![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে বাংলাদেশের গড় পারিবারিক সদস্য সংখ্যা ৪ জন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস সহ শ্রমিকদের জীবন মান ও অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান সমূহের গবেষণার তথ্যমতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের ন্যূনতম মাসিক খরচ ১৬ হাজার টাকা। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন সমূহ সহ পোশাক খাতে সক্রিয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা করার দাবী জানানো হয়। শ্রমিকদের এই দাবী যৌক্তিক হওয়া সত্বেও পোশাক শিল্পের মালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রাষ্ট্র কর্তৃক ৭ম গ্রেডে ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারন করা হয়। আবার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে মোট মজুরির তুলনায় মূল মজুরি অনেক কম ধার্য্য করা হয় এবং একই সাথে অন্যান্য গ্রেডে (অর্থাৎ ১ম থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেড) মজুরির মধ্যে নানা অসংগতি পরিলক্ষিত হয়। ফলে ২০১৯ সালের শুরুতে পোশাক খাতে শ্রমিক বিক্ষোভ দানা বেধে ওঠে। যা নব গঠিত সরকারের উপর অপ্রত্যাশিত চাপ তৈরি করে। ফলে সরকারের শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয় যৌথভাবে তড়িঘড়ি উদ্যোগ নিয়ে ন্যূনতম মজুরির গ্যাজেট সংশোধন করতে বাধ্য হয়।
ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতিতে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো মেনে নেয়ার সুর পরিলক্ষিত হয়। শ্রমিকরাও কাজে যোগ দেয়। ডিসেম্বরের মজুরিতে কেউ কম পেয়ে থাকলে জানুয়ারি মাসের মজুরির সাথে সমন্বয় করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানুয়ারি মাসের মজুরি প্রদানের পর একটি কারখানার ১৪২ জনের পেস্লিপ বিশ্লেষন করে দেখা যায় ঐ কারখানাতে ৮৩.০৯% শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পায়নি। অপরদিকে ৩, ৪, ৫ এবং ৭ নং গ্রেডের কোন শ্রমিকই ন্যূনতম মজুরি পায়নি। কেবল মাত্র ৬ নং গ্রেডের ৩০% শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পেয়েছে। তাও কথা আছে, ৬ নং গ্রেডের শ্রমিকদের সার্ভিস লেন্থ অনুযায়ী ইনক্রিমেন্ট বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে বাস্তবে কোন শ্রমিকই ন্যূনতম মজুরি পায়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা বিষয়টি তদারকি করছে। কিন্তু তদারকির পর একটি তালিকা তৈরি করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো ছাড়া তাদের আর তেমন কোন করনীয় নাই বলে তারা জানিয়েছেন। পরিদর্শন অধিদপ্তরের এমন বক্তব্য দায়িত্ব এড়িয়ে চলার কৌশল বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিদর্শন অধিদপ্তরের নমনীয় মনোভাব রাষ্ট্রীয় মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ কিনা তা নিয়ে প্রশণ উঠেছে। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু পোশাক কারখানার মালিক পক্ষ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন তাদের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অনেকে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে আবার অনেকে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করে শ্রম আইনের ১৩ নং ধারা অপপ্রয়োগের মাধ্যমে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। মালিক পক্ষের কথায় কথায় কারখানা বন্ধ করে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি বেআইনি কার্যক্রম ছাড়া কিছুই নয়।এরা নিজেদের সুবিধা ছাড়া আর কোন কিছুই বিবেচনায় নেয়না। মূলত এই ধরণের শিল্প মালিকদের কারনে শ্রম অসন্তোষ তৈরি হয়। এই সকল মালিকরাই শিল্পের বিকাশে প্রধান অন্তরায়। সুতরাং সবার আগে শিল্পের জন্য ক্ষতিকর এই ধরণের মালিকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
কোন পোশাক কারখানার মালিক যদি সম্প্রতি ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কার্যকর না করে কিংবা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে তাহলে তা হবে শ্রম আইনের ১৪৮ ও ১৪৯ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ধরণের লংঘনের দায়ে ২৮৯ ধারা অনুযায়ী ১ বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
যে সকল পোশাক কারখানার মালিক সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করবেনা তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিকদের বিধিমালার ৩৫১ (১)(ক) মোতাবেক নিজ নিজ জেলায় কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক বরাবর অভিযোগ পত্র দায়ের করার সুযোগ রয়েছে। অভিযোগ প্রাপ্তির ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে পরিদর্শন অধিদপ্তর অনুসন্ধান ও তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিক পক্ষকে নির্দেশ দিবেন এবং মালিক পক্ষ নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রম আদালতে ফরম ১৪ অনুযায়ী মামলা দায়ের করবেন।
বিগত ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ তারিখে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক একটি জরুরী গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি ছিল কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের বিরুদ্ধে কুলি শ্রমিকদের দায়ের করা রিট পিটিশন নম্বর ১৭৬১/২০১৭ এ প্রদত্ত মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ৬ দফা নির্দেশনা সংক্রান্ত বিষয়ে। উক্ত ৬ দফা নির্দেশনার ২ নং নির্দেশনাটি বাংলাদশের সকল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ৬ দফা নির্দেশনার ২ নম্বর নির্দেশনাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি ৩৫১(১)(ক) অনুযায়ী শ্রম আইন ও বিধিমালা দ্বারা নিশ্চিত করা কোন অধিকার লংঘনের ব্যাপারে কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রাপ্ত হলে তা প্রাপ্তির ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে পরিদর্শন অধিদপ্তর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করবে। উক্ত নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে পরিদর্শন অধিদপ্তর আইনের ৩১৯ ধারা অনুসরন করে শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করবে।
শ্রম আদালতে মামলা করার ব্যাপারে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরণের ভীতি কাজ করে। শ্রম আদালতকে সামারি ট্রায়াল বা সংক্ষিপ্ত আদালত বলা হলেও এখানে প্রচুর মামলার জট পরিলক্ষিত হয়। মামলা করার পর ৫/৭ বছর অপেক্ষা করতে হয় এমন নজির প্রচুর রয়েছে। তাই কোন কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার অভিযোগে মামলা হলে উক্ত মামলা যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগি হতে হবে।
সম্প্রতি পোশাক খাতে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকদের জন্য যৌক্তিক হয়েছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তথাপি রাষ্ট্র কর্তৃক ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম আদালত তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হবে এমনটিই সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে মানুষের চাহিদার শেষ।
তাই মজুরি দিয়ে কোনো দিন কারো মন ভরা যাবে না।
এই সমস্যা আজীব থেকেই যাবে।