![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
*অনেক কিছুই জায়গা করে নিয়েছে আমার ছোট মনে। সময়ের প্রবল স্রোতে বদলে গেছে জীবনের অনেক কিছুই।মহাকাল আবার তার রহস্যভান্ডার থেকে কিছু উপহার দিয়েছে আমায়।। ছোটতে খুব চঞ্চল ছিলাম,এখন স্থির। একসময় ফুটবল ছিল আমার ধ্যান- ধারণা,এখন বিজ্ঞান। তবে যে জিনিসগুলো পরিবর্তন হয়নি,তাদের মধ্যে একটা হলো ভ্রমণ পিপাশা।প্রকৃতি যেন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে,আর তার বিবর্তন।ইচ্ছে করে নভোমন্ডল ভেদ করতে,ইচ্ছে করে সমুদ্রের অতলে হারিয়ে যেতে।ইচ্ছে করে এলিয়েনদের সাথে বন্ধুত্ব করতে,মত্স্যকন্যাদের সাথে ভাব জমাতেও ইচ্ছে করে। আর এত সব খুঁজে বেড়াই টেলিভিশনের পর্দায়,ভার্চুয়াল জগতে। মাঝে মাঝে নবিতা হতেও ইচ্ছে করে,ইচ্ছে করে ডোরেমনের টাইম মেশিনে করে মেসোজয়িক যুগে ঘুড়ে আসতে।৬ ইঞি ছোট হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে পৃথিবীটা। ডিসকোভারি আর নেট জিয়ো দেখে সময় পারি দিতেও ভাল লাগে। ভাবতে ভালো লাগে আইনস্টাইনের আপেক্ষিত তত্ত্ব,ডারউনের বিবর্তন,স্টিফেনের এলিয়েন আর টাইম ট্রাভেলিং নিয়ে। জানতে ইচ্ছে করে ব্লাক হোল,বারমুডাকে। আবার চিনতে ইচ্ছে করে নেসিকেও। কল্পনার সবই জাগ্রত হয় আইজ্যাক আজিমভের সায়েন্স ফিকশনে,অবিশ্বাসী হয়ে পরি প্রিন্সিপাল অব ইমপসিবিলিটিতে। হিমু হতেও ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে,জ্যোঁত্ন্সার আগুনে পুরে রাতের রাস্তায় হাঁটতে ভালো লাগে,শরীরে হলুদ পাঞ্জাবী আর খালি পায়। মিউজিক তো আমার শিরায় শিরায় বাসা বেঁধে আছে।সুমন ভাইয়ের সাথে কণ্ঠ মেলাতে না পারি,ইচ্ছেয় মিল আছে প্রচুর। -ইচ্ছে ছিল পৃথিবীটা বদলে দেবার,ইচ্ছে ছিল গীটার হাতে যুদ্ধে যাবার। নিজেকে সুপারম্যান মনে হয়,যখন মেডিটেশন করি।মনের বাড়িকে মাঝে মাঝে ভেঙ্গে চুরমার করে দেই,আবার সাজাই ইচ্ছে মত।আমার কল্পনার রাজ্যে আমি সব পারি। ইচ্ছে করে লেভিটেশন করতে,সাতার কেঁটে বেড়াতে আকাশের অসীমতায়।জানতে ইচ্ছে করে সবার মন টেলেপ্যাথি দিয়ে।হ্যাঁ আমি পারি,আমি সাইকিক। তবুও একটা কিছু নেই বলে মনে হয়।এমন দুটো চোখ খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে,যেই চোখে তাঁকালেই মন শান্ত হয়ে যায়।চোখ দুটো যেন সম্মহোন করতে চায় আমাকে। বনলতা সেনের সেই চুল,সেই প্রশ্ন। ইচ্ছে করে আগলে রাখতে,পৃথিবীর সবটুকু সুখ তার জন্য জয় করে আনতে। কালজয়ী মায়ার বাঁধনে বন্দী হতে ইচ্ছে হয়। জানিনা কেন,ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।।।
হালকা সবুজ রংয়ের প্রিয় টিয়া পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে তূর্য।চোখ ঝাপসা হয়ে আছে।গাল বেয়ে নেমে গলা আর আকাশি রংয়ের শার্টের কলারটা ভিজিয়ে ফেলেছে চোখের নোনতা পানি।
অস্বস্থিকর একটা জীবনযাপন করছে সে।নিজের জীবনের জন্য অপার ঘৃণা অতি যত্নে লালন করছে বুকের গভীরে।প্রত্যেক মানুষের জীবন সুখ আর ভালবাসার সুতোয় গাথে তার বাবা-মা।তূর্যর জীবনে ওর বাবা-মাই চরম অভিশাপ।তূর্য ওর বোধশক্তি অর্জনের পর থেকে কখনও বাবা-মার ভালবাসা উপভোগ করতে পারে নি।সব সময়ই ঝগড়া,নো আন্ডারস্টেন্ডিং।টাকা পয়সার কোনোও অভাব নেই ওদের। তূর্য পরিবারে থেকেও একা,ছোট থেকেই।বাবা-মার ঝগড়া-বিবাদ,ক্যাঁচাল,মারামারি ওর জীবনটা বিষিয়ে তুলেছে।
বাবা-মা প্রেম করেই বিয়ে করেছিল।পালিয়ে।।
আজ তূর্যর রেজাল্ট দিয়েছে।এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে ও।
Golden A plus ।কলেজে রেজাল্ট পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে বাড়িতে,এবার হয়ত বাবা মা একটু ভালোবাসবেন।
বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পায় ঝগড়া আর জিনিসপত্র ভাঙ্গার শব্দ।বাবার হুংকার আর মায়ের কর্কশ কণ্ঠ।আজও ড্রাগ নিয়েছে মা।
ওদিকে আর পা বাড়ায় না ও।চুপচাপ উঠে যায় উপরের তলায়,নিজের ঘরে।
ঘরে ঢুকেই দেখে ছোট ভাই তায়িফ ওর বিছানায় বসে কাঁদছে।এতক্ষণ নীরব পাথরের মত থেকেও এখন আর পারে না।ছোট ভাইয়ের চোখের অশ্রু ওকে ফুপিয়ে তোলে।
মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে তায়িফ।তূর্য ওকে খুব ভালোবাসে।
তূর্যর চোখ লাল হয়ে আছে,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাখিটার দিকে।বিকেল গরিয়ে পরেছে।একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে।
তূর্য ওর প্রিয় পাখির খাঁচাটার দিকে এগিয়ে যায়।খাঁচার দরজা খুলে পাখিটাকে হাতে নেয়,হাত বুলাতে থাকে।গত বছর জন্মদিনে উপহার পাওয়া এই পাখিটা ওর খুব প্রিয়। পাখিটার গলাটা একটু শক্ত হাতে ধরে তূর্য।তারপর গলাটা এক টানে ছিড়ে ফেলে...
সন্ধ্যা নেমেছে।তূর্য দোকান থেকে ফিরছে।হাতে একটি গোলাপ,তায়িফের জন্য একটি ডেইরি মিল্ক চকলেট আর একটি কলম।
বাড়ি ফিরে তূর্য তায়িফকে ওর রুমে ডেকে নেয়।বিছানার শেষ কোণাটায় বসে ওরা।তূর্য ডেইরি মিল্কটা তায়িফের দিকে বাড়িয়ে দিল।তায়িফ বলল,থ্যাংক ইউ ভাইয়া।তারপর খুব মনযোগ দিয়ে খেতে শুরু করল।
তূর্য ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।কি সুন্দর লাগছে ওর ভাইটাকে।তূর্য ডান হাতটা পিছন নিয়ে গেল।বাম হাতে শক্ত করে চেপে ধরল তায়িফকে।তায়িফ নড়তে চেষ্টা করছে,আর বলছে,কি করছ ভাইয়া?ব্যাথা লাগছে,ছেড়ে দাও।
তূর্য নির্বিকার।ডান হাতে তুলে নেওয়া ছুরিটা এবার খুব যত্নে তায়িফের গলায় চালিয়ে দেয় তূর্য।অস্ফুট বিকট এক গোঙ্গানির আওয়াজ হয়।তারপর ফুস ফুস করে রক্ত বেরোতে থাকে তায়িফের গলা থেকে।তায়িফের দেহটা এখন নিথর।দু হাতে আদরের ছোট ভাইকে ধরে কাঁদছে তূর্য।ওর রক্তে লাল হয়ে যাওয়া চেহারাটা খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে তূর্য।খুব ধীরে তূর্যর মুখ থেকে একটি কথা বের হল,
আই লাভ ইউ তায়িফ।।
তূর্যর আকাশী রংয়ের শার্টের উপরের দিকটা রক্তে লাল হয়ে আছে।গীটারটা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এসেছে ও।বেরোনোর সময় বাবা-মা দেখেনি।দারোয়ান আংকেল অবশ্যি তূর্যকে কি কি যেন বলছিল,আর হা করে তাকিয়ে ছিল।তূর্য সে কথাগুলো শুনতে পায় নি,ওর কান যেন অবশ হয়ে গেছে।
ও হেঁটে চলেছে।রাত প্রায় আটটা বাজে।হাতে গোলাপ ফুল আর একটি কলম।তূর্য হেঁটে চলেছে লীনার বাসার দিকে।লীনা তূর্যের ভালবাসা,আর একমাত্র বন্ধুও।
লীনাদের দোতলা বাসার নিচে দাড়ায় ও।ঠিক লীনার রুমের নিচে।তারপর গীটার বাজাতে শুরু করে।লীনার প্রিয় একটি গান।লীনা বারান্দায় এসে দাড়ায়।ও ভালবাসার মানুষকে দেখে খুশি হয়,সাথে যথেষ্ট অবাকও হয়।
তূর্য এমন পাগলামি প্রায়ই করে।লীনাদের বাসার নিচে দাড়িয়ে গীটার বাজায়,কিন্তু এত রাতে!
লীনা হাত উচিয়ে তূর্যকে বলে থাম।তূর্য ইশারায় নিচে আসতে বলে।
লীনা আবার অনেকটা ফিসফিসিয়া বলে,তুমি এখন এসেছ কেন?আমি কিকরে নিচে যাব এখন?
তূর্য উত্তরে নিচে আসার ইশারা করে আবার।
'উফফ,তুমি না...' বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে গেল লীনা।তূর্য অপেক্ষা করতে লাগল,ও জানে লীনা আসবে।
একটু পর লীনা আসে।দেয়ালের কোণাটায় তূর্যর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।বলে,এত রাতে এখানে কি করছ?
তূর্য বলে,তুমি আমাকে ভালবাস?
-গাধা,এটা জিজ্ঞেস করতে এসেছ?
-হুম।
-তুমি আসলেই পাগল।তুমি জানো না,তোমাকে ভালবাসি কিনা।
তূর্য আকশ্মাত জরিয়ে ধরে লীনাকে।লীনা হঠাত্ হকচকিয়ে যায়।তবে লীনাও জরিয়ে ধরে তূর্যকে।লীনার কোমল স্পর্শে তূর্যর শরীরে শিহরন জাগে,উত্তাপ ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে।
লীনা এতক্ষণে খেয়াল করে তূর্যর শার্টটা ভেজা।
-কি হয়েছে তোমার তূর্য?তোমার শার্টটা ভেজা কেন?
-কিছু না,এমনিতেই।
লীনাকে জরিয়ে ধরে থাকে তূর্য।
লীনা প্রচুর অবাক হয় আজকে।চির চেনা তূর্যকেই আজ তার অচেনা লাগছে।হঠাত্ তার পেটে খুব সুক্ষ্ম ব্যাথ্যা অনুভব করে লীনা।তূর্য ছুরিকাঘাত করে ওকে।লীনা সরে যাবার চেষ্টা করে,কিন্তু তূর্য ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকে।আর খুব আস্তে আস্তে বলে,আই লাভ ইউ লীনা।আই লাভ ইউ।
লীনার শরীর ধীরে ধীরে নেতিয়ে পরে।।
গোলাপটা লীনার পাশে ফেলে রেখে রাস্তায় বেড়িয়ে পরে তূর্য।কলমটা এবার সে নিজের পকেটে রাখে।কে জানে কোন স্থিতির দিকে এগিয়ে যায় ও।।।
©somewhere in net ltd.