নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি।৯০ এর দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রাম জেলার সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফজলুল কবির

ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক

ফজলুল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচনী ইশতেহারে শ্রমিক স্বার্থ বিবেচনা প্রসঙ্গে

২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৬

আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাষ্ট্র ও সরকার তার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে এমন ধারণা ছিল সবার। এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ঘটনা ঘটে গেছে। প্রথমত পোশাক শিল্প খাতে কর্মরত প্রায় চল্লিশ লক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর জীবনমান ও অধিকারের সনদ শ্রম আইন সংশোধন হয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটিতেও শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষিত হয়নি।
দেশে প্রায় ৯ লক্ষ শ্রমিক বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবা খাতে কর্মরত রয়েছে। এই খাতে কর্মরত আয়া-মাসিদের মজুরি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে। বাকী অধিকাংশের মজুরিও পাঁচ থেকে সাত হাজারের বেশী নয়। বেসরকারী হেলথ সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের একমাত্র সংগঠন “এক্সরে প্যাথলজি হেলথ ক্লিনিক কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন” দীর্ঘদিন যাবৎ বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবা খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য পৃথক মজুরি বোর্ড গঠনের দাবী জানিয়ে আসছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দেশের ৪২টি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হলেও দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য অদ্যাবধি মজুরি বোর্ডই গঠন করা হয়নি। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাতো দূর অস্ত!
পোশাক খাতের শ্রমিকদের সেইদিক থেকে ভাগ্যবান বলা যেতেই পারে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ন্যূনতম মজুরি ৫৩০০ টাকা ঘোষণা করার পর আবার শ্রম আইন মেনে ৫ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে ৮০০০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য এবার পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের অনুরোধ মালিক পক্ষের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। কিন্তু ন্যূনতম মজুরি নির্ধারনে মজুরি কম দেওয়ার জন্য যত রকম প্রভাব বিস্তার করা যায় সবই করার চেষ্টা করেছে মালিক পক্ষ। ফলে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১৬০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবী করা হলেও রাষ্ট্র এবং মালিক পক্ষ মিলে এমনকি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায় রাষ্ট্র নিয়োজিত শ্রমিক প্রতিনিধির সম্মতিতে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারন করা হয় ৮০০০ টাকা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি প্রতিটি পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য সংখ্যা ২ দশমিক ১ জন হিসাব করে ১০,০২৮ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারনের প্রস্তাব করেছিল। সেটাও রাষ্ট্র কিংবা মালিক পক্ষ কেউই আমলে নেয়নি। অন্যদিকে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান কিংবা নিরপেক্ষ সদস্য আদৌ কোন মজুরি প্রস্তাব করেছিল কিনা তা এখনো জানা যায়নি। ফলে এই দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারনে মজুরি বোর্ডে তাদের অন্তর্ভূক্তির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা নির্ধারন করার পর মূল মজুরি নির্ধারনেও মালিক পক্ষ ও রাষ্ট্রের পায়তারা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯৪, ২০০৬ ও ২০১০, ২০১৩ সালে মূল মজুরি ছিল যথাক্রমে মোট মজুরির ৬০, ৬৫, ৬৬ ও ৫৭ শতাংশ। সেটা কমে এবার মূল মজুরি মোট মজুরির ৫১ শতাংশে নেমেছে। এর ফলে শ্রমিকেরা ওভারটাইম ভাতা, গ্র্যাচুইটি বা চাকুরির ক্ষতিপূরণ, উৎসব বোনাস ইত্যাদি বিষয়ে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে বিগত ১৪ নভেম্বর গ্লাস ও সিলিকেট সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮৫০০ টাকার সাথে মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৫০০০ টাকা অর্থাৎ এখানে মূল মজুরি মোট মজুরির ৫৯%। এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি মোট মজুরির মাত্র ৫১% ধার্য্য করার পিছনে যুক্তি কি? একদেশে দুই সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য দুই নিয়মের হেতু কি?
আবার ৭টি গ্রেড নির্ধারন করে পূর্ণাংগ মজুরি কাঠামো ঘোষণাতেও রয়েছে আরো বড় ধরনের চালাকি। লক্ষ্য করলে দেখা যায় ৩ থেকে ৭ নং গ্রেডের মধ্যে মজুরির পার্থক্য ৩৩৩ থেকে ৪৫৬ টাকা। অথচ ৩ থেকে নং ২ গ্রেডের পার্থক্য ৫০৪৩ টাকা এবং ৩ থেকে নং ১ গ্রেডের পার্থক্য এক লাফে ৭৯২৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। একথা সর্বজন বিদিত যে ১ ও ২ নং গ্রেডে এই খাতে শ্রমিক অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। যে গ্রেড গুলোতে শ্রমিক সংখ্যা বেশী সেখানে মজুরি পার্থক্য খুব কম। এভাবে পদে পদে যখন শ্রমিকদের ঠকানোর প্রচেষ্টা চলে তখন মালিক ও রাষ্ট্রের প্রতি শ্রমিক শ্রেণীর আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়। প্রকারন্তরে যা সুস্থ্য ধারার শিল্প বিকাশের অন্তরায়।
শিল্পের প্রসারের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও মানসম্পন্ন শ্রমিক আর দক্ষ ও মানসম্পন্ন শ্রমিক তৈরির পূর্ব শর্ত হচ্ছে শ্রমিকের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি। ক্রম-বর্ধমান বাজার দর বৃদ্ধির বিপরীতে শ্রমিকের মজুরি এতই কম যে, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরনে শ্রমিক হিমসিম খায়। ফলে সে বাধ্য হয়ে তার ব্যয় কমানোর খাতগুলো খোঁজার চেষ্টা করে। শ্রমিকের ব্যয় কমানো মানে না খেয়ে কিংবা অর্ধাহারে দিন কাটানো, সন্তানের লেখা পড়া বন্ধ করে দেয়া কিংবা শ্রমিক নিজে এবং পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হলে চিকিৎসা না করা।
একজন শ্রমিক কাজ করার কারনে যে পরিমাণ ক্যালরি তার ক্ষয় হয় সেই পরিমাণ ক্যালরি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সে খেতে পারেনা। ফলে শ্রমিকের শারীরিক সুস্থ্যতা বা মানসিক প্রশান্তির প্রয়োজনীয়তায় ঘাটতি দেখা দেয়।
সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি’র এর এক গবেষণায় জানা গেছে পোশাক কারখানাসমূহে কর্মরত নারী শ্রমিকদের ৮০% রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে।
শ্রমিকের শ্রম ও ঘামের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানীতে আজ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানীকারক দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর বিনিময়ে শ্রমিক রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে! একদিকে মালিকের লাভের অংশ বাড়তেই থাকে অপরদিকে শ্রমিকের মজুরি কমতেই থাকে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ধনী গরিবের বৈষম্য।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিবারের মত প্রত্যেক রাজনৈতিক দলসমূহ জাতির উদ্দেশ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। যদিও নির্বাচনে বিজয়ী হলে ইশতেহারের কথা কারো মনে থাকেনা। তারপরও ইশতেহারের গুরুত্ব রয়েছে। কারন এর মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং জনগণের প্রতি রাজনৈতিক দলসমূহের অঙ্গীকার এবং মনোভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অতিতে নির্বাচনী ইশতেহারে শ্রমিকদের জন্য পৃথক কোন অঙ্গিকার পরিলক্ষিত হয়নি।
তবে একথা সবার মনে রাখা উচিত শ্রমিকেরা আগের তুলনায় অনেক সচেতন। তাই এবার শ্রমিক-শ্রেণী নির্বাচনী ইশতেহারে তাদের জীবনমান এবং ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হ্রাসের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার দেখতে চাইবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: এই সমাজে সব শ্রেনীর মানুষই কষ্টে আছে।
তাদের সবার কথাই ভাববতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.