আমার বিকেল বেলার সঙ্গীনি

২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৮

চঞ্চল বাতাস ..
আকাশে সোনালী রঙের
আলোকছটা.চারিপাশে লিচুগাছ..
পথখানি মেঠো এবং বালুময়..
খাচায় বন্ধী টিয়া, হলুদ, আসমানি রঙের
পাখিগুলো খেলা করিছে..
আমি ভুলো মনে কি যেন ভাবিতেছি আর
হাঁটিয়া চলেছি। হঠাৎ করিয়া সুকন্ঠী এক
আওয়াজ কানে আসিয়া মনে সুরধ্বনি
বাজাইলো __"দিদি ! দিদি! ও দিদি ! "
আমি অপেক্ষা না করিয়া তৎক্ষণাত পিছু
ফিরিয়া তাকাতেই __শীর্ণ ফর্সা দেহে
লাল টুকটুকে জামা, পায়ে তাহার দু'খানা
রূপোর পায়েল, হাতে একখানা বোতল, কন্ঠে
মিষ্টি সুরে দিদি ডাক, গোলাপের পাপড়ির
অনুরূপ ঠোঁট, কানে ছোট্ট সাদা পাথরের দুল,
চোখে চঞ্চলতার আনন্দ, কপালে গোধূলীর
সূর্যের মতো লালটিপ, মেঘ কালো ঘন এলো
কেশ হাওয়ায় উড়াইয়া আসিতেছে
আমার বিকেল বেলার ছোট্ট সঙ্গীনী ।
তাহাকে কবিদের কল্পনার মায়াবীনী
নায়িকা বলিয়া অভিহিত হইতেছিল। রসে
ভরা কথা তাহার, তাহার হাঁটিবার ভঙ্গিতে
চারিদিক যেন পুলকিত হইয়া ওঠে। এতোক্ষণে
সে আমার সম্মুখে আসিয়া হাতটি টানিয়া
কহিলো " দিদি , আমি
তোমারে ঠিক চিনিতে পারিয়াছি, আমি
জানিতাম ইহা তুমি ব্যতীত অন্য কেহ হইবে
না, চলো না দিদি ওদিকটায় যাই" ।। তাহার
সহিত চলিলে অত্যন্ত দু:খে থাকা মানুষটিরও
মুখে আনন্দের একখানা হাসি ফুটিবে। চোখ
টিপির টিপির করিয়া তাহার দিদি দিদি
ডাক শুনিয়া তাহার নামটিও ভুলিয়া
গিয়াছি.. । স্নেহ সহিত তাহাকে প্রশ্ন
করিলাম "তোমার নাম কি গো মেয়ে, আমি
অত্যন্ত দু:খিত, আমি ভুলিয়া গিয়াছি।" সে
কহিল "দিদি , আমার নাম অর্নি ।" যেমন
সুন্দর চেহারা তাহার, তেমনি সুন্দর নাম।
হঠাৎ সে নাটকীয় ভঙ্গিতে আমার তিল
দেখিয়া কহিল "দিদি তোমার এই তিলে
আমার দিল আসিয়া গিয়াছে।" সকলের
নজরকারা সেই মায়াবীনী যে এতোদিন
আমার তিলের দিকে নজর দিয়াছে তাহা
জানিতাম না । তাহার সহিত থাকিলে সময়
কিভাবে কাটিয়া যায় তাহাও জ্ঞানে
থাকে না। ইতোমধ্যে গোয়াল আসিয়া হাঁক
পাড়িলো, সবাই ছুটিয়া গেলো দুগ্ধ নেয়ার
উদ্দেশ্যে। লাল পরীটি আমার হাত টানিয়া
ছুটিতে লাগিলো -"দিদি , আমরা তো
ভুলিয়াই গিয়াছি যে আমরা কিছু নিতে
আসিয়াছি।" আমি তখনো কিছু বুঝিয়া
উঠিতে পারিলাম না, আমার দৃষ্টি তখনও
তাহাকেই দেখিতেছে। বাড়ী যাইবার পালা।
আবার সে হাওয়ায় তাহার এলোকেশ
উড়াইতেছে । তাহার অট্ট হাসিতে সুর
মিলাইয়া আমিও সেই পথ ধরিয়া হাটিয়া
চলিয়াছি। অবশেষে বাড়ী পৌঁছাইয়া গেলাম, তাহার
কন্ঠে দিদি ডাক পুন:পুন: শুনিতে বড্ড ইচ্ছে
করিতেছে তখনও । সে তাহার হাত উঠাইয়া
চিকন -লম্বা আঙ্গুলিগুলো
দুলাইয়া কহিতে লাগিলো "বিদায় গো দিদি
কাল আবার সাক্ষাৎ হইবে, আসিবে কিন্তু। "
সে তাহার পথ ধরিয়া চলিয়া যাইতেছে,
তাহার সহিত তাহার বুনিত মায়াজাল ও
যাইতেছে। একটু ঝাঁকিয়া দেখিলাম সে
ততোক্ষণে চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু তাহার
সেই হৃদয় ঝলকানি হাসি এখনও কল্পনায়
আমায় আনন্দিত করিয়া যাইতেছে.. কি অপূর্ব
করিয়া সে আমারে দিদি বলিয়া ডাকে..
কেহ আমাকে কখনও এরূপভাবে ডাকে নাই..
তাহার সেই ডাকে কেমন একখানা টান অনুভূত
হয়। তাহার সেই দিদি ডাকে স্নেহ,
ভালবাসা, মায়া-মমতার অপূর্ব এক মেলবন্ধন
সঞ্চারিত হইতে থাকে হৃদয়ের মাঝে...

৬ টি +২/-০