নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গন্তব্যহীন সোশিওপ্যাথের পরিচয় দিয়ে কি হবে?

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার

আইম ব্যাড এন্ড দ্যাটস গুড

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ROCK STRATA: বাংলা মেটালের এক মহাকাব্য

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩৫


বাংলাদেশে হেভি মেটাল গানের পথিকৃৎ বলা চলে ‘রকস্ট্রাটা’ ব্যান্ডকে ।
১৯৮৪ সালে ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা মাইনুল ইসলাম আর ইমরান হুসাইন সেন্ট জোসেফে বন্ধু ছিলেন আর প্রায়শই তারা নিজেরা জ্যামিং করতেন। তারা সে বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা স্কুলের শেষদিনের র‍্যাগ ডে কালচারাল ইভেন্টে অংশ নিবেন তার অন্য বন্ধুদের সাথে। তখন আসিফ আলম ভোকালে, আসিফ ইকবাল ড্রামস আর সাফকাত কি-বোর্ডে সহ ব্যান্ডের লাইন-আপ ছিল।
কিন্তু অপর্যাপ্ত সময়ের কারনে তাদের ব্যান্ড পারর্ফম করতে পারেনি, যদিও এর প্র্যাকটিস সেশন গুলোরর কারনে ব্যান্ডের ভীত চরম ভাবে শক্ত হয়ে যায়! মাইনুল আর ইমরান অসম্ভব ভালো জুটিতে পরিনত হয়েছিলো। ১৯৮৫তে আসিফ ইকবাল পারিবারিক সমস্যার কারনে ব্যান্ড ছাড়লে মাহবুব রশীদ ড্রামসে আসে। পরবর্তীতে এই লাইন-আপটি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। এছাড়া তারা হেভি মেটাল গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাই কি-বোর্ড সেকশন বাদ দিতে বাধ্য হয়, তাই সাফকাতও ব্যান্ড ছাড়ে। মাধ্যমিকে পড়ার সময় মাহবুব ভুগোল বইতে পাথরের লেয়ারের চাপ্টারে Rock Strata নামটি প্রথম দেখতে পায়। নামটি তার মনে গেঁথে যায়, ব্যান্ডের নাম ঠিক না হওয়ায় সে এটি ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের বললে সবাই এক কথায় রাজি হয়ে যায়!
১৯৮৫ তে তারা স্বনামধন্য নটর ডেম কলেজে ভর্তি হলে তারা জ্যামিং এর জন্য পর্যাপ্ত সময় থেকে বঞ্চিত হয়। কলেজে থাকাকালিন সময়েই ব্যান্ড মেম্বারদের সাথে আরশাদের পরিচয় হয় যে পরবর্তীতে ব্যান্ডের ব্যাজিস্ট হিসেবে যোগ দেয়। ফলে ব্যান্ডের লাইন-আপ হয়ঃ
Asif Alam – Vocals
Imran Hussain – Guitars
Mainul Islam – Guitars
Arshad Amin – Bass
Mahbubur Rashid – Drums

তারা তখন শুধু Iron Maiden, Pink Floyd, Black Sabbath, Metallica এর গানই কভার করতো। ১৯৮৬ সালে তারা প্রথম লাইভ কন্সার্টের সুযোগ পায় কলেজ ফেস্টে।প্রথম গানটির কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তাদের গান শুনে প্রিন্সিপাল ফাদার জোসেফ এস রোসিত্তো অসুস্থ্য হয়ে গেলে তাদের স্টেজ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়, যদিও ৪ টা গান গাওয়ার সুযোগ ছিলো তাদের! পরবর্তিতে তারা নিজেরাই কন্সার্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের অডিটোরিয়াম ভাড়া করে তারা কন্সার্টের আয়োজন করে, যার হলভাড়া ছিলো ২০ টাকা। মাহবুবুরের বাবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় তারা ৫০% মুল্যছাড় পায়, আর বাকি টাকা তারা হাত খরচের টাকা জমিয়ে মুল্য পরিশোধ করে।
অতঃপর কন্সার্টটি অনুষ্ঠিত হয়। কন্সার্টটি বাংলা মিউজিক ইতিহাসের একটি অতিকায় মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়। যারা কন্সার্টটিতে ছিলেন তারা আজও আসিফের, “Scream for me Engineering Institute!!!” আগ্রাসনের কথা গর্বের সাথে স্বরণ করে। সেদিন বাংলাদেশের মিউজিক একটি ধারা পেয়েছিলো।
১৯৮৭ সালটি তাদের জন্য কিছু খারাপ সময় নিয়ে আসে। ব্যান্ডের লিড ভোকাল আসিফ বিদেশে পড়ালেখার জন্য ব্যান্ড ছেড়ে গেলে বাকি মেম্বারদের মাথায় বলতে গেলে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। পরে ব্যাজিস্ট আরশাদের বাল্যকালের বন্ধু সোয়েবকে ট্রায়াল দিতে বলে ব্যান্ড মেম্বারদের সাথে, এরপরই তাকে ব্যান্ডের লিড ভোকাল হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। লাইন-আপ সমস্যার সমাধান ঘটতে না ঘটতেই দেখা যায় জ্যামিং প্লেসের সংকট। হ্যাভি মেটাল গান সেদিন গুলোতে বেশী জনপ্রিয় না থাকায় লোকে তাকে পাগলের পাগলামী হিসেবে ধরে নিয়েছিলো। ফলে তারে কোথাও ঠিকমত রিহার্সাল করতে পারতো না। অনেক খোঁজার পরও যায়গা না পেয়ে সোয়েব তার নিজ বাড়ীর একটা রুমে শোলার মাধ্যমে সাউন্ডপ্রফ করে ব্যান্ডের প্রাকটিস রুম ঠিক করে।
এরপর কঠিন প্র্যাকটিস আর নিয়মিত শো করার মাধ্যমে ব্যান্ড ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এসময় আরও কিছু উঠতি মেটাল ব্যান্ড যেমন ওয়ারফেজ, রকস্ট্রাটার মতো নিজেদের পরিচয় গঠনের কাজে নেমে পড়েছিল। বলা যায় সেই উত্তাল সময়টা ছিল বাংলাদেশের মেটাল বিদ্রোহের সূচনালগ্ন !!!

যতই জনপ্রিয় হোক না কেন , তারা প্রতি পদে পদে হোচট খাচ্ছিলো। মুলধারা শিল্পীগণ তাদের ডাকে মোটেই সায় দিত না, বরং হাসাহাসি করতো। বামবাতে যেদিন তারা প্রথম রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়েছিলো তখন তাদের উচ্ছ্রিঙ্খল , বেয়াদব, পাগল ইত্যাদি বলে গালি শুনতে হয়েছিলো। প্রথমে তাদের বামবার সদস্যপদও দেয়া হয় নি। পরে বামবার প্রেসিডেন্ট ম্যাক হক(ফিডব্যাক) অনেক কষ্টের পর তাদের ও অন্যান্য কিছু মেটাল ব্যান্ডের রেজিস্ট্রেশন করাতে সক্ষম হন।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের কথা, একনায়ক এরশাদের পতনের পর দেশে এক অনন্দের জোয়ার বইছিল। অনেক সংগঠন তা উদযাপন করছিলো। বামবাও সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এই উপলক্ষে ঢাকা ভার্সিটিতে একটা কন্সার্ট করবে। সমস্যাটা তখনই শুরু হয়।কন্সার্টটির নিয়ম ছিলো যে কন্সার্টটি সম্পুর্ন বাংলায় হবে। বামবায় যে কয়টি মেটাল ব্যান্ড ছিল তারা সবাইই মেটালিকা, আইরন মেইডেনের মত ব্যান্ডের গান কভার করত আর যা গান নিজেদের ছিলো তাও ছিলো ইংরেজি। তাই তাদের পার্ফমেন্সের আশাগুলো ধূলিসাৎ হয় ।
তাই রকস্ট্রাটা বাধ্য হয়ে তাদের নিজেদের বাঙ্গলা মেতাল গান বানানোর কাজে নেমে পড়ে যা আগে কখনই সফলভাবে করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু রকস্ট্রাটা শুধু সফলই হয় নি, তারা রীতিমত ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো।!
সামান্য দুঃস্বপ্ন, শেষ রাত্রি, স্বাধীকার, নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা, একটি ছেলে এবং এই রাতে ছিল বাংলা মেটাল ইতিহাসের প্রথম ৬ টি বাংলা মেটাল গান যার প্রত্যেকটি ছিলো অসাধারন!
কন্সার্টের সময় যখন গানগুলো স্টেজে হচ্ছিলো তখন দর্শক থেকে অন্য শিল্পীরা অবাক দৃষ্টিতে ঐ নারকীয় উম্মাদনা লক্ষ্য করছিলো। সবার মনে একটাই প্রশ্ন ছিলো, “এটা মেটাল, তার উপর বাংলা তার উপর এই ধরনের গান!! , এও কি সম্ভব???”
ওই রাতের পরই তারা সিদ্ধান্ত নিলো তারা বাংলা মেটাল জানরের গানই করবে। যেই কথা সেই কাজ! ওই ৬ টি গান সহ মোট ১১ টি গান নিয়ে ১৯৯২ সালে প্রথম পুর্ণ বাংলা গানের মেটাল এলবাম “ROCK STRATA” নামে তাদের এলবাম প্রকাশ করা হয়! যদিও এর আগে ওয়ারফেজ, ইন ঢাকা আর এসেস রকস্ট্রাটার সাথে একটা এলবাম বানাতে চেয়েছিলো কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।
এরপরেই শুরু হয় ছন্দপতন...
১৯৯৩ তে মাইনুল, আরশাদ আর মুশফিক মিউজিক ছেড়ে দিলে ব্যান্ড ভেঙ্গে যায়। ইমরান আমেরিকা চলে যায়, মাশুক-তুষার নিজেদের ব্যান্ড খুলে আর মাহবুব যোগ দেয় মাইলসে। এতে রকস্ট্রাটা ব্যান্ডটি বলতে গেলে আন-অফিসিয়ালী বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এরপর দীর্ঘ ১৫টি বছর...
২০০৯ এ ওয়ারফেজের রিইউনিয়ন কনসার্ট হয়, এতে রকস্ট্রাটার মেম্বাররা অনুপ্রানিত হয়ে নিজের একটা রিইউনিয়ন কন্সার্ট করতে উদ্যোগী হয়। বেশীরভাগ সদস্য বিদেশে থাকায় বাধা বিপত্তি সৃষ্টি হয় কন্সার্টের কাজে। এরই মধ্যে তারা বুঝতে পারে দেশে মেটাল হেডদের পরিমান এখন আর কম নয়, তাদের রুচিও একই নয়। তাই আগের গান গুলো দিয়ে ভালো কন্সার্ট হবে না। অবশেষে তারা রকস্ট্রাটা মহাকাব্যের শেষ অধ্যায় তাদের নতুন অ্যালবাম ‘নতুন স্বাদের খোঁজে” নিয়ে কাজ শূরু করে।
অবশেষে প্রায় ২২ বছর পর ২০১৪ এর ৭ ফেব্রুয়ারি বিপুল উত্তেজনায় রকস্ট্রাতা তাদের ২য় ও শেষ কিস্তি ‘নতুন স্বাদের খোঁজে’র মিউজিক লাঞ্চ হয় ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের ভেন্যুতে যেখানে তাদের ইতিহাসের শুরু হয়েছিলো ।
অতঃপর ২০১৫, ৯ই জানুয়ারী কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো রকস্ট্রাটার বহু আকাঙ্খিত রিইউনিয়ন কন্সার্ট “ONE LAST FIVE”
এতে অংশ নিয়েছিলেন ক্রিপটিক ফেট, আর্টসেল আর ওয়ারফেজের মতো নামী-দামী ব্যান্ডগুলো। স্মৃতিকাতর এই সন্ধ্যা উপভোগের জন্য ভক্তদের ভালোবাসায় পুর্ণ ছিলো হলরুম। রক্তে ভেজা মাটি, নির্বাসনের মতো একের পর এক অসাধারন গান, হেড ব্যাংগিং, গিটার-ড্রামসের ঝঙ্কার সবাইকে উম্মাদ করে দিচ্ছিলো।
আবেগঘণ ওই রাতেই তারা তাদের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘোষণা করে তাদের কন্সার্টটির পরিসমাপ্তি করে।
কন্সার্ট শেষে ভক্ত-শ্রোতা বার বার চিৎকার দিয়ে বলছিলো “WE WANT MORE” “THIS IS NOT END!”
ওই রাতেই আনুষ্ঠানিক ভাবে রকস্ট্রাটা মহাকাব্যের পরিসমাপ্তি ঘটে।
দেশের মেটাল হেডরা অনেকেই জানে না রকস্ট্রাটা আসলে কি ছিলো, কারা ছিলো, কি দিয়েছিলেন তারা আমাদের!
আশা করে পরবর্তীতে যখনই আমরা রকস্ট্রাটার নাম শুনবো অত্যন্ত গর্বের সাথেই তাদের স্মরণ করবো!
দীর্ঘজীবী হোক তাদের মহাকাব্য!!

#KnowYouRooT!!!
#StayRaw
#StayMetal m/
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি থাকতেই পারে, ক্ষমার চোখে দেখবেন!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩২

শিশির খান ১৪ বলেছেন: হুম রকষ্টারটা সেই সময়ে যেই গান গুলো কম্পোস করে গেছে তা এখনো এখনো মানুষের মুখে মুখে রয়ে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ব্যান্ড এর নাম কখোনই মুছবে না যারা নতুন নতুন ব্যান্ড করে অথচ এই ব্যান্ড এর গান শুনে নাই তাদের আসলেই লজ্জিত হওয়া উচিত। ধন্যবাদ রকষ্টারটা ব্যান্ডকে তাদের সে সময়ের সাহসী পদক্ষেপের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.