![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে পড়ার পর বাংলার কিছু অংশ ভারতে পরিণত হয়ে পড়ে। এমনি এক জায়গায় আটকে পড়ে ইসমাইলের পরিবার। সে সময়ে ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়েরা মুসলমান দের পিটিয়ে হত্যা করা শুরু করলো। কৃষক ইসমাইল সারাদিন মাঠে খেটে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো। তার প্রিয় স্ত্রী হাসিনা বেগম এবং তার তিন পুত্র ইদ্রিস(১৪-১৫বছর),বাক্কার (১৬), সিদ্দিক(২০) অপেক্ষা করছে তার জন্য খাবার নিয়ে।
-ইতনা দের কিউ লাগা দিয়া?
-ক্ষেতো মে কাম থা বহত! পুরাব কা আইল বানা না থা ইসি লিয়ে দের হ গেয়া! জালদি খানা পারোসো, ভূক লাগি হে বহত
-হান জ্বী, আভি লাতি হু.---------
-ইয়ে কেইসি আওয়াজ হে হাসিনা!
এমতাবস্থায় বাহিরে বের হতেই ইদ্রিসের পরিবার সহ সকলকে পিটানো শুরু করলো প্রতিবেশী হিন্দু লোকেরা। তাদের হাতে হত্যা হলো ইসমাইলের স্ত্রী হাসিনা বেগম! ছেলেদের নিয়ে পালাতে শুরু করলো। এমতাবস্থায় চারজনই এক ব্রিজে এসে পৌঁছালো। সামনে আক্রমনকারীরা,পিছনে ঘুরে সিদ্দিক তাকাতেই দেখে পিছনেও আক্রমণ কারী! তিন ছেলেকে ব্রিজ থেকে লাফ দিতে বলে ইসমাইল। চারজনই লাফিয়ে নদীতে পড়লো। সাঁতরে সাঁতরে একূল ওকূল পেরিয়ে অবশেষে পাকিস্তানে প্রবেশ করলো! এখানের লোকেরা কেউ বাংলা বলে কেউ উর্দু! তারা যেখানে থাকা শুরু করলো সেখানকার লোকেরা বেশির ভাগ বাংলায় কথা বলে, পূর্ব হতে বাংলা জানার কারণে তারাও বাংলাতেই কথা বলা শুরু করলো। তিনদিন কোনোরকম পার হলো! কাপড়ের দোকানে কাজ করে দিন চালানো শুরু করলো ইসমাইল ও তার তিন ছেলে! দোকানের বারান্দায় রাত্রি কাটিয়ে কাপড়ের দোকানে কাজ করে চারজনই অল্প অল্প করে টাকা জমা করা শুরু করলো। অবশেষে এক খানা ছোট্ট কুঁড়ে ঘর বানিয়ে থাকার সৌভাগ্য তাদের হলো! এভাবে বছরের পর বছর কেটে গেলো। পাকিস্তানে নাকি ভাষা সংগ্রাম শুরু হলো। সিদ্দিক পড়াশুনায় ভালো ছিলো তাই তাকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। এদিকে দুই ছেলেকে নিয়ে ইসমাইল পাকিস্তানেই রয়ে গেলো। কয়েক বছর পর বাক্কারের বিয়ে হলো। পর পর পাঁচটি সন্তান জন্ম নিলো। তিনজন ছেলে আর দুটো কন্যা শিশু। ১৯৭১ এ যুদ্ধ শুরু হলো নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা হলো বাবা ইসমাইল ও পুত্র বাক্কার। ইদ্রিস আবার পরিবারের লোকেদের নিয়ে ভারতে পলায়ন করলো, রইলো সেখানে শরণার্থী হিসেবে! এখানকার লোকেরাও বাংলায় কথা বলে. মা কে হারালো, বাবা -ভাই কে হারালো, স্বর্বসান্ত হলো সে! তাদের কবরও জুটলো না ভেবে ভেবে ফুপিয়ে কাঁদে সে।। ভাতিজা ভাতিজি কে নিয়ে বাংদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোনার বাংলায় পা রাখলো তারা। বাড়ি ফিরে দেখে মাথা কাঁটা লাশ! লাশের গন্ধ পুরো দেশ জুড়ে। তাদের ঘরে হিন্দু কোনো পরিবারে দখল করেছে। পরিবারটি ভালো ছিলো, তাই ইদ্রিসের অবস্থা দেখে বাড়ি তার দখলে দিয়ে দিলো। আমেরিকায় ভাইয়ের কোনো খবর নেই। ইদ্রিসসহ সকলে পেলো বাংলাদেশের জাতীয়তা। সেও কিছুদিন পরে বিয়ে করলো। তারপর তার ভাতিজীদের বিয়ে দিলো! ইদ্রিসের ঘরে কিছুদিন পরেই ছোট্ট হাত-পা ওয়ালা বিড়ালের মতো কান্নার রোল উঠানো কন্যা শিশু জন্ম নিলো। তারপর তার ভাতিজাদের বিয়ে দিলো! পাশে ছোট্ট করে ঘর করে তাদের আলাদা করে দিলো! একে একে সাত কন্যার জন্মের পর তার ঘরে আশার আলো এক পুত্র জন্ম নিলো! যেহেতু সেই যুগে মেয়েদের তেমন মূল্যায়ণ করা হতো না তাই পুত্র শিশুটি তাদের সংসার সামানোর জন্য একমাত্র ভরসা ছিলো! অনেক আদরে তার নাম রাখা হলো মাসুদ! বোনেদের ভালোবাসায় বাবা-মায়ের আদরে বেড়ে উঠলো মাসুদ। সে অনেক দয়ালু এবং কোমল হৃদয়ের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হলো সমাজে। তার এস এস সি পরীক্ষায় সে প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। জানা গেলো সে পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু তার বন্ধুর নাম দিয়ে। কারণ হলো তার বন্ধু রেজার পরিবার খুব দরিদ্র ছিলো, চাকরির জন্য ডিগ্রির প্রয়োজন কিন্তু তাদের ওতো টাকা নেই,তাই মাসুদ তাকে সাহায্য করার জন্য তার নামে নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। পরের বার আবার পরীক্ষা দিলো নিজের নাম দিয়ে এবং এবার ফলাফল অত্যন্ত ভালো। সে কলেজে ভর্তি হলো। আই এ পরীক্ষার পর আর পড়াশুনার সুযোগ হলো না তার। বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করা শুরু করলো। কিছু সময় পরে মাসুদের বিয়ে হলো। তার ঘরে দুই পুত্রের জন্ম হলো। ঘর আলোয় আলোকিত হলো। এমন অবস্থার বিয়ে হলো তার বড় বোনের। এর পরেই আবার মাসুদের ঘরে জন্ম নিলো এক অত্যন্ত সুন্দর ফুটফুটে একটি কন্যা। তাকে দেখে যেন কেউই তার কাছ থেকে যাওয়ার প্রত্যাশা করতো না। দেখলে শুধু কন্যা শিশুটির দিকেই তাকিয়ে থাকতো সকলে। দাদু ইদ্রিস তার নাম রাখলেন রোশনী! সেই রোশনী যে তাদের ঘর আনন্দ ও খুশি দিয়ে আলোকিত করলো।
©somewhere in net ltd.