![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রহিমা বেগম, আইডি নং – ২৩২৬, পদবী – অপারেটর, চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলি ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় ২৮/১০/২০১২ ইং তারিখ হতে কর্মরত আছে। দীর্ঘ ৬ বছরের অধিক সময় চাকুরিকালে তার বিরুদ্ধে কখনো উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে বা তার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে কোন প্রশ্ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়নি। কিন্তু বিগত ডিসেম্বর ‘২০১৮ থেকে মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আবার রহিমার ভাষ্যমতে অন্যান্য শ্রমিকদের অটো মেশিন দেওয়া হলেও রহিমাকে দেওয়া হয় ম্যানুয়েল মেশিন। তাও আবার তা বাম হস্ত চালিত মেশিন। রহিমা ডানহাতি ফলে সে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনা। এতে রহিমা কর্তৃপক্ষের দেয়া টার্গেট পূরনে ব্যর্থ হয়। দুপুরে সবাই লাঞ্চ করতে যায় কিন্তু রহিমা কাজ করতে থাকে। টার্গেট পূরনে আপ্রাণ চেষ্টা চলে রহিমার। বিগত ছয় বছর যাবত যেভাবে উৎপাদন করেছে এখনো রহিমা তাই করে। কিন্তু রহিমাকে বলা হলো মজুরি বেড়েছে তাই উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সুপারভাইজার প্রতিদিন রহিমাকে টার্গেটের কথা বলে শাসাই। টার্গেট পূরন করতে না পারলে রহিমাকে চাকুরি ছেড়ে চলে যেতে বলে। রহিমা চাকুরি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় টার্গেট পূরনে ব্যর্থতার দায়ে বিগত ১০/১/২০১৯ তারিখে রহিমাকে সাময়িক বরখাস্ত সহ কারন দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। অসহায় রহিমা চোখে অন্ধকার দেখে। কি করবে বুঝতে পারেনা। চাকুরি চলে গেলে ছেলে মেয়েদের খাওয়াবে কি?
রহিমা যোগাযোগ করে তার প্রতিবেশী লিজার সাথে। লিজাও একজন অপারেটর। বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে রীজি এপারেলস লিঃ নামক একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি করতো। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে মানব বন্ধনে যোগ দেওয়ায় চাকুরিচ্যুত হয়। সেই থেকে লিজা এখনো বেকার। লিজার স্বামীও একজন পোশাক কর্মী। স্বামীর নাম মোঃ জীবন। সেও বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলার নেতা। লিজা স্বামী জীবনকে রহিমার বিষয়টি জানায়। জীবন রহিমা থেকে কারখানার কর্তৃপক্ষ হতে প্রদত্ত কারন দর্শানো নোটিশ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফের সাথে যোগাযোগ করে এবং হানিফ স দুইজনে মিলে তারা বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সংগঠক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ – বিলস এর প্যারা লিগ্যাল সদস্য ফজলুল কবির মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করে। ফজলুল কবির মিন্টু শ্রমিকদের গ্রিভ্যান্স সাপোর্ট দিয়ে থাকে। জনাব মিন্টু কারন দর্শানো নোটিশের জবাব লিখে দেন। জবাব পেয়ে কর্তৃপক্ষ বুঝে যায় রহিমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া এত সহজ নয়। তাই তারা আর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে একটি সতর্কীকরন পত্র দিয়ে রহিমাকে কাজ করতে বলে। কিন্তু কিন্তু মাত্র ২ দিন না যেতেই রহিমাকে আবার কারন দর্শানো নোটিশ করা হয়। সাথে কিছু প্রমান যুক্ত করে দেওয়া হয়। এবারও রহিমা লিজা এবং জীবনের কাছে আসে। জীবন রহিমা থেকে উক্ত কারন দর্শানো নোটিশ নিয়ে ফজলুল কবির মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করে। জনাব মিন্টু জবাবে লিখেন ৬ বছরে যার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিলনা ৭ দিনের ব্যবধানে একই অভিযোগে পর পর ২টি অভিযোগ উত্থাপন নজিরবিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এমন জবাব কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশিত ছিলনা। ফলে তারা রহিমার উপর উত্তেজিত হয়ে যায়। এবারও তারা রহিমাকে আরেকটি সতর্কীকরন পত্র দিতে চাই। এবার রহিমা সতর্কীকরন পত্র গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কর্তৃপক্ষ রহিমাকে আর বেশী ঘাটানোর চেষ্টা করেনা। তারা রহিমাকে কাজ করতে বলে। রহিমাকে কাজ করতে বলে। রহিমাও কাজ করছে কিন্তু চাকুরি হারানোর ভয় রহিমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্জস্ত। দীর্ঘ ৬ বছরে কারখানার এমন পরিবেশ সে কখনো দেখেনি। এমন পরিবেশ বড় অচেনা লাগে রহিমার কাছে।
রহিমা ভাবে কেন এমন হলো। উৎপাদন আগে যা করতো এখনো তাই করে বরং অভিজ্ঞতার কারনে রহিমা অনেক কঠিন কাজও অনায়াসে করে ফেলে। তারপরও রহিমার উপর এমন মানসিক চাপ ও নির্যাতনের একটিই কারন থাকতে পারে কারন বিগত ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে তার দুই হাজার টাকা মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। তারজন্য কর্তৃপক্ষ বর্ধিত উৎপাদন চাই। তা হয়তো সে পারছেনা। একই চিত্র বাংলাদেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানার। প্রত্যেক শ্রমিকের টার্গেট বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিক ছাটাইও চলছে। অর্থা যে কাজ আগে ১০ জনে করতো একই পরিমাণ কাজ এখন ৭/৮ জনে করতে হচ্ছে। যারা এর সাথে তাল মিলাতে পারছেনা তাদের উপর নেমে আসে নানা মানসিক নির্যাতন।
কিছু কারখানা মজুরি বাড়িয়েছে আবার অধিকাংশ কারখানা এখনো মজুরি বৃদ্ধিই করেনি হয়তো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। আবার কেউ কেউ মজুরি না বাড়িয়ে পাড় পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে ফাঁক ফোঁকর খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু এরমধ্যে শুরু হয়ে গেছে উৎপাদনের টার্গেট দিয়ে নির্যাতন। টার্গেট পূরনে ব্যর্থ হলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও কারন দর্শানো পত্র সহ কর্মচ্যুতি।
তাই রহিমা সহ সাধারণ শ্রমিকদের প্রশ্ন, মজুরি বৃদ্ধি কি তাহলে তাদের জন্য কাল হলো...?
২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪৯
শেখ মফিজ বলেছেন: শ্রমিক সংগঠনগুলোকে জাতিয় ফোরেমে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনায় আসতে হবে ।
৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১০
মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: মানবিকতার বড় অভাব।
মানুষ নিজের দিকে চেয়ে কাজ করে না।
৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১৫
রানার ব্লগ বলেছেন: লোভ ভয়ানক জিনিস !!!
৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১৭
চোরাবালি- বলেছেন: আমি গার্মেন্টস ট্রেডে কামলা খাটি। এখন অধিকাংশ মালিক ব্যাবসা না পারছে ধরে রাখতে না পারছে টিকিয়ে রাখতে। কারণ ব্যবসায় ছেড়ে দিলে সে পথে বসবে।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণ না করে কথায় কথায় মজুরী বৃদ্ধির ফলে গার্মেন্টস ব্যবসায় লাভ করা এখন খুবই কষ্টকর। কারণ ক্রেতা পক্ষ মুজুরী বৃদ্ধিতে রাজি না। তারা অন্যদেশে চলে যাবে, যে দাম দিচ্ছে করলে করেন না করলে নাই এমন অবস্থা।
আবার শ্রমিকেরা আন্দোলনের নামে যা করে সেটাও কাম্য না। এখন শুধু অপেক্ষার পালা শ্রমিকেরা এসে গেটের সামনে দাড়িয়ে বলবে ভাই কাজ দেন, বেতন যা দেন দিবেন, যেখানে স্বাক্ষর করতে বলবেন করবে। যেমনটি হয় তাঁত শিল্পে। এই শ্রমিক আন্দোলনের ফলে ব্যাবসায়ীরা উৎপাদন বাদ দিয়ে আমদানি নির্ভর।
একজন শ্রমিক নূণ্যতম ৫৪০০+৭৫০+৫০০টাকা, ওভার টাইমসহ ১০হাজার প্রায়, আবার সিনিয়র যারা আছেন তারা তো কেও কেও ১৫-১৬হাজার টাকাও বেতন পায়।
আমার অভিজ্ঞতায় অধিকাংশ শ্রমিক কখনও স্বচ্ছল হবে না। - কারণ
# পরপর দুদিন ছুটি পেলেই গ্রামে যাবে, তৃতীয় দিন অফিস কামাই করবে
# বছরে সব উৎসবগুলিতে তাদের নতুন জামা কাপড় দরকার।
# তালে লোমে জোড়াই দেয়া আত্মীয়র অসুস্থতায়ও তাদের যাওয়ার দরকার পরে।
# কিছু টাকা বেশি পেলেই নতুন মোবাইল, এলইডি টিভি, ওয়ালটন ফ্রিস (কিস্তিতে)
# শ্রমিকদের বাচ্চাদের চিপ-চকলেট ছাড়া চলে না।
# কথায় কথায় ফার্মেসিতে গিয়ে তাদের টাকার হিসেবে ওষুধ খাওয়া দরকার। সে সব অষুধ অধিকাংশ নিম্নমানের ভিটামিন। যে ডাক্টার যত বেশি ওষুধ দিবে সে তত ভালো। ডাক্টার বলতে ফার্মেসির সেলসম্যান।
# মাস শেষে টাকাটা নিয়ে স্বামী বা বাবার হাতে তুলে দিবে। স্বামী/বাবা রাস্তার মোড়ের দোকানে বসে সারাদিন চা আর বিড়ি ফুকবে।
এরকম যত খারাপ দিক আছে সব এই শ্রমিকদের মাঝে পাওয়া যায়।
৬| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৫
বাকপ্রবাস বলেছেন: সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে তত অনিশ্চয়তাও বাড়ছে যেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: এই সমস্যা গুলো আজীবন থাকবেই।