নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি।৯০ এর দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রাম জেলার সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফজলুল কবির

ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক

ফজলুল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন সত্যের ভোর আসবেই

২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:৫৫

কামাল উদ্দিন ৮ বছর বয়সেই মা হারায়। মা মারা যেতেই মাথার উপর থেকে ছায়াটুকুন যেন সরে গেল। শুরু হল তার জীবন সংগ্রাম। বেঁচে থাকার জন্য চাকুরী নেয় হোটেলে গ্লাস বয় হিসাবে। গ্লাস বয় কামালের ভাগ্যে নিয়মিত খাবার না জুটলেও চড় থাপ্পর ঠিকই জুটতো। সকালে ১টা রুটি আধা কাপ চা, দুপুরে এবং রাতে ভাতের সাথে সবজি-এই ছিল কামালের নিয়মিত খাবারের তালিকা। এভাবে দিনের পর দিন কাটে। কামালের একটু ভাল খাবার খেতে ইচ্ছা হয়। কোন এক সকালে মালিককে না জানিয়ে চনার ডাল দিয়ে রূটি খাচ্ছিল কামাল। দেখে ফেলে মালিক মুন্সি মিয়া। পছন্দ হয়নি তার। কামাল কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মালিক এসে কামালের দু গালে সজোরে থাপ্পর মারে। একটি থাপ্পর লাগে কামালের ঠোঁটে। কামালের ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরে। তারপর থেকে কামাল বুঝে যায় ভাল খাবার তার জন্য নয়। এভাবে কামালের দিন চলে যায়। কামাল গ্লাস বয় থেকে বেয়ারা অতঃপর বাবুর্চি হল। কামালের বয়স এখন প্রায় ৬০ বছর। প্রায় ৫২ বছর তার হোটেল জীবন। এই ৫২ বছরে সে ৫২টি রমজান মাস এবং ঈদ দেখেছে। রমজান মাস আসলে হোটেলের মেরামত কাজ হয়। হোটেল রঙ করা হয়। হোটেল চিক চিক করে। নতূনভাবে সাজে হোটেল। কিন্তু কামালদের চেহারা ক্রমশ মলিন হতে থাকে। ব্যবসা মন্দার কথা বলে কামালরা রমজান মাসে ছাঁটাই হয়। বেতন পায়না। বোনাসতো সোনার হরিণ। বেশী কথা বললে বাকী ১১ মাসও চাকুরী না দেওয়ার হুমকি মালিকের।
রমজান মাস, সিয়াম সাধনার মাস। সবাই চেষ্টা করে এই মাসে অন্যান্য সময়ের তুলনায় সাধ্য অনুযায়ী ভাল খাবার খেতে। একটু ভাল থাকতে। কিন্তু হোটেল শ্রমিকের ঘরে থাকে হাহাকার। ঈদের দিন সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। সবাই নতুন জামা কাপড় পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ হোটেল শ্রমিকের ঘরে ঈদের আনন্দ নাই। সন্তানদের গায়ে ঈদের নতুন জামা নাই। চাঁদরাতে অস্থির হয়ে যায় কামাল। স্ত্রী সন্তানদের সামনে মুখ দেখাতে লজ্জা হয় কামালের। যেন জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক।
কামাল জানতে পারে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য একটি শ্রম আইন আছে। প্রত্যেক মালিক সে আইন মানতে বাধ্য। কিন্তু হোটেল শ্রমিকরা যেন শ্রমিকই নয়। হোটেল মালিকরা যেন আইনের উর্ধে।
হোটেল শ্রমিকদের নিয়োগ পত্র, পরিচয় পত্র দেয়া হয়না। সবেতন কোন ছুটি নাই। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটিও নাই। কারও কখনো ছুটির প্রয়োজন হলে অন্য আরেক জনকে বদলি দিতে হয় অথবা বিনা বেতনে ছুটি পাওয়া যায়। প্রায়শঃ ১২/১৩ ঘণ্টা কাজ করতে হয় কিন্তু কোন ওভারটাইম ভাতা পাওয়া যায়না। মালিকের ইচ্ছার উপর তাদের চাকুরীর স্থায়িত্ব নির্ভর করে। মৌখিক আদেশেই শ্রমিকের চাকুরী চলে যায়। ১৭/১৮ বছর চাকুরী করলেও কোন ক্ষতিপূরণ কিংবা সার্ভিস বেনিফিট পায়না। তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ নির্বিকার। যেন তাদের কোন দায়িত্ব নাই। প্রতিকারের জন্য শ্রম আদালতে মামলা করলে মালিক ভূক্তভোগী শ্রমিককে তার কর্মচারী হিসাবেই স্বীকার করেনা। যেহেতু হোটেল শ্রমিকরা নিয়োগপত্র ও পরিচয় পত্র পায়না, শ্রমিকের পক্ষেও নিয়োগকর্তা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তার উপর শ্রম আদালতে বিচারক শূন্যতা, মামলার জট, মামলার দীর্ঘসূত্রিতাতো আছেই।
কামাল ভাবে সবারইতো একই সমস্যা। তারপরও কামালরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনা। অথচ সবাই মিলে একত্রিত হতে পারলেই পরিত্রাণ সম্ভব। ৬০ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে কামাল অতীতের দিকে ফিরে তাকায়। কামালের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। তার হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। রাজ্যের হতাশা তাকে ঘিরে ধরে।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ। ক্ষমতার পালা বদল। সবই প্রত্যক্ষ করে কামাল। কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে দেখেনা। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় কামাল হোটেল বদলায়। কি আশ্চর্য সব মালিকেরই একই চেহারা! এরা অনেকেই গরীব মানুষকে যাকাত দেয়। দান খয়রাত করে কিন্তু যাদের শ্রমে ঘামে তারা অর্থ বিত্তের মালিক তাদের ন্যায্য হিস্যা দিতে তাদের রাজ্যের অনীহা।
প্রতিরাতে কামাল ঘুমায় একটি সোনালী ভোরের প্রত্যাশায়। কামালের জীবনে ভোর আসে কিন্তু তা বড়ই বিবর্ণ।
মুক্তির পথ খোঁজে কামাল। সামাজিক প্রতিপত্তি, অর্থ-বিত্ত, রাষ্ট্র, প্রশাসন সবই মালিকের পক্ষে। ধনতান্ত্রিক এই সমাজ ব্যবস্থায় কামালরা বড় অসহায়। কামাল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়নের একজন সদস্য। চট্টগ্রামের হোটেল শ্রমিকদের একমাত্র সংগঠন ছিল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন। কামালের মনে পড়ে ৮০ এবং ৯০ এর দশকে খুব শক্তিশালী ছিল এ সংগঠনটি। তখন হোটেল শ্রমিকদের উপর অন্যায় অবিচার হলে প্রতিরোধের চেষ্টা হতো। অসহায় শ্রমিকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছিল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন। কিন্তু মালিকদের ষড়যন্ত্র, স্বার্থান্বেষী রাজনীতির কালো থাবায় হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়।
এক সংগঠন থেকে একাধিক সংগঠন জন্ম নেয়। হোটেল শ্রমিকেরা বিভক্ত হয়ে যায়। নেতারা অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজেদের আখের গুছানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হোটেল শ্রমিকদের দুর্দশার কথা কেউ কিছু ভাবেনা। এভাবেই শ্রমিকেরা যুগ যুগ ধরে প্রতারিত হয়ে আসছে। কামাল ভাবে, কেবল হোটেল শ্রমিক নয়। সকল শ্রমিকের মুক্তির পথ একটাই – সকল ধরণের শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন-প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বৃদ্ধ কামাল হোটেল শ্রমিকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে। হোটেল শ্রমিকদের মিছিল হয়। কামাল মিছিলের পুরোভাগে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগান ধরে, “দূনিয়ার মজদুর এক হও”। কামাল সামনের দিকে এগুতে থাকে। কামাল ভাবে তার পেছনে আছে লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত, বঞ্চিত ও শোষিত শ্রমিক। প্রয়োজন সবার ইস্পাত দৃঢ় একতা। কামাল স্বপ্ন দেখে-একদিন সত্যের ভোর আসবেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:২২

কাইকর বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। বেশি বেশি মন্তব্য করুন। সব ব্লগারদের সাথে পরিচিত হন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সেফ হয়ে যাবেন। সময় পেলে আমার ব্লগে গিয়ে ঘুরে আসবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:৪২

ফজলুল কবির বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার মতামত ও পরামর্শের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.