![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলা থেকে একটা বিশ্বাস ছিল- কেউ আত্মহত্যা করলে সে ভূত বা পেত্নী হয়ে যায়। ধর্মগুলো আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করেছে। ফলে বলা হত- যারা আত্মহত্যা করে তারা না যেতে পারে স্বর্গে, না নরকে। বরং তারা বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং গাছে গাছে আশ্রয় নেয়। সম্ভবত তাদের প্রিয় গাছ হিসেবে শ্যাওড়া গাছ বেশি প্রিয়। এমনকি তারা শ্মশানেও বিচরণ করে।
ছোটবেলায় একবার মনে হয়েছিল আমি আত্মহত্যা করবো। এই শখটা জেগেছিল ভূত হবার নেশায়। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদরমাখা শাসন করে বলেছিল এসব চিন্তা যেন মাথায় না আনি। তবে আমার মত অমন বেখাপ্পা শখ না হলেও নানাবিধ হতাশায় যারা আত্মহত্যা করেছিল তারা তো গেলই, কিন্তু যারা আত্মহত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদেরকে সমাজে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হত। কারণ তাদেরকে নাকি মৃত্যু নানারূপ ধরে ডাকতে থাকে। যেমন- কেউ একজন গলায় দড়ি দিতে চাইলো অথবা প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হল, তাকে নাকি ঐ দড়িটা প্রায়ই 'আয়... আয়....' বলে ডাকতো।
তবে আমি একসময় ভুত বা প্রেতাত্মার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলাম। বন বাদাড়ে কিংবা শ্মশানে ঘুরতে লাগলাম মধ্যরাতে। তখন ২০০০ সাল। ক্লাস এইটে পড়ি। আমাদের গ্রামের একটি মেয়ে রাস্তার ধারে বনের ভেতরে একটা কাঁঠাল গাছের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলো। কিছুদিন পর সবাই বলাবলি করতে লাগলো ওখানে নাকি মেয়েটির প্রেতাত্মা খস খস শব্দ করে হেঁটে বেড়ায়। আমার কাছে এটাই ছিল মোক্ষম সুযোগ প্রেতাত্মার সাথে সাক্ষাৎ করার। একদিন সন্ধ্যার পর বের হলাম। সাথে একটা বন্ধুও ছিল। কিন্তু ঐ স্থানের কাছে আসতেই কানে এল খস খস শব্দ। সাথে থাকা বন্ধুটি ইতোমধ্যে 'হরে কৃষ্ণ' জপ করছে আর আমাকে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করছে। এক পর্যায়ে ও দৌড়ে চলেই গেল। কিন্তু শব্দটা আর পাচ্ছি না। আমি নেমে গেলাম বনের ভেতরে। কান খাড়া করে খেয়াল করলাম কেবল হালকা খস খস শব্দ আর কেমন যেন ফোঁস ফোঁস শব্দ। মনে পড়লো আজ অমাবস্যা। এবার একটু গা ছম ছম করতে লাগলো। কপালটা ঘেমে উঠলো। তখন মনে পড়লো ভূতেরা আগুন ভয় পায়। যদি আমাকে আক্রমন করে তাহলে পকেট থাকা ম্যাচটা জ্বালাবো অথবা হিসু করে দেবো। কারণ শুনেছিলাম ভূতেরা অপবিত্রতা দেখলে পালায়।
যাহোক আস্তে আস্তে এগোতে লাগলাম ঐ শব্দ অনুসরণ করে। সেই কাঁঠাল গাছটার সামনে চলে এলাম। এবার ঐ শব্দ আরও স্পষ্ট এবং সেটা আমার থেকে প্রায় পাঁচ হাত দূরে। কিন্তু অমাবস্যা রাতের অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না কিছুই। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে পকেট থেকে টর্চটা বের করে জ্বালালাম ভূত দেখতে পাবার আনন্দে। ওমা! এ কী! ভূত দূরে থাক, দেখি একটা বিড়াল!
তার মানে এই ব্যাটা এখানে খস খস করে আর সবাই ভূত মনে করে! ইতোমধ্যে আমার ঐ বন্ধুটি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চলে এসেছে আমাকে উদ্ধার করতে। তারা এসে আমাকে রাগ করতে লাগলো কিংবা দ্রুত এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইলো। আমি তাদেরকে বিড়ালটা দেখালাম। তারা তৎক্ষণাৎ আমাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো।
পরদিন সকালে এলাকায় খবর রটে গেল ঐ মেয়েটি মরে গিয়ে বিড়াল হয়ে গিয়েছে!
©somewhere in net ltd.