নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি।৯০ এর দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রাম জেলার সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফজলুল কবির

ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক

ফজলুল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রমিকের সুরক্ষায় নির্বাচনী অঙ্গীকার চাই

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৩

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। নির্বাচনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করবে। তাদের উপর অর্পিত হবে আগামী ৫ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার গুরু দায়িত্ব। কিন্তু বিজয়ী দল কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে তা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ধারণা পাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বে ভোটাররা ইশতেহার বা কর্মসূচী দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমাদের দেশের মানুষও আগের তুলনায় অনেক বেশী সচেতন হয়েছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আমাদের দেশেও অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বা জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার রেওয়াজ রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জোটগতভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারা দেশের মানুষের মত শ্রমিক সমাজ দেখতে চাইবে তাদের জীবন মান উন্নয়নে রাজনৈতিক দল সমূহ কি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে?
শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝি শ্রমিকের বাঁচার মত মজুরি, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং শ্রমিকের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার তথা শোভন কাজ নিশ্চিত করা।
আইএলওর ১৪তম সম্মেলনে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘ডিসেন্ট ওয়ার্ক দশক’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। আইএলওর এশিয়া প্রশান্ত মহসাগরীয় ১৬তম আঞ্চলিক সম্মেলনে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরনে শোভন কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৮ নং লক্ষ্য সবার জন্য শোভন কাজ নিশ্চিত করা। এসডিজির মূল উদ্দেশ্য হলো আয় বৈষম্য কমানো এবং শ্লোগান হলো কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবেনা। শোভন কাজ বাস্তবায়ন করা গেলে শ্রমিকের জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে আয় বৈষম্য কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ এসডিজিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে শোভন কাজ বাস্তবায়ন তথা শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন ও আয় বৈষম্য কমানো রাষ্ট্র বা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
বাংলাদেশের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি। এরমধ্যে মাত্র ১৩% প্রাতিষ্ঠানিক এবং বাকী ৮৭% অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক। নির্মান শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দিন মজুর এবং স্বনিয়োজিত শ্রমিকদেরকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মালিকই অনির্দিষ্ট ফলে রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব নয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শ্রমিকদের কল্যাণে গৃহীত কর্মসূচী সমূহ অত্যন্ত অপ্রতুল। আবার এই অপ্রতুল সুবিধাও যথাযথ প্রচারের অভাবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা সুফল ভোগ করতে পারছেনা। তবে এর দায় শ্রমিক সংগঠনগুলো এড়াতে পারবেনা। কেননা শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত রয়েছে এমন শ্রমিকেরাও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচী সম্পর্কে অবগত কিনা সেই ব্যাপারেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের অবস্থা তুলনামূলক ভাল বলা গেলেও সম্প্রতি এই খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৮০০০ টাকা ঘোষিত হয়েছে। যদিও তা শ্রমিকদের জীবন যাত্রার ব্যায়ভার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের তুলনায় অনেক কম। এই মজুরি কাঠামো ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে। ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ন্যায্য হয়েছে কিনা তা যেমন বিবেচনার দাবী রাখে তেমনি এই অন্যায্য মজুরিও শতভাগ শ্রমিক পাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এমন সন্দেহের মূল কারন হচ্ছে বিগত ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সিঅ্যান্ডএ ফাউন্ডেশনের বরাত দিয়ে জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদন। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই খাতে কর্মরত শ্রমিকদের ৫৪% শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেনা। বর্তমান ন্যূনতম মজুরি ৫৩০০ টাকা। এক্ষেত্রেও ৫৪% শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাহলে ঘোষিত ৮০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি কার্যকর হলে শতভাগ শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দেওয়া খুবই যুক্তিসংগত এবং স্বাভাবিক।
মজুরি সংক্রান্ত বিষয়ে অন্য সেক্টরের অবস্থা আরো খারাপ। সম্প্রতি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে এই সেক্টরে কর্মরত একজন শ্রমিকও ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেনা। অর্থাৎ এখানে শতভাগ শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা খাতের অবস্থা রীতিমত উদ্বেগজনক। এই সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য অদ্যাবধি ন্যূনতম মজুরি বোর্ডই গঠিত হয়নি। ফলে এই সেক্টরে শ্রমিকদের চাকুরি শুরু হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মজুরি দিয়ে। বছরের পর বছর চাকুরি করলেও মজুরি বাড়েনা। দৈনন্দিন জীবন যাপনের খরচ মিটাতে না পেরে অনেক শ্রমিক বাধ্য হয়ে দুই শিফট বা দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে।
চাকুরি বা কর্মস্থলের নিরাপত্তার কথা আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এখনো ৮০% প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়না। ফলে শ্রমিকেরা চাকুরি হারানোর ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকে।
তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ড এবং রানা প্লাজা ধ্বসের পর পোশাক শিল্পের মালিকেরা এখন কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার ব্যাপারে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী সচেতন হলেও এখনো অন্যান্য সেক্টর বিশেষত জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, এলুমিনিয়াম শিল্প, স্বাস্থ্য খাত সহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মক্ষেত্র এবং শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা শঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে।
আইএলও কনভেনশন ৮৭ এবং ৯৮ তে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও মালিক পক্ষের বাধা এবং রাষ্ট্রের অসহযোগিতার কারনে শ্রমিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে বরাবরই বঞ্চিত রয়েছে।
উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে একথা নির্দিধায় বলা যায় যে, আমাদের দেশের শ্রম পরিস্থিতি শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়ন ও তাদের সুরক্ষায় সহায়ক নয়। অথচ আমাদের দেশের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা না দিয়ে উন্নয়নের জয়গান কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
শ্রমিকের হাতের ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে আজকের বিশ্ব সভ্যতা। বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য, মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান তাতেও রয়েছে এদেশের শ্রমিক শ্রেণীর গৌরবময় অবদান।
বাংলাদেশ অনুন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণিকে পিছনে রেখে, তাদের জীবন মান উন্নয়ন না করে কিংবা তাদের সুরক্ষা না দিয়ে কোন উন্নয়নই টেকসই হবেনা।
এমতাবস্থায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে আস্থাবান, জনগণ ও মেহনতি মানুষের কল্যানে বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল সমূহ থেকে দেশে বিদ্যমান আয় বৈষম্য কমিয়ে শ্রমিকের জীবন মান বৃদ্ধি এবং তাদের সুরক্ষায় সুস্পষ্ট অংগীকার কামনা করছি।












মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: এবার আমি ঠিক করেছি যাদের নির্বাচনী ইশতেহার ভালো হবে তাদেরই ভোট দিবো।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: এবার আমি ঠিক করেছি যাদের নির্বাচনী ইশতেহার ভালো হবে তাদেরই ভোট দিবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.