নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি।৯০ এর দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রাম জেলার সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফজলুল কবির

ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক

ফজলুল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম আইন সংশোধনী প্রসঙ্গে

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৭

সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৪১টি ধারা সংশোধন করে তা বিগত ২৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় উত্তাপিত হওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে খুব দ্রুততম সময়ে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সনের হিসাব মতে বাংলাদেশে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭ লক্ষ। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর আইনগত সুরক্ষা, অধিকার ও প্রাপ্য উল্লেখ থাকে শ্রম আইনে। অথচ আমরা বারবার লক্ষ করি শ্রম আইন প্রনয়ন এবং সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদে সময় বরাদ্ধ থাকে খুবই কম। তাই প্রতি বারই তাড়াহুড়ো করে আইন পাশ করতে হয়। এতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি শ্রমিক শ্রেণির প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীন মনোভাবের চিত্র প্রকটভাবে ফুটে উঠে।
মূলত আইএলও এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠির চাপে সম্প্রতি শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। ফলে তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখাটাই ছিল শ্রম আইন সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ের শ্রমিক সংগঠন সমূহের গা ছাড়া ভাব এবং শ্রমিক নেতা হিসাবে পরিচিত এমন কিছু সাংসদের উপস্থিতে নির্বিঘ্নে শ্রম আইনের সংশোধন জাতীয় সংসদে পাশ হয়। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর নেতাদের পত্রিকায় বিবৃতি প্রকাশ ছাড়া সারা দেশে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রতিবাদ দেখা যায়নি। এমন চিত্র দেখে মনে হতে পারে শ্রম আইনের সংশোধনীতে শ্রমিক পক্ষের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে কিংবা সংশোধনীর বিপক্ষে এদেশের শ্রমিক শ্রেণীর তেমন কোন গুরুতর অভিযোগ নাই।
কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি সংশোধনীর নামে পূর্বের ন্যায় এবারও শ্রমিকদের ব্যাপকভাবে ঠকানো হয়েছে। সংকুচিত হয়েছে শ্রমিকের অধিকার। শ্রম আইনের সংশোধনীতে সবচেয়ে বেশী আঘাত আনা হয়েছে নারী শ্রমিকদের উপর। আইনের ২(৩৪) ধারায় ‘‘প্রসূতি কল্যাণ’’ অর্থ কোন মহিলা শ্রমিককে তার প্রসূতি হওয়ার কারণে প্রদেয় “মজুরীসহ ছুটির” স্থলে “সুবধিা” যুক্ত করা হয়ছে। এবং ৪৭(৪) এর দফা ‘গ’ এর পর দফা ‘ঘ’ যুক্ত করে তাতে বলা হয়েছে। “কোনো মহিলা শ্রমিক কর্তৃক মালিককে নোটিশ দেওয়ার পূর্বেই যদি সন্তান প্রসব করে থাকেন তাহলে সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করবার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে উক্ত সম্পূর্ণ সময়ের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধাসহ প্রসব পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকিবার অনুমতি দিবেন।
প্রথমত ২(৩৪) ধারা হতে মজুরীসহ ছুটি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন যুক্ত ধারা ৪৭(৪) এর দফা ‘ঘ’ তে উল্লেখ করা হয়েছে “প্রসব পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকিবার অনুমতি দিবেন”। ফলে মাতৃত্বকল্যান থেকে ছুটি বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা কিনা তা নিয়ে এক ধরনের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
আবার ৪৭(৪) এর দফা ‘ঘ’ এর শেষ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে “ কোনো মহিলা শ্রমিক প্রসূতি কল্যাণ ছুটিতে যাবার নির্ধারিত তারিখের পূর্বে গর্ভপাত ঘটিলে তিনি কোনো প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন না”। গর্ভপাতের শিকার নারী শ্রমিকদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাদের সহযোগিতার পরিবর্তে এই ধরণের আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্র অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে।
ধারা ২৮৬ এর উপধারা ১ এর সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে – “কোনো মালিক কোনো মহিলা শ্রমিককে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে, তিনি পচিঁশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ দন্ডে দন্ডনীয় হবেন কেবলমাত্র জরিমানা উল্লেখ করলে পরে তাদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকে বিধায় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান পূর্বক মালিককে পঁচিঁশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ দন্ডে দন্ডিত করার বিষয়টি উল্লেখ থাকা উচিত।
শ্রম আইনের ৯৯ ধারায় গ্রুপবীমা বাধ্যতামূলক করা হলেও রপ্তানীমূখী শিল্প সমূহকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পোশাক রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান সমূহের মালিক সমিতি বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ ২০১৫ সন থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কোন বীমা কোম্পানীর সাথে চুক্তি করা থেকে বিরত রয়েছে। বর্তমান সংশোধনীর মাধ্যমে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র উক্ত অবৈধ কর্মকান্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
ধারা ১০৮(২) এর সংশোধনীতে পিস রেটে কর্মরত শ্রমিকদেরকে ওভারটাইম ভাতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শ্রম আইনের ২৯৬ ধারায় ঢিমে তালে কাজে অংশ গ্রহণ বা প্ররোচনা, ২৯৯ ধারায় অরেজিষ্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকান্ড, ৩০০ ধারায় ট্রেড ইউনিয়নের দ্বৈত সদস্য পদ গ্রহণ প্রভৃতি কাজের জন্য জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে যা যুক্তি যুক্ত নহে কেননা উপরোক্ত কোন কর্মকান্ডই ফৌজাদারী অপরাধ নয়। এই ধরণের অপরাধের জন্য শ্রম আইনের ২৩ ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
শ্রম আইনের ১৭৯(২) ধারায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট শ্রমিকের ৩০% এর পরিবর্তে ২০% শ্রমিকের সমর্থনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়টিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনেক বড় করে দেখানোর চেষ্টা করা হলেও এখনো এই ধারাটি আইএলও কনভেনশন ৮৭ এর সাথে সাংঘর্ষিক এবং ইহা অতিতের মত স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
শ্রম আইনের ২৯৪ ধারায় অবৈধ ধর্মঘটের জন্য জেল জরিমানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদেরকে বৈধভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে কিভাবে বৈধভাবে ধর্মঘট করা সম্ভব তা বোধগম্য নহে।
১৩(২) ধারা মতে কোন এক বিভাগের শ্রমিক অবৈধ ধর্মঘট করলে মালিক অন্য বিভাগও বন্ধ করে দিতে পারবে। এতে অন্য বিভাগের শ্রমিকেরা কেবল তিন দিন লেঅফের ন্যায় ক্ষতিপূরণের টাকা ছাড়া আর কোন মজুরি পাবেনা। এ যেন একজনের দোষ আরেক জনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া এবং মালিককে কৌশলে কারখানা বন্ধ করে দেয়ার সূযোগ সৃষ্টি করা। ধারা ২১৬ এর ১২ এবং ১৩ উপ ধারাতে উল্লেখ আছে কোন মামলা ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করা না গেলে উপযুক্ত কারন দেখিয়ে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় বাড়ানো যাবে কিন্তু বর্ধিত ৯০ দিনের মধ্যে মামলা শেষ না হলে মামলার ভাগ্য কি হবে তা উল্লেখ নাই। ফলে শ্রমিকেরা মামলার দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্তি পাবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা।
দীর্ঘ দিন যাবৎ ধারা ২৬, শ্রমিকদের জন্য একটি কালো আইন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এর মাধ্যমে মালিক চার মাসের নোটিশ অথবা ৪ মাসের মূল মজুরির সমান টাকা পরিশোধ করে কোন কারন দর্শানো ছাড়া একজন শ্রমিককে কারখানা থেকে বের করে দিতে পারবে। তাই শ্রম আইন হতে ২৬ ধারা বাদ দেয়া আজ শ্রমিক সমাজের অন্যতম দাবী হলেও শ্রম আইনের সংশোধনীতে এই বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
শ্রম আইনের সংশোধন আইএলও এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ দাতা গোষ্ঠি কতটুকু সন্তুষ্ট হয়েছে তা জানতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। কিন্তু এই সংশোধনীতে শ্রমিক শ্রেণির প্রাপ্য যে শূন্য তা এখনি বলে দেয়া সম্ভব।







মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: আজ সকাল এগারোটায় পল্টন মোড়ে শ্রমিকের একটা মিছিল দেখলাম। প্রেস ক্লাবের দিকে যাচ্ছিল।
এরকম মিছিল করে কোনো লাভ হবে না। অন্যপথ বেছে নিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.