নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকক্ষণ ধরে ফোন বাজছে । ও পাশ থেকে ধরছে না মারিয়া । আমি খুব অস্থির বোধ করছি । মেয়েটা আজ পর্যন্ত বুজলো না যে আমি একটু পর পর মেয়েটার সাথে কথা না বললে খুব অস্তির বোধ করি, কোন কাজ ঠিক মত করতে পারি না।
মারিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক বেশিদিনের নয় । এক বছরের একটু বেশি । কিন্তু এই এক বছরে আমার আর তার সম্পর্ক অনেক দুর গড়িয়েছে ।
সম্পর্কের ব্যাপারটা তার বাসায় জেনেছে । তাই একটু বেশী কড়াকড়ি করছে মারিয়ার সাথে । বাইরে বের হতে দেয় না । চোখে চোখে রাখে । মোবাইল সে ব্যবহার করে কিন্তু অনেক কষ্টে । তার মা তাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে দেয় না ।
কিন্তু মারিয়া বিভিন্নভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করে । হয়ত ফোন দেয় লুকিয়ে, বা তার মোবাইল থেকে টেক্সট করে বা অন্য কোন কাজিনের ফোন থেকে নক করে ।
মারিয়া আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট । অনেক পার্থক্য থাকার পরেও ভালোবাসায় কোন পার্থক্য হয় নি । কারণ আমাদের মধ্যে খুব মিল । আমি যেমনি ওকে ও ঠিক তেমনি আমাকে ভালোবাসে ।
আমি একটা কলেজে পড়াই, প্রাইভেট কলেজ । মাইনে আর এদিক ওদিক করে যা পাই চলে যায়। কিন্তু মারিয়ারা হলো স্থানীয় পরিবার । আমাদের থেকে ঢের অবস্থা সম্পন্ন পরিবার তাদের । আমি ঠিক এই একটা দিক থেকে তাদের সুনজরে আসতে পারি নাই । কারণ আমার টাকা নেই ।
এই জন্য মারিয়াকে তারা আমার সাথে বিয়ে দিতে নারাজ । মারিয়ার বাসা থেকে বিয়ে দেবার ব্যাপারটা আমার জন্য অসম্ভব । কারণ তারা সেচ্ছায় আমার সাথে মারিয়ার বিয়ে দিবে না । কারণ ওই ……..
মারিয়া ঘরে আসতে চায়, আমি বারণ করি । বলি আরেকটু বোঝা তোমার বাবা-মা কে । কিন্তু কোন লাভ হয় না ।
মারিয়াও এখন বিরক্ত । আমার বিষয়ের জের ধরে তার মা তাকে উঠতে বসতে কথা শোনায় । মারিয়া রীতিমত বিরক্ত , অসহ্য ।
মাজে মাঝে মারিয়া ফোন করে শুধু কাঁদে । আর চিৎকার করে আমাকে বলে আপনি আমাকে আপনার কাছে নিয়ে যান ।
বয়সের পার্থক্য কারনে মারিয়া আমাকে আপনি বলে সম্মোধন করত ।
সেবার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায় । আমাদের বিষয়টা জানা জানি হয়ে যাবার পর মারিয়াকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় । যদিও তার বিয়ের বয়স তেমন হয় নি ।
কিন্তু ও বিয়ে করতে চাইতো না, বার বার আমার কথাই বলত । কিন্তু তার বাসা থেকে কিংবা এমন কোন আত্মীয় ছিলো না যে আমার আর ওর বিষয়টা আমাদের হয়ে ওর বাবা মা কে বোঝাবে ।
এম্নিতেই ও অনেক ছোট মানুষ , তার উপর এমন চাপ। এই টুকু মানুষ আর কত সহ্য করবে ?
তার পরও মারিয়া আমার জন্য অনেক সয়ে গেছে । অনেক কথা শুনেছে বাসার, মায়ের অনেক অত্যাচারও সহ্য করেছে । তার ফুলের মত জীবনটা মুহুর্তেই বিভীষিকার মতো হয়ে গেছে , তাও সে আমার জন্য ।
প্রতিনিয়ত বাবা মায়ের অবজ্ঞা আর অবহেলা তাকে প্রতি মুহুর্তে তিক্ত করেছে ।
আমরা যে নিজেরা নিজেরা বিয়ে সিদ্ধান্ত নিতাম না তা নয় । তবে মারিয়া একটু বাবা ঘেষা বেশী ছিলো । বাবাকে ঠিক কষ্ট দিয়ে কিছু করতে মন সাঁয় দিতো না তার, কিন্তু আবার আমাকেও হারাতে নারাজ সে ।
ওই বললাম ছোট মানুষ, এত চাপ নিতে পারত না ।
অনেকক্ষণ পর মারিয়া ফোন ধরল ।
কিরে কোথায় ছিলি ?
-রুমে ছিলাম না ।
তোর বাবা কি বলল?
-সেই আগেরটাই ।
দেখ তারা তো রাজী না । আর তুই তো তোর বাবা কে ছাড়া কিছু করবি না, সো তুই তোর বাবা কে রাজী করা ।
এই কথা বলার পরে মারিয়া ভীষণভাবে ক্ষেপে গেলো।
বলল আমার বাবা যা যা চায় তা করে যদি পারেন তবে আমার কাছে আসবেন ।
এই বলে সে লাইন কেটে দিলো ।
এর পর ১,২,৩ ঘন্টা করে অনেকটা সময় কেটে গেল ।
গেল দিন, মাস………
মারিয়াকে আর ফোনে পাই না । ফোন বন্ধ, ফোন আর সে খুলে না ।
কি যে কষ্ট আমি সেই সময়টাতে করেছি তা বলে বোজানোর মত না । কলেজে গিয়ে ঠিকমত ক্লাস নিতে পারিনা । গলায় কথা আটকে যায় ।
রাস্তায় কোন কাপল কে দেখরে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। ক্ষণে ক্ষণে আমাদের কাটানো সেই মুহুর্তগুলো মনে পড়ে। কোনভাবেই তা মন থেকে সরাতে পারি না । একটু পর পর মোবাইলটা দেখি। না তার কোন সাড়া শব্দ নেই ।
কত ওর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি । একটা বার কথা বলার জন্য । নাই , বাসা বা বাসার বারান্দায় কোথাও তাকে আমি একটা মুহুর্তের জন্য দেখতে পাই নি ।
রাতে আমার ঘুম হতো না, একটু পর পর লাফ দিয়ে উঠতাম । বার বার ঘুম ভাঙ্গত আর আমি মোবাইল চেক করতাম । জানি তার কোন রেসপন্স থাকবে না তবু বারবার নিজেকে এই কষ্টটা আমি দিতাম ।
আমি ভাবতাম ওর তো সারা জীবনটা সামনে পড়ে আছে । ও তো আর একা থাকবে না বা ওর বাবা-মা তো ওকে এভাবে রাখবে না । কারো সাথে না কারো বিয়ে তাকে দিবে ।
আমি ভাবতে পারতাম না ইশ ও কারো সাথে থাকবে, কেউ একজন তাকে ছোঁবে।
আমি আমার কল্পনাতে তা ভাবতে পারতাম না । এই অনুভূতিগুলো আমাকে সব সময় তাড়া করে বেড়াতো ।
আমার বাসা থেকে একের পর এক মেয়ে দেখা আর বারবার তা নিষেধ করা । এভাবেই চলতে ছিলো ।
আমি শুধু থাকতাম ওই একটাই আশাতে । একদিন পাবো মারিয়াকে ।
এভাবে আরো বছর দুই কেটে গেলে ।
মানুষ বলে সময় নাকি সব ঠিক করে দেয় । সময় ঠিক করেছে কিনা আমি জানি না, তবে সময়ের স্রোত তার প্রতি আমার ভালোবাসা টুকু দমাতে পারে নি ।
মারিয়ার হাতে সময় ছিলো কিন্তু আমার ছিলো না ।
বাবা অসুস্থ ছিলেন । আর তার শেষ ইচ্ছে পূরণের জন্য আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিলো ।
এরপর…..
আমি হয়ত আর মারিয়াকে নিয়ে ভাবার সময় পাই নি । কি হবে ভেবে …………..?
দিন, মাস, বছর, সংসার, বাচ্চা ……… ভাবতে চাইলেও তার ফুসরত ছিলো না ।
তবে বাসে , রাস্তা, বা রেস্তোরায় যখন কোন কাপলদের কে দেখতাম তখন ফেলে আসা সেই দিনের ভালোবাসা গুলো আমার মনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠত ।
ভাবতাম আমিও একসময় এমন সময় কাটিয়েছি ।
আমি মনে মনে ভাবতাম, মেয়েটি কি একটি বার আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারত না। মারিয়ার যোগাযোগের অনেক উপায় ছিলো । আমি এমন কোন ভাবে চেষ্টা করিনি যা সাধ্যের মধ্যে ছিলো । কিন্তু পারি নি । মারিয়া রীতিমত হাওয়া হয়ে গেল আমার জীবন থেকে ।
বড্ড অভিমান হয়েছিলো তখন । আসলে টাকা পয়সাই কি সব ?
আমি তো তাকে ভালোবাসতাম, একটা অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিলো ওর প্রতি আমার । তবে কি সেও তার বাবা মার কথায় আমার ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে টাকা পয়সাকে সুখ হিসেবে গ্রহণ করল ?
হিসেব মিলে না, আমি আমার ভালোবাসা আর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তির কারণে কখনও এই দোষগুলি তার প্রতি এবং আমার মনে প্রশই দেইনি । দিন তো আসলেও কেটে যায়, কিন্ত কীভাবে যায় তা যার যায় সেই জানে ।
ধীরে ধীরে সময় অনেক বয়ে গেছে । তখন আমার কানের পাশ দিয়ে চুল সাদা হয়ে আসছে । আগের মত আর শেভ করার পর চেহারার চামড়া টাইট দেখায় না ।
কুমিল্লায় গিয়েছি এক বিয়ের দাওয়াতে । শখ হলো ট্রেনে ফিরব । টিকেট পাবো না জানি । ভেবেছি স্ট্যান্ডি টিকেটে যাবো । গিয়ে টিকেট নিয়ে অপেক্ষা আছি ।
হঠাৎ আমার বুক টা ছলাৎ করে উঠল । মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনে ।
আমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলাম না । এগিয়ে গেলাম কিন্তু ভেতরের চাপা উচ্ছ্বাসটুকু দমাতে পারলাম না ।
মারিয়া না ?
মারিয়া কিছু বলল না এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল
তুমি ? কেমন আছো ?
মারিয়া কথা বলে না ।
আমি বললাম জবাব দিবে না ?
অামি জিজ্ঞাসা করলাম-
কেন অমন করেছিলে তখন ?
আমাকে যদি বলতে আমি তাদের চাহিদা অনুযায়ী ছেলে না, আমাকে দিয়ে হবে না
তবে আমি কি বাধ সাধতাম ?
আমি কি জোর করতাম ?
মারিয়া এই প্রথম মুখ খুলল
প্লিজ,
মারিয়ার ধরা কন্ঠ ।
মারিয়ার কোলে তার মেয়ে বসে ছিলো । আমি জিজ্ঞাসা করলাম ওর বাবা কোথায় ?
সাথে আসে নি ?
-নেই
নেই মানে ?
-আমিই ওর বাবা !
আমি হাসলাম ।
এর পর অনেকটা নীরবতা কাটল দুজনের ।
জানেন, মা ওই দিন বলতে ছিলো এর চেয়ে ন্বপনের সাথে তোকে বিয়ে দিরে ভালো হতো ।
আমি কিছু বলিলি নি শুধু কেঁদেছি ।
আমি আর কিছু জানতে চাই নি ।
মারিয়াই সব বলল
তার বর স্থানীয় ছিলো ।
প্রথম প্রথম ভালোই ছিলো ।
পরে দেখল বর মদ্যপ ।
রাতে মদ খেয়ে এসে ঘুমাতো । মারিয়া কোনদিন উচ্চবাচ্য করলে শেষ পর্যন্ত গায়ে হাত তুলত । পরে মারিয়া আর কিছু বলত না ।
বর তার সারা দিন ঘুমাতো
ঘুম থেকে উঠতো বিকেলে, উঠে গোলস করে খেয়ে বের হতো ।
সন্ধ্যার পর থেকে আবার মধ্যরাত পর্যন্ত তার আসরে জমে থাকত ।
ভেবেছিলাম এক স্টেশন পরে নামব কিন্তু আগত্য মারিয়ার সাথে নামতে হলো ।
ওকে রিকশা করে দিয়ে মেয়েটার গাল ধরে জিজ্ঞাসা করলাম মা-মনি নাম কি তোমার ?
মেয়ে বলল- নাতাশা ।
আমি আবারোও একটা ধাক্বা খেলাম।
আমাদের ভালোবাসা-বাসির সময়ে আমরা ঠিক করেছিলাম আমাদের প্রথম মেয়ে হলে নাম রাখব নাতাশা !
মজার ব্যাপার হলো আমারও প্রথমে মেয়ে হয়েছে । আমার মেয়ের নামও নাতাশা ।
কথাটা মারিয়াকে আর বলতে পারলাম না, তার আগেই তার রিকশা টু! টা! শব্দে অনেকখানি এগিয়ে গিয়ছে সামনে ……..
১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:৪৩
ইভা লুসি সেন বলেছেন: ওই যে বললাম- বাবা-মায়ের চাহিদা
ছেলেকে সব সময় অল্প বয়সের বিল গেটস হতে হয় !
২| ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:০১
আহমেদ জী এস বলেছেন: ইভা লুসি সেন ,
আক্ষেপ ই বটে !
মোটামুটি লাগলো ।
১৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৩২
ইভা লুসি সেন বলেছেন: আসলেও আক্ষেপ !
৩| ১৭ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:০০
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভাবতে চাইলেও তার ফুসরত ছিলো যখন, তখন আর ভাবা কেন??
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:০১
ফারিয়া রিসতা বলেছেন: কেন এমন হয় ?? ভালোবাসার মানুষকে পাওয়াটা কি সব সময় ই পৃথিবীর সবথেকে কঠিন পরীক্ষা হয়ে থাকবে ??