সেগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর-ই সরবরাহকৃত অস্ত্র ও গুলি। এ বক্তব্যের প্রমাণ সাপেক্ষে বলা যে ব্যাপারটিকে নির্দেশ করা হয় তা হচ্ছে, এ পর্যন্ত ক্রসফায়ারের পর ঘটনাস্থল থেকে যত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার দেখানো হয়েছে সেগুলো প্রায় একই ধরনের।

এখন কথা হচ্ছে, ক্রসফায়ার হলে কি অপরাধ কমে ? উত্তর না। কারণ ক্রসফায়ার মানে হল বিচারব্যবস্থার প্রতি প্রশাসনের নিজেরই আস্থা নেই। তাছাড়া ক্রসফায়ার পদ্ধতি চালু থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। বিচারব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে অপরাধ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। আবার বিনা বিচারে খুন করা হয় অপরাধীকে কিন্তু গডফাদাররা থেকে যায় আড়ালে। তাছাড়া রাষ্ট্র কেন অপরাধীর বিচার করতে গিয়ে খুনী হবে? তবে ‍আরেকটা কারণ ‍আছে, যেটি বললে ৫৭ ধারায় মামলা হতে পারে। সেটি হল- সরকার যখন বিচারপ্রক্রিয়া ‍এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় ‍এবং সমালোচনার মুখে পড়ে তখন ‘ক্রসয়ায়ার’ ‍এক ধরনের ‍আইওয়াশ হিসেবে কাজ করে। যেমন- কোনো ‍একটি হত্যাকাণ্ডের ‍আসামি ধরতে পুলিশ ব্যর্থ হল, তখন তারা যেকোন ‍একজনকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে দাবী করলো তারা অপরাধি চিহ্নিত করেছে। তারপর ক্রসফায়ার নাটক। বিচারপ্রার্থীরাও শান্ত হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা টিকে থাকলোই। কথা হচ্ছে- ‍এত মিথ্যে গল্প বলে প্রজন্মের ভেতরে মিথ্যার বসতি বানানোর দরকার কী! বিপজ্জনক ‍আসামিকে যদি হত্যা করার দরকারই হয় তাহলে ‍অপরাধ প্রমাণ করে আদালত স্বয়ং গুলি হত্যার নির্দেশনা দিক। তাতে জনগনও খুশি হবে ‍এবং বিতর্কও কমবে। ‍আর ‍আসল কথা হল- বিচার বিভাগ শক্তিশালী ও স্বাধীন কর‍ার মাধ্যমে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা। তাহলেই অপরাধ কমে যাবে। ক্রসফায়ার কোন সমাধান নয়, বরং এটি বিনা বিচারে হত্যা যা সমাজে গুম-খুন উস্কে দেয়।


Chat conversation end

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.