নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফারহানা তাবাসসুম

ফারহানা তাবাসসুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাপলা চোর

০৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১

ছেলেটা এক মুহুর্তও মেয়েটার সাথে কথা না বলে থাকতে পারেনা। মেয়েটার জন্য তার সারাটা দিন অপেক্ষা করে যাওয়া। মেসেঞ্জারে মেসেজ এর উত্তর আসবে বলে ডাটা কানেকশন টা অন রাখা। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে মেয়েটার উত্তরের আশায়। মেসেজের ট্রিং শব্দটা হলেই, লাফিয়ে ফোন টা নিয়ে আবার মেসেজ চ্যাটিং করবে। প্রতিদিনের মতো গভীর রাতে মেয়েটার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভাবতে লাগলো সেই দিনের কথা -----------
- আসতে পারি?
-জ্বী, আসো তোমার ক্লাশরুম ওটা।
অপলক দৃষ্টিতে ছেলেটা তাকিয়ে রইলো পুরো ক্লাশ জুড়ে মেয়েটাকেই, অথচ মেয়েটা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলো। ক্লাশ শেষে ছেলেটা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে এক ঝলক মেয়েটিকে দেখবে বলে।মেয়েটাও লক্ষ্য করলো যে ছেলেটি তার দিকে কেন জানি তাকিয়ে থাকে,এসব নিয়ে সে আর ভাবলো না। তারপর থেকে প্রতিদিন ছেলেটা অপেক্ষা করে মেয়েটিকে একবার দেখার জন্য। এর মধ্যে মেয়েটি একটি অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করে, একটা বাচ্চা ছেলে হাতে শাপলা ফুল আর একটা চিরকুট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
-আপু, একটু শুনো না প্লিজ। এটা তোমার জন্য।
-কেন কেন? আমার জন্য কেন?
-তুমি নাও না, তারপর দেখো কেন!
মেয়েটি ফুলও নিলো, চিরকুটে লিখা"প্রথম দিন থেকেই তোমাকে ভালো লাগা শুরু হয়েছে, তোমাকে ভীষণ ভাল লাগে,দয়া করে ফুল টা গ্রহণ করো আমার তরফ থেকে,
ইতি
শাপলা ফুল চোর।
.
মেয়েটি অবাক হয়ে ভাবলো ফুল পাঠানো লোকটা কভাবে জানে যে মেয়েটির প্রিয় ফুল শাপলা?
প্রথম দিন চিরকুট পাঠানোর কথা টা ভাবতে ভাবতে ছেলেটি ঘুমিয়ে যায়।
এভাবে প্রতিদিন একটা একটা নতুন নতুন চিরকুটের সাথে ফুল পেতে পেতে এই অজানা শাপলা ফুল চোরকে মনে মনে ভালো লাগা শুরু হলো মেয়েটিরও। কিন্তু আজকে সেই বাচ্চা ছেলেটি আর দাঁড়িয়ে নেই তাই একটু মন খারাপ হলো বলে কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো মেয়েটি। ক্লাশমেটের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলো
-জানিস আজকে আমাদের এক ক্লাশ মেট পুকুরে ডুবে গিয়েছে।
-বলিস কি! কিভাবে?
-লোকে বলেছে ছেলেটি প্রতিদিন শাপলা ফুল নিতো সেখান থেকে, কিনতু দূর্ভাগ্যবশত আজকে সে সামাল হারিয়ে ডুবে গিয়েছে।
মেয়েটা এতোক্ষণে বুঝতে পেরে গিয়েছে, সেই ছোট্ট বালকটির হাতে তাকে ফুল পাঠাতো,মেসেঞ্জারে এই ছেলেটাই তার সাথে কথা বলতো প্রতি মুহুর্ত। এক মুহুর্তের জন্যেও তার অশ্রু বাঁধলো না। সে তার ক্লাশমেট কে বললো
-সে কোথায় প্লিজ আমাকে নিয়ে চল।
-এই মুহুর্তে গেলে আন্টি তোকে বকবে না?
-তুই প্লিজ বেশি কথা না বলে আমাকে নিয়ে চল।
দুজনই গিয়ে দেখলো সেই শাপলা চোর এর নিথর দেহ পড়ে আছে তার বাড়ির আঙিনায়। মেয়েটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো -কই,আজ আমায় শাপলা দেবে না?প্লিজ ওঠো, যাকে প্রতিদিন শাপলা দিয়েছো,চিরকুট লিখেছো, সে তোমার সামনে, তোমার প্রথম চিরকুট টা পড়ার পর পর ই মনে মনে তোমাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছি। প্লিজ ওঠো।ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে কাঁদার অধিকারও মেয়েটার নাই।
অবশেষে মেয়েটি তার শাপলা চোরকে আর জাগাতে পারলো না। এখনও মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকে উশকো খুসকো চুলে ছেড়া জামায়-
-এইতো এখনি ছোট্ট ছেলেটা শাপলা হাতে আসবে,এবার শাপলা চোরকে আমি ধরবোই, এবার তাকে কোথাও যেতে দেবো না, দুজনে একসাথে শাপলা চুরি করবো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.