নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ উল্লাহ রবি

একজন মানুষ এটাই আমার পরিচয়

ফয়েজ উল্লাহ রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতৃত্ব ভাড়া- "সারোগেসি"

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬


সন্তান পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালার দেয়া সব চেয়ে বড় নেয়ামত, একজন লোক যখন পিতা বা মাতা হন, তখনই তিনি তার পিতা মাতার গুরুত্ব বেশি উপলব্ধি করে থাকেন। কতো আদর এবং কষ্টের বিনিময়ে আজকের পৃথিবীর সব সন্তান ভালো থাকছেন বা ভালো রাখার চেষ্টা করছেন সকল পিতা-মাতারা।
বর্তমান পৃথিবীতে অর্থের বিনিময়ে প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়, কিন্তু একমাত্র পিতা-মাতার ভালোবাসা কোন কিছুর বিনিময়ে পাওয়া যাবেনা। এই ভালোবাসায় কোন লোভ নেই, স্বার্থ নেই, অনুপম সুন্দর প্রকৃতি নিখাদ!

দশ মাস যে নারী তার গর্ভে তিলে-তিলে একজন সন্তানকে বড় করে তোলেন এবং জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেবায় মানুষ করে তুলেন, সে মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা অপরিসীম, আর যখন সে কাজটি অর্থের বিনিময়ে অন্য কেউ করে থাকেন (সন্তানের জন্ম দেয়া পর্যন্ত) সেখানে ভালোবাসার কি ঠাঁই পায়?
জ্বী আমি “সারোগেসি”র বিষয়ে বলছি- আগে জেনে নেই সারোগেসি কি এবং কেন?

অনেক চেষ্টার পরও যখন সন্তান লাভের আর কোন পথ থাকে না তখন সারোগেসিই হয় অন্যতম উপায়। তবে এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন-
১. অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বারবার মিসক্যারেজ হওয়া
২. আইভিএফ চিকিৎসায় গর্ভধারণ না হওয়া
৩. অকাল মেনোপজ
৪. জরায়ুতে অস্বাভাবিকতা বা অস্ত্রোপচারের কারণে বাদ যাওয়া



সারোগেসি দুই রকমের হয় -
১. পার্শিয়াল সারোগেসি- অনেকদিন থেকে এটি চলছে। সন্তানধারণে এখানে কোনও ভূমিকাই পালন করেন না মা। বাবার শুক্রাণু আর সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু থেকে শিশুর জন্ম হয়।
২) ট্রু-সারোগেসি/জেস্টেশনাল/আইভিএফ সারোগেসি- মায়ের ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয় ভ্রূণটি। এটিই এখন প্রচলিত পদ্ধতি।

পার্শিয়াল সারোগেসি পদ্ধতিতে মহিলার ডিম্বাণু এবং গর্ভ – দুটোই ভাড়া নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে সন্তানের ওপর মায়ের একটা জৈবিক অধিকার থেকে যায়। অন্যদিকে আইভিএফে মায়ের ডিম্বাণু ‘স্পার্ম ব্যাংক` থেকে আনা অন্য পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে অথবা বাবার শুক্রাণু ডোনার মহিলার ডিম্বাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে ভাড়া দেয়া মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।

যেহেতু গর্ভ ভাড়া দেওয়া মহিলার ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি, সেহেতু ভূমিষ্ট সন্তানের ওপর সেই মহিলার কোনো অধিকার বর্তায় না। তবে বাবা-মা`র শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু নিষিক্ত করে যে ভ্রুণ তৈরি করা হয়, তার পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না। তবে আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করাকে টেস্ট-টিউব বেবি মনে করা যাবে না। কারণ টেস্ট-টিউব বেবি ভ্রুণ অবস্থায় মাতৃগর্ভেই বেড়ে ওঠে। এক কথায় “টাকার বিনিময়ে একজনের নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারনের পদ্ধতিকে বলা হয় সারোগেসি”।
ইদানিং বলিউডের বহু নামি-দামি অভিনেতা-অভিনেত্রীই এক নোবডি উপায়ে সন্তান জন্ম দিতে সফল হয়েছেন। যেমন ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক, প্রযোজক করণ জোহর, সোহেল খান, তুষার কাপুর, আমির খান,শাহরুখ খান, একতা কাপুর, ফারাহ খান সহ অনেকেই! যাদের সন্তান নেই তাদের জন্য যে কোন পদ্ধতিই খুশির কারণ!

অনেক দেশেই এইভাবে সন্তান লাভ আইসঙ্গত নয়। সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইত্যাদি ইউরোপের কতগুলি দেশে surrogate mother-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিছু কিছু দেশে এটির ব্যাপক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ ছাড়া এ বিষয়ে লেনদেনকে বেআইনি ঘোষিত করা হয়েছে। ভারতবর্ষে surrogate mother-এর ব্যাপারে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়নি। Indian Council of Medical Research-এর কিছু নির্দেশিকা এ ব্যাপারে আছে, কিন্তু সেটি মেনে চলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দেশাবলীর মধ্যে রয়েছে যেসব ক্লিনিক এই ব্যাপারে জড়িত তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। surrogate মায়ের নাম এবং যে দম্পতির সন্তান সে বহন করছে - তাদের দু’জনের নামই রেজিস্ট্রিতে রাখতে হবে। কোনো নারীই তিনবারের বেশি surrogate মায়ের ভূমিকা পালন করতে পারবে না, surrogate মায়ের গর্ভ সংক্রান্ত সমস্ত খরচা সন্তানের আইন-সম্মত পিতামাতাকে বহন করতে হবে। surrogate মা-কে তার কাজের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে, ইত্যাদি।
surrogate মায়েদের টাকা নেবার অধিকার আমেরিকাতেও রয়েছে। সেখানে সাধারণতঃ ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার থেকে ৯ লক্ষ টাকা এই দায়িত্বের জন্য surrogate মায়েরা পায়। তারওপর আনুষঙ্গিক ডাক্তারি খরচাতো আছেই। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতিতে সন্তান পাওয়ার খরচা ষাট হাজার ডলার বা ২৭ লক্ষ টাকার মতো হওয়া বিচিত্র নয়।
ভারতবর্ষে সেই তুলনায় অনেক কম পয়সায় surrogate মা পাওয়া যায়। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী surrogate মায়েদের জন্য এই খর্চা ভারতবর্ষে ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষের মধ্যে। ক্লিনিক ইত্যাদির খরচ নিয়ে পুরো ব্যাপারটা পাঁচ সাড়ে পাঁচ লক্ষের মধ্যেই চুকে যায়। ভারতে ‘সারোগেসি’ ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, সেই পদ্ধতিকে প্রায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন আইন অনুমোদন করেছে সে দেশের সরকার।

সব কিছুর পরেও যাদের সন্তান নেই তাদের জন্য এই পদ্ধতি অবশ্যয় মহা খুশির কারণ হতে পারে। বিজ্ঞানের যতো আবিষ্কার ভালো মন্দ দুই দিকই আছে, আমাদের ভালোটাই গ্রহণ করা উচিৎ ।
অবশেষে একটি কথাই বলবো-
“বিজ্ঞান আমাদের জীবনে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেঁড়ে নিয়েছে আবেগ”।

ফয়েজ উল্লাহ রবি
০৮/০২/২০১৯

সূত্র- অনলাইন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৯

প্রিন্স হ্যামলেট বলেছেন: ভারতে বলিউডের লোকজন এটাকে জনপ্রিয় করে তুলছে । বাংলাদেশে কি এটা প্রচলন হতে পারে ???

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২৪

ফয়েজ উল্লাহ রবি বলেছেন: আমরা তো অনুসরণ অনুকরণে ওস্তাদ!
হয়তো সে হাওয়া আমাদের মাঝেও এসে যাবে,
তবে এটাই উত্তম নয়! অন্য পথেও সেই সুখ পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ মন্তব্য দানে উৎসাহ দেয়ায়।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১১

বাংলার মেলা বলেছেন: ভারত বা বাংলাদেশে বিলাসিতা বা অন্য কোন কারণ ছাড়া সারোগেসি একেবারেই অহেতুক। এই অঞ্চলের নারীরা 'ভয়াবহ' উর্বর। কন্ডমের ব্যাপক ব্যবহারের পরেও এখানে অনাকাংখিত গর্ভধারণের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৯

ফয়েজ উল্লাহ রবি বলেছেন: এটা মানতে পারলাম না,
৯৬/৯৭ সালের দিকে লোক বলেছে ২০০০ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ২০ কোটি হবে
কিন্তু ২০২০ আমরা হয়তো ২০ কোটিতে পৌছবো!
ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২৪

ফয়েজ উল্লাহ রবি বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব দা

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫০

বাংলার মেলা বলেছেন: ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২৫ কোটি হবার কথা ছিল। কিন্তু প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের আয় বেড়ে যাওয়াতে তারা এখন সচেতন হয়েছে। কন্ডম কেনার জন্য টাকা ব্যয় করতে পারছে। সবচেয়ে বড় কথা সচেতন হয়েছে। আরও একটা ব্যাপার আছে। এদেশে বেকারত্বের হার ভয়াবহ বেড়েছে। বেকারত্বের সাথে যেহেতু বিয়ে সম্পর্কিত, তাই বিয়ে করতে বয়েস ৩০/৩৫ পার হয়ে যাচ্ছে। নারীদের সবচেয়ে উর্বর বয়েস ২০-৩৫। ত্রিশের পরে বিয়ে করলে সন্তানের সংখ্যা এমনিতেই ২ এর বেশি হয়না। তাই জনসংখ্যাও গত ১০ বছরের নিয়ম মেনে বাড়েনি।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০৫

ফয়েজ উল্লাহ রবি বলেছেন: তবু "আমাদের দেশের নারীটা সন্তান জন্ম দানে উর্বর" এই কথাটা কানে লাগে।
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.