নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজুল হাসান

ফয়েজুল হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৯

স্বপ্ন

------------------





"জামাইল্যা পা দুইটা শক্ত কইরা ধর"

"ধরছি ওস্তাদ"

"জবাই করার সময় ছুইট্যা গেলে রক্তারক্তি হইব"

"ছুটবোনা ওস্তাদ"



বাঁশের বেড়ার ওপাশ থেকে রাতের বেলায় কথাগুলো শুনে আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো, হাত-পা কাঁপা শুরু হলো, আবার মনের ভিতর এডভেঞ্চারটাও জেগে উঠলো। হাতের মোবাইল ক্যামরাটা নিয়ে সুযোগ খুঁজতে লাগলাম কোন ছবি তোলা যায় কিনা, পেয়েও গেলাম জানালার মত একটা ফাঁকা জায়গা যা দিয়ে ভিতর থেকে আলো আসছিলো। মাথাটা না তুলে ফাঁকা জায়গাটায় ক্যামরাটা ধরে পর পর দুটা ক্লিক করলাম। ফ্ল্যাশ যে অন করা ছিল খেয়াল ছিল না, তা জ্বলে উঠার সাথে সাথে ভিতর থেকে "কে রে শালা? " শোনা মাত্রই অন্ধকারের মধ্যে দিলাম দৌড়, এক দৌড়েই কচুরিপানা ভর্তি ময়লা পুকুরের মধ্যে যেয়ে পড়লাম।

ছোটবেলায় বাবা বলতেন বড় বড় স্বপ্ন দেখো তাহলে বড় কিছু হতে পারবে, ছোট ছোট স্বপ্ন দেখলে ছোটই রয়ে যাবে। তাই আমি বড় বড় স্বপ্ন দেখতাম। কোন সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, কোন সময় নামকরা গায়ক হবার স্বপ্ন। কিন্তু কোন কিছুই বেশীদুর এগোতো না। এবার মাথায় চাপলো জনপ্রিয় একজন ফটোগ্রাফার হবো। স্বপ্ন দেখা সহজ কিন্তু বাস্তবে তার রূপ দিতে গেলে যে অনেক পরিশ্রম করতে হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।

বোন থাকে অষ্ট্রেলিয়ায়, ওনাকে বললাম ভালো মানের একটা ক্যামরা পাঠাতে, উনি পাঠালেন ষোল মেগাপিক্সেলের একটা মোবাইল ক্যামরা। ওটা দিয়ে শুরু হলো আমার স্বপ্ন পুরণের পথ চলা। সামনে যা পাই তারই ছবি তুলি, ছবি তুলতে তুলতে মেমোরী কার্ড ভরিয়ে ফেলি, কিন্তু মন ভরেনা। ছবি তুলতে টেকনিকের সাথে সাথে যে সৃষ্টিশীল মন থাকা দরকার তা বুঝতে পারলাম।

একদিন মৌলভীবাজার থেকে বড় ভাইয়ের ডাক এলো বিশেষ কাজে ওখানে যেতে হবে। দেরী না করে ব্যাগ নিয়ে রওনা দিলাম গন্তব্যে, সাথে নিলাম ক্যামরা। মৌলভীবাজার এসে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে খুবই মুগ্ধ হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম রাতের কিছু দুর্দান্ত ছবি তোলার।

দিনের আলো তখনো পুরোপুরিভাবে মিলিয়ে যায়নি। পেটে কিছু খাবার চালান দিয়ে মোবাইল ক্যামরা নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। দূরে একটা ছোট টিলার উপর কুঁড়েঘরের মত দেখতে পেলাম। ওখান থেকে কিছু ভালোমানের ছবি তুলতে পারবো এই আশায় যখন ওখানে পৌঁছলাম তখন চারিদিকে ঘন কালো আধার নেমে এলো। কিছু নড়ার শব্দে উপরে তাকিয়ে দেখি একটা নাম না জানা পাখি গাছের ডালে বসে আছে, যেই ওটার ছবি তুলতে যাবো তখনই বেড়ার পাশ থেকে কথাগুলো কানে গেলো।

পুকুর থেকে উঠে অনেক কষ্টে বাসায় পৌঁছলাম, দেখি বাসার সবাই আমার জন্য চিন্তায় অস্থির। কোনমতে তাদেরকে ম্যানেজ করে মোবাইল ক্যামরার জন্য পকেটে হাত দিতেই দেখলাম পুরোটা ভিজে গেছে। মেমোরী কার্ডটা বের করে আরেকটা মোবাইলে সেট করে অন করতেই ছবি দুটি ভেসে উঠলো। ছবির দিকে বেশীক্ষণ তাকানোর সাহস করতে পারলাম না। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালে কাউকে কিছু না বলে রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম।

ট্রেন ভৈরব ব্রিজে উঠা মাত্রই মেমোরী কার্ডটা নদীতে ছুড়ে ফেলে দিলাম, মেমোরী কার্ডের সাথে সাথে আমার বিখ্যাত ফটোগ্রাফার হবার স্বপ্নটাও অতল পানিতে তলিয়ে গেলো।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

মো: ইউসুফ আলী। বলেছেন: ভাই কী দেখলেন মেমোরী কাড এ।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: বুঝলাম না তো ! B:-) B:-)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

ফয়েজুল হাসান বলেছেন: কি বুঝলেন না? :((

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: চরম ধা ধায় মন গলে যাচ্ছে ---- ভাল লাগা রেখে গেলাম

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১০

ফয়েজুল হাসান বলেছেন: আপনার ভাল লাগা শিক্ষানবিশ এই আমার থার্মোমিটারের সাহসের পারদ তর তর করে উপরের দিকে উঠে গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.