![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৮ মে, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। বিশ্বব্যাপী ১৯৮৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে তবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ১৯৯৭ সাল থেকে। মূলত নিরাপদ মাতৃত্বকে নারীর অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া এবং গর্ভকালীন সময় হতে সন্তান প্রসব ও প্রসব পরবর্তী সময়ে নবজাতক ও মায়ের নিরাপত্তা বিধান করাই এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। নিরাপদ মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হলেও গর্ভবতী মা ও তার পরিবারের সদস্যদের সচেতনতাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মা ও তার পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ নেয়া উচিত। এ’ছাড়া প্রসবের পূর্ববর্তী সময় মায়েদের কাউন্সিলের ব্যবস’া করতে হবে। যাতে তারা প্রসবকালীন বিষয়ে সঠিক ধারণা পায়।
আমাদের দেশে ১৯৯০ সালে ১ লাখের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার ছিল ৫৭৪ জন। ২০১০ সালে ওই হার কমিয়ে ১৯৪ এ আনা হয়। ২০১৩ সালে তা নেমে আসে ১৭০ জনে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ জন। তবে দীর্ঘমেয়াদে মাতৃ মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনাই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের অন্যতম লক্ষ ও উদ্দেশ্য।
মাতৃ মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ হতে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) পুরস্কার অর্জন করেছে।
বিশ্বে প্রতি বছর ২১ কোটি নারী গর্ভবতী হয়। ২ কোটির বেশি নারী গর্ভজনিত সমস্যায় ভোগে। এদের মধ্যে ৮০ লক্ষ গর্ভবতী নারীর জীবনাশঙ্কা দেখা দেয়।
ধনীদের তুলনায় প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা ৩০০ গুণ বেশি নিরাপদ মাতৃত্ব জনিত শঙ্কায় রয়েছে। এই সকল দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ হচ্ছে কর্মজীবী নারী।
বিবিএস লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশের নারী শ্রমিক সংখ্যা ১ কোটি ৮৫ লক্ষ। এই বিশাল সংখ্যক নারী শ্রমিকের যারা প্রতি বছর গর্ভধারণ করে থাকে, তারা একাধারে নবজাতককে পেটে ধারণ করে এবং একই সাথে চাকরি ও পারিবারিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাই এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন কর্মজীবী গর্ভবতী নারীর নিরাপত্তা শঙ্কা অন্য দশ সাধারণ গর্ভবতী নারীর তুলনায় অনেক বেশি।
প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের শ্রম আইনের ৪৫ থেকে ৫০ ধারায় তাদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা ও বিভিন্ন কল্যাণমূলক ব্যবস’া গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। উপরোক্ত ধারাসমূহ বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, একজন গর্ভবতী নারীর চাকরির বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে এবং তার ২টির কম জীবিত সন্তান থাকলে, সন্তান প্রসবের পূর্বে ৮ সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের পরে ৮ সপ্তাহ সবেতন ছুটি প্রাপ্য। এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোন গর্ভবতী নারী শ্রমিককে দুষ্কর বা শ্রমসাধ্য, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অথবা তার স্বাসে’্যর জন্য হানিকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন কোন কাজে নিয়োজিত না করার উল্লেখ রয়েছে। তবে আইনের এই ধারাগুলো সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের গর্ভবতী নারী শ্রমিকদেরকে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে সর্বোচ্চ পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত মাতৃত্ব কল্যাণ সুবিধা প্রদান করার বিধান রয়েছে। কিন’ প্রচারণার অভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী শ্রমিকেরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এব্যাপারে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সীমাবদ্ধতা থাকায় তারাও খুব একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে প্রতীয়মান হয়।
শ্রম আইনে বর্ণিত ধারাসমূহ নিরাপদ মাতৃত্ব রক্ষায় যথেষ্ট কিনা এ নিয়ে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আইনের ধারা সমূহ মুষ্টিমেয় কিছু কমপ্লায়েন্ট পোশাক কারখানা ছাড়া অন্য কোথাও পালিত হয় না। ফলে গর্ভকালীন নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা অরক্ষিতই রয়ে গেছে। এইরূপ অবস’ায় সকল প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তা শঙ্কা পেরিয়ে একজন কর্মজীবী নারী যখন সন্তান প্রসব করে তখন তাকে শুরু করতে হয় সন্তান লালন পালন নিয়ে আরো কঠিন সংগ্রাম।
শ্রম আইনের ধারা ৯৪ তে উল্লেখ আছে কোন প্রতিষ্ঠানে ৪০ জনের অধিক নারী শ্রমিক নিযুক্ত থাকলে, তাদের ৬ বছরের কম বয়সী শিশু সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিশু পরিচর্যা কক্ষ থাকবে। এই ধারাটিও সঠিকভাবে অনুসরণ করতে দেখা যায় না। অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে মানসম্পন্ন ডে কেয়ার সেন্টার নাই। ফলে নবজাতক সন্তানের প্রতিপালন নিয়ে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেক কর্মজীবী মাকে। সন্তান লালন পালনের কোন বিকল্প ব্যবস’া না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে চাকরিই ছেড়ে দেয়।উপরোক্ত পরিসি’তির কথা বিবেচনায় নিয়ে অনেক কর্মজীবী মহিলা সন্তান নেয়ার সাহস পাচ্ছেনা। এই হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একজন নারী শ্রমিক যখন গর্ভবতী হন তখন তাকে বেঁচে থাকা এবং মা হওয়ার সংগ্রাম একই সাথে চালিয়ে যেতে হয়। এই কঠিন সংগ্রাম চালাতে গিয়ে একজন নারী শ্রমিককে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় যা তার মধ্যে তৈরি করে তীব্র মানসিক চাপ এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উৎপাদন ব্যাবস’াপনা যা দীর্ঘমেয়াদে মালিকেরই ক্ষতি বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। কর্মজীবী নারী শ্রমিকদের প্রতি আরো সংবেদনশীল হয়ে উপরোক্ত বিষয়ে মালিক এবং রাষ্ট্র ও সমাজে ক্রিয়াশীল অপরাপর বিভিন্ন মহল গুরুত্ব সহকারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে, আজকের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে তাই-ই সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা
২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৯
ফজলুল কবির বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৮ রাত ১:০৫
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: সামুতে স্বাগতম। শুভ কামনা রইলো।